বিবাহবার্ষিকীর দিনেই মৃত্যুদণ্ডের রায় পেলেন শেখ হাসিনা

গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে আনা মোট পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর একটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) এই রায় ঘোষণা করা হয়। দিনটি ঘটনাক্রমে শেখ হাসিনার বিবাহবার্ষিকীর দিন। ১৯৬৭ সালের এই দিনেই তিনি পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ আলী মিয়ার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় তাদের বিয়ে হয়। ড. ওয়াজেদ আলী ২০০৯ সালের ৯ মে মারা যান।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলার অপর দুই আসামির বিরুদ্ধেও রায় ঘোষণা করা হয়েছে। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার তৃতীয় আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন 'অ্যাপ্রুভার' বা রাজসাক্ষী হওয়ায় তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক রয়েছেন। বিভিন্ন সূত্রমতে, তারা দুজনই বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।
সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
রায় ঘোষণার সময় আদালত কক্ষ আইনজীবীতে পরিপূর্ণ ছিল। এছাড়া জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে নিহত কয়েকজনের পরিবারের সদস্যরাও এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রায় পড়ার সময় ট্রাইব্যুনাল জানান, ঢাকার যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, বাড্ডা, সাভার, আশুলিয়া, রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানে যেভাবে প্রাণঘাতী গুলি ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের হত্যা করা হয়েছে, সেগুলোর ভিডিও এবং তথ্যপ্রমাণের বিবরণ রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
আন্দোলনের সময়কার মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যেসকল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, সেগুলোর বিভিন্ন অংশও আদালতে পড়ে শোনানো হয়। বেলা সোয়া একটার দিকে গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে শেখ হাসিনার হওয়া টেলিফোন কথোপকথনগুলো আদালতে শোনানো হয়। এর কিছুক্ষণ আগে শেখ হাসিনার সঙ্গে সে সময়ের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর একটি ফোনালাপও শোনানো হয়।
এর আগে গত ১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিনটি (১৭ নভেম্বর) ধার্য করেছিলেন।
পাশের দেশ অশান্তি পাকাচ্ছে, রায় পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী অভিযোগ করেছেন যে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করার জন্য একটি প্রতিবেশী দেশ থেকে উসকানি দেওয়া হচ্ছে। সোমবার (১৭ নভেম্বর), শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার পর তিনি এই মন্তব্য করেন।
উপদেষ্টা বলেন, "আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পাশের দেশ থেকে অশান্তির উসকানি দেওয়া হচ্ছে।" তবে, তিনি জোর দিয়ে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, "রায়কে কেন্দ্র করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির মতো কিছু আমরা দেখছি না। এখনো কোনো বড় ধরনের ঘটনা ঘটেনি, বিক্ষিপ্ত ছোটখাটো কিছু ঘটনা ঘটেছে।" একই সঙ্গে তিনি দুর্বৃত্তদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, "আত্মরক্ষার স্বার্থে গুলি করার বিধান আছে।"
সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, শেখ হাসিনাকে ফেরানোর জন্য প্রয়োজন হলে আবারও চিঠি দেওয়া হবে।
এর আগে আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় একটি রায় ঘোষণা করে। বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই রায় দেন।
রায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং আরেকটি অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার অপর আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালেরও ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
তবে, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এই মামলায় রাজসাক্ষী হয়ে সত্য উন্মোচনে সহায়তা করায় আদালত তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।
যে যে মামলায় ফাঁসির রায় হলো হাসিনা-কামালের
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায়ে, দুটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা এবং রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাকে এই সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়।
এছাড়াও, ট্রাইব্যুনাল আরেকটি অভিযোগে শেখ হাসিনাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন। এই মামলার অপর আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। মোট ৪৫৩ পৃষ্ঠার এই রায়টি ছয়টি অংশে বিভক্ত।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, শেখ হাসিনাসহ মামলার তিন আসামি (সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ) সকলের বিরুদ্ধেই অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।
এই মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছিল। সেগুলো হলো:
১. উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান।
২. প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ প্রদান।
৩. রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা।
৪. রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা।
৫. আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা।
হাসিনার পর আসাদুজ্জামান খান কামালেরও মৃত্যুদণ্ডের আদেশ
জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর আগে একই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হয়।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়। এই রায়টি মোট ৪৫৩ পৃষ্ঠার এবং ছয়টি অংশে বিভক্ত।
ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার প্রথমে রায়ের অংশবিশেষ পড়া শুরু করেন। এরপর ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীও রায়ের বিভিন্ন অংশ পড়ে শোনান।
রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনালে বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণের বিবরণ তুলে ধরা হয়। বিচারকাজ চলার সময় দাখিল করা অডিও এবং ভিডিওসহ অন্যান্য তথ্যপ্রমাণের বর্ণনা দেওয়া হয়। ঘটনার শিকার ব্যক্তি এবং সাক্ষীরা আদালতে কী বলেছেন, সেগুলোর বর্ণনাও রায়ে উল্লেখ করা হয়।
রায়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং পরবর্তীতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ধারণ করা বিভিন্ন ভিডিওতে শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের তথ্যপ্রমাণ হিসেবে যা পাওয়া গেছে, তার বিবরণ দেওয়া হয়। এ সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, বাড্ডা, সাভার, আশুলিয়া, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কীভাবে প্রাণঘাতী গুলি ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের হত্যা করা হয়েছিল, সেগুলোর ভিডিও এবং তথ্যপ্রমাণের বিবরণ আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
আন্দোলনের সময়কার মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রকাশিত রিপোর্টের বিভিন্ন অংশও ট্রাইব্যুনালে পড়ে শোনানো হয়। এছাড়া, গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে শেখ হাসিনার টেলিফোনে হওয়া কথোপকথনগুলোও রায়ে উল্লেখ করা হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর এজলাস কক্ষ থেকে রায় ঘোষণার এই সম্পূর্ণ কার্যক্রম বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) সরাসরি সম্প্রচার করেছে।
দোষ স্বীকারেও এড়াতে পারলেন না সাজা: সাবেক আইজিপির ৫ বছর কারাদণ্ড
জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। একই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ড এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে, এ মামলায় কারাগারে থাকা একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে সকালে ট্রাইব্যুনালে আনা হয় এবং হাজতখানায় রাখা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিচারিক প্যানেল ছয়টি অংশে বিভক্ত ৪৫৩ পৃষ্ঠার এই রায়ের বিভিন্ন অংশ পড়া শুরু করেন।
এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের মাধ্যমে। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনাল গত বছরের ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। শুরুতে এই মামলায় শেখ হাসিনা একমাত্র আসামি থাকলেও, চলতি বছরের ১৬ মার্চ সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করার আবেদন করে প্রসিকিউশন, যাতে ট্রাইব্যুনাল সম্মতি দেন।
গত ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়, যেখানে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নামও অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রসিকিউশন গত ১ জুন শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধেই ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে।
গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন। ওই একই দিনে, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন 'অ্যাপ্রুভার' বা রাজসাক্ষী হওয়ার জন্য আবেদন করেন। পরে তিনি নিজের দোষ স্বীকার করে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'লেথাল উইপন' বা মারণাস্ত্র ব্যবহারের সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি আরও জানান, গত বছরের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনার ওই নির্দেশনা তিনি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মাধ্যমে পেয়েছিলেন।
পতন থেকে মৃত্যুদণ্ড: ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক রায়
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় ঘোষণা করেন। এটি বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কোনো সাবেক সরকারপ্রধানের বিরুদ্ধে দেওয়া প্রথম রায়।
ট্রাইব্যুনাল তার রায়ে বলেছেন, মামলার অপর দুই আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধেও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আদালত মনে করেন, শেখ হাসিনা "সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি" (ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দায়) থেকে এই অপরাধ করেছেন। রায়ে উল্লেখ করা হয়, তিনি ড্রোন, হেলিকপ্টার এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি সেই নির্দেশ পালন করেছেন।
রায় পড়া শুরু হলে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার জানান, পুরো রায়টি ছয়টি অধ্যায়ে মোট ৪৫৩ পৃষ্ঠায় সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি রায়ের প্রাথমিক অংশে ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার, আসামিদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ এবং রোম স্ট্যাটিউট অনুযায়ী 'সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি'র আইনি ভিত্তি আদালতে পড়ে শোনান।
এ সময় তিনি আন্দোলন দমনের জন্য প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার ও হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর 'নির্দেশ' সংক্রান্ত টেলিফোন কথোপকথনের প্রমাণ তুলে ধরেন। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল এবং সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে শেখ হাসিনার ফোনালাপের উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে, হেলিকপ্টার থেকে 'ছত্রী সেনা নামানোর' বিষয়ে সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনের বিষয়টিও রায়ে তুলে ধরা হয়।
ট্রাইব্যুনাল কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রাথমিক প্রেক্ষাপট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং পরবর্তীতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। বিচারকাজ চলার সময় ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা বিভিন্ন অডিও, ভিডিও এবং অন্যান্য তথ্যপ্রমাণের বিবরণও বিচারক বর্ণনা করেন। ঘটনার শিকার ব্যক্তি ও সাক্ষীরা কী বলেছেন, তা রায়ে উল্লেখ করা হয়।
বিশেষ করে, ঢাকার যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, বাড্ডা, সাভার, আশুলিয়া এবং রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাণঘাতী গুলি ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের হত্যার ভিডিও ও তথ্যপ্রমাণের বিবরণ তুলে ধরা হয়। রায়ের আগে, আন্দোলনের সময়কার মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রকাশিত রিপোর্টের গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোও ট্রাইব্যুনালে পড়ে শোনানো হয়।
আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে, গত ২৩ অক্টোবর এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের আইনি যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়। তখন ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার তারিখ জানানোর জন্য ১৩ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার জন্য আজকের এই দিনটি (১৭ নভেম্বর) ধার্য করেছিলেন। আজকের এই রায় ঘোষণা বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) সরাসরি সম্প্রচার করেছে এবং বিটিভির মাধ্যমে অন্যান্য প্রচারমাধ্যমও এটি সরাসরি সম্প্রচার করে।
শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে 'মানবতাবিরোধী অপরাধের' সত্যতা মিলেছে: ট্রাইব্যুনাল
জুলাই গণআন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা মিলেছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এই রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। তারা ৬টি অধ্যায়ে বিভক্ত ৪৫৩ পৃষ্ঠার এই রায়টি আদালতে পড়ে শোনান।
এর আগে, গত ১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজকের (১৭ নভেম্বর) দিনটি ধার্য করেছিলেন। এই মামলায় ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের বা প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম এবং ফারুক আহাম্মদসহ অন্যরা।
গত ২৩ অক্টোবর এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সমাপনী বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি সেসময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানসহ হেভিওয়েট নেতাদের বিচারের মুখোমুখি হওয়ার উদাহরণ ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপক্ষ শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ সাজার আবেদন করেছিল। এরপর আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন যুক্তি উপস্থাপন করেন, যার জবাবে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এবং পরে আবার স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী পাল্টা উত্তর দেন।
এই মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও আসামি ছিলেন। তবে, তিনি রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন। একারণে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্কের সময় শেখ হাসিনা ও কামালের জন্য সর্বোচ্চ সাজা চাইলেও, মামুনের বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেয়। মামুনের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ তার মক্কেলের খালাস (অ্যাকুইটাল) চেয়েছিলেন।
এই মামলায় মোট ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৪ জন তাদের সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। চলতি বছরের ৩ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছিল। প্রথম সাক্ষী হিসেবে খোকন চন্দ্র বর্মণ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ঘটনার চিত্র ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরেন। গত ৮ অক্টোবর মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরের জেরার মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণের পর্ব শেষ হয়। এরপর ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক সম্পন্ন হয়।
প্রসিকিউশন এই তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনে। এর মধ্যে রয়েছে উসকানি দেওয়া, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড, চানখারপুলে হত্যাকাণ্ড এবং আশুলিয়ায় লাশ পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ। মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রটি ছিল মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণ চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল।
ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই, এটি দেশ রক্ষার নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) আগামী নির্বাচন ও গণভোটে শতভাগ সততা, নিরপেক্ষতা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এবারের নির্বাচনটি একটি গতানুগতিক নির্বাচন নয়, বরং এটি 'দেশ রক্ষার নির্বাচন'।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ৬৪ জেলার প্রশাসকদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন। এই প্রশাসকদের মধ্যে ৫০ জনই ছিলেন সদ্য পদায়নকৃত।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আগামী নির্বাচন শুধু পাঁচ বছরের জন্য সরকার গঠনের নির্বাচন নয়। এর সঙ্গে গণভোট যুক্ত হওয়ায় এটি আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তিনি এটিকে 'সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী' একটি নির্বাচন হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, "জাতি অতীতে বহু প্রহসনের নির্বাচন দেখেছে, সেই স্মৃতি ছাপিয়ে যেতে আমাদের ভূমিকা রাখতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "এটা গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী নির্বাচন; এই নির্বাচন গণঅভ্যুত্থানকে পূর্ণতা দেওয়ার নির্বাচন। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতির জন্য শতাব্দীর গতিপথ নির্ধারিত হবে।"
এই নির্বাচনে জেলা প্রশাসকদের ভূমিকাকে 'অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ' হিসেবে বর্ণনা করে প্রফেসর ইউনূস বলেন, "কোনোভাবেই ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই।" তিনি মন্তব্য করেন, "এই নির্বাচনের মাধ্যমে জাতি নবজন্ম লাভ করবে এবং জেলা প্রশাসকরা থাকবেন ধাত্রীর ভূমিকায়।"
তিনি ডিসিদের উদ্দেশে বলেন, "আপনাদের যা যা জানা প্রয়োজন সব জেনে নেবেন। নির্বাচনকে একই সঙ্গে উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ করতে হবে।"
প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, দেশে বিপুল সংখ্যক তরুণ ও নারী ভোটার রয়েছেন, যারা ভোট দেওয়ার উপযুক্ত হওয়ার পরও গত ১৫ বছর ধরে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি।
তিনি জানান, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও আগামী নির্বাচনের বিষয়ে গভীর উৎসাহ দেখাচ্ছেন। "তারা দেখতে চান কেমন নির্বাচন হচ্ছে—এটা নিয়ে তাদের গভীর আগ্রহ," বলেন তিনি।
প্রফেসর ইউনূস আরও বলেন, "এই নির্বাচনকে স্বার্থক করা গণঅভ্যুত্থানের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি। এই নির্বাচন একটি বিরাট অভিযান, এ অভিযানে আমাদের জিততেই হবে। স্বাধীন জাতি হিসেবে টিকে থাকতে হলে এ লড়াইয়ে আমাদের জিততেই হবে।"
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব শেখ আব্দুর রশীদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং আইন উপদেষ্টা প্রফেসর আসিফ নজরুল।
অনুষ্ঠানে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পক্ষে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরীফা হক এবং বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান বক্তব্য রাখেন।
খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই': রায় ঘোষণাকে ঘিরে টিএসসিতে শিক্ষার্থীদের ভিড়
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় বড় পর্দায় সরাসরি সম্প্রচার করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু)।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) বেলা ১১টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) পায়রা চত্বরে একটি বড় জায়ান্ট স্ক্রিনে এই রায় দেখানো শুরু হয়। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অন্যান্যদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
সরাসরি সম্প্রচার দেখার সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায়। তারা ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, খুনি হাসিনার বিচার চাই’, ‘রশি লাগলে রশি নে, খুনি হাসিনাকে ফাঁসি দে’ এবং ‘লীগ ধর, জেলে ভর’ সহ নানা ধরনের স্লোগান দেন।
এ সময় উবায়দুর রহমান হাসিব নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী বলেন, "জুলাইয়ে আমাদের ভাইকে যারা খুন করেছে সেই খুনের মাস্টারমাইন্ড খুনি হাসিনা। হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তি, তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হবে সেই প্রত্যাশা নিয়ে আছি। একই সাথে আমাদের এই জেনারেশনেই খুনি হাসিনার ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।"
সাইদুজ্জামান নূর আলভী নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, "আওয়ামী লীগ ও খুনি হাসিনা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মানুষের ওপর নির্যাতন করেছে। ১৭ বছরে গুম, খুনসহ নানা অপরাধ করেছে। তারপর জুলাইতে যে তারা গণহত্যা চালিয়েছে। তার দায়ের খুনি হাসিনার রায়ের জন্য আমরা এখানে অপেক্ষা করছি। আমরা তার ফাঁসির রায় দেখার জন্যই অপেক্ষা করে আছি।"
এর আগে, রোববার রাতে ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টিএসসিতে রায় দেখানোর এই কর্মসূচির কথা জানান। তিনি তার পোস্টে লেখেন, "জুলাইয়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় খুনি হাসিনার রায় ঘোষণা হবে। হাসিনার অপরাধের সাক্ষী পুরো জুলাই প্রজন্ম। রক্তপিপাসু হাসিনাকে তার ন্যায্য পাওনা যথাযথভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রতীক্ষায় গোটা জাতি।"
সাদিক কায়েম আরও লেখেন, "ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আমরা তার রায় কার্যকরও করবো।"
৮ হাজার পৃষ্ঠার প্রমাণ, হাজারো নিহত–আহত: শেখ হাসিনাদের বিরুদ্ধে রায়ে কী ঘটতে যাচ্ছে? সরাসরি দেখুন!
জুলাই–আগস্ট আন্দোলনের সময়কার দমন–পীড়নের ঘটনায় অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় পড়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। সোমবার দুপুর সাড়ে বারোটায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১-এর বিচারক বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ রায় পাঠ শুরু করেন। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ প্রসিকিউশন টিমের অন্যান্য সদস্যরা।
মামলাটিতে প্রসিকিউশন মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগ দাখিল করেছে, যেখানে ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠার তথ্যসূত্র, ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠার জব্দতালিকা ও অন্যান্য দালিলিক প্রমাণ এবং ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার শহীদদের তালিকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, এসব নথি প্রমাণ করে যে ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টে দেশজুড়ে গণবিক্ষোভ দমনে অভিযুক্ত তিনজন পরিকল্পিত, পদ্ধতিগত এবং ব্যাপক মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন—বিশেষত ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সশস্ত্র ক্যাডারদেরও বিক্ষোভ দমনে ব্যবহারের জন্য সরাসরি নির্দেশ দেন। এসব নির্দেশের ফলেই দেশব্যাপী দেড় হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন এবং ২৫ হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারী আহত, অঙ্গহানি বা বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হন। তদন্তে এসব ঘটনাকে গণহত্যা, পরিকল্পিত হত্যা এবং অমানবিক নির্যাতনের শামিল হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ৫ আগস্টের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির দিনে আশুলিয়ায় সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা। অভিযোগ অনুযায়ী, সেদিন ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করা হয়, এরপর লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়; এমনকি অন্তত একজনকে জীবন্ত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। প্রসিকিউশনের দাবি, এই ঘটনার নির্দেশও এসেছে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপির কাছ থেকেই, যা আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের স্পষ্ট উদাহরণ।
রায় পড়া শুরুর পর ট্রাইব্যুনাল চত্বরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মামলার সংবেদনশীলতা, অভিযুক্তদের সাবেক রাষ্ট্রক্ষমতার অবস্থান এবং নথিপত্রের বিশাল পরিমাণের কারণে আদালত প্রাঙ্গণে উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে। মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরাও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে উপস্থিত ছিলেন। আদালত–সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নথিপত্রের বিশালতা বিবেচনায় রায় সম্পূর্ণ পড়তে সময় লাগবে এবং রায়টির রাজনৈতিক ও আইনি গুরুত্ব বাংলাদেশের সমসাময়িক ইতিহাসে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
সরাসরি দেখুন:
পাঠকের মতামত:
- বিবাহবার্ষিকীর দিনেই মৃত্যুদণ্ডের রায় পেলেন শেখ হাসিনা
- পাশের দেশ অশান্তি পাকাচ্ছে, রায় পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
- আল জাজিরা থেকে এনডিটিভি, বিশ্বজুড়ে যেভাবে প্রচার হলো হাসিনার রায়
- ১৭ নভেম্বর ডিএসই লেনদেনের সারসংক্ষেপ
- ১৭ নভেম্বর ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ লুজার তালিকা প্রকাশ
- ১৭ নভেম্বর ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- যে যে মামলায় ফাঁসির রায় হলো হাসিনা-কামালের
- হাসিনার পর আসাদুজ্জামান খান কামালেরও মৃত্যুদণ্ডের আদেশ
- দোষ স্বীকারেও এড়াতে পারলেন না সাজা: সাবেক আইজিপির ৫ বছর কারাদণ্ড
- পতন থেকে মৃত্যুদণ্ড: ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক রায়
- শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে 'মানবতাবিরোধী অপরাধের' সত্যতা মিলেছে: ট্রাইব্যুনাল
- ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই, এটি দেশ রক্ষার নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা
- রেড জুলাই নামে ৩২ নম্বরে বুলডোজার, শাওন বললেন 'রাজাকার বাহিনী'
- খুনি হাসিনার ফাঁসি চাই': রায় ঘোষণাকে ঘিরে টিএসসিতে শিক্ষার্থীদের ভিড়
- ৮ হাজার পৃষ্ঠার প্রমাণ, হাজারো নিহত–আহত: শেখ হাসিনাদের বিরুদ্ধে রায়ে কী ঘটতে যাচ্ছে? সরাসরি দেখুন!
- হাসিনার রায় ঘিরে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সতর্ক বার্তা
- ধানমন্ডি ৩২ অভিমুখে বুলডোজার মিছিল-ঘটছে কী?
- জুলকারনাইন: দুই শিং–ওয়ালা বাদশার রহস্য
- এবি ব্যাংকের পারপেচুয়াল বন্ডের রেটিং ঘোষণা
- মাগুরাপ্লেক্সের প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন
- মনোস্পুলের ইপিএসে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি
- পাঁচ পরিষেবা স্থায়ীভাবে বন্ধ করল বাংলাদেশ ব্যাংক
- হাসিনার আইনজীবীর বিস্ময়কর স্বীকারোক্তি
- শেখ হাসিনার রায়কে ঘিরে সজীব ওয়াজেদের বিস্ফোরক মন্তব্য
- সোমবার রাজধানীর বাজার বন্ধের পূর্ণ তালিকা
- ঢাকার আবহাওয়া আজ স্বস্তিদায়ক
- বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় আবারও ঢাকা
- আজ রাজধানীজুড়ে কর্মসূচির ছড়াছড়ি, জানুন বিস্তারিত
- মোট যতটি মামলার মুখোমুখি শেখ হাসিনা
- ‘কোথায় আওয়ামী লীগ? শাটডাউন শুধু ঘোষণাতেই’
- এনসিপির মনোনয়ন নিলেন সারজিস,একই আসনে বিএনপি-এনসিপি দুই হেভিওয়েট প্রার্থী
- সোমবার সকাল ১১টায় হাসিনার রায়: দেশজুড়ে কড়া নিরাপত্তা
- ইতিহাসের কুচক্রী নারী: ঘষেটি বেগম, যার উচ্চাকাঙ্ক্ষা ডেকে এনেছিল বাংলার পতন
- জামায়াতে ইসলামী: অতীতের ছায়া ছাপিয়ে কি নতুন শুরু সম্ভব?
- ককটেল বিস্ফোরণে কাঁপল কারওয়ান বাজার
- রাজনীতিকে বিদায় জানালেন শমসের মবিন চৌধুরী
- সাভারে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি বাসে আগুন
- কোমল পানীয় থেকে মাছের ডিম, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায় যে ৯ খাবার
- মহাসড়কে ভয়াবহ দুর্ঘটনা: সীতাকুণ্ডে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে শিশুসহ ৫ মৃত্যু
- ভোটার তালিকায় নাম নেই তারেকের, নির্বাচনে লড়তে পারবেন কীভাবে?
- ডলারের রিজার্ভে সুখবর, নভেম্বরের শুরুতেই বিপুল সাড়া
- পুলিশ প্রশাসনে ‘বড় নাড়া’: ডিআইজি-এসপিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের রদবদল
- ইসরায়েলের গোপন ফাঁদেই উল্টো ধরা, ইরানের যে কৌশলে বোকা বনেছিল ইসরায়েল
- হাসারাঙ্গাকে ছেড়ে রিশাদের দিকে নজর? আইপিএল নিলামে টাইগারদের চাহিদা
- প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে মামলা, আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন মেহজাবীন
- বয়স বাড়লেও তারুণ্য থাকবে অটুট, যদি পাতে থাকে এই শীতের সবজি!
- অতীতে ইসি সরকারের ‘মন্ত্রী’ ছিল: কাদের সিদ্দিকীর কড়া সমালোচনা
- জেন-জি বিক্ষোভে উত্তাল আরেক দেশ, প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হামলার চেষ্টা
- দেশের পরিস্থিতি খুব ভালো নয়, খারাপও নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
- আমার প্রতি এত রাগ বা হিংসা কেন? সব অভিযোগ খণ্ডন করলেন নিগার সুলতানা
- সিলেট টেস্টে আয়ারল্যান্ড অলআউট ২৮৬ রানে, দুর্দান্ত সূচনায় বাংলাদেশ
- গোলের রাজা কে, মেসি না রোনালদো? সংখ্যার হিসাবে কে এগিয়ে, কে পিছিয়ে!
- সাদমানের পর মুমিনুলকে নিয়ে জয়ী রথ বাংলাদেশের ওপেনিংয়ে রেকর্ড জুটি
- মামলার রেশ না কাটতেই তিশার বিরুদ্ধে প্রাণনাশের অভিযোগ
- নেপালের বিপক্ষে দুর্দান্ত হামজা জোড়া গোলে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিল বাংলাদেশ
- বাংলাদেশ নেপাল ম্যাচের আগে জেনে নিন হেড টু হেড পরিসংখ্যানে কারা চালকের আসনে
- আজকের খেলাধুলা সূচি
- অ্যাকশন, রিভেঞ্জ আর সিক্রেট মিশন: দেখুন সেরা ১০ কোরিয়ান অ্যাকশন সিরিজ!
- আজ বিশ্ব ব্যাচেলর দিবস: একাকীত্ব নয়, স্বাধীনতার উৎসব
- ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বড় ধরনের পতন: ৩৮৪ কোম্পানির মধ্যে মাত্র ১৫টি বেড়েছে
- জুলাই অভ্যুত্থান মামলা শেখ হাসিনাসহ ৩ আসামির রায়ের তারিখ ঘোষণা
- আজ রাজধানীতে রাজনৈতিক যেসব কর্মসূচি, কোথায় কী হচ্ছে জেনে নিন
- লকডাউনের দিনেও দোকান-শপিংমল খোলা থাকবে: মালিক সমিতি
- রোনালদোর শেষ খেলার পরিকল্পনা নিয়ে বড় ঘোষণা
- কাদিয়ানী ইস্যু ও পাকিস্তানি সংযোগ: বাংলাদেশের ধর্মীয় রাজনীতিতে বিপজ্জনক অস্থিরতার ইঙ্গিত








