আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গোপন ঘাঁটি সায়দাবাদ: রাত হলেই শুরু অস্ত্রের মহড়া

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৬ ০৭:৫৯:২৪
আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গোপন ঘাঁটি সায়দাবাদ: রাত হলেই শুরু অস্ত্রের মহড়া
ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের সায়দাবাদ গ্রামে অস্ত্র প্রশিক্ষণের অভিযোগ ঘিরে এলাকাজুড়ে ব্যাপক উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও সূত্র জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত রাতের আঁধারে স্কুল মাঠে অস্ত্র চালনা, গুলির অনুশীলন এবং বিস্ফোরক ব্যবহারের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এসব প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট জসিম উদ্দিন ও নজরুল ইসলাম। তাদের তত্ত্বাবধানে আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী এই প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়রা জানান, গভীর রাত হলেই চরাঞ্চলের বাতাস ভারি হয়ে ওঠে গুলির শব্দে। প্রতিদিন রাতে গুলি ছোড়া ও বিস্ফোরণের শব্দে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই বাধ্য হয়ে এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। যারা থেকে গেছেন, তারা জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। এই গোপন প্রশিক্ষণের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলেই অনেকের সন্দেহ।

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে সায়দাবাদে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম নিজ নামে ‘শাহ আলম বাহিনী’ গড়ে তোলেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, এই বাহিনী সায়দাবাদ ও আশপাশের এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, জমি দখল, চাঁদাবাজি এবং লুটপাটে জড়িত। গত বছরের ২২ আগস্ট সংঘর্ষে শাহ আলম বাহিনীর গুলিতে প্রতিপক্ষের এক নারী ও এক ছাত্রসহ ছয়জন নিহত হয়। এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই তাদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয়রা হতাশ।

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ঢাকায় আওয়ামী লীগের গোপন ক্ষমতা গ্রহণ সংক্রান্ত গুজব ছড়ানোর পর শাহ আলম বাহিনীর তৎপরতা বেড়ে যায়। এ সময় থেকে তারা আরো সংগঠিতভাবে অস্ত্র হাতে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করে। যুবলীগের কথিত ডা. জসিম, ইকবাল, সালাউদ্দিন, ইউনুস, শিপন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের রহিম, সেলিম, হারুন, আরমান এবং ছাত্রলীগের রনি, মাহফুজ, বাবুসহ প্রায় ৪০-৫০ জন নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয়দের মতে, গত বছর নরসিংদী কারাগারে হামলা ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় যারা পলাতক, তাদের কয়েকজন এই চরাঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেই সময় লুট হওয়া অস্ত্রগুলোর একটি অংশ এখন সায়দাবাদ গ্রামে রয়েছে এবং সেগুলো দিয়ে প্রশিক্ষণ চালানো হচ্ছে। এতে পুরো অঞ্চলই রূপ নিচ্ছে এক অঘোষিত যুদ্ধক্ষেত্রে।

এই পরিস্থিতিতে রায়পুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আদিল মাহমুদ বলেন, “চর এলাকার সব জায়গাতেই অস্ত্র আছে—সায়দাবাদ, শ্রীনগর, বাঁশগাড়ী, চানপুর—কোন জায়গায় নাই?” তিনি অস্ত্র প্রশিক্ষণের খবর জানেন না বললেও চরাঞ্চলে অস্ত্রের উপস্থিতির কথা অস্বীকার করেননি। রায়পুরা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার বায়েজিদ বিন মনসুর জানান, এলাকাটিতে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্যের লড়াই চলছে এবং তারা গোপনে অস্ত্র ব্যবহারের মতো কাজ করতেই পারে। এলাকা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় পুলিশকে বড় আকারে অভিযান চালাতে হয় বলে তিনি জানান।

অন্যদিকে নরসিংদী জেলা পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মো. কলিমুল্লাহ হক বলেন, অস্ত্র প্রশিক্ষণের বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো অস্ত্রধারীদের ছবি যথাযথ কিনা তা যাচাই করা হচ্ছে। যদি প্রমাণিত হয় তারা ওই এলাকার বাসিন্দা, তবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এ অবস্থায় স্থানীয়দের দাবি, যৌথবাহিনীর দ্রুত হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ করা সম্ভব নয়। তারা আশঙ্কা করছেন, অস্ত্রধারীদের এ প্রস্তুতি বড় ধরনের সহিংসতায় রূপ নিতে পারে। তাই জননিরাপত্তা ও শান্তি রক্ষার্থে অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।

সূত্র: আমার দেশ

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ