বিশেষ প্রতিবেদন
ইরানি ব্যালিস্টিক মিসাইলের মুখে ব্যর্থ হচ্ছে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

সম্প্রতি শুরু হওয়া ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে আবারও প্রশ্নের মুখে পড়েছে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ও ব্যয়বহুল আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোর একটি—ইসরায়েলের মাল্টিলেয়ারড ডিফেন্স সিস্টেম। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই নতুন সংঘাতে ইরান ধারাবাহিকভাবে এমন সব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে, যেগুলো ইসরায়েলের 'আয়রন ডোম', 'ডেভিডস স্লিং', 'এরো-২' এবং 'এরো-৩' এর মতো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মধ্য দিয়েও অনায়াসে প্রবেশ করছে। ফলে বিশ্বের অন্যতম সুরক্ষিত বলে বিবেচিত আকাশ প্রতিরক্ষা বলয় ভেদ করে ইরানের মিসাইলগুলো সরাসরি ইসরায়েলি ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম হচ্ছে—এ দৃশ্য এখন টেলিভিশন, সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে অবলীলায়।
ইসরায়েল ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নে নজর দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তায় তারা গড়ে তোলে বহুস্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা বলয়, যাতে স্বল্প, মাঝারি এবং দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক হামলা প্রমাণ করছে যে, এই অত্যাধুনিক ব্যবস্থার মধ্যেও ভেদযোগ্য দুর্বলতা রয়েছে—বিশেষ করে যখন একসঙ্গে বিপুল সংখ্যক স্বল্পমূল্যের ড্রোন, রকেট ও মিসাইল হামলা চালানো হয়।
আধুনিক এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রথম স্তর হচ্ছে ‘আয়রন ডোম’, যা ২০১১ সাল থেকে সক্রিয় রয়েছে। এটি মূলত ৪ থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরত্বে ছোড়া স্বল্প পাল্লার রকেট, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ব্যবহৃত হয়। যদিও একসঙ্গে অনেকগুলো ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়া হলে এটি দ্রুত কার্যকারিতা হারায়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হঠাৎ হামলায় দেখা যায়, শর্ট-রেঞ্জ গাইডেড মিসাইল ও অ্যান্টি-ট্যাংক মিসাইল আয়রন ডোমের সুরক্ষা বলয় ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে।
এরপরের স্তরে রয়েছে ‘ডেভিডস স্লিং’ সিস্টেম, যা ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরত্ব থেকে আসা ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল, ড্রোন ও যুদ্ধবিমান প্রতিহত করার জন্য তৈরি। এটি মূলত আয়রন ডোমের সীমাবদ্ধতা পূরণে সহায়ক হলেও, একসঙ্গে বহু আক্রমণের মুখে এই ব্যবস্থাও চাপের মুখে পড়ে।
দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার জন্য ইসরায়েলের সবচেয়ে গর্বিত সিস্টেম হচ্ছে ‘এরো-২’ ও ‘এরো-৩’। এরো-২ মিসাইলগুলো বায়ুমণ্ডলের ভেতরে ধ্বংস করে, আর এরো-৩ উচ্চ বায়ুমণ্ডলের বাইরে—মহাকাশস্তরে—ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসে সক্ষম। বিশেষ করে পারমাণবিক বা রাসায়নিক ওয়ারহেডযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবেলায় এরো-৩ একটি কার্যকরী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু সমস্যা হলো, এত উন্নত এই প্রযুক্তিগুলোর পেছনে প্রতিটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা সক্রিয় করতে গড়ে লাখ লাখ ডলার খরচ হয়, যেখানে ইরানের ব্যবহৃত একেকটি ড্রোন বা রকেটের খরচ কয়েক হাজার ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান খুব সুপরিকল্পিতভাবে ‘কম খরচে সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির’ কৌশল নিয়েছে। তারা উচ্চমূল্যের প্রতিরক্ষা বলয় ভেদ করার জন্য অপেক্ষাকৃত সস্তা কিন্তু প্রচুর সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন একসাথে ছুড়ে দিচ্ছে। ফলে প্রতিটি আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে ইসরায়েলকে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে—যা দীর্ঘমেয়াদে তাদের অর্থনীতির ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
এই সংঘাত কতদিন চলবে, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে বিশ্লেষকদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, যদি সংঘাত দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে শুধু সামরিক দিকেই নয়, বরং অর্থনীতি ও জনমনে স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ প্রতিবারের মতো এবার আর কেবল গাজা কিংবা সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো নয়, ইরানি হামলার লক্ষ্যস্থল হয়ে উঠছে ইসরায়েলের অভ্যন্তরের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও অবকাঠামোগত স্থানগুলোও।
এই প্রেক্ষাপটে অনেকেই বলছেন—নতুন প্রজন্মের যুদ্ধ এখন আর শুধু প্রযুক্তির ব্যাপার নয়, বরং এটা অর্থনীতি, জনমনে প্রভাব বিস্তার এবং বহুসামরিক মাত্রায় ‘লো কস্ট হাই ইমপ্যাক্ট’ কৌশলের যুগে প্রবেশ করেছে। ইরানের বর্তমান হামলা সেটির একটি বহুল আলোচিত উদাহরণ।
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- শেয়ারবাজারে এল বড় সুখবর!
- স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ
- রিজার্ভের দাপট: বিদ্যুৎ খাতের ১৪ কোম্পানি বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- নারায়ণগঞ্জে বিএনপি নেতার বাড়িতে সেনা অভিযান:উদ্ধার ইয়াবা ও ধারালো অস্ত্র!
- মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের নতুন কৌশল: চীন ও রাশিয়া কী করবে?
- তিন মাসেই যে ১০ বেসরকারি ব্যাংকে ৩২ হাজার কোটি টাকার আমানত বৃদ্ধি!
- তারেক রহমানের দেশেফেরার সম্ভাব্য সময় জানালেনমির্জা ফখরুল
- লন্ডনে তারেক-ইউনূসের বৈঠকের পরে পর পর ২টি স্ট্যাটাসে কি বললেন পিনাকী?
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- ২৮ জুন ঢাকায় জনতার ঢল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মহাসমুদ্র!
- ডিএসইতে সাধারণ বীমা খাতের প্রান্তিক বিশ্লেষণ:মুনাফা বৃদ্ধির শীর্ষে কারা?
- নির্বাচিত নারী, অলঙ্কার নয়: গণতন্ত্রে নারীর শক্তির সন্ধান