“গণতন্ত্রের পথে একমাত্র সমাধান নির্বাচন”—বিএনপি মহাসচিব

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৬ ১৪:১১:২৭
“গণতন্ত্রের পথে একমাত্র সমাধান নির্বাচন”—বিএনপি মহাসচিব
ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো পদ্ধতিতে দেশের সংকটের সমাধান সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ৬ আগস্ট (বুধবার) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ ও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।

মির্জা ফখরুল বলেন, "আমাদের একমাত্র লক্ষ্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচন ছাড়া আর কোনো পথ নেই। পুরো জাতি আজ মনে করে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই বর্তমান রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের একমাত্র উপায়।"

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, "কিছু মানুষ হয়তো হতাশ, কিন্তু আমরা আশা করি, সবাই একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সামনে এগোবে। যারা এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তারাও এই জাতীয় ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।"

নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, "ড. ইউনূস অতীতে যেভাবে দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছেন, ভবিষ্যতেও তিনি এমন কিছু করবেন না যাতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়।"

তিনি বলেন, গত ১৬ বছরে দেশের মানুষ এক স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, সংগ্রাম করেছে, প্রাণ দিয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পরিকল্পিতভাবে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে তিনটি নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে লুটপাট, দুর্নীতি ও বিদেশে অর্থ পাচারের মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছাত্রলীগের দখলে চলে গেছে, ব্যাংক ও শেয়ারবাজার লুট হয়েছে, মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করা হয়েছে।

তিনি বলেন, "বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি শুরু থেকেই এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে অসংখ্য মামলা। বহু নেতাকর্মী গুম হয়েছেন, কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছেন।"

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, "২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র ও সাধারণ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী সরকারকে পালাতে বাধ্য হতে হয়। এর মধ্য দিয়েই মানুষের মধ্যে এক নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন জাগে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের কাজ শুরু করেন।"

তিনি বলেন, “৫ আগস্ট ঘোষিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’কে বিএনপি স্বাগত জানায়। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নতুন একটি ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই ঘোষণার বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই একটি সাম্য, মানবিক মূল্যবোধ ও ন্যায়ভিত্তিক প্রগতিশীল বাংলাদেশের পথ তৈরি হবে।”

বিএনপির পক্ষ থেকে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ জনগণসহ যারা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন বা পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানান ফখরুল। তিনি বলেন, “এই সংগ্রাম দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার লড়াই। আমরা সবাই মিলে একটি নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে চাই।”

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ