ইসরায়েল-ইরান সংঘাত

যে কারণে বিশ্বজুড়ে ফ্লাইট বাতিলের হিড়িক

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৬ ১৯:৫৫:৫৯
যে কারণে বিশ্বজুড়ে ফ্লাইট বাতিলের হিড়িক

ইসরায়েল-ইরান সংঘাত চরম আকার ধারণ করায় বৈশ্বিক বিমান চলাচলে নজিরবিহীন বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পর্যবেক্ষণ সংস্থা ও রিয়েল-টাইম ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে বাতিল হয়েছে ৬,০০০-এরও বেশি ফ্লাইট এবং এই সংখ্যা প্রতি ঘণ্টায় বাড়ছে।

সংঘাতপ্রবণ অঞ্চল এবং আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরগুলো যেমন তেলআবিব, তেহরান, দামেস্ক, বাগদাদ, বৈরুত ও আম্মান আংশিকভাবে অথবা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। ইসরায়েল, ইরান ও ইরাক সম্পূর্ণভাবে তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। জর্ডান, লেবানন ও সিরিয়া ট্রানজিট ফ্লাইটের সীমিত অনুমতি দিলেও কঠোর নিরাপত্তা শর্তে তা কার্যকর রয়েছে।

বিশ্বখ্যাত ফ্লাইট ট্র্যাকিং প্ল্যাটফর্ম ফ্লাইটরাডার২৪ জানিয়েছে, কেবল সংঘাতপূর্ণ বিমানবন্দরগুলো থেকেই প্রতিদিন প্রায় ৩,০০০ ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে, যা আঞ্চলিক রুট থেকে শুরু করে আন্তমহাদেশীয় নেটওয়ার্কেও গভীর প্রভাব ফেলছে।

ইসরায়েলের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বেন গুরিয়ন এই সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। জাতীয় বিমান সংস্থা এল আল ছাড়াও আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স এয়ার ফ্রান্স, উইজ এয়ার, রায়ানএয়ার ও ডেল্টা এয়ারলাইন্স ইসরাইলগামী এবং সেখান থেকে ছেড়ে যাওয়ার সব ফ্লাইট অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে।ডেল্টা জানিয়েছে, তাদের এই স্থগিতাদেশ অন্তত আগস্ট পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

ইসরায়েল শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ইরানের পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা এবং শীর্ষস্থানীয় সামরিক কমান্ডারদের ওপর টার্গেটেড হামলা চালিয়েছে। একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সামরিক অভিযানের হুমকি দেওয়া হয়েছে, যার ফলে দেশটির বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

ইরান, ইরাক ও জর্ডান তাদের আকাশসীমা পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করেছে। ইরাকি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল থেকে দেশটির আকাশপথে কোনো বেসামরিক ফ্লাইট চলাচল করছে না। পূর্ব ইরাক, যেটি ইউরোপ ও উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যতম ব্যস্ত আকাশপথ, সেটিও সম্পূর্ণ অচল।

লেবানন, সিরিয়া ও সৌদি আরবের কিছু অংশে ওভারফ্লাইট নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যা কেবল বিশেষ অনুমতি থাকলে কার্যকর হচ্ছে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এয়ারলাইন্স বড় পরিসরে ফ্লাইট বাতিল করেছে:

এমিরেটস: ইরাক, জর্ডান, লেবানন ও ইরানে সব ফ্লাইট স্থগিত

কাতার এয়ারওয়েজ: ইরান, ইরাক ও সিরিয়াগামী ফ্লাইট বাতিল

এয়ার ইন্ডিয়া: নিউইয়র্ক, ভ্যাঙ্কুভার, শিকাগো ও লন্ডন থেকে ইরান হয়ে পরিচালিত রুটে বিকল্প ব্যবস্থা

লুফথানসা: তেহরানগামী সব ফ্লাইট বাতিল এবং ইরান, ইরাক ও ইসরায়েলের আকাশসীমা এড়িয়ে চলার ঘোষণা

রাশিয়ার Rosaviatsia: ২৬ জুন পর্যন্ত রুশ বিমান সংস্থাগুলোকে ইরান, ইরাক, ইসরায়েল ও জর্ডানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলার নির্দেশ

এছাড়া ইসরায়েলের নিজস্ব বিমান সংস্থা ইসরায়ার ও আরকিয়া সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেশ থেকে বিমান সরিয়ে নিয়েছে।

এই সংকট বিশ্বব্যাপী শুধু বিমান চলাচলেই নয়, অর্থনৈতিক খাতেও তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলেছে।আন্তর্জাতিক বাজারে এয়ারলাইন্সগুলোর শেয়ারের দর পড়ে গেছে:

  • IAG (ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের মূল প্রতিষ্ঠান): ৪.৬%
  • ডেল্টা: ৪%
  • রায়ানএয়ার: ৩.৫%

তেলবাজারেও চাপ তৈরি হয়েছে। বিমান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় ও আকাশপথ বন্ধ থাকায় জ্বালানির চাহিদা, সরবরাহ এবং ব্যয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।

উল্লেখ্য, চলমান উত্তেজনার আগে ৪ মে হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের এক ক্ষেপণাস্ত্র তেলআবিব বিমানবন্দরের কাছে আঘাত হানে। তখন থেকেই অনেক আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স ইসরাইলগামী ফ্লাইট স্থগিত করে। সেই ঘটনার রেশ ধরেই আজকের এই বিমান চলাচল সংকট আরও গভীরভাবে দেখা দিয়েছে।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত