টানা পতনে কাঁপছে ভারতের শেয়ারবাজার

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১০ ২০:১৪:১৬
টানা পতনে কাঁপছে ভারতের শেয়ারবাজার

ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনা ক্রমেই প্রভাব ফেলছে ভারতের অর্থনীতির অন্যতম স্পর্শকাতর খাত—শেয়ারবাজারে। টানা দ্বিতীয় দিনের মতো পতনের মুখ দেখেছে ভারতের প্রধান শেয়ার সূচক সেনসেক্স ও নিফটি। সপ্তাহের শেষ লেনদেনের দিন, গতকাল শুক্রবার সেনসেক্সে পতন হয়েছে ৮৮০ পয়েন্টের বেশি এবং নিফটি কমেছে ২৬৫ পয়েন্ট। এর ফলে দুই দিনে বাজার থেকে প্রায় ৭ লাখ কোটি রুপি মূলধন হাওয়া হয়ে গেছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রথমদিকে আক্রমণের পর বাজার স্থিতিশীল থাকলেও যুদ্ধবিরতির অনিশ্চয়তা, সীমান্তে উত্তেজনা এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভবিষ্যৎ শঙ্কার কারণে বাজারে মৃদু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গত বুধবার 'অপারেশন সিঁদুর' শুরুর পর বাজারে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও তা বিনিয়োগে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু পরবর্তী দুই দিন, বৃহস্পতি ও শুক্রবার, আস্থার ঘাটতির কারণে বাজার পড়ে যায় চাপে।

শুক্রবার সেনসেক্স ৮৮০.৩৪ পয়েন্ট হারিয়ে নেমে আসে ৭৯,৪৫৪.৪৭ পয়েন্টে, যা ৮০ হাজারের মনস্তাত্ত্বিক সীমার নিচে চলে এসেছে। নিফটি ২৬৫.৮০ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ২৪,০০৮ পয়েন্টে। ছোট ও মাঝারি কোম্পানির শেয়ারেও দেখা যায় মৃদু পতন, যথাক্রমে ০.৩০% ও ০.১০% হারে।

রুপি-ডলারের লড়াইয়ে মিশ্র সাড়া

ভারতীয় মুদ্রা রুপির দামে ছিল অস্থিরতা। বৃহস্পতিবার একদিনেই রুপির দর পড়ে ১.৩০ রুপি, যা গত আড়াই বছরে একদিনে সর্বোচ্চ পতন। তবে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের (RBI) হস্তক্ষেপের ফলে শুক্রবার রুপির মান কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়; ২২ পয়সা বেড়ে তা দাঁড়ায় ৮৫.৩৬ রুপিতে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, শেয়ার সূচকের পতনের চেয়ে বেশি উদ্বেগ তৈরি করেছিল রুপির পতন। সেই দিক থেকে রিজার্ভ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ বাজারে সাময়িক স্বস্তি এনেছে।

পাকিস্তানের বাজারে আরও গভীর রক্তক্ষরণ

'অপারেশন সিঁদুর'–এর পর পাকিস্তানের শেয়ারবাজারেও ব্যাপক ধস দেখা গেছে। দেশটির প্রধান শেয়ার সূচক প্রায় ৫ শতাংশ কমে গেছে। এ থেকে বোঝা যায়, আঞ্চলিক উত্তেজনার প্রভাব শুধু ভারতের নয়, পাকিস্তানের অর্থনীতিতেও ব্যাপকভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে।

সামরিক উত্তেজনার অতীত তুলনা

ইতিহাস বলছে, ভারত-পাকিস্তান সামরিক উত্তেজনার সময়ে শেয়ারবাজারে সাধারণত সাময়িক পতন হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। যেমন—১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধে সেনসেক্স ও নিফটি মাত্র ০.৮% হারে কমেছিল। ২০০১ সালের সংসদ হামলা এবং ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার সময়ও শেয়ার সূচক সাময়িকভাবে প্রভাবিত হলেও দ্রুত পুনরুদ্ধার ঘটে।

বিনিয়োগকারীদের কৌশল: ধৈর্যই মূল চাবিকাঠি

ভারতের ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান আনন্দ রাঠির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সামরিক সংঘাত যদি আরও গভীরতর রূপ নেয়, তবুও দীর্ঘমেয়াদে শেয়ারবাজার বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে না। কারণ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা এখনো ভারতের অর্থনৈতিক ভিতের ওপর অটুট। গত ১৪ দিনে তারা ৪৩,৯৪০ কোটি রুপির শেয়ার কিনেছে। ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও বাজারে মৌলিক অর্থনৈতিক শক্তি বজায় রয়েছে।

সামনে কী অপেক্ষা করছে?

যদিও বিনিয়োগকারীরা এখনো শঙ্কিত, তবে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, সোমবার (পরবর্তী লেনদেনের দিন) আরও সামান্য পতনের সম্ভাবনা থাকলেও বাজার দ্রুত স্থিতিশীল হয়ে উঠবে। কারণ, সাম্প্রতিক সংঘাত নির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক এবং বড় পরিসরের যুদ্ধের ইঙ্গিত এখনো স্পষ্ট নয়। এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতীয় পক্ষ এই হামলা কৌশলগত এবং সীমিত পরিসরে রাখতে চায়, যা বাজারের জন্য কিছুটা স্বস্তির ইঙ্গিত বহন করে।

বর্তমান ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন ভারতের শেয়ারবাজারে অস্থিরতা তৈরি করলেও ইতিহাস এবং অর্থনৈতিক ভিত্তি বলছে—বাজার এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠবে। সাময়িক পতন বিনিয়োগকারীদের জন্য সতর্কতার বার্তা হলেও, দীর্ঘমেয়াদি আস্থার ঘাটতি হওয়ার কারণ এখনো দৃশ্যমান নয়।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত