ইসরায়েল-ইরান সংঘাত

ইসরায়েল ছাড়ার সময় এখনই: চীনের স্পষ্ট বার্তা

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৭ ০৯:০২:১৬
ইসরায়েল ছাড়ার সময় এখনই: চীনের স্পষ্ট বার্তা

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক সংঘর্ষ বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষিতে চীনের দূতাবাস মঙ্গলবার (১৭ জুন) এক সতর্কবার্তায় ইসরায়েলে অবস্থানরত চীনা নাগরিকদের ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব’ দেশটি ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় জাতীয় নিরাপত্তা দলের সঙ্গে হোয়াইট হাউজে জরুরি বৈঠক করেছেন।

ইসরায়েলে চীনা দূতাবাস তাদের সরকারি চ্যানেল উইচ্যাট-এ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানায়, “ইসরায়েলে অবস্থিত চীনা মিশন নাগরিকদের তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ার পূর্বশর্তে যত দ্রুত সম্ভব স্থল সীমান্ত অতিক্রম করে দেশত্যাগ করার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।”

দূতাবাস বিশেষভাবে জর্ডানের দিকে যাত্রা করার পরামর্শ দিয়েছে, যেহেতু অঞ্চলটির পশ্চিম সীমান্ত অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল এবং উত্তরণের জন্য খোলা রয়েছে।

চীনা বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “সংঘাত ক্রমেই তীব্র হচ্ছে, বেসামরিক অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হতাহতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে নাগরিকদের আর কোনো ঝুঁকি না নিয়ে দ্রুত প্রস্থান করাই যুক্তিযুক্ত।”

গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার মাত্রা বেড়ে চলেছে। ইসরায়েলি বিমান হামলা এবং ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিক্রিয়ার ফলে গাজা উপত্যকা, সিরিয়া সীমান্ত ও পশ্চিম তীর অঞ্চলে বিস্তৃতভাবে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে।

বেসামরিক স্থাপনায় আঘাত লাগার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইরান দাবি করেছে, ইসরায়েল তাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, যার পাল্টা জবাবে তারা ব্যালিস্টিক মিসাইল ব্যবহার করছে।

এদিকে এই সংকট আন্তর্জাতিক মহলে যখন বাড়ছে, ঠিক তখনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে নিজের জাতীয় নিরাপত্তা দলের সদস্যদের নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন।

সূত্র মতে, ট্রাম্প জি-৭ সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য কানাডায় ছিলেন, কিন্তু পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় সফর সংক্ষিপ্ত করে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরছেন। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেলে তিনি ওয়াশিংটনে পৌঁছে নিরাপত্তা পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য হোয়াইট হাউজের ‘সিচুয়েশন রুম’-এ বৈঠকে বসেছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই বৈঠক কেবল ইসরায়েল-ইরান পরিস্থিতি নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা কাঠামো ও তেলের বাজারে প্রভাব বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শক্তিগুলোও পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং রাশিয়া থেকে ইতোমধ্যে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান এসেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বেসামরিক মৃত্যুহার বৃদ্ধির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, যদি এই সংঘাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে তা শুধু ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং একটি বড় আঞ্চলিক যুদ্ধের রূপ নিতে পারে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, হিজবুল্লাহ, এবং অন্যান্য শক্তিও জড়িয়ে পড়তে পারে।

ইসরায়েল-ইরান সংঘাত এখন কেবল সীমান্তগত উত্তেজনা নয়, বরং বিশ্বশক্তিগুলোর কূটনৈতিক ও সামরিক অবস্থানেরও পরীক্ষা। চীনা দূতাবাসের নাগরিকদের দেশত্যাগের নির্দেশ এবং ট্রাম্পের হঠাৎ নিরাপত্তা বৈঠক প্রমাণ করে, এই সংঘাত যেকোনো মুহূর্তে আরও বিস্তৃত হতে পারে। আন্তর্জাতিক সমাজের এখন জরুরি দায়িত্ব সংঘর্ষ প্রশমন, মানবিক সহায়তা এবং আলোচনার টেবিল ফিরিয়ে আনা।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত