শরীরে ট্যাটু আঁকা: ইসলামে জায়েজ নাকি হারাম?

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৪ ১০:০১:৫৭
শরীরে ট্যাটু আঁকা: ইসলামে জায়েজ নাকি হারাম?

ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই স্বাভাবিক রূপচর্চা বা সৌন্দর্য্যের বিকাশকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং এটি শুধুমাত্র জায়েজ নয়, বরং উত্তম কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়। আল্লাহ তাআলা কুরআনে সুরা আ’রাফের ৩১ নম্বর আয়াতে আদমের সন্তানদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা নামাজের সময় পরিপাটি এবং সুশোভিত সাজসজ্জা গ্রহণ করবে। এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, “হে আদম সন্তান! প্রত্যেক নামাজের সময় সাজসজ্জা গ্রহণ কর, আর খাও এবং পান কর; তবে অপব্যয় করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ অপব্যয়কারীদের পছন্দ করেন না।” (আ’রাফ: ৩১) এই আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মুসলমানদের জন্য নামাজের সময়ে পরিপাটি হওয়া এবং সুন্দর পোশাক পরিধান করা উত্তম ও প্রিয় কাজ।

অন্যদিকে, সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে নবী করিম (সা.) বলছেন, যার অন্তরে এক বিন্দু অহংকার রয়েছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেন, “হে আল্লাহর রাসুল, সবাই তো ভালো পোশাক পরতে ও সুসজ্জিত হতে পছন্দ করে; এই কি অহংকারের মধ্যে পড়ে?” এ প্রশ্নের উত্তরে নবী (সা.) বললেন, “আল্লাহ তায়ালা নিজে সুন্দর ও সৌন্দর্যকে ভালোবাসেন। কিন্তু অহংকার মানে হলো হক বা সত্যকে অস্বীকার করা এবং মানুষকে ছোট করা।” (সহিহ মুসলিম: ১৪৭) অর্থাৎ, আল্লাহর সৃষ্টির সৌন্দর্যকে স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ করা এবং নিজেকে পরিচ্ছন্ন ও সাজগোজ করা ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রশংসনীয়, তবে অহংকার করা এবং অন্যদের অবমূল্যায়ন করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

তবে ইসলামে সৌন্দর্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে, বিশেষ করে যখন তা আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করে। যেমন দাঁত কেটে সরু করা, ভ্রু তুলে ফেলা, শরীরে উল্কি বা ট্যাটু আঁকা, এগুলো কঠোরভাবে হারাম বা নিষিদ্ধ। হাদিসে বর্ণিত আছে, নবী করিম (সা.) বলেন, “আল্লাহ ওইসব নারীকে লানত করেছেন যারা উল্কি আঁকে বা করায়, যারা ভ্রু তুলে ফেলে বা দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে; কারণ এরা আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি ঘটায়।” (সহিহ বুখারি: ৪৮৮৬) এ থেকে স্পষ্ট যে, আল্লাহর সৃষ্টিকে অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তন করা ও বিকৃত করা ইসলাম কঠোরভাবে বারণ করেছে।

এই বিধিনিষেধের পেছনে রয়েছে একটি গভীর দার্শনিক ও নৈতিক দিক: মুসলিম ব্যক্তি তার প্রকৃত পরিচয় ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিনম্রতা রক্ষা করবে, এবং নিজেকে সাজাতে হবে এমনভাবে যা আল্লাহর সৃষ্টির সম্মান রক্ষা করে। নিজেকে পরিচ্ছন্ন ও সুশোভিত করে তোলা যেমন প্রশংসনীয়, তেমনি কৃত্রিম ও অপ্রাকৃত পরিবর্তন আনা যা আল্লাহর সৃষ্টি ব্যাহত করে, তা নিষিদ্ধ। এছাড়াও অহংকার ও গর্বকে ইসলামে এক গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়, যা সমাজে বিভেদ ও বৈরিতা সৃষ্টি করে।

সার্বিকভাবে, ইসলাম সৌন্দর্যকে প্রশংসা করে, কিন্তু একই সঙ্গে সতর্ক করে দেয় যেন ব্যক্তি তার সৌন্দর্যকে অহংকার বা অবাস্তব রূপচর্চার মাধ্যমে নষ্ট না করে। তাই একজন মুসলিমের উচিত সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতাকে নিজের নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বজায় রাখা।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত