ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: আন্তর্জাতিক মতামত

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ০৭ ১৮:২৯:৪০
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: আন্তর্জাতিক মতামত

সত্য নিউজ: পেহেলগামের সন্ত্রাসী হামলার পর পরিস্থিতি ফের অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ায়। ভারতের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত রাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অন্তত ৯টি স্থানে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এর জবাবে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তান, যা দুই প্রতিবেশী পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, ভারতের হামলায় ৩১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২৬ জন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এবং বাকি পাঁচজন গোলার আঘাতে মারা যান। অন্যদিকে, সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর পাল্টা গোলাবর্ষণে ভারতের পুঞ্চ ও তাংধর এলাকায় সাত বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

পাকিস্তান: "এটি যুদ্ধের শামিল"

ভারতের সামরিক পদক্ষেপকে “যুদ্ধের শামিল” এবং “সরাসরি আগ্রাসন” বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, “কোথায় ও কীভাবে জবাব দেওয়া হবে, তা পাকিস্তানের একান্ত সিদ্ধান্ত।”

ভারত: "সন্ত্রাস দমনেই অভিযান"

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, “ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা হচ্ছিল এমন অন্তত ৯টি স্থানে আঘাত হানা হয়েছে।” এ অভিযানকে সন্ত্রাসবাদ রোধে একটি প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ বলেই দেখছে ভারত।

এই পারস্পরিক হামলা এবং পাল্টা প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মহল থেকে এসেছে শান্তির আহ্বান।

যুক্তরাষ্ট্র: দায়িত্বশীল সমাধান খুঁজে পেতে হবে

ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস জানান, “এটি একটি চলমান সংকট। আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।” তিনি জানান, দক্ষিণ এশিয়ার এ দুটি দেশের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র যোগাযোগ রাখছে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের হামলাকে “লজ্জাজনক” এবং “দুঃখজনক” বলে উল্লেখ করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাও দ্রুত উত্তেজনা প্রশমনের পক্ষে মত দিয়েছেন।

জাতিসংঘ: সামরিক সংঘাত ঠেকানো জরুরি

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “এলওসি ও আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে সামরিক অভিযান অত্যন্ত বিপজ্জনক ইঙ্গিত দেয়।” তিনি উভয় দেশকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান।

রাশিয়া: কূটনৈতিক সমাধানের পক্ষে

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান সামরিক উত্তেজনায় আমরা উদ্বিগ্ন। শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিক পথে সমাধান সম্ভব বলে আমরা বিশ্বাস করি।”

চীন: মধ্যস্থতার প্রস্তাব

চীন জানায়, “ভারত ও পাকিস্তান এমন প্রতিবেশী, যাদের আলাদা করা যায় না।” দেশটি উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি প্রয়োজন হলে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুতির কথাও জানায়।

যুক্তরাজ্য: উভয় পক্ষের বন্ধু হিসেবে ভূমিকা রাখতে চায়

যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথন রেনল্ডস বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা দুই দেশেরই বন্ধু। শান্তি ও সংলাপের মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনে আমরা উভয়কে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।”

জাপান: সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা

জাপানের মুখ্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি বলেন, “সাম্প্রতিক উত্তেজনা পূর্ণমাত্রার সামরিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে। তাই ভারত ও পাকিস্তানকে সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের পথে আসার আহ্বান জানাই।”

ফ্রান্স: সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান, তবে সংযম জরুরি

ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারো ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগকে স্বীকার করে বলেন, “তবে উত্তেজনা যেন না বাড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি। ভারত-পাকিস্তান উভয়কে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি।”

বাংলাদেশ: আঞ্চলিক শান্তির পক্ষে অবস্থান

বাংলাদেশও এই সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “আঞ্চলিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশ আশাবাদী যে কূটনৈতিকভাবে এই উত্তেজনা নিরসন হবে।”

দুই দেশের সাম্প্রতিক সামরিক তৎপরতা শুধু উপমহাদেশ নয়, পুরো বিশ্বকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। যুদ্ধ নয়, শান্তি ও সংলাপই এখন সময়ের দাবি। আন্তর্জাতিক মহলের ঐক্যবদ্ধ আহ্বান—উত্তেজনার লাগাম টেনে ধরুন এবং আলোচনার পথ খুঁজে বের করুন।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত