ইরান- ইসরায়েল সংঘাত

ইসরায়েলের হামলা: বিশ্ব কি পারমাণবিক বিপর্যয়ের মুখে? - আল-জাজিরা বিশ্লেষণ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৭ ১৮:০২:১২
ইসরায়েলের হামলা: বিশ্ব কি পারমাণবিক বিপর্যয়ের মুখে? - আল-জাজিরা বিশ্লেষণ

ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক হামলা চালানোর খবর বিশ্ববাসীর মধ্যে এক গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই হামলা থেকে পারমাণবিক বিকিরণ ও রাসায়নিক দূষণের সম্ভাবনা বেড়ে গেছে, যা শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল নয়, গোটা বিশ্বে পরিবেশগত ও মানবিক বিপর্যয়ের সূচনা করতে পারে।

ভারত-পাকিস্তানের পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাত এবং ইউক্রেনের Zaporizhzhia পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে কেন্দ্র করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পারমাণবিক নিরাপত্তা ইতিমধ্যেই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এই অবস্থায় ইসরায়েলের হামলা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন ও জটিল করেছে।

জাতিসংঘের পারমাণবিক তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা আইএইএএ-এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি বলছেন, নতানজ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার ফলে রেডিওলজিক্যাল এবং রাসায়নিক দূষণের আশঙ্কা তীব্র হয়েছে। তিনি সতর্ক করেছেন যে, এই ধরনের দূষণ দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং পারমাণবিক বিস্ফোরণের ঝুঁকি বাড়ায়।

বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রে থাকা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু কয়েক বছর ধরে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই হামলা পারমাণবিক আলোচনা চলাকালীন সময়ে করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভ্রান্তি ও উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান কাজা কালাস স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ইউরোপ ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র ধারণের বিরোধী হলেও কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকেই এই সমস্যার সমাধান মনে করে। সামরিক অভিযানের পরিবর্তে কূটনীতি ও আলোচনাই হওয়া উচিত।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামলার সঙ্গে তার দেশের সরাসরি কোনো সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করলেও, তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখতে কঠোর অবস্থান নেন। অন্যদিকে, ইরান দাবি করে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ এবং সিভিলিয়ান প্রয়োজনে সীমাবদ্ধ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা বাড়ানো ছাড়াও এই ধরনের সামরিক অভিযান পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য গভীর হুমকি। বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক উত্তেজনা, ইউক্রেনের পারমাণবিক কেন্দ্রের সুরক্ষা নিয়ে চলমান সংঘাতের পটভূমিতে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা বিশ্বকে একটি বড় সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

বিশ্ব সম্প্রদায় এখন এক জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন, যেখানে সামরিক হুমকি, পারমাণবিক নিরাপত্তা, কূটনৈতিক চাপে ভারসাম্য রক্ষা করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। পারমাণবিক বিকিরণ ও দূষণের ঝুঁকি প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কঠোর নজরদারি এবং সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। নতুয়ন্ত্রিত না হলে, এই সংকট বিশ্বব্যাপী মানবসভ্যতার জন্য এক ভয়ংকর বিপদের সঙ্কেত হয়ে উঠতে পারে।

সূত্র: আল-জাজিরা

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত