ট্রাম্পের নতুন ইউক্রেন নীতি: অস্ত্র পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র, ব্যয় বহন করবে ন্যাটো

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১১ ১৫:০৪:৩৯
ট্রাম্পের নতুন ইউক্রেন নীতি: অস্ত্র পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র, ব্যয় বহন করবে ন্যাটো

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক যুগান্তকারী কৌশলগত ঘোষণাতে জানিয়েছেন, ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহের দায়িত্বে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তু সেই অস্ত্রের আর্থিক দায়ভার বহন করবে ন্যাটো। এর মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সম্পৃক্ততার একটি নতুন মাত্রা যোগ হলো, যা অতীতের তুলনায় আরও অনেক বেশি সংগঠিত এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব নির্ভর। এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ন্যাটোর জন্য অস্ত্র পাঠানো হবে এবং তারপর সেই অস্ত্র ন্যাটোর মাধ্যমে ইউক্রেনের কাছে পৌঁছাবে। অস্ত্রের সম্পূর্ণ ব্যয় ন্যাটো বহন করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এই ঘোষণার পাশাপাশি ট্রাম্প আরও জানান, আগামী সোমবার, অর্থাৎ ১৪ জুলাই তিনি রাশিয়ার বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি দেবেন। এই ঘোষণাকে ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে কৌতূহল তৈরি হয়েছে, বিশেষত এমন এক সময়ে যখন ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে এবং কিয়েভ শহর ব্যাপক বিমান হামলার শিকার হয়েছে। ট্রাম্প ইতোমধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি তাঁর হতাশা প্রকাশ করেছেন এবং ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে অগ্রগতির ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন।

ট্রাম্প এবারই প্রথমবারের মতো তাঁর প্রেসিডেন্ট ক্ষমতার অধীনে "Presidential Drawdown Authority" ব্যবহার করে ইউক্রেনে সরাসরি অস্ত্র পাঠাচ্ছেন। এই কর্তৃত্ব তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মজুদের ভাণ্ডার থেকে মিত্রদের জন্য সরাসরি অস্ত্র সরবরাহের ক্ষমতা প্রদান করে। দুইটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, এই অস্ত্রচালানের মূল্য হতে পারে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই চালানে প্রতিরক্ষামূলক প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ও মাঝারি পাল্লার আক্রমণাত্মক রকেট অন্তর্ভুক্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও অস্ত্রের চূড়ান্ত তালিকা এখনো নির্ধারণ হয়নি। বৃহস্পতিবার একটি বৈঠকে এটি চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসন এতদিন কেবলমাত্র বাইডেন সরকারের অনুমোদিত অস্ত্রই ইউক্রেনে পাঠিয়ে আসছিল। তবে এবার, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প নিজেই সক্রিয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। যদিও তিনি ইউক্রেনের প্রতি কখনো সমর্থন দেখিয়েছেন, আবার কখনো রাশিয়ার পক্ষাবলম্বন করেছেন, কখনো ইউক্রেন সরকারের বিরুদ্ধে কঠিন মন্তব্য করেছেন, এই নতুন সিদ্ধান্ত তাঁর অবস্থান পরিবর্তনের বার্তা দিচ্ছে বলেই আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

অন্যদিকে, রোমে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তাঁর বক্তব্যে ইউক্রেনের পুনর্গঠনে রাশিয়ার বাজেয়াপ্ত সম্পদ ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন। এই সম্মেলনে ইইউসহ বিভিন্ন দেশ ইউক্রেনকে প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে ২.৩ বিলিয়ন ইউরো সাহায্য ঘোষণা করা হয়েছে। একই সময়ে, রাশিয়া কিয়েভে ব্যাপক বিমান ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। জাতীয় জরুরি পরিষেবা সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর প্রায় প্রতিটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কয়েক ডজন ভবন ধ্বংস হয়েছে এবং শত শত মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে মালয়েশিয়ায় রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে আলোচনায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও রাশিয়ার প্রতি আরও নমনীয়তা প্রদর্শনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই সংঘাত কীভাবে শেষ হতে পারে তা নিয়ে একটি রোডম্যাপ দরকার। মার্কো রুবিও আরও জানান, ট্রাম্প প্রশাসন বর্তমানে রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে মার্কিন সিনেটের সঙ্গে আলোচনা করছে। কুয়ালালামপুরে ৫০ মিনিটের দীর্ঘ আলোচনার পর উভয় পক্ষই একে একটি "খোলামেলা ও বাস্তববাদী মতবিনিময়" বলে মন্তব্য করেছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের এহেন গতিশীল নীতিগত পরিবর্তন ও ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহে নতুন কাঠামো বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন রাশিয়াকে চাপে ফেলতে পারে, অন্যদিকে ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার কৌশল হিসেবেও দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে তাঁর প্রতিশ্রুতি রাখতে চান, তবে এটি তার কৌশলগত প্রথম ধাপ হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ