কোলন ক্যান্সার রোগীদের জন্য সতর্কবার্তা!

জীবনযাপন ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১২ ১৪:৪০:৫৭
কোলন ক্যান্সার রোগীদের জন্য সতর্কবার্তা!

ক্যান্সার একটি প্রাণঘাতী রোগ, যার বিভিন্ন ধরন রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো কোলন ক্যান্সার, যা মূলত বৃহদন্ত্রে হয়। এই রোগে আক্রান্ত হলে ও চিকিৎসার সময়কালে পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস শুধু সহায়কই নয়, বরং জীবন রক্ষাকারী উপাদান হিসেবে কাজ করে। কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসার প্রক্রিয়ায় যেমন কেমোথেরাপি, তেমনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, শরীরের পুনর্গঠন এবং মানসিক স্বস্তির জন্য খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

যেসব খাবার পরিহার করা জরুরি

১. চিনি ও অতিরিক্ত শর্করা-সমৃদ্ধ খাবার

মিষ্টি, ক্যান্ডি, চিনিযুক্ত পানীয় এবং অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত ডেজার্টে পুষ্টির পরিমাণ খুবই কম, অথচ ক্যালোরি ও চিনি বেশি থাকে। এসব খাবার বেশি খাওয়া হলে শরীরে অতিরিক্ত ওজন বাড়ে, যা কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন বমি, ডায়রিয়া, দুর্বলতা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

২. কার্বোনেটেড পানীয় ও কোলা জাতীয় দ্রব্য

ফিজি ড্রিংক বা কার্বোনেটেড পানীয় পেটে গ্যাস জমায়, বমিভাব বাড়ায় এবং পাকস্থলীকে উত্তেজিত করে। এতে থাকা অতিরিক্ত ক্যালোরি ও চিনি শরীরে কোনো পুষ্টিগুণ না দিয়ে বরং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

৩. স্যাচুরেটেড ও ট্রান্স ফ্যাট

ভাজা খাবার, ফাস্ট ফুড, রেডি টু ইট খাবারে উচ্চমাত্রায় স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা হজমে সমস্যা তৈরি করে এবং পেটের অসুবিধা বাড়ায়। চিকিৎসার কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় এবং রোগীর অবস্থাকে জটিল করে তোলে।

৪. ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল

ক্যাফেইন পাকস্থলীতে এসিড নিঃসরণ বাড়ায়, ফলে গলা ব্যথা, গিলতে কষ্ট ও ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। অ্যালকোহল কেমোথেরাপির ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করে মুখ শুকিয়ে যাওয়া ও হজমের সমস্যা বাড়াতে পারে।

৫. প্রক্রিয়াজাত মাংস

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বেকন, সসেজ, কোল্ড কাট, মাংস স্প্রেডের মতো প্রক্রিয়াজাত মাংসে থাকা রাসায়নিক কোলনের জন্য ক্ষতিকর এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। কোলন ক্যান্সারের রোগীদের জন্য এসব খাবার একেবারেই পরিহারযোগ্য।

সুস্থ জীবনধারায় ফিরে যেতে হলে রোগীর খাদ্যতালিকায় কিছু নির্দিষ্ট পুষ্টিকর উপাদান অবশ্যই রাখা উচিত। এতে থাকা পুষ্টিগুণ কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে সাহায্য করে, শরীরে শক্তি জোগায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তোলে। এই তালিকায় প্রধানভাবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে পুষ্টিকর সবজি ও ফলমূল, যেগুলোতে রয়েছে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। পাশাপাশি, চর্বিহীন প্রোটিন যেমন মুরগি ও মাছ শরীরের কোষ পুনর্গঠনে সহায়তা করে। মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট যেমন জলপাই তেল, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ মাছ, বাদাম ও বীজও রোগ প্রতিরোধ ও অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা লাইসেন্সপ্রাপ্ত পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে রোগীর শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে ডায়েট চার্ট তৈরি করা উচিত। কারণ কোলন ক্যান্সারের প্রতিক্রিয়া ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। সঠিক খাবার যেমন চিকিৎসার ফলাফল ভালো করে, তেমনি ভুল খাদ্য রোগের জটিলতা বাড়িয়ে দিতে পারে।

কোলন ক্যান্সারে আক্রান্তদের জন্য খাদ্য শুধু পুষ্টির উৎস নয় এটি একটি চিকিৎসা সহায়ক উপাদান। খাদ্যাভ্যাসে সচেতনতা এবং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এই রোগ মোকাবেলায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তাই রোগী ও তার পরিবারের জন্য খাদ্যনির্বাচনে দায়িত্বশীল ও বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সময়ের দাবি। সঠিক পুষ্টির মাধ্যমে ক্যান্সার যুদ্ধে জয়লাভ করা সম্ভব এই বার্তাটিই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ