পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয় ও দাজ্জালসহ কেয়ামতের ১০টি ভয়াবহ আলামত

আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিনকে বিভিন্ন নামে নামকরণ করেছেন যেন মানুষ সেটাকে স্মরণে রেখে উপদেশ গ্রহণ এবং এ বিষয়ে চিন্তা করে। এগুলোর অন্যতম হলো বিচার দিবস ফায়সালার দিন হিসাবের দিন পরিতাপের দিন মহাসমাবেশের দিন এবং পুনরুত্থান দিবস। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে বলা হয়েছে কেয়ামতের দিন হবে এক ভয়াবহ ও বিভীষিকাময় দিন এবং এই ভয়াবহতা যে কত ব্যাপক হবে তা কল্পনা করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন সেদিন মানুষ বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মতো হবে। অন্য আয়াতে তিনি বলেন যেদিন কেয়ামত উপস্থিত হবে সেদিন মানুষ পলায়ন করবে তার ভাই থেকে এবং তার মা বাবা স্ত্রী ও সন্তান থেকে। সেদিন তাদের প্রত্যেকের অবস্থা হবে গুরুতর যা তাকে সম্পূর্ণভাবে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে। রাব্বুল আলামিন আরও বলেন হে মানুষ তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো। কেয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ংকর ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্যধাত্রী তার দুগ্ধপোষ্য শিশুর কথা ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী নারী গর্ভপাত করে ফেলবে। আর তুমি মানুষকে দেখবে মাতালের মতো অথচ তারা নেশাগ্রস্ত নয়। মূলত আল্লাহর শাস্তি খুব কঠিন হওয়ায় মানুষের অবস্থা এরূপ হবে।
হাদিস শরীফে এসেছে হজরত আয়েশা রা. বলেন আমি মহানবী সা. কে বলতে শুনেছি কেয়ামতের দিন মানুষ উলঙ্গ হয়ে খতনাবিহীন অবস্থায় কবর থেকে হাশরের ময়দানে এসে দাঁড়াবে। এ কথা শুনে আমি জিজ্ঞেস করলাম হে আল্লাহর রাসুল নারী পুরুষ সবাই কি উলঙ্গ থাকবে কারণ এমন হলে তো খুবই লজ্জার ব্যাপার। উত্তরে হুজুর সা. বললেন হে আয়েশা সেদিনের পরিস্থিতি এত ভয়ংকর হবে যে কেউ কারও দিকে তাকানোর কথা কল্পনাও করতে পারবে না।
ভয়াবহ এই কেয়ামত কবে কখন হবে তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। তবে রাসুল সা. কেয়ামতের কিছু আলামত বলে গিয়েছেন যা দুই ধরনের তথা ছোট আলামত ও বড় আলামত। সর্ববৃহৎ ১০টি আলামত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে হজরত হুজাইফা ইবনে উসাইদ রা. জানান তাঁরা রাসুল সা. এর কামরার ছায়ায় বসে কথা বলছিলেন এবং তাঁদের মধ্যে কেয়ামতের ব্যাপারে আলোচনা উঠলে আওয়াজ উঁচু হয়ে যায়। তখন রাসুল সা. বললেন কেয়ামত ততক্ষণ পর্যন্ত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না সেটার পূর্বে ১০টি নিদর্শন প্রকাশ পাবে।
এই নিদর্শনগুলো হলো পৃথিবীর পূর্বপ্রান্তে ভূখণ্ড ধস পশ্চিমপ্রান্তে ভূখণ্ড ধস আরব উপদ্বীপে ভূখণ্ড ধস ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়া দাজ্জালের প্রকাশ দাব্বাতুল আরজ প্রকাশ পাওয়া ইয়াজুজ মাজুজ বের হওয়া পশ্চিমপ্রান্ত হতে সূর্যোদয় হওয়া এবং সর্বশেষ আদন দেশের প্রান্ত হতে আগুন উত্থিত হবে যা লোকেদের তাড়িয়ে এক স্থানে একত্রিত করবে। শুবাহ রহ. বলেন এ বর্ণনায় দশম আলামতের কথা উল্লেখ নেই। তবে অন্য বর্ণনায় দশম আলামত হিসেবে কোথাও ঈসা আ. এর অবতরণের কথা উল্লেখ রয়েছে আবার কোথাও উল্লেখ করা হয়েছে যে সর্বশেষ এমন দমকা হাওয়া প্রবাহিত হবে যা মানুষকে উড়িয়ে নিয়ে সমুদ্রে নিক্ষেপ করবে।
২৬ নভেম্বরের নামাজের সময়সূচি
আজ বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫; বাংলা তারিখ ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ এবং হিজরি ০৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৭। দিনের সূচনায় রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা থেকে প্রকাশিত নামাজের সময়সূচি অনুযায়ী প্রতিটি নামাজের সুনির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। ভোরের প্রথম আলো থেকে রাতের শেষ প্রহর পর্যন্ত সময় অনুযায়ী ইবাদত পুরণের সুযোগ-সুবিধা জানাতে এই সময়সূচি মুসল্লিদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
আজ জোহরের সময় শুরু হবে সকাল ১১টা ৪৯ মিনিটে, যখন সূর্য মধ্যগগনে অবস্থান করতে থাকে। এরপর দুপুর গড়িয়ে বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে শুরু হবে আসর নামাজের সময়, যা দিনের দ্বিতীয়ার্ধের ইবাদতের সূচক। দিনের আলো নিভে আসার মুহূর্তে মাগরিবের সময় নির্ধারিত হয়েছে বিকেল ৫টা ১৪ মিনিটে, ঠিক সূর্যাস্তের পরপরই।
রাতে এশার নামাজের সময় শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টা ৩১ মিনিটে, যা দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততা শেষে শীতলতার সঙ্গে রাতের ইবাদতে নিবেদিত হওয়ার আহ্বান জানায়। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ফজরের সময় শুরু হবে ভোর ৫টা ০৬ মিনিটে, আর নতুন দিনের সূচনা হিসেবে আগামীকাল ঢাকায় সূর্যোদয় হবে সকাল ৬টা ২১ মিনিটে। আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত হবে সন্ধ্যা ৫টা ১১ মিনিটে।
সূত্র : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।
কোরআন–হাদিসে গিবতের ভয়াবহ শাস্তির বর্ণনা
ইসলামে গিবত বা পরনিন্দাকে যে ভয়ংকর গুনাহ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। একজন মুসলমানের অনুপস্থিতিতে তার এমন দোষ-ত্রুটি বলা, যা সে নিজে শুনলে অপছন্দ করবে, ইসলামে সেটাকেই গিবত বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের সামনে গিবতের পরিচয় তুলে ধরে বলেন, “তোমার ভাইয়ের এমন বিষয় উল্লেখ করা, যা সে অপছন্দ করে, সেটাই গিবত।” সাহাবিরা জানতে চাইলে যে দোষটি সত্যিই ওই ব্যক্তির মধ্যে থাকলে কী হবে, তখন তিনি জানান, সেটাই গিবত। আর যদি দোষটি তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তা মারাত্মক অপবাদ বা ‘বুহতান’।
কোরআনে আল্লাহ তায়ালা গিবতকে অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সুরা হুজুরাতে বলা হয়েছে, “তোমাদের কেউ কি মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাইবে? নিশ্চয়ই তোমরা তা ঘৃণা করবে।” এই আয়াতের মধ্য দিয়ে গিবতের ভয়াবহতা ও নিন্দনীয় অবস্থানকে চিত্রায়িত করা হয়েছে। অন্যদিকে সুরা হুমাজায় নিন্দুক, কুৎসাকারী ও অন্যের সম্মানহানিকারীদের জন্য কঠোর শাস্তির ঘোষণা দিয়ে বলা হয়েছে যে তাদের হুতামায় নিক্ষেপ করা হবে, যা আল্লাহর জ্বালানো আগুন, এবং হৃদপিণ্ড পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
হাদিসেও গিবতকারীদের ভয়াবহ পরিণতির কথা এসেছে। মহানবী (সা.) মিরাজে যাওয়ার সময় তামার নখওয়ালা একদল মানুষকে দেখেন, যারা নিজেদের মুখ ও বুক ক্ষতবিক্ষত করছে। এদের পরিচয় জানতে চাইলে জিবরাইল (আ.) জানান, “এরা দুনিয়ায় মানুষের মাংস ভক্ষণ করত,” অর্থাৎ গিবত করত এবং তাদের সম্মানহানি করত। আরও একটি হাদিসে সতর্ক করা হয়েছে যে, কোনো মুসলমানের গিবতের বিনিময়ে যে ব্যক্তি এক গ্রাস খাদ্য গ্রহণ করবে, তাকে কিয়ামতে সমপরিমাণ জাহান্নামের আগুন খাওয়ানো হবে।
ইসলামে গিবত করা যেমন হারাম, তেমনি গিবত শোনা সমপরিমাণ পাপ। ইমাম নববি (রহ.) বলেন, গিবত শুনলে মুসলমানের দায়িত্ব হলো গিবতকারীকে বিরত করা। মুখে নিষেধ করতে না পারলে হাত দিয়ে বাধা দেবে, আর যদি তাও সম্ভব না হয়, তাহলে সেই মজলিশকে তৎক্ষণাৎ ত্যাগ করবে। কারণ গিবত শোনাকে সমর্থন করা নিজেই অপরাধ।
আলেমরা মনে করেন, আজকের সমাজে পিছনে কারও দোষ আলোচনা করা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাউকে কটূক্তি করা, নিজের মতবিরোধে অন্যের গোপন বিষয় প্রকাশ সবই গিবতের আওতায় পড়ে। অথচ অনেকে এসবকে অপরাধই মনে করেন না। ধর্মীয় শিক্ষার অভাব ও আত্মশুদ্ধির ঘাটতির কারণে মানুষ সহজেই পরনিন্দায় যুক্ত হচ্ছে, যা ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে অশান্তি বাড়াচ্ছে।
২৫ নভেম্বর, আজকের নামাজের সময়সূচি
ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ নামাজ মুসলমানের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতগুলোর একটি। সময়মতো নামাজ আদায় করা শুধু ধর্মীয় দায়িত্ব নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। হাদিসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি নামাজের সময় আগেই মসজিদে উপস্থিত হয়ে নামাজের জন্য অপেক্ষা করে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকেন। তাই প্রতিটি মুসলমানের উচিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময় মতো আদায় করা এবং নিয়মিতভাবে মসজিদে উপস্থিত হওয়া।
আজ সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৫ ইংরেজি ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বাংলা এবং ৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি নিচে তুলে ধরা হলো।
ঢাকা ও আশপাশের নামাজের সময়
ফজর ৫টা
জোহর ১১টা ৪৯ মিনিট
আসর ৩টা ৩৫ মিনিট
মাগরিব ৫টা ১৪ মিনিট
ইশা ৬টা ৩১ মিনিট
আজ সূর্যাস্ত ৫টা ১১ মিনিট
আজ সূর্যোদয় ৬টা ২০ মিনিট
বিভিন্ন বিভাগের সময়সূচি ঢাকার সঙ্গে কিছুটা ভিন্ন হয়। তাই বিভাগীয় সময় নির্ধারণে নিচের মতো যোগ বা বিয়োগ করতে হবে।
বিয়োগ করতে হবে
চট্টগ্রাম ০৫ মিনিট
সিলেট ০৬ মিনিট
যোগ করতে হবে
খুলনা ০৩ মিনিট
রাজশাহী ০৭ মিনিট
রংপুর ০৮ মিনিট
বরিশাল ০১ মিনিট
তিন জিকিরে গুনাহ মাফ ও জান্নাতের সুসংবাদ
ইসলামে আল্লাহর জিকিরকে বলা হয় মুমিনের অস্ত্র, হৃদয়ের ওষুধ এবং রূহের খাদ্য। বিশেষত কিছু জিকির রয়েছে যেগুলোর গুরুত্ব কোরআন-হাদিসে অত্যন্ত জোর দিয়ে বলা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি”, “সুবহানাল্লাহিল আযীম”, “আস্তাগফিরুল্লাহ”।
এই তিনটি পবিত্র বাক্য মুমিনের আখেরাত ও দুনিয়ার জন্য অসীম কল্যাণ ও বরকতের দুয়ার খুলে দেয়।
আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সহজতম উপায়—আস্তাগফিরুল্লাহ
“আস্তাগফিরুল্লাহ” এমন একটি বাক্য, যার মাধ্যমে বান্দা সরাসরি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়। ইসলামের শিক্ষা হলো, আল্লাহ কখনো বান্দাকে হতাশ করেন না। একজন ব্যক্তি যদি আন্তরিকতার সঙ্গে বারবার এই দোয়া পড়েন, আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেন।
নবী করিম (সা.) নিজেও প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ বার ইস্তেগফার করতেন এটাই বলে দেয় এর গুরুত্ব কতটা। এই বাক্য মুমিনের জীবনে ভেতরের অন্ধকার দূর করে দেয়, হৃদয়কে করে আলোকিত।
আমলনামায় পাহাড়সম সওয়াব লিখিত হয়
“সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি” এবং “সুবহানাল্লাহিল আযীম”- এই দুই বাক্যকে হাদিসে বলা হয়েছে “দুইটি অতি প্রিয় বাক্য, জিহ্বায় হালকা, কিন্তু আমলনামায় অত্যন্ত ভারী।” মানুষ দিনে অল্প কিছু সময় ব্যয় করে জিকির করলে প্রতিদিনের আমলে যুক্ত হয় অসাধারণ সওয়াব, যা পরকালে মুমিনের জান্নাতের ওজন বাড়াবে। সওয়াব অর্জনের এতো সহজ মাধ্যম খুব কমই আছে।
জান্নাতে খেজুর গাছ রোপণ—অমূল্য পুরস্কার
নবী করিম (সা.) হাদিসে বলেছেন, “যে ‘সুবহানাল্লাহিল আযীম ওয়া বিহামদিহি’ পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ রোপণ করা হয়।” জান্নাতে একটি গাছ মানে অনন্তকালের জন্য একটি সম্পদ, একটি মর্যাদা এবং একটি ঘর রোপণ। এই পুরস্কার এতটাই মূল্যবান যে, দুনিয়ার সব সম্পদ দিয়েও তার সমতুল্য পাওয়া অসম্ভব। শুধু একটি বাক্য আর জান্নাতে রোপিত হয় এক মূল্যবান সৌগাত।
হৃদয়ে শান্তি, আত্মায় প্রশান্তি
আল্লাহর জিকিরে রয়েছে মনে প্রশান্তি। কোরআনে আছে- “নিঃসন্দেহে আল্লাহর স্মরণেই অন্তরের প্রশান্তি।” এই দোয়াগুলো পড়লে মানুষের ভেতরের দুশ্চিন্তা, স্ট্রেস, ভয় ও মানসিক ভারসাম্যহীনতা দূর হয়। আজকের ব্যস্ত জীবনে জিকিরই হতে পারে মনকে স্থির রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
প্রতিদিন ১০০ বার পাঠ—সৃষ্টিকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মর্যাদা
হাদিসে এসেছে, যদি কেউ সকালে ১০০ বার, সন্ধ্যায় ১০০ বার “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আযীম আস্তাগফিরুল্লাহ” পাঠ করে তাহলে সৃষ্টিকুলের মধ্যে তার মর্যাদা সবচেয়ে বেশি হবে, যদি না কেউ তার চেয়ে বেশি জিকির করে। এটি এমন এক আমল, যা খুব কম সময় নিয়েই মুমিনকে পৌঁছে দেয় উচ্চ মর্যাদায়।
মুমিনের জীবনে আধ্যাত্মিক শক্তি যোগায় এই দোয়া
এই তিন দোয়া আল্লাহর পবিত্রতা, মহত্ত্ব ও ক্ষমার স্বীকৃতি দেয়। এগুলো মুমিনকে আল্লাহর আরও কাছে নিয়ে যায়। জিকিরের ফজিলত শুধু দুনিয়ার নয় আখেরাতেও তার প্রভাব অসীম। নিয়মিত পাঠ করলে মানুষ হয়ে ওঠে পরিশুদ্ধ, বিনম্র, আল্লাহভীরু ও আল্লাহভক্ত।
দোয়াগুলো জীবনের জন্য বরকতের উৎস
এই জিকির মুমিনের জীবনে নিয়ে আসে-
- রিজিকে বরকত
- গুনাহের পরিশুদ্ধতা
- অন্তরে শান্তি
- পরিবারের জন্য রহমত
- দুনিয়া–আখেরাত উভয়ের সুসংবাদ
আল্লাহর স্মরণ ছাড়া সত্যিকারের শান্তি ও প্রশান্তি পাওয়া যায় না।
জিকিরের গুরুত্ব: সবচেয়ে সহজ, কিন্তু ফলাফল সবচেয়ে বড়
এই তিন দোয়া এমন, যা-
- কম সময়ে পড়া যায়
- মুখে সহজ
- নিয়মিত পাঠ করা যায়
- এবং যার ফজিলত অপরিমেয়
একজন মুমিনের উচিত প্রতিদিনের রুটিনে জিকিরকে অন্তর্ভুক্ত করা।এর মাধ্যমে হৃদয় হয় পরিশুদ্ধ, মন হয় শান্ত এবং জীবন হয় আল্লাহর রহমতে পরিপূর্ণ।
কোরআনের আলোকে আল্লাহর রহমত পাওয়ার ১০ উপায়
কোরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রহমত এমন একটি অসীম দান যা একজন মুমিনের জীবনকে পরিশুদ্ধ করে, তার বিপদ দূর করে এবং হৃদয়ে শান্তির আলো জ্বালায়। আল্লাহ নিজেই বলেছেন, তাঁর রহমত সমস্ত কিছুকে ঘিরে রেখেছে। সেই বিশাল রহমত লাভের জন্য ইসলাম বিশেষ কিছু পথনির্দেশ দিয়েছে। এসব নির্দেশনা শুধু ব্যক্তিগত ইবাদত নয়, বরং মানবিক আচরণ, নৈতিকতা, আন্তরিকতা এবং সমাজকল্যাণকে কেন্দ্র করে সাজানো।
প্রথমত, মানবিক দয়া একজন মুসলিমের চরিত্রের মূল ভিত্তি। সৃষ্টির প্রতি দয়া প্রদর্শন আল্লাহর অসীম দয়ার কারণ হয়। পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর জন্যও ক্ষমা পাওয়ার ঘটনাটি এ মহত্ত্বের বড় প্রমাণ।
দ্বিতীয়ত, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, রোজা ও জাকাতের মতো ফরজ ইবাদত পালন আল্লাহর আনুগত্যের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রকাশ। কোরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ফরজ ইবাদত কায়েম করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত বর্ষিত হয়।
তৃতীয়ত, ইহসান অর্থাৎ আন্তরিকভাবে ও নিষ্ঠার সঙ্গে আমল করা। যে আমলে হৃদয়ের পবিত্রতা থাকে, আল্লাহ তার প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ বর্ষণ করেন। সৎকর্মপরায়ণতা আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম।
তাকওয়া চতুর্থ উপায় যা মুমিনকে সব ধরনের গুনাহ থেকে বাঁচায় এবং আল্লাহর ভয় ও সচেতনতা তাকে রহমতের যোগ্য করে তোলে। আল্লাহ বলেন, তাঁর রহমত তাকওয়াবানদের জন্যই লিখে দেওয়া হয়েছে।
পঞ্চমত, কোরআন তেলাওয়াত ও চর্চা। কোরআন শুধু পাঠ নয়, বরং বুঝে তার আলোকে জীবন গঠন করাই রহমত লাভের প্রকৃত পথ। এ ছাড়া মনোযোগ দিয়ে কোরআন শোনার ক্ষেত্রেও আল্লাহ বিশেষ রহমতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সপ্তম উপায় হলো দ্বীনি কাজে কষ্ট স্বীকার হিজরত, সংগ্রাম, দ্বীনের পথে ধৈর্য ধারণ করা আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের কারণ হয়। ইসলামের ইতিহাসে এ উদাহরণ অসংখ্য।
অষ্টমত, সুন্নাহ অনুসরণ। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর আদর্শ অনুসরণ করলে রহমতের দ্বার খুলে যায় এ কথা কোরআনে সরাসরি উল্লেখ রয়েছে।
ইস্তেগফার, অর্থাৎ নিয়মিত ক্ষমা প্রার্থনা নবম উপায়। ইস্তেগফার যত বেশি, রহমত তত কাছে। গুনাহ থেকে মুক্তির পাশাপাশি জীবনযাত্রায় বরকতও নেমে আসে।
সবশেষে দোয়া যা রহমত প্রার্থনার সবচেয়ে সরাসরি মাধ্যম। সুরা কাহফের দোয়া "রব্বানা আতিনা মিন লাদুংকা রহমাহ" আল্লাহর রহমত আহ্বানের অন্যতম শক্তিশালী দোয়া হিসেবে পরিচিত।
একজন মুমিনের জীবনে আল্লাহর রহমত শুধু আধ্যাত্মিক মুক্তি নয় বরং দুনিয়াতেও নিরাপত্তা, শান্তি, প্রাচুর্য এবং সফলতার প্রতীক। ইসলাম সেই সব পথই সুস্পষ্টভাবে মানবজাতির সামনে তুলে ধরেছে।
রবিবারের নামাজের ওয়াক্তনামা এক নজরে
ইসলামের পাঁচটি রুকনের একটি হলো নামাজ, যা ইমানের পর মুসলমানের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে বিবেচিত। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ৮২ বার সালাতের উল্লেখ করে এর গুরুত্ব বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। নামাজ শুধু আধ্যাত্মিক শান্তির উৎস নয়, বরং শৃঙ্খলা, সময় সচেতনতা এবং আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যম। তাই প্রতিদিনের ব্যস্ততার মধ্যেও ওয়াক্তমতো নামাজ আদায় করা একজন মুসলমানের জন্য অত্যন্ত জরুরি। সেই ধারাবাহিকতায় আজ রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫ ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলের পূর্ণাঙ্গ নামাজের সময়সূচি প্রকাশ করা হয়েছে।
আজকের ফজরের নামাজের সময় শুরু হবে ভোর ৫টা ১ মিনিটে এবং শেষ হবে ভোর ৬টা ১৭ মিনিটে। আগামীকাল সোমবার ফজরের সময় এক মিনিট এগিয়ে ভোর ৫টা হবে। জোহরের ওয়াক্ত শুরু হবে দুপুর ১১টা ৪৮ মিনিটে এবং শেষ হবে বিকেল ৩টা ৩৪ মিনিট। এরপর আসরের সময় শুরু হবে বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে এবং শেষ হবে বিকেল ৪টা ৫৩ মিনিটে। সন্ধ্যাবেলা মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হবে ৫টা ১৪ মিনিটে এবং থাকবে ৬টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। ইশার সময় শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টা ৩১ মিনিটে এবং বজায় থাকবে রাত ৪টা ৫৬ মিনিট পর্যন্ত, যদিও শরিয়তের দৃষ্টিতে মধ্যরাতের আগেই ইশা আদায় করা উত্তম।
ঢাকার নির্ধারিত সময়ের সঙ্গে কিছু বিভাগীয় অঞ্চল সময় যোগ-বিয়োগ করে অনুসরণ করবে। চট্টগ্রাম ও সিলেটে যথাক্রমে পাঁচ ও ছয় মিনিট বিয়োগ করতে হবে। অন্যদিকে খুলনা, রাজশাহী, রংপুর এবং বরিশালের জন্য নির্ধারিত সময়ের সঙ্গে তিন থেকে আট মিনিট পর্যন্ত যোগ করতে হবে। এসব সময় পার্থক্য ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে হয়ে থাকে এবং প্রতিটি এলাকার মুসলমানের জন্য সঠিক ওয়াক্ত অনুযায়ী নামাজ আদায় করা আবশ্যক।
আজকের দিনটি রোজাদারদের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি উল্লেখ করা হয়েছে। সেহরির শেষ সময় ভোর ৪টা ৫৫ মিনিট এবং ইফতারের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১৪ মিনিট। রোজাদারদের জন্য এই সঠিক সময় মানা ইসলামী বিধান অনুসরণে অপরিহার্য।
নফল নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রেও আজকের দিনটি বিশেষভাবে চিহ্নিত। ইশরাকের সময় শুরু হবে সকাল ৬টা ৩২ মিনিটে এবং চলবে সকাল ৮টা ২৩ মিনিট পর্যন্ত। চাশতের সময় থাকবে সকাল ৮টা ২৪ মিনিট থেকে ১১টা ৪১ মিনিট পর্যন্ত। আর তাহাজ্জুদের সময় technically ইশার সঙ্গে শুরু হলেও উত্তম সময় হিসেবে ধরা হয় রাত ৯টা ৫৫ মিনিট থেকে সুবহি সাদিক ৪টা ৫৬ মিনিট পর্যন্ত। নফল নামাজ আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের বিশেষ মাধ্যম, এবং অনেক পণ্ডিতের মতে নফল ইবাদত বান্দাকে আত্মিকভাবে আরও পরিশুদ্ধ করে।
ইসলামী শরিয়তে তিনটি সময়ে নামাজ পড়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজকের নিষিদ্ধ সময়গুলো হলো সকাল ৬টা ১৮ মিনিট থেকে ৬টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত সূর্যোদয়কালীন সময়। এরপর দুপুর ১১টা ৪২ মিনিট থেকে ১১টা ৪৭ মিনিট পর্যন্ত সূর্য যখন মাথার উপর থাকে সেই সময়। এবং শেষত, বিকেল ৪টা ৫৪ মিনিট থেকে ৫টা ১০ মিনিট পর্যন্ত সূর্যাস্ত-পূর্ব মুহূর্ত। তবে দিনের আসরের নামাজ যদি নির্ধারিত সময়ে আদায় না করা হয়, বিশেষ পরিস্থিতিতে এই নিষিদ্ধ সময়ের মধ্যেও তা আদায় করা যায়।
ভূমিকম্পের সময় মহানবী সা. যে বিশেষ আমল ও দোয়া পড়ার শিক্ষা দিয়েছেন
ভূমিকম্প এমন একটি মুহূর্ত যখন মানুষ তার দুর্বলতা গভীরভাবে অনুভব করে এবং মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায়। বিপদ আপদ ও ভয় ভীতির সময় আল্লাহর জিকির দোয়া ও ইস্তিগফারই ইমানদারের সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে কাজ করে। রাসুলুল্লাহ সা. শিখিয়েছেন বিপদের মুহূর্তে আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়াই হচ্ছে নিরাপত্তার একমাত্র পথ। তাই ভূমিকম্প বা বড় কোনো ঝাঁকুনির সময় পড়ার জন্য ৪টি ছোট ও কার্যকরী দোয়া নিচে তুলে ধরা হলো।
প্রথম দোয়া اللَّهُمَّ لَا تُؤَاخِذْنَا بِذُنُوبِنَا، وَلَا تُهْلِكْنَا بِغَضَبِكَ দোয়াটির উচ্চারণ হলো আল্লাহুম্মা লা তুআখিজনা বিজুনুবিনা ওয়া লা তুহলিকনা বিগাদাবিকা। এর বাংলা অর্থ হে আল্লাহ আমাদের গুনাহের কারণে আমাদের পাকড়াও করো না এবং তোমার গজবে আমাদের ধ্বংস করো না।
দ্বিতীয় দোয়া حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ দোয়াটির উচ্চারণ হলো হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল। অত্যন্ত শক্তিশালী এই বাক্যটির অর্থ আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট তিনি উত্তম কর্মবিধায়ক।
তৃতীয় দোয়া يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ، بِرَحْمَتِكَ نَسْتَغِيثُ দোয়াটির উচ্চারণ হলো ইয়া হাইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যুমু বিরাহমাতিকা নাস্তাগীস। এর অর্থ হে চিরঞ্জীব হে পালনকর্তা তোমার রহমতই আমাদের সাহায্য।
চতুর্থ দোয়া أستغفرُ اللهَ العظيم দোয়াটির উচ্চারণ হলো আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম। সবসময় পড়ার মতো ছোট এই আমলটির অর্থ আমি মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই।
আলেমদের মতে ভূমিকম্প শুধুই একটি প্রাকৃতিক ঘটনা নয় বরং এটি মানুষের হৃদয়ে আল্লাহর ভয় জাগিয়ে তোলে এবং আল্লাহর মহিমার সামনে বিনয় শেখায়। এ সময় দোয়া ইস্তিগফার ও তওবাই মুমিনের ঢাল হিসেবে কাজ করে। যে আল্লাহ পৃথিবীকে কাঁপান তিনিই আবার তা স্থির করেন। তাই বিপদের মুহূর্তে তাঁরই দিকে ফিরে যাওয়া মানুষের জন্য সর্বোত্তম কাজ।
ভূমিকম্প মুহূর্তে যে দোয়া পড়তেন রাসূল (সা.)
ইসলামে জীবনের প্রতিটি বিপদ ও দুর্যোগের জন্য শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন মহান আল্লাহ তাআলা। কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ভূমিকম্প, মেঘের গর্জন, ঝড়–তুফান কিংবা আকাশ–জমিনের যেকোনো ভয়াবহতা আল্লাহর শক্তি ও কুদরতের নিদর্শন, যা মানুষের জন্য সতর্কবার্তা ও আত্মসমালোচনার আহ্বান। এমন সংকটময় মুহূর্তে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর উম্মতকে নির্ভর করতে বলেছেন আল্লাহর ওপর এবং নিয়মিত দোয়ার মাধ্যমে তাঁর সাহায্য কামনা করতে বলেছেন।
রাসূল (সা.) বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন এমন একটি দোয়া, যা তিনবার পাঠ করলে মানুষ আকাশ ও জমিনের ভয়ংকর দুর্যোগ থেকে নিরাপত্তা পায়। দোয়াটি হলো-
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহিল্লাহি লা ইয়াদ্বুররু মা’আসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়া লা ফিস্সামা’ই, ওয়া হুয়াস সামীয়ুল আলিম।
এই দোয়া মুসলিম সমাজে বহুল পরিচিত এবং বিপদ–আপদে সুরক্ষার অন্যতম আমল হিসেবে সুন্নাহতে প্রতিষ্ঠিত।
ভূমিকম্পের সময় আলাদা একটি দোয়া পাঠ করার কথাও এসেছে বিভিন্ন হাদিসে। রাসূল (সা.) মাটির দিকে তাকিয়ে নিয়মিত পড়তেন-
“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, লা শারিকালাহু, ফাবি আয়্যি আলা’ই রাব্বিকুমা তুকাজ্জিবান।”
এই তাসবিহ ও প্রশংসাবাক্য আল্লাহর শক্তি ও মহিমা স্মরণ করিয়ে দেয়, এবং মানুষের অন্তরকে স্থিরতা দেয়।
দুর্যোগের মুহূর্তে আরেকটি দোয়া রাসূল (সা.) বিশেষভাবে পড়তে বলেছেন-উচ্চারণ: আন্তা ওলিয়্যুনা ফাগফিরলানা ওয়ারহামনা, ওয়া আন্তা খাইরুল গফিরিন।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আপনি আমাদের রক্ষক—অতএব আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি করুণা বর্ষণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বাধিক ক্ষমাশীল।” (সূরা আরাফ ১৫৫)
জুলকারনাইন: দুই শিং–ওয়ালা বাদশার রহস্য
ইসলামের ইতিহাসে বাদশা জুলকারনাইন এমন এক ব্যক্তিত্ব যিনি রহস্য, প্রজ্ঞা, নেতৃত্ব ও ন্যায়বিচারের সমন্বিত প্রতীক। পবিত্র কোরআনে সূরা কাহফে তাঁর ইতিহাস বর্ণিত হলেও, তাঁর সুনির্দিষ্ট পরিচয় নিয়ে আলেমদের মধ্যে এখনও মতভেদ রয়েছে। তিনি নবী ছিলেন নাকি একজন ন্যায়পরায়ণ শক্তিশালী শাসক ছিলেন এ প্রশ্নে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। তবে কোরআনের বর্ণনাগুলোতে তাঁর চরিত্র যে উচ্চ নৈতিক মূল্যবোধ ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের অনন্য উদাহরণ, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
পরিচিতি ও ‘জুলকারনাইন’ নামের অর্থ
“জুলকারনাইন” শব্দটি আরবি, যার অর্থ “দুই শিং–ওয়ালা” বা “দুই যুগের অধিকারী।” এই নামের ব্যাখ্যায় দুটি প্রধান মত রয়েছে।
একদিকে বলা হয়, তিনি পৃথিবীর পূর্ব এবং পশ্চিম দু’প্রান্ত পর্যন্ত শাসন বিস্তার করেছিলেন। অন্যদিকে কিছু ঐতিহাসিকের মতে, তাঁর মুকুটে দুই শিং–এর প্রতীক ছিল, যা প্রাচীন রাজকীয় শক্তির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
ঐতিহাসিক পরিচয় নিয়ে মতভেদ
জুলকারনাইনের প্রকৃত পরিচয় কী এ নিয়ে ইসলামী ও পাশ্চাত্য গবেষক, উভয় মহলে বহু আলোচনা হয়েছে।
আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট- প্রচলিত ঐতিহ্যগত পরিচয়
অনেক মুসলিম ও পাশ্চাত্য ঐতিহাসিক মনে করেন, জুলকারনাইন হচ্ছেন আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট। কারণ তাঁর প্রাচীন মুদ্রাগুলোতে তাঁকে ভেড়ার শিং–যুক্ত হিসেবে দেখানো হয়েছে, যা দেবতা আমুন–রার প্রতীক। বহু যুগ ধরে এই মতটিই সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল।
সাইরাস দ্য গ্রেট-আধুনিক গবেষকদের শক্তিশালী মতবাদ
বর্তমান সময়ের আলেম ও গবেষকদের বড় অংশ বিশ্বাস করেন যে, জুলকারনাইন আসলে পারস্যের সম্রাট সাইরাস দ্য গ্রেট। বাইবেলের বর্ণনায় সাইরাসকে “দুই শিংওয়ালা মেষ” হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো সাইরাস ছিলেন ন্যায়পরায়ণ, ঈমানদার ও একত্ববাদী শাসক। কোরআনের বর্ণনার সাথে তাঁর ব্যক্তিত্বের বহু মিল পাওয়া যায়।
অন্যান্য ধারণা
কিছু গবেষক জুলকারনাইনকে আরবের হিমিয়ার রাজ্যের রাজা আফ্রিকিশ আল–হিমিয়ারী বা অন্য কোনো অজ্ঞাত শাসক হিসেবেও বিবেচনা করেন।
তিনি নবী ছিলেন নাকি রাজা?
অধিকাংশ ইসলামি আলেমের মতে, জুলকারনাইন ছিলেন একজন ন্যায়পরায়ণ এবং আল্লাহভীরু রাজা। তাঁর কাছে আল্লাহ অসাধারণ ক্ষমতা, সামরিক শক্তি এবং ভূখণ্ড পরিচালনার দক্ষতা দান করেছিলেন। যদিও কিছু মত অনুযায়ী তিনি নবীও হতে পারেন, তবে কোরআনে তাঁর নবুয়ত সম্পর্কে স্পষ্ট উল্লেখ নেই।
জুলকারনাইনের প্রাচীর, ইয়াজুজ–মাজুজ থেকে রক্ষার মহাগঠন
জুলকারনাইনের নির্মিত প্রাচীরের অবস্থান নিয়েও মতভেদ রয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে, এটি দুই পর্বতের মধ্যবর্তী সরু পথে নির্মিত হয়েছিল, যেখানে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী ইয়াজুজ–মাজুজের হামলায় অতিষ্ঠ ছিল।
কাস্পিয়ান সাগর ও ককেশাস অঞ্চল-সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত
অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, প্রাচীরটি কাস্পিয়ান সাগর এবং ককেশাস পর্বতমালার মধ্যবর্তী এলাকায় ছিল। রাশিয়ার দারিয়াল এবং দারবেন্ত অঞ্চলে আজও লৌহনির্মিত প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়, যা জুলকারনাইনের প্রাচীর বলে বিবেচনা করা হয়।
অন্যান্য ব্যাখ্যা
কিছু ব্যাখ্যায় বলা হয় প্রাচীরটি পূর্ব দিকে ছিল। বিখ্যাত ভ্রমণকারী ইবনে বতুতা চীনের মহাপ্রাচীরকে ভুল করে জুলকারনাইনের প্রাচীর ভেবেছিলেন।
আব্বাসীয় খলিফার তদন্ত অভিযান
আব্বাসীয় খলিফা ওয়াসিক বিল্লাহর নির্দেশে একদল বিশেষ দূত প্রাচীরটি প্রত্যক্ষ পরিদর্শনে গিয়েছিল। তাদের পর্যবেক্ষণ পরবর্তীতে ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ গ্রন্থে সংরক্ষিত রয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, প্রাচীরটি ছিল লোহা ও তামা দিয়ে নির্মিত এক বিশাল দুর্গসদৃশ কাঠামো।
কোরআনে বর্ণিত জুলকারনাইনের তিন মহাঅভিযান
সূরা কাহফের ৮৩–৯৯ নং আয়াতে জুলকারনাইনের তিনটি বিশাল ভ্রমণ অভিযানের বিস্তারিত উল্লেখ আছে। এ অভিযানের প্রতিটিতেই তাঁর নেতৃত্ব, ন্যায়বিচার এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ফুটে ওঠে।
১. পশ্চিমমুখী অভিযান
তিনি পৃথিবীর পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছে দেখলেন সূর্য যেন কর্দমাক্ত ঝর্ণায় অস্ত যাচ্ছে। সেখানে তিনি এক জাতির মুখোমুখি হন। আল্লাহ তাকে এই জাতির ওপর ন্যায়বিচার প্রয়োগের ক্ষমতা দেন। তিনি সৎকর্মশীলদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করেন এবং অপরাধীদের শাস্তি দেন।
২. পূর্বমুখী অভিযান
তিনি পূর্ব দিকে যাত্রা করে এমন এক জাতির সন্ধান পান যারা সূর্যের আলো থেকে বাঁচার জন্য কোনো প্রাকৃতিক আড়াল পেত না। এখানেও তিনি ন্যায়বিচারের আদেশ প্রতিষ্ঠা করেন।
৩. উত্তরের অভিযান—ইয়াজুজ ও মাজুজের প্রাচীর নির্মাণ
সবশেষে তিনি দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী এলাকায় পৌঁছান, যেখানে লোকেরা ইয়াজুজ–মাজুজ নামক হানাদার জাতির নিপীড়নে ক্লান্ত ছিল। তারা জুলকারনাইনের কাছে সহায়তা চাইলে তিনি কোনো পারিশ্রমিক গ্রহণ না করে আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুপ্রাণিত শক্তিতে লোহা ও গলিত তামা দিয়ে বিশাল প্রাচীর নির্মাণ করেন এবং তাদের আক্রমণ থেকে অঞ্চলটিকে সুরক্ষিত করেন।
জুলকারনাইনের জীবনী থেকে শিক্ষা
জুলকারনাইনের চরিত্র ইতিহাস ও ধর্মীয় নৈতিকতার এক অনুপম উদাহরণ। তাঁর জীবন থেকে পাওয়া প্রধান শিক্ষাগুলো হলো:
১. ক্ষমতা ও নেতৃত্ব আল্লাহর দান, এটি অহংকারের জন্য নয়, ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য।২. ভূখণ্ড, সম্পদ ও শক্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি বিনয়ী ছিলেন।৩. প্রতি সিদ্ধান্ত ও কাজে তিনি আল্লাহর নির্দেশ অনুসরণ করেছেন।৪. তিনি পৃথিবীজুড়ে ন্যায় ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।৫. ইয়াজুজ–মাজুজের প্রাচীর কেয়ামতের আগ পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে এটি ইসলামি বিশ্বাসের অংশ।
পাঠকের মতামত:
- মাঝরাতের পর থেকেই বদলে যাচ্ছে প্রবাসীদের ভোটার হওয়ার নিয়ম
- বাউল বনাম তৌহিদি জনতা: পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে আবারও রণক্ষেত্র
- বরিশাল ১: ধানের শীষের অভিজ্ঞতার কাছে কি টিকবে জামায়াতের কৌশল
- ওজন কমাতে চিনির বদলে মধু খাওয়ার আগে যে বিষয়গুলো জানা জরুরি
- শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে মার্কিং করা স্বর্ণালংকার নিয়ে দুদকের চাঞ্চল্যকর তথ্য
- জুলাই গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
- সাগরের তল থেকে মরুভূমির বুক আসলে কী রহস্য লুকিয়ে আছে এখানে
- শেখ হাসিনাকে ফেরাতে দিল্লির চিঠির জবাব নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
- দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পার্লামেন্ট নির্বাচন জরুরি: মির্জা ফখরুল
- গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় শেন ইয়ার
- এসপি পদায়নের লটারি কীভাবে হয়েছে তা বিস্তারিত জানালেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
- ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে এসেছি তাই যা ধরি শেষ করে ছাড়ি বলে হুঙ্কার মমতার
- আয়ারল্যান্ড সিরিজের আগে সংবাদ সম্মেলনে লিটন দাসের নজিরবিহীন ক্ষোভ ও বিস্ফোরক মন্তব্য
- হৃদ্রোগে আক্রান্ত বাবা নাকি অন্য কোনো কারণ কেন স্থগিত হলো তারকা জুটির বিয়ে
- ২৬ নভেম্বর ডিএসই লেনদেনের সারসংক্ষেপ
- ২৬ নভেম্বর ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ লুজার তালিকা প্রকাশ
- ২৬ নভেম্বর ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- জনসংখ্যার বিচারে টোকিওকে টপকে ঢাকার নতুন বিশ্বরেকর্ড
- প্রিপেইড মিটারের গ্রাহকরা সরকারের কাছ থেকে যে বিশেষ আর্থিক ছাড় পাচ্ছেন
- দেশের মানুষ খালেদা জিয়াকে নেতৃত্বের আসনে দেখতে চায়: রিজভীর
- যমুনায় ম্যানুয়াল লটারির মাধ্যমে বেছে নেওয়া হলো ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার
- সড়কে চাঁদাবাজি পুরোপুরি বন্ধ না হলেও নিয়ন্ত্রণে এসেছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
- জন্মনিয়ন্ত্রণে হরমোনাল পিল নিয়ে নতুন গবেষণায় যা উঠে আসল
- শেখ হাসিনার দুই লকারে মিলল স্বর্ণের পাহাড়
- ইস্টার্ন কেবলসের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ
- গোল্ডেন সনের টানা লোকসানে ডিভিডেন্ড বন্ধ ঘোষণা
- এমটিবি পারপেচুয়াল বন্ডের কুপন রেট ঘোষণা
- হুয়াওয়ের ম্যাট ৮০ সিরিজে বিপ্লবী কিরিন ৯০৩০ চিপ উন্মোচন
- কড়াইল বস্তিতে গৃহহীনদের সহায়তার আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার
- মেয়র মামদানির টিমে একসাথে ১০ বাংলাদেশি
- ডিএসই–৩০ সূচকে মিশ্র প্রবণতা
- ডিএসই মিউচুয়াল ফান্ডে এনএভি হালনাগাদ
- ভারতে মূর্তির পায়ে হাতজোড় করতে বাধ্য করল তিন মুসলিম ছাত্রকে
- ২৬ নভেম্বরের নামাজের সময়সূচি
- নভেম্বরেই রেমিট্যান্সের নতুন রেকর্ডের আভাস
- বুধবার কোন এলাকায় দোকানপাট বন্ধ? তালিকা প্রকাশ
- বিএনপি–সরকারি কর্মসূচিতে রাজধানীতে ব্যস্ত দিন
- বিএনপির মনোনয়ন বিতর্কে রাজশাহী জুড়ে আগুনঝরা প্রতিক্রিয়া
- টিউলিপ সিদ্দিকির মামলা নিয়ে বিষ্ফোড়ক মন্তব্য ব্রিটিশ আইনজীবীদের
- পাকিস্তানের জাহাজ-বিধ্বংসী ব্যালিস্টিক মিসাইলের সফল পরীক্ষা
- ই–১ প্রকল্প ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ‘শেষ কফিন’
- যবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের তুমুল সংঘর্ষে রণক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা
- পানির তীব্র সংকটে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসকে
- টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কবে কার বিপক্ষে লড়বে বাংলাদেশ জেনে নিন সময়সূচি
- ক্ষুধার্ত সন্তানের কান্না আর নিঃস্ব বাবা মায়ের হাহাকারে ভারী বনানীর বাতাস
- পুষ্টির বিচারে হাঁস নাকি মুরগির ডিম কোনটি শরীরের জন্য সেরা? জানালেন বিশেষজ্ঞ
- বাউল শিল্পী আবুল সরকারের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি খতমে নবুওয়তের
- নারী ও শিশু নির্যাতনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে সরকারের নতুন কৌশল জানালেন উপদেষ্টা
- বিপিএলে বাতিল হওয়া প্রতিষ্ঠানকে ফিরিয়ে এনে শেষ মুহূর্তে বিসিবির নাটকীয় ইউ টার্ন
- মাইগ্রেনের তীব্রতা কমাতে দৈনন্দিন জীবনে যে পরিবর্তন আনা জরুরি
- শিরোপা জয়ের রেসে আজ বাংলাদেশ নাকি পাকিস্তান কার পাল্লা ভারীে
- ভয়ংকর ঝুঁকিতে দেশের তিন বড় শহর: মাটির নিচ থেকে আসছে বড় বিপদের বার্তা
- আজকের ভূমিকম্প আমাদের কী শিক্ষা দিচ্ছে: একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ
- ২৬ নভেম্বরের নামাজের সময়সূচি
- ফায়ার সার্ভিসে ফোনের বন্যা, হেলে পড়েছে কয়েকটি ভবন
- ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলোর তালিকা এবং বিশেষজ্ঞদের ভয়াবহ পরিসংখ্যান
- ভূমিকম্পের পর আগামী ৭২ ঘণ্টাকে কেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা
- ২৫০ বছরের ইতিহাস বিশ্লেষণ: বাংলাদেশ কি বড় ভূমিকম্পের দ্বারপ্রান্তে?
- প্রপাগান্ডা আর ষড়যন্ত্র পেরিয়ে জনতার কাতারে: জন্মদিনে তারেক রহমানকে নিয়ে ভাবনা
- ঢাকার বংশালে ভূমিকম্পে ৩ জনের মৃত্যু হলো যেভাবে
- মাটির নিচে তিন প্লেটের সংযোগস্থলে থাকা চট্টগ্রাম যেভাবে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে
- ভারতকে হারানোর পর ৯ বছরের মধ্যে সেরা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ
- চট্টগ্রাম ৪ আসনে বিএনপির অভিজ্ঞতা নাকি জামায়াতের কৌশল কার পাল্লা ভারী
- ভূমিকম্প মুহূর্তে যে দোয়া পড়তেন রাসূল (সা.)
- নৌকার ভোট বাগে আনতে বিএনপি ও জামায়াতের যত কৌশল








