মার্কিন রিপোর্ট: ইরানের পরমাণু প্রকল্পে ইসরায়েলের চোখ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২১ ১৯:১৬:০৯
মার্কিন রিপোর্ট: ইরানের পরমাণু প্রকল্পে ইসরায়েলের চোখ

ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা বাড়ছে। সাম্প্রতিক মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, ইসরায়েল ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে একটি সম্ভাব্য সামরিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কি ইতোমধ্যেই নেওয়া হয়েছে?

মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল এখনও এই হামলার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত নয়। তবে দেশটির সামরিক বাহিনীর সাম্প্রতিক তৎপরতা যেমন বিমানবাহী অস্ত্র পরিবহন, দীর্ঘ পরিসরের যুদ্ধ মহড়া এবং আকাশপথে হামলার অনুশীলন হামলার প্রস্তুতির দিকেই ইঙ্গিত করছে। মার্কিন প্রশাসনের অভ্যন্তরেও এ নিয়ে মতানৈক্য তৈরি হয়েছে কেউ কেউ এই আশঙ্কাকে অতিরঞ্জিত মনে করলেও, অন্যরা এটিকে "বাস্তব হুমকি" বলে মনে করছেন।

কূটনৈতিক অচলাবস্থা ও পরমাণু আলোচনা

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার গতি বাড়লেও তা এখনও অনিশ্চয়তার মধ্যেই আছে। ইরানের সঙ্গে নতুন কোনও চুক্তি হলে, যেখানে তেহরানকে তার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম পুরোপুরি পরিত্যাগ করতে বলা না হয়, তা ইসরায়েল মেনে নেবে না—এমন ইঙ্গিত দিয়েছে দেশটির নেতারা। এ প্রেক্ষিতে, ইসরায়েল ‘একতরফা সামরিক পদক্ষেপে’ যেতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

খামেনির পাল্টা প্রতিক্রিয়া

মঙ্গলবার এক ভাষণে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের দাবিকে ‘অতিরঞ্জিত ও অগ্রহণযোগ্য’ হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সবসময় ইরানকে দুর্বল করতে চায়। তবে আমাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং আমরা নিজেদের অধিকার থেকে একচুলও সরে আসব না।” একইসঙ্গে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, নতুন চুক্তির সম্ভাবনা নিয়েও তিনি সন্দিহান।

সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট: মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার রেখাচিত্র

এই সম্ভাব্য হামলার প্রস্তুতি এমন এক সময় সামনে এলো, যখন ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ গাজায় চলছে এবং লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের সীমান্ত উত্তেজনা প্রায় প্রতিদিনই বেড়েছে। সেই সঙ্গে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো যেমন ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহী বা ইরাক-সিরিয়াভিত্তিক মিলিশিয়াগুলো ইসরায়েল ও পশ্চিমা স্বার্থের বিরুদ্ধে আক্রমণ জোরদার করেছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, যদি ইসরায়েল ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়, তবে সেটি কেবল দুটি দেশের মধ্যে সংঘাত থাকবে না বরং তা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের রূপ নিতে পারে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় শক্তিগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পৃক্ততা ঘটতে পারে।

ইসরায়েলের কৌশলগত অবস্থান

ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে জাতীয় অস্তিত্বের জন্য হুমকি বলে বিবেচনা করে আসছে। তাদের আশঙ্কা, তেহরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পথে এগোচ্ছে যদিও ইরান বারবার দাবি করে আসছে, তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত। অতীতে সিরিয়া ও ইরাকের পরমাণু স্থাপনায় ইসরায়েল একতরফাভাবে হামলা চালিয়েছিল তাই এই সম্ভাবনাকে কেউই অবাস্তব মনে করছে না।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের হামলা ইঙ্গিত শুধু একটি সামরিক অভিযানের সম্ভাবনা নয়, বরং তা বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যে এমন একটি সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে তার অভিঘাত বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা ও জ্বালানির বাজারেও পড়বে।

এই প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য বিশ্বশক্তির এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কীভাবে উত্তেজনা প্রশমিত করে একে পুনরায় কূটনৈতিক পথে আনা যায়।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত