ভারতীয় পুশ-ইনে ফিরেছে ৭৫ বাংলাদেশি, হস্তান্তর পরিবারের কাছে

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৩ ১৪:২০:১২
ভারতীয় পুশ-ইনে ফিরেছে ৭৫ বাংলাদেশি, হস্তান্তর পরিবারের কাছে

সত্য নিউজ: ভারতের গুজরাট রাজ্যের বিভিন্ন বস্তি থেকে আটক করে ‘পুশ ইন’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠানো ৭৮ জন নাগরিকের মধ্যে ৭৫ জনকে মঙ্গলবার সকালে নিজ নিজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে প্রশাসন। সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই হস্তান্তর কার্যক্রম সম্পন্ন হয়, যেখানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের প্রতিনিধিরা।

বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান শ্যামনগর থানা প্রাঙ্গণে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, পুশ ইন করা ব্যক্তিদের মধ্যে ৭৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক এবং বাকি তিনজন ভারতীয় নাগরিক দাবি করেছেন, যাদের জন্ম ভারতের গুজরাটে হলেও তারা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে ভারত গমন করেন।

গুজরাট থেকে অপহরণ, তারপর ‘পুশ ইন’

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভুক্তভোগীরা গুজরাটের আহমেদাবাদ ও সুরাটের বিভিন্ন বস্তিতে বসবাস করছিলেন এবং সেখানকার বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। গত ২৬ এপ্রিল গভীর রাতে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বাসা থেকে আটক করে এবং চোখ বেঁধে আলাদা সামরিক বিমানে স্থানান্তর করে।

পরবর্তীতে ৯ মে ভোররাতে ভারতীয় বিএসএফ ও নৌবাহিনী যৌথভাবে বঙ্গোপসাগরের মান্দারবাড়িয়া উপকূলে একটি চরে তাদের ফেলে রেখে যায়। উদ্ধারের পর জানা যায়, জাহাজে থাকা অবস্থায় তাদের প্রতি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়, এমনকি ধর্মীয় অবমাননাসূচক আচরণ ও মন্তব্যও করা হয়।

উদ্ধার ও মানবিক সহায়তা

১০ মে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের একটি দল মান্দারবাড়িয়া চর থেকে তাদের উদ্ধার করে। এরপর ১১ মে রাতে শ্যামনগর থানায় তাদের হস্তান্তর করা হয়। উদ্ধারপ্রাপ্তদের তাৎক্ষণিকভাবে খাদ্য, ঔষধ ও চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় এবং থানায় নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রনি খাতুন জানান, “৭৫ জনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তারা জন্মসূত্রে বাংলাদেশি। তাই ১৩ মে সকালে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।”

ভারতীয় নাগরিকত্ব দাবি করা ৩ জন কারাগারে

বাকি তিনজন — খুলনার আব্দুর রহমান (২০), নড়াইলের মো. হাসান শাহ (২৪) এবং সাইফুল শেখ (১৯) — তাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের দাবি করায় তাদের বিরুদ্ধে শ্যামনগর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এরপর আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। পুলিশ জানায়, এদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তের পর প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অমানবিকতা ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ভারতীয় পুলিশ তাদের বস্তি গুঁড়িয়ে দেয় এবং পরিবারের সদস্যদের সামনে অমানবিক নির্যাতন চালায়। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা এখনও অজানা রয়ে গেছে। এই ঘটনাটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর দৃষ্টান্ত হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচিত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

উপস্থিত ছিলেন শীর্ষ কর্মকর্তারা

হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম, কালিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিথুন সরকার ও শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির মোল্লা।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ