পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মাঝেই ইরান-রাশিয়া চুক্তি, কি থাকছে চুক্তিতে

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২১ ১৮:০৫:৩৮
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মাঝেই ইরান-রাশিয়া চুক্তি, কি থাকছে চুক্তিতে

সত্য নিউজ: ইরানের পার্লামেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে মস্কোর সঙ্গে একটি ২০ বছর মেয়াদি কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি অনুমোদন করেছে, যা দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার ভিত্তি সুদৃঢ় করবে। এই চুক্তির মাধ্যমে ইরান-রাশিয়া সম্পর্ক একটি নতুন স্তরে উন্নীত হলো, বিশেষ করে এমন সময় যখন উভয় দেশই পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার চাপে রয়েছে।

চুক্তিটি প্রথম স্বাক্ষরিত হয়েছিল গত ১৭ জানুয়ারি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের মধ্যে। রাশিয়ার আইন পরিষদ গত এপ্রিলেই এটি অনুমোদন করে। এবার ইরানিও সংসদীয় অনুমোদনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কার্যকারিতা লাভ করলো।

প্রতিরক্ষা ও সামরিক সহযোগিতা

যদিও এই চুক্তিতে সরাসরি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা ধারাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, তবে এতে সাধারণ সামরিক হুমকির বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। চুক্তির আওতায় সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতা জোরদার করা এবং যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নেওয়ার পরিকল্পনার কথাও বলা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কার্যত একটি অপ্রকাশ্য নিরাপত্তা জোটের সূচনা। ইউক্রেইন যুদ্ধে রাশিয়ার পাশে ইরানের অবস্থান, এবং পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে রাশিয়াকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ এসব ইঙ্গিত করে যে মস্কো ও তেহরান এখন বাস্তবিক অর্থেই কৌশলগত মিত্র।

অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব ও ব্যাংকিং সহযোগিতা

চুক্তির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাতে সরাসরি সহযোগিতা। এতে জাতীয় আর্থিক পণ্যের (যেমন ডোমেস্টিক কারেন্সি ও পেমেন্ট গেটওয়ে) উন্নয়ন এবং আন্তঃব্যাংক সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত সপ্তাহে ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ইউনিয়নের (EEU) সঙ্গে ইরানের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি কার্যকর হয়েছে। রাশিয়া এই সংস্থার নেতৃত্বে রয়েছে। চুক্তির আওতায় শুল্ক হ্রাস এবং বাণিজ্য বাধা অপসারণের ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আরও বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

২০২২ সালে ইউক্রেইন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে রাশিয়া ও ইরান তাদের কৌশলগত সম্পর্ক দৃঢ়তর করেছে। পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা এড়াতে বিকল্প বাণিজ্য ও আর্থিক ব্যবস্থা তৈরির প্রয়োজনে এই জোট নতুন গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশেষ করে চীন, ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা ‘পশ্চিমের প্রভাববলয়ের বাইরে এক নতুন ভূরাজনৈতিক অক্ষ’ গঠনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এই চুক্তি কেবল কাগুজে দলিল নয়, বরং এটি দুইটি নিষিদ্ধ ও আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া দেশের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার একটি রূপরেখা। পশ্চিমা অর্থনৈতিক ও কৌশলগত চাপের বিপরীতে বিকল্প বলয় গঠনের এই প্রচেষ্টা মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরেশিয়ার ভূরাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত