তরুণ চিকিৎসকের চোখে ভোরবেলা: ভালো থাকার বৈজ্ঞানিক রহস্য

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১১ ১১:৫২:৪৮
তরুণ চিকিৎসকের চোখে ভোরবেলা: ভালো থাকার বৈজ্ঞানিক রহস্য

সত্য নিউজঃ ভোরে ঘুম থেকে ওঠা শুধু একটি অভ্যাস নয়, এটি একটি জীবনধারা, যা আমাদের মানসিক শান্তি, শারীরিক সুস্থতা ও পেশাগত সফলতার দরজাও খুলে দিতে পারে। গবেষণা ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন, তারা দৈনন্দিন জীবনে অধিক সুসংগঠিত, সক্রিয় এবং ইতিবাচক মনোভাবসম্পন্ন হয়ে ওঠেন।

তরুণ চিকিৎসক ডাঃ মাহবুবুর রহমান আম্মার বলছেন,
"ভোরে ওঠা মানেই শুধু সময়ের সদ্ব্যবহার নয়, এটি একটি বৈজ্ঞানিক ও স্বাস্থ্যসম্মত সিদ্ধান্ত। সকালে সূর্যের আলো দেহে ভিটামিন ডি-এর উৎপাদন বাড়ায়, যা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। পাশাপাশি, এ সময়ের নির্মল বাতাস ও পরিবেশ আমাদের মন ও মস্তিষ্কের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।"

নিচে সকালে ঘুম থেকে ওঠার ১০টি উল্লেখযোগ্য উপকারিতা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:

১. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন

সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মন থাকে ফ্রেশ, যা উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা হ্রাস করে। সারাদিনের কাজে মনোযোগ বজায় রাখতে সহায়তা করে এই প্রাথমিক প্রশান্তি।

২. ভিটামিন ডি গ্রহণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

ভোরের সূর্যরশ্মি প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি উৎপাদনে সহায়তা করে, যা হাড় মজবুত করা ছাড়াও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।

৩. দিন শুরু করার জন্য বাড়তি সময়

ভোরে উঠলে কাজের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করেন, তারা কম সময়েই বেশি কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হন।

৪. শক্তি ও উদ্দীপনা বৃদ্ধি

প্রাকৃতিক আলোতে ঘুম থেকে জেগে ওঠা শরীরের সার্কাডিয়ান রিদম উন্নত করে। এতে হরমোনের নিঃসরণ সঠিকভাবে হয় এবং দেহে প্রাণশক্তি আসে।

৫. মনোযোগ ও একাগ্রতা বৃদ্ধি

ভোরের সময়টিতে পরিবেশ শান্ত থাকে, ফলে কম বিভ্রান্তি ও বেশি মনোযোগে কাজ করা সম্ভব। এটি শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।

৬. দৈনিক পরিকল্পনা সহজ হয়

সকালের বাড়তি সময় দিনটিকে সুন্দরভাবে পরিকল্পনা করার সুযোগ দেয়, যা কাজের চাপ হ্রাস করে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।

৭. শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখা

ভোরের ঠান্ডা ও নির্মল বাতাসে হাঁটা বা দৌড়ানো শরীরকে চাঙ্গা করে তোলে। এ সময় ব্যায়াম করলে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হয়।

৮. মানসিক চাপ হ্রাস ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি

দিনটি ধীরে ধীরে শুরু করার সুযোগ থাকায় মানসিক চাপ কমে এবং আপনি নিজেকে অধিক নিয়ন্ত্রিত ও প্রস্তুত মনে করেন।

৯. প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ

ভোরের নির্মল পরিবেশ, পাখির কিচিরমিচির এবং প্রাকৃতিক আলো মস্তিষ্কে ডোপামিনের নিঃসরণ বাড়ায়, যা মানসিক প্রশান্তি ও সৃজনশীলতা বাড়ায়।

১০. সৃজনশীল চিন্তাভাবনার উন্নয়ন

ভোরের সময় মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবেই সজাগ ও উদ্দীপ্ত থাকে। এ সময় লেখালেখি, সমস্যা সমাধান বা সৃজনশীল কাজে মনোনিবেশ করা সহজ হয়।

গবেষণা ও ঐতিহ্য যা বলে

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সকালে ওঠেন তারা রাতজাগা শিক্ষার্থীদের তুলনায় পড়াশোনায় ভালো ফল করেন। ফোর্বস সাময়িকী মতে, সকালে ওঠা ব্যক্তি জীবনে দীর্ঘমেয়াদে অধিক সুখী ও সফল হন।

এছাড়া, বিভিন্ন ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক প্রথাতেও ভোরে ওঠার গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হিন্দু ধর্মে "ব্রহ্মমুহূর্ত", ইসলাম ধর্মে "সুবহে সাদিক" – এসব সময়কে বলা হয় প্রার্থনা ও ধ্যানের শ্রেষ্ঠ সময়। এমনকি বিখ্যাত মনীষী বেনজামিন ফ্র্যাঙ্কলিন বলেছিলেন,
"Early to bed and early to rise makes a man healthy, wealthy, and wise."

চিকিৎসকের পরামর্শ

তরুণ চিকিৎসক ডাঃ মাহবুবুর রহমান আম্মার বলেন,
"প্রথমে ভোরে উঠতে কিছুটা কষ্ট হলেও, ধীরে ধীরে এই অভ্যাস শরীরের দেহঘড়ির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে যায়। যেকোনো ভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে দরকার ধৈর্য ও দৃঢ় মনোবল।"

তিনি আরও বলেন,
"ভোরে উঠলে শুধুমাত্র শারীরিক স্বাস্থ্য নয়, মানসিক সুস্থতা, খাদ্যাভ্যাস, এবং জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে যেতে পারে। এটি তরুণ সমাজের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যারা নিয়মিত পড়াশোনা বা কর্মক্ষেত্রে চাপের মধ্যে থাকেন।"

ভোরে ওঠা কোনো দণ্ড নয়, বরং একটি উপহার—নিজের প্রতি, নিজের শরীর ও মননের প্রতি। এই অভ্যাস গড়ে তুলুন ধীরে ধীরে, অনুভব করুন জীবনের ছোট ছোট ইতিবাচক পরিবর্তন।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত