মি‘রাজ রজনীতে নবী (সা.)-এর বাহন বুরাকের বিস্ময়কর কাহিনি

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১২ ১৮:৫১:২৬
মি‘রাজ রজনীতে নবী (সা.)-এর বাহন বুরাকের বিস্ময়কর কাহিনি
ছবি: সংগৃহীত

বুরাক (আরবি: البُراق) শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ “বারক” (برق) থেকে। এর অর্থ বিদ্যুৎ বা বিজলী। বিদ্যুতের মতোই বুরাকের গতি ছিল অতুলনীয় দ্রুত। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, এই স্বর্গীয় প্রাণীটিই ছিল সেই বাহন, যার ওপর আরোহন করেছিলেন প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মি‘রাজের রজনীতে।

এই রাতে নবী (সা.) পৃথিবী থেকে আকাশে যাত্রা করেছিলেন, মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস (জেরুজালেম), এবং সেখান থেকে ঊর্ধ্বাকাশে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছেছিলেন। এই অলৌকিক যাত্রার বাহন হিসেবেই বুরাকের নাম ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।

‘বুরাক’ শব্দের তাৎপর্য ও কুরআনিক ইঙ্গিত

“বারক” শব্দটি আল-কুরআনে পাঁচবার উল্লেখ করা হয়েছে। এই আয়াতগুলো পাওয়া যায় সূরা বাকারাহ (১৯ ও ২০ আয়াত), সূরা রা‘দ (১২ আয়াত), সূরা রূম (২৪ আয়াত) এবং সূরা নূর (৪৩ আয়াতে)। প্রতিটি জায়গায় “বারক” শব্দটি আলোর ঝলক বা বিদ্যুতের গতির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

অনেকে মনে করেন, মহানবী (সা.)-এর নাম “মুহাম্মদ”-এ যেমন পাঁচটি বর্ণ আছে, তেমনি “বারক” শব্দটিও পাঁচবার এসেছে এ যেন এক আধ্যাত্মিক ইঙ্গিত। সূরা ইনশিরাহে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন: “আর আমি তোমার যিকিরকে উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছি” (সূরা ইনশিরাহ: ৪)।

এ থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় নবীর সম্মানকে এমনভাবে বর্ধিত করেছেন যে, এমনকি বুরাকের নামের সঙ্গেও রয়েছে সেই ঐশ্বরিক সাদৃশ্য।

বুরাকের আকার-আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য

হাদীস শরীফে বুরাকের চেহারা ও গঠন সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত- “আমার নিকট বুরাক নিয়ে আসা হলো। বুরাক এক সাদা চতুষ্পদ প্রাণী, গাধার চেয়ে বড় এবং খচ্চর থেকে ছোট। তার দৃষ্টির শেষ সীমায় সে তার পা রাখে।” এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, বুরাকের গতি বিদ্যুতের মতোই দ্রুত। সে যতদূর দেখতে পারে, ততদূর পর্যন্ত এক পদক্ষেপেই পৌঁছে যায়।

বুরাকের গতি ও চলার ধরন

ইসলামী বর্ণনায় বুরাককে বর্ণনা করা হয়েছে এমন এক প্রাণী হিসেবে, যার গতি আলোর গতির কাছাকাছি। অর্থাৎ, তার এক পদক্ষেপ পৃথিবী থেকে আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এই বর্ণনা আধুনিক কালের আলোচনায়ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে, কারণ “বারক” বা বিদ্যুৎ-শব্দটি বুরাকের গতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। বুরাকের নামের মধ্যেই আছে সেই গতি ও শক্তির ধারণা যা আল্লাহর সৃষ্টি ক্ষমতারই প্রকাশ।

বুরাকের সৃষ্টি ও অস্তিত্ব সম্পর্কে আলেমদের মত

অনেক ইসলামি পণ্ডিতের মতে, বুরাক কোনো সাধারণ প্রাণী নয়। এটি এক বিশেষ সৃষ্ট প্রাণী, যাকে শুধুমাত্র মি‘রাজের রাতে সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই মত অনুসারে, বুরাকের অস্তিত্ব কেবল সেই অলৌকিক ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত, এবং অন্য কোনো নবী বা রাসূলের জীবনে এর কোনো উল্লেখ নেই। অর্থাৎ, এটি নবী (সা.)-এর জন্যই বিশেষভাবে নির্ধারিত এক ঐশ্বরিক বাহন।

ইমাম সুহাইলীর ব্যাখ্যা ও বুরাকের লজ্জা

ইমাম সুহাইলী (রহ.) তাঁর ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন, যখন নবী (সা.) বুরাকে আরোহণ করতে চাইলেন, তখন বুরাক লজ্জায় সামান্য ইতস্তত করেছিল। তখন ফেরেশতা জিবরাঈল (আঃ) বুরাককে উদ্দেশ্য করে বলেন, “হে বুরাক, তুমি কি জানো, আজ তোমার পিঠে যিনি আরোহণ করবেন, আল্লাহর কাছে তাঁর চেয়ে মর্যাদাবান আর কেউ নেই?”

এই কথা শুনে বুরাক ঘর্মাক্ত হয়ে শান্ত হয়ে যায়। এতে বোঝা যায়, বুরাক কোনো নির্জীব বস্তু নয় বরং এক অনুভূতিশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত সত্তা, যা আল্লাহর নির্দেশে নিয়ন্ত্রিত।

মি‘রাজের যাত্রা ও বুরাকের ভূমিকা

নবী করিম (সা.) বুরাকের পিঠে চড়ে প্রথমে মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসে যান। সেখানে নবীগণের সঙ্গে নামাজ আদায় করেন, এরপর ঊর্ধ্বলোকে যাত্রা করেন। বায়তুল মুকাদ্দাসে পৌঁছে তিনি বুরাককে সেই খুঁটির সঙ্গে বেঁধেছিলেন, যেখানে পূর্ববর্তী নবীরাও তাঁদের বাহন বেঁধেছিলেন। এটি নবুওতের ঐক্য ও ধারাবাহিকতার প্রতীক হিসেবে ইসলামী ঐতিহ্যে অমর হয়ে আছে।

বুরাকের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা ও রুহানী প্রতীক

অনেক সুফি ও ইসলামী পণ্ডিত বুরাককে এক ধরনের “আলোর বাহন” হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাদের মতে, বুরাক ছিল সেই নূরের মাধ্যম, যার দ্বারা নবী (সা.)-এর আত্মা ও দেহ উভয়ই আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছেছিল। এ ধারণা অনুযায়ী, বুরাক কেবল এক বাস্তব প্রাণী নয় বরং আত্মার ঊর্ধ্বগতির প্রতীক। এটি মানুষের আধ্যাত্মিক উত্থান ও আল্লাহর নিকটে পৌঁছার প্রতীকী বাহন হিসেবেও দেখা হয়।

‘পাঁচ’ সংখ্যার রহস্য ও মি‘রাজের প্রতীকী তাৎপর্য

মি‘রাজ ও বুরাকের ঘটনাবলিতে “পাঁচ” সংখ্যার এক রহস্যময় সাদৃশ্য রয়েছে। “বারক” শব্দটি কুরআনে পাঁচবার এসেছে। নবী (সা.)-এর নাম “মুহাম্মদ”-এ রয়েছে পাঁচটি বর্ণ। “মি‘রাজ” শব্দেও রয়েছে পাঁচটি অক্ষর।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই মি‘রাজের রাতেই মুসলমানদের ওপর ফরজ করা হয় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। যেন প্রতিটি নামাজই মানুষের জন্য এক এক মি‘রাজ আল্লাহর সঙ্গে আত্মিক যোগাযোগের এক পবিত্র মাধ্যম।

বুরাক ও মি‘রাজ: নবুওতের মহিমা

মি‘রাজ ছিল এমন এক ঘটনা, যা কোনো নবী বা রাসূলের জীবনে আগে কখনও ঘটেনি। তাই বুরাকের উপস্থিতি নবী (সা.)-এর মর্যাদারই প্রতীক। এই যাত্রা ছিল দেহ ও আত্মা উভয়ের মিলিত উত্থান। বুরাক ছিল সেই মাধ্যম, যা নবীকে দুনিয়ার সীমা ছাড়িয়ে আকাশের সীমানা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিল।

বুরাক ইসলামী ইতিহাসে এক অলৌকিক নাম। এটি কেবল এক প্রাণী নয়, বরং বিশ্বাস, আধ্যাত্মিকতা এবং নবুওতের গৌরবের প্রতীক। যেমন বিদ্যুৎ মুহূর্তে আকাশ চিরে আলোর রেখা ফেলে, তেমনি বুরাকও সেই “আলোর বাহন” যা মাটির সীমা ভেঙে আকাশের সীমানা ছুঁয়েছিল।

তাই মুসলমানদের কাছে বুরাক শুধু ইতিহাস নয়, বরং ঈমানের অংশ—যা মনে করিয়ে দেয়, আল্লাহর ইচ্ছা হলে অসম্ভবও সম্ভব।


মিসরের কায়রোতে আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম বাংলাদেশের হুমায়রা মাসুদ

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১২ ১৮:১৪:৩৬
মিসরের কায়রোতে আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম বাংলাদেশের হুমায়রা মাসুদ
অন্য বিজয়ীদের সঙ্গে বাংলাদেশি তরুণী হুমায়রা মাসুদ | ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের তরুণী হুমায়রা মাসুদ মিসরের রাজধানী কায়রোতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় মেয়েদের বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করে ইতিহাস গড়েছেন। ছেলেরা যেমন বৈশ্বিক পরিসরে কোরআন তেলাওয়াত ও হিফজ প্রতিযোগিতায় লাল-সবুজের পতাকা ওড়াচ্ছেন, সেই ধারাবাহিকতায় এবার সুনাম অক্ষুণ্ন রাখলেন হুমায়রা।

মঙ্গলবার ১১ নভেম্বর কায়রোতে 'ইন্দোনেশিয়ান কোরআন রিসাইটারস অ্যাসোসিয়েশন' আয়োজিত প্রতিযোগিতার সমাপনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মেয়েদের গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকারী হিসেবে হুমায়রার নাম ঘোষণা করে আয়োজক কমিটি।

প্রতিযোগিতার ফলাফল

প্রতিযোগিতায় ১২টি দেশের মোট ১৪৩ জন প্রতিযোগী অংশ নেন। মেয়েদের জন্য নির্ধারিত বিভাগে প্রথম হন হুমায়রা মাসুদ।

প্রথম স্থান: হুমায়রা মাসুদ (বাংলাদেশ)

দ্বিতীয় স্থান: আয়েশা ইজ্জত মুসলিমা (ইন্দোনেশিয়া)

তৃতীয় স্থান: কায়রানি নফসুল মুতমাইন্না (ইন্দোনেশিয়া)

অন্যদিকে, ছেলেদের বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন বশির উসমান ইমাম (নাইজেরিয়া)। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন আল-আজহার মসজিদের ইমাম ও ক্বারী শায়খ ফাওযী আল-বারবারী আজহারি।

হুমায়রার পরিচিতি ও অর্জন

হুমায়রা মাসুদের বাড়ি চাঁদপুর জেলার হাইমচর থানার চর ভৈরবী গ্রামে। বর্তমানে তিনি মিসরের বিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক থিওলজি অনুষদে অধ্যয়নরত। মেধাবী এই তরুণী নারায়ণগঞ্জের উম্মে আইমান (রা) আন্তর্জাতিক বালিকা মাদ্রাসা থেকে হিফজ এবং জামিয়া ইব্রাহিমিয়া আমিনিয়া মহিলা মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিস সম্পন্ন করেছেন।

এর আগেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উজ্জ্বল সাফল্য পেয়েছেন হুমায়রা মাসুদ। ২০১০ সালে জর্ডানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় তিনি দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। আর ২০২৫ সালে মিসরের ওয়াক্ফ মন্ত্রণালয় আয়োজিত ৩১তম আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় অনারবদের জন্য নির্ধারিত বিভাগে পঞ্চম হন তিনি।

স্বামীর উচ্ছ্বাস ও মন্তব্য

স্ত্রীর এমন ঐতিহাসিক সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হুমায়রার স্বামী মাওলানা মাসুম বিল্লাহ গুলজার আজহারি। তিনি বলেন:

"তার এই অর্জন নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য গৌরবের। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কোরআন তেলাওয়াতে বাংলাদেশের মেয়েদের এমন সাফল্য আমাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উজ্জ্বল প্রতিফলন।"

তিনি আরও বলেন, হুমায়রা প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশের মেয়েরাও বৈশ্বিক পরিসরে কোরআনের খেদমতে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারেন।


আজ বুধবার ১২ নভেম্বর: ঢাকার নামাজের সময়সূচি

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১২ ০৯:৪১:৫৯
আজ বুধবার ১২ নভেম্বর: ঢাকার নামাজের সময়সূচি
ছবি: সংগৃহীত

আজ বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, বাংলা তারিখ অনুযায়ী ২৭ কার্তিক ১৪৩২ এবং হিজরি ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭। রাজধানী ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার মুসল্লিদের জন্য আজকের নামাজের সময়সূচি প্রকাশ করেছে ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

আজকের নামাজের সময় অনুযায়ী, জোহর শুরু হবে সকাল ১১টা ৪৬ মিনিটে, আসর শুরু হবে বিকেল ৩টা ৩৮ মিনিটে, মাগরিবের আজান হবে ৫টা ১৭ মিনিটে, এবং এশার নামাজের সময় শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টা ৩৩ মিনিটে। অন্যদিকে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ফজরের নামাজ শুরু হবে ভোর ৪টা ৫৮ মিনিটে।

আজ সূর্যাস্তের সময় ৫টা ১৫ মিনিট, আর আগামীকাল সূর্যোদয় হবে সকাল ৬টা ০৯ মিনিটে।

ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী, এই সময়সূচি শুধু ঢাকা ও আশপাশের এলাকাগুলোর জন্য প্রযোজ্য। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে নামাজের সময় ভৌগোলিক অবস্থান অনুসারে কয়েক মিনিট তারতম্য হতে পারে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে সূর্যাস্ত কিছুটা আগে হয়, আর দক্ষিণাঞ্চলে পরে। তাই মুসল্লিদের অনুরোধ করা হয়েছে স্থানীয় মসজিদ বা ইসলামিক কেন্দ্রের ঘোষণার সঙ্গে সময় মিলিয়ে নামাজ আদায় করতে।


জেনে নিন বৃহস্পতিবারের সদাকাহর গোপন রহমত

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১০ ১৮:৪৫:০২
জেনে নিন বৃহস্পতিবারের সদাকাহর গোপন রহমত
ছবি: সংগৃহীত

ইসলামে সদাকাহ বা দান কেবল অর্থ ব্যয়ের বিষয় নয়, এটি আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার এক মহান ইবাদত। পবিত্র কুরআন ও হাদীসে বারবার উল্লেখ আছে, সদাকাহ মানুষকে গুনাহ থেকে মুক্তি দেয়, রিজিক বৃদ্ধি করে, দুঃখ-দুর্দশা দূর করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। বিশেষত বৃহস্পতিবার রাতে বা বৃহস্পতিবার দিনে সদাকাহ প্রদান ইসলামী ঐতিহ্যে অতিরিক্ত ফজিলতপূর্ণ বলে বিবেচিত।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন “সোমবার ও বৃহস্পতিবার দিনে বান্দাদের আমলসমূহ আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়।” (তিরমিযী, হাদীস: ৭৪৭) অর্থাৎ এই দুই দিনে বান্দার আমলসমূহ আল্লাহর সামনে উপস্থাপিত হয়, এবং যাদের মধ্যে দ্বেষ, হিংসা বা সম্পর্কচ্ছেদ নেই, তাদের ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। ফলে বৃহস্পতিবার রাতে সদাকাহ করা মানে নিজের আমলকে আল্লাহর দরবারে উপস্থাপনের আগে পবিত্র করা যেন তা রহমত ও মাফের যোগ্য হয়।

কুরআনের ভাষায়, “তোমরা যা কিছু আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করো, তিনি তার বদলা দেবেন।” (সূরা সাবা: ৩৯) এই আয়াতে আল্লাহ আশ্বাস দিয়েছেন যে তাঁর রাস্তায় ব্যয় করা প্রতিটি দানই বহুগুণে প্রতিদান লাভ করে। বৃহস্পতিবার রাতের সদাকাহ তাই শুধু অর্থনৈতিক সাহায্য নয়, বরং এটি আত্মার প্রশান্তি, জীবনের সংকট থেকে মুক্তি এবং রিজিক বৃদ্ধির দোয়ার এক মাধ্যম।

ইসলামী পণ্ডিতগণ বলেন, সদাকাহ আল্লাহর রাগ প্রশমিত করে, বিপদ ও রোগ থেকে রক্ষা করে, আর মানবসম্পর্কে করুণা ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগিয়ে তোলে। বৃহস্পতিবার রাতে সদাকাহর এই গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায় কারণ এটি এমন এক সময়, যখন আল্লাহর দরবারে আমল উপস্থাপনের প্রস্তুতি চলে যেন বান্দার নাম আমলনামায় কল্যাণের চিহ্নে উজ্জ্বল হয়।

তাছাড়া, বৃহস্পতিবার রাতে দান করলে তা পরের শুক্রবারের জুমা দিবসের প্রস্তুতিও হিসেবে ধরা হয়। কারণ, ইসলামী দৃষ্টিতে জুমার আগের রাত আত্মসমালোচনা ও ইবাদতের জন্য বিশেষ সময়। তাই এ রাতে দান করা মানে সপ্তাহের সেরা দিনে নিজের আত্মাকে ও সম্পদকে কল্যাণে উৎসর্গ করা।সদাকাহ কেবল ধনীদের দায়িত্ব নয়; সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিটি মানুষই দান করতে পারে তা অর্থ, খাদ্য, পোশাক কিংবা সদয় আচরণ যাই হোক না কেন। হাদীসে এসেছে, “হাসিমুখে ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাও সদাকাহ।” (তিরমিযী) অর্থাৎ সদাকাহর পরিধি বিস্তৃত, এবং এর মাধ্যমে সমাজে ভালোবাসা, সহযোগিতা ও ন্যায়বোধ প্রতিষ্ঠিত হয়।

অতএব, বৃহস্পতিবার রাতে সদাকাহর ফজিলত শুধু দুনিয়াবি বরকতের নয়, বরং আখিরাতের সওয়াবেরও নিশ্চয়তা। এটি এমন এক ইবাদত যা অদৃশ্যভাবে বান্দার জন্য মঙ্গল বয়ে আনে, মন থেকে হিংসা ও স্বার্থপরতা দূর করে, এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ উন্মুক্ত করে।


১০ নভেম্বর ২০২৫: আজকের নামাজের পূর্ণ সময়সূচি প্রকাশ!

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ১০ ০৯:৫৫:৫৬
১০ নভেম্বর ২০২৫: আজকের নামাজের পূর্ণ সময়সূচি প্রকাশ!
ছবি: সংগৃহীত

ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ নামাজ প্রতিটি মুসলমানের জীবনের অপরিহার্য ইবাদত। সময়মতো নামাজ আদায়ের প্রতি ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, যারা নামাজের সময়ের আগেই মসজিদে এসে নামাজের অপেক্ষায় বসে, তাদের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত নামাজকে সময়মতো, মনোযোগসহকারে আদায় করা।

আজ সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৫ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা এবং ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, আজকের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের নামাজের সময়সূচি নিচে দেওয়া হলো-

? ফজর: ৪টা ৫৩ মিনিট? জোহর: ১১টা ৪৬ মিনিট? আসর: ৩টা ৩৯ মিনিট? মাগরিব: ৫টা ১৮ মিনিট? ইশা: ৬টা ৩৪ মিনিট

এছাড়া, আজ সূর্যাস্ত হবে বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে এবং সূর্যোদয় হবে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে।

বিভাগীয় শহরগুলোর জন্য উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে কিছু সময় যোগ বা বিয়োগ করতে হবে, যা নিচে দেওয়া হলো-

সময় বিয়োগ করতে হবে:

চট্টগ্রাম: -০৫ মিনিট

সিলেট: -০৬ মিনিট

সময় যোগ করতে হবে:

খুলনা: +০৩ মিনিট

রাজশাহী: +০৭ মিনিট

রংপুর: +০৮ মিনিট

বরিশাল: +০১ মিনিট

তথ্যসূত্র: ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ


আজকের নামাজের সময়সূচি ও নামাজের ফজিলত

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৯ ১০:০৩:৪৪
আজকের নামাজের সময়সূচি ও নামাজের ফজিলত
ছবি: সংগৃহীত

প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো আদায় করা মুসলমানের জন্য ফরজ ইবাদত এবং জান্নাতের চাবিকাঠি। নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা বান্দার গুনাহ মাফ করেন এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দেন। সময়মতো নামাজ আদায়ের জন্য যারা সময়ের আগেই মসজিদে এসে অপেক্ষা করেন, ফেরেশতারা তাদের জন্য দোয়া করেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের ফজিলত সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন-

“আজান দেওয়া এবং প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর মধ্যে যে কী মর্যাদা আছে তা যদি মানুষ জানতে পারত, তাহলে তা পাওয়ার জন্য তারা লটারি করত। জোহরের নামাজের মর্যাদা যদি তারা বুঝত, তবে তা আদায়ের জন্য প্রতিযোগিতা করত। আর এশা ও ফজরের নামাজের মর্যাদা যদি তারা জানত, তবে হামাগুড়ি দিয়েও এসে নামাজে উপস্থিত হতো।”(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৮৬৭)

আজ রোববার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

তারিখ: ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বাংলা, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরিস্থান: ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকা

নামাজের সময়সূচি (ইসলামিক ফাউন্ডেশন অনুযায়ী)

ফজর: সকাল ৪:৫২ মিনিট

জোহর: দুপুর ১১:৪৩ মিনিট

আসর: বিকেল ৩:৪০ মিনিট

সূর্যাস্ত: বিকেল ৫:১৫ মিনিট

মাগরিব: বিকেল ৫:১৯ মিনিট

ইশা: সন্ধ্যা ৬:৩৩ মিনিট

ইফতার: বিকেল ৫:১৯ মিনিট

সোমবার, ১০ নভেম্বরের সময়সূচি:

ফজর: সকাল ৪:৫২ মিনিট

তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়: সকাল ৪:৫১ মিনিট

সূর্যোদয়: সকাল ৬:১০ মিনিট

বিভাগীয় শহরগুলোর সময় পার্থক্য:

সময় বিয়োগ করতে হবে:

চট্টগ্রাম: ৫ মিনিট

সিলেট: ৬ মিনিট

সময় যোগ করতে হবে:

খুলনা: ৩ মিনিট

রাজশাহী: ৭ মিনিট

রংপুর: ৮ মিনিট

বরিশাল: ১ মিনিট

নামাজের গুরুত্ব নিয়ে আলোকপাত

ইসলাম ধর্মে নামাজ শুধু ইবাদত নয়, এটি আত্মিক শুদ্ধিরও মাধ্যম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।” (সূরা আনকাবুত: ৪৫)। প্রতিদিনের নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী নামাজ আদায় করলে জীবনে শৃঙ্খলা, আত্মসংযম এবং আল্লাহর প্রতি ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।


ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আজকের নামাজের সময়সূচি

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৬ ০৯:১১:৩৯
ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আজকের নামাজের সময়সূচি
ছবিঃ সংগৃহীত

আজ বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ এবং ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য আজকের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচি ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা-এর সূত্র অনুযায়ী নিচে দেওয়া হলো।

আজ জোহরের সময় শুরু হবে সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে। এরপর আসরের সময় শুরু হবে বিকেল ৩টা ৪১ মিনিটে। সন্ধ্যায় মাগরিবের সময় শুরু হবে ৫টা ২০ মিনিটে এবং এশার সময় শুরু হবে ৬টা ৩৫ মিনিটে।

এছাড়াও, আগামীকাল শুক্রবারের (৭ নভেম্বর ২০২৫) ফজর নামাজের সময় শুরু হবে ভোর ৪টা ৫৪ মিনিটে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত হবে সন্ধ্যা ৫টা ১৮ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় হবে সকাল ৬টা ০৬ মিনিটে।


ইতিহাসের একমাত্র অপরাজিত বীর খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রাঃ):তাঁর রণকৌশলে বদলে যায় পৃথিবীর মানচিত্র!

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৫ ১৯:০৭:০৫
ইতিহাসের একমাত্র অপরাজিত বীর খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রাঃ):তাঁর রণকৌশলে বদলে যায় পৃথিবীর মানচিত্র!

ইতিহাসে জুলিয়াস সিজার, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, বা চেঙ্গিস খানের মতো বহু বিখ্যাত সেনাপতির নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। কিন্তু এমন একজন সেনাপতি ছিলেন, যিনি তার জীবনে ১০০টিরও বেশি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও একটিতেও পরাজিত হননি। তিনি হলেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাহাবী খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রাঃ), যিনি 'সাইফুল্লাহ' বা 'আল্লাহর তরবারি' উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। তার অবিশ্বাস্য সামরিক প্রজ্ঞা, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং অভিনব রণকৌশল আধুনিক সামরিক ইতিহাসেও এক বিস্ময়ের বস্তু।

খালিদ ইবনে ওয়ালিদের সামরিক প্রতিভার প্রথম ঝলক দেখা যায় মু'তার যুদ্ধে। মুসলিম দূতের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে এই যুদ্ধের সূচনা হয়, যেখানে মাত্র ৩,০০০ মুসলিম সেনার বিপরীতে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় এক লক্ষ (বা তারও বেশি)। যুদ্ধের এক পর্যায়ে মুসলিম বাহিনীর তিনজন সেনাপতি—জায়েদ ইবনে হারিসা, জাফর বিন আবু তালিব, এবং আব্দুল্লাহ বিন রাওয়া (রাঃ)—শাহাদাত বরণ করলে মুসলিম বাহিনী যখন প্রায় ধ্বংসের মুখে, তখন খালিদ (রাঃ) নিজ হাতে যুদ্ধের পতাকা তুলে নেন।

তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এই অসম যুদ্ধে সরাসরি জয় অসম্ভব। তার লক্ষ্য ছিল মুসলিম বাহিনীকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা। তিনি এক অভূতপূর্ব রণকৌশল অবলম্বন করেন। তিনি তার সৈন্যদের দলগুলোকে ক্রমাগত শাফলিং (সামনে থেকে পেছনে, পেছন থেকে সামনে) করতে থাকেন। এতে বাইজেন্টাইন বাহিনী মনে করে, মুসলিমদের জন্য নতুন নতুন সাহায্যকারী দল (রিইনফোর্সমেন্ট) আসছে। এই মনস্তাত্ত্বিক চাপের মুখে শত্রুপক্ষ দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তারা একটি ফাঁদে পা দেওয়ার ভয়ে পিছু হটতে শুরু করে। এই সুযোগে খালিদ (রাঃ) অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে পুরো মুসলিম বাহিনীকে প্রায় অক্ষত অবস্থায় মদিনায় ফিরিয়ে আনেন। এটি ছিল এক পরাজয় নিশ্চিত যুদ্ধকে কৌশলের মাধ্যমে ড্র করার এক অনন্য উদাহরণ।

পারস্য বিজয়

প্রথম খলিফা আবু বকর (রাঃ)-এর সময় খালিদ (রাঃ)-কে পারস্য (সাসানীয়) সাম্রাজ্য জয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পারস্য বাহিনীর প্রধান শক্তি ছিল তাদের ভারী বর্ম ও অস্ত্র, যা তাদের ধীরগতির করে তুলেছিল। অন্যদিকে, খালিদ (রাঃ)-এর বাহিনীর শক্তি ছিল উট ও ঘোড়ার আরোহী দলের অবিশ্বাস্য গতি (মোবিলিটি)।

ব্যাটল অফ চেইনস (শৃঙ্খলের যুদ্ধ)

খালিদ (রাঃ) পারস্য গভর্নর হরমুজকে চিঠি পাঠান এক পথ (কাজিমা) দিয়ে, কিন্তু নিজে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মরুভূমির পথ ধরে অগ্রসর হন। হরমুজ তার ভারী বর্ম পরিহিত সৈন্যদের নিয়ে কাজিমার দিকে অগ্রসর হয়ে মুসলিমদের না পেয়ে আবার হুফায়ারের দিকে ছোটেন। খালিদ (রাঃ) শত্রুকে এই মরুভূমিতে বারবার হাঁটিয়ে ক্লান্ত ও তৃষ্ণার্ত করে তোলেন। যখন ক্লান্ত পারস্য বাহিনী কাজিমায় ফিরে আসে, তখন সতেজ মুসলিম বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে তারা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।

ব্যাটল অফ রিভার (নদীর যুদ্ধ)

এই যুদ্ধে তিনি 'ফেইন্ড রিট্রিট' বা নকল পশ্চাদপসরণের এক নিখুঁত উদাহরণ তৈরি করেন। তিনি তার বাহিনীকে এমনভাবে আক্রমণ করতে বলেন যেন তারা বিশৃঙ্খল এবং সহজেই পরাজিত হচ্ছে। পারস্য বাহিনী এই ফাঁদে পা দিয়ে মুসলিমদের ধাওয়া করতে গিয়ে তাদের সুশৃঙ্খল গভীর ব্যূহ (ফর্মেশন) ভেঙে ফেলে। ঠিক সেই মুহূর্তে খালিদ (রাঃ)-এর লুকিয়ে রাখা অশ্বারোহী বাহিনী দুই পাশ থেকে তাদের ঘিরে ফেলে। পারস্য বাহিনীর সৈন্যরা পালানোর কোনো পথ না পেয়ে টাইগ্রিস (দজলা) নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং বিশাল এক বাহিনী ধ্বংস হয়ে যায়।

ইয়ারমুকের যুদ্ধ

খালিদ (রাঃ)-এর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ যুদ্ধ মনে করা হয় ইয়ারমুকের যুদ্ধকে। পারস্য অভিযান শেষ না হতেই তাকে খলিফার আদেশে রোমান (বাইজেন্টাইন) সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সিরিয়া রণাঙ্গনে যোগ দিতে হয়।

ইয়ারমুকের ময়দানে প্রায় ৪০,০০০ মুসলিম সেনার বিপরীতে রোমান বাহিনীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার। রোমানরা খালিদ (রাঃ)-এর অশ্বারোহী বাহিনীর ফ্ল্যাঙ্কিং (পাশ থেকে আক্রমণ) সম্পর্কে সচেতন ছিল। তাই তারা মুসলিমদের ফজরের নামাজের সময় অতর্কিত হামলা করার পরিকল্পনা করে।

কৌশলের জবাব কৌশল খালিদ (রাঃ) এই আক্রমণের আশঙ্কা করেছিলেন। তিনি তার বাহিনীকে যুদ্ধক্ষেত্রেই যুদ্ধের বিন্যাসে (ব্যাটল ফর্মেশন) দাঁড়িয়ে ফজরের নামাজ আদায় করার নির্দেশ দেন। ফলে রোমানরা সারপ্রাইজ অ্যাটাক করতে এসে উল্টো প্রস্তুত মুসলিম বাহিনীর সামনে পড়ে যায়।

যুদ্ধের চতুর্থ দিনটি ছিল মুসলিমদের জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর, যা 'ডে অফ লস্ট আইজ' নামে পরিচিত। রোমান তীরন্দাজদের প্রবল আক্রমণে অসংখ্য মুসলিম সৈন্য তাদের চোখ হারান। মুসলিম বাহিনীর ডান ও বাম উভয় উইং যখন প্রায় ভেঙে পড়ছে, তখন ক্যাম্প থেকে মুসলিম নারীরাই কাপুরুষ বলে ভর্ৎসনা করে এবং পাথর ছুঁড়ে সৈন্যদের আবার যুদ্ধের ময়দানে ফেরত পাঠান।

খালিদের মাস্টারস্ট্রোক

যুদ্ধের পঞ্চম দিনে (বিশ্রামের দিন) খালিদ (রাঃ) তার চূড়ান্ত পরিকল্পনা সাজান। ষষ্ঠ দিনে তিনি তার সমস্ত অশ্বারোহী বাহিনীকে নিজের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। তিনি একটি ছোট দলকে বিশাল মরুভূমি ঘুরপথে পাঠান রোমানদের ঠিক পেছনে অবস্থান নেওয়ার জন্য। এরপর তিনি মূল বাহিনী নিয়ে রোমানদের এক পাশে প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু করেন। রোমানরা যখন তাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে সেই আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে খালিদ (রাঃ)-এর সেই গোপন অশ্বারোহী দলটি রোমানদের পেছন থেকে আক্রমণ করে। তিন দিক থেকে আক্রান্ত হয়ে রোমান বাহিনী সম্পূর্ণ ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে এবং মুসলিমরা এক অবিশ্বাস্য বিজয় লাভ করে।

খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রাঃ) এমন একজন সেনাপতি ছিলেন যিনি শুধু তলোয়ারের জোরে নয়, বরং তার প্রখর বুদ্ধিমত্তা, শত্রুর মনস্তত্ত্ব বোঝার ক্ষমতা এবং প্রতিবার নতুন নতুন রণকৌশল উদ্ভাবনের মাধ্যমে যুদ্ধ জয় করতেন। তিনি মরুভূমির পরিবেশকে নিজের শক্তির জায়গায় পরিণত করেছিলেন এবং প্রতিপক্ষের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। তার ১০০% জয়ের রেকর্ড তাকে ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সামরিক কৌশলবিদদের কাতারে এক অনন্য স্থান দিয়েছে।


কারা পাবেন বিনা হিসাবে জান্নাত? হাদিসের আলোকে জানুন সৌভাগ্যবানদের বিশেষ গুণাবলী

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৪ ২০:৪৫:৪৮
কারা পাবেন বিনা হিসাবে জান্নাত? হাদিসের আলোকে জানুন সৌভাগ্যবানদের বিশেষ গুণাবলী
ছবিঃ সংগৃহীত

মানবজীবনের সবচেয়ে বড় আকাঙ্ক্ষা হলো চিরস্থায়ী মুক্তি ও জান্নাত লাভ করা। তবে জান্নাতের পথ সহজ নয়; সেখানে পৌঁছানোর জন্য হিসাব-নিকাশ, প্রশ্নোত্তর এবং আল্লাহর বিচারের কঠোরতা অতিক্রম করতে হয়। তবুও মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় রাসুল মুহাম্মাদ (সা.)-এর উম্মতের প্রতি বিশেষ দয়া প্রদর্শন করেছেন। কারণ এই উম্মতের মধ্যে এমন কিছু সৌভাগ্যবান মানুষ থাকবেন, যাদের জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যাবে বিনা হিসাবেই।

হজরত আবূ উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি—

"‏ وَعَدَنِي رَبِّي أَنْ يُدْخِلَ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِي سَبْعِينَ أَلْفًا لاَ حِسَابَ عَلَيْهِمْ وَلاَ عَذَابَ مَعَ كُلِّ أَلْفٍ سَبْعُونَ أَلْفًا وَثَلاَثُ حَثَيَاتٍ مِنْ حَثَيَاتِهِ ‏"‏"

অর্থাৎ, ‘আমার প্রভু আমার সঙ্গে অঙ্গীকার করেছেন যে, তিনি আমার উম্মাতের মধ্যে সত্তর হাজার লোককে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যাদের কোনো হিসাবও নেওয়া হবে না এবং শাস্তিও প্রদান করা হবে না। আর প্রতি হাজারের সঙ্গে থাকবে আরও সত্তর হাজার। আর আমার পরোয়ারদিগারের তিনমুঠি পরিমাণ।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৪৩৭)

হাদিসের মর্মার্থ ও ব্যাখ্যা

এই হাদিসটিতে আল্লাহর রহমত ও উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রতি বিশেষ মর্যাদার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। মুহাদ্দিসগণ হাদিসের ব্যবহৃত সংখ্যাগুলোর প্রতীকি ও আক্ষরিক উভয় অর্থেই ব্যাপকতা তুলে ধরেছেন

আরবিতে "সত্তর হাজার" (سبعين ألفا) সংখ্যাটি কেবল একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা নয়, বরং প্রাচুর্য বা অসংখ্যতার প্রতীক। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা তাঁর সীমাহীন দয়ার প্রকাশ ঘটিয়ে অসংখ্য মানুষকে বিনা হিসাবেই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।

হাদিসে যখন বলা হয়েছে "مَعَ كُلِّ أَلْفٍ سَبْعُونَ أَلْفًا"—অর্থাৎ "প্রতি হাজারের সঙ্গে থাকবে আরও সত্তর হাজার", তখন এর অর্থ দাঁড়ায় এক গণনাযোগ্য বিশাল সংখ্যা।

এর পরেও বলা হয়েছে "وَثَلاَثُ حَثَيَاتٍ مِنْ حَثَيَاتِهِ"—অর্থাৎ "আর আমার প্রভুর তিন মুঠো পরিমাণ"—এই অংশ দ্বারা এমন অসংখ্য অতিরিক্ত লোককে বোঝানো হয়েছে, যাদের সংখ্যা কেবল আল্লাহই জানেন। ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, এই ‘মুঠি’ হচ্ছে রহমতের রূপক প্রকাশ।

ইবনে হাজার (রহ.) তাঁর ফাতহুল বারী গ্রন্থে বলেন, এই হাদিসে আল্লাহর রহমতের ব্যাপকতা ও নবী ﷺ-এর উম্মতের বিশেষ মর্যাদা প্রতিফলিত হয়েছে।

বিনা হিসাবে জান্নাত লাভের গুণাবলী

এই সৌভাগ্যবান ব্যক্তিরা কারা, তা অন্য একটি সহিহ হাদিসে (বুখারি ও মুসলিমে) স্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে। এরা এমন লোক—

"لاَ يَسْتَرْقُونَ، وَلاَ يَكْتَوُونَ، وَلاَ يَتَطَيَّرُونَ، وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ"

অর্থাৎ, “যারা রুকইয়া করাতে বলে না, দগ্ধ চিকিৎসা নেয় না, অশুভ লক্ষণ গ্রহণ করে না এবং সর্বাংশে তাদের রবের ওপর ভরসা রাখে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৪৭২; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২০) এই গুণাবলী প্রমাণ করে যে, তারা সম্পূর্ণভাবে তাওয়াক্কুল (আল্লাহর ওপর নির্ভরতা)-এর এক উচ্চতম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তাদের অন্তর দুনিয়াবি ভরসা থেকে মুক্ত এবং তারা নিজেদের সর্বদা আল্লাহর হাতে সোপর্দ করে দেয়।

ইমাম নববী (রহ.) লিখেছেন, এই হাদিসটি আল্লাহর পক্ষ থেকে উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রতি এমন একটি সম্মান, যা অন্য কোনো উম্মত পায়নি।

এই হাদিসটি মুমিনদের মাঝে আশার আলো জাগায় এবং আল্লাহর সীমাহীন দয়ার দলিল হিসেবে কাজ করে। এই হাদিস থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাগুলো হলো

বিনা হিসাবের জান্নাত পাওয়ার জন্য একমাত্র আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা (তাওয়াক্কুল), একান্ত ঈমান ও অবিচল আস্থা অর্জন করা জরুরি।

মানুষকে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখার শিক্ষা দেয়—অর্থাৎ চিকিৎসা, রুকইয়া বা ভাগ্যনির্ভর কুসংস্কারের উপর নির্ভর না করে একমাত্র আল্লাহর ওপর নির্ভর করতে হবে।

আমাদের উচিত—আমল ও তাওয়াক্কুলের মাধ্যমে সেই সৌভাগ্য অর্জনের আন্তরিক প্রচেষ্টা করা এবং নবী ﷺ-এর শিক্ষা অনুসারে জীবন গঠন করা।


আজকের নামাজের সময়সূচি: ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০৪ ১১:৩৩:৫৪
আজকের নামাজের সময়সূচি: ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য
ফাইল ছবি

ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ হিসেবে নামাজ মুসলমান জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ibadah। নামাজ কেবল আল্লাহর সঙ্গে নৈকট্য স্থাপনের মাধ্যম নয়, এটি মানুষের জীবনে শৃঙ্খলা, মনসংযম এবং সময়নিষ্ঠার প্রতীকও বটে। বিশেষ করে যারা নির্ধারিত সময়ে মসজিদে উপস্থিত হয়ে নামাজের জন্য অপেক্ষা করেন, তাদের জন্য ফেরেশতারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। এটি স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, সময়মতো নামাজ আদায় কেবল ধর্মীয় কর্তব্য নয়, বরং আধ্যাত্মিক প্রতিদান অর্জনের এক মাধ্যম।

হজরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, “যে ব্যক্তি মসজিদে নামাজের জন্য অপেক্ষা করে, সে যেন নামাজের মধ্যে অবস্থান করে। এবং যতক্ষণ সে মসজিদে থাকে, ফেরেশতারা তার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে থাকে, ‘হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করুন।’ অজু শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই দোয়া অব্যাহত থাকে।” (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩০) এই হাদিস মুসলমানদের সময়মতো নামাজের গুরুত্ব এবং মসজিদে উপস্থিত থাকার মর্যাদা তুলে ধরে।

আজ মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৯ কার্তিক ১৪৩২, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭, ঢাকা এবং আশেপাশের এলাকায় নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ:

জোহর: ১১টা ৪৫ মিনিট

আসর: ৩টা ৪২ মিনিট

মাগরিব: ৫টা ২১ মিনিট

এশা: ৬টা ৩৬ মিনিট

আগামীকাল ফজর: ৪টা ৫৩ মিনিট

ঢাকায় সূর্যাস্ত আজ ৫টা ১৮ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় হবে ৬টা ০৬ মিনিটে।

অন্যান্য অঞ্চলের জন্য নামাজের সময় সামান্য পরিবর্তিত হতে পারে। চট্টগ্রামে ৫ মিনিট বিয়োগ করতে হবে, সিলেটে ৬ মিনিট বিয়োগ। খুলনায় ৩ মিনিট, রাজশাহীতে ৭ মিনিট, রংপুরে ৮ মিনিট এবং বরিশালে ১ মিনিট সময় যোগ করতে হবে।

ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী

পাঠকের মতামত:

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

রাষ্ট্রের ধারণাটি একসময় কেবল প্রশাসনিক ক্ষমতা, আইনের শাসন এবং নিরাপত্তা প্রদানের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে রাষ্ট্রের ভূমিকা এখন... বিস্তারিত

যেভাবে ইউরোপের ধ্বংসস্তূপে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ হয়ে উঠলো আমেরিকা!

যেভাবে ইউরোপের ধ্বংসস্তূপে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ হয়ে উঠলো আমেরিকা!

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, ইতিহাসের এক এমন প্রলয়ঙ্করী অধ্যায় যা কেবল লক্ষ লক্ষ প্রাণই কেড়ে নেয়নি, বদলে দিয়েছিল গোটা পৃথিবীর মানচিত্র ও... বিস্তারিত