মানব সভ্যতায় মুসলিম বিজ্ঞানীদের ৫ যুগান্তকারী অবদান

মানবসভ্যতার ইতিহাসে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা যে স্থানে এসে দাঁড়িয়েছে, তার পেছনে মুসলমান বিজ্ঞানীদের অবদান অপরিসীম। কোরআনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অনুপ্রেরণায় মুসলমানরা বিজ্ঞানের সব শাখায় জ্ঞানচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন এবং এক অনন্য স্বর্ণযুগের সূচনা করেন। পবিত্র কোরআনে মানুষের চিন্তা ও সৃষ্টিকে অন্বেষণের যে আহ্বান করা হয়েছে, তার ফলেই মুসলমানরা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বিশ্বকে এগিয়ে নেওয়ার নেতৃত্ব দেয়। ফরাসি চিকিৎসাবিদ ড. মরিস বুকাইলি তার বিখ্যাত গ্রন্থে বলেছেন, “কোরআনে এমন কোনো বক্তব্য নেই, যা আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা খণ্ডনযোগ্য।”
৫টি প্রধান ক্ষেত্রে মুসলিম অবদান
১. রসায়ন (Chemistry): রসায়নের জনক জাবির ইবনে হাইয়ান
প্রাচীন মিশরে রসায়ন চর্চা শুরু হলেও, তা প্রকৃত বৈজ্ঞানিক শাখায় রূপ নেয় মুসলমানদের হাতে। জাবির ইবনে হাইয়ানকে বলা হয় ‘রসায়নের জনক’। তিনি হারুনুর রশিদের শাসনামলে কুফায় তার গবেষণাগারে গন্ধক ও পারদের সংমিশ্রণে সোনা উৎপাদনের ফরমূলা আবিষ্কার করে পৃথিবীকে বিস্মিত করেছিলেন। তিনি প্রথমবার রাসায়নিক বিক্রিয়ার নীতি, গলন, স্ফুটন, পাতন ও স্ফটিকীকরণ প্রক্রিয়া ব্যবহার করেন। ঐতিহাসিক আমির আলি যথার্থই বলেছেন, “রসায়ন একটি বিজ্ঞান হিসেবে প্রশ্নাতীতভাবে মুসলমানদের আবিষ্কার।”
২. পদার্থবিজ্ঞান (Physics): আলোকবিজ্ঞানের সূচনা
পবিত্র কোরআনের সুরা নূর-এর অনুপ্রেরণায় মুসলমান বিজ্ঞানীরা আলোর রহস্য নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ইবনে হাইসাম (আলহাজেন) আলোকবিজ্ঞানের জনক হিসেবে পরিচিত। তার লেখা ‘কিতাব আল-মানাজির’ গ্রন্থে তিনি আলোর প্রতিসরণ ও প্রতিফলনের সঠিক ব্যাখ্যা দেন। তিনিই প্রথম ক্যামেরা অবস্কিউরা-এর ধারণা দেন, যা আধুনিক ক্যামেরার ভিত্তি।
৩. চিকিৎসা বিজ্ঞান (Medical Science): ইবনে সিনা ও আল-জাহরাবি
ইসলাম চিকিৎসাকে ধর্মীয় দায়িত্বের সঙ্গে যুক্ত করেছে। ইসলামী চিকিৎসাবিজ্ঞানের উত্থান ঘটে খোলাফায়ে রাশেদার যুগে।
ইবনে সিনা: তিনি চিকিৎসাবিদ্যার সর্বশ্রেষ্ঠ নাম। তার বিখ্যাত ‘আল-কানুন ফি আত-তিব্ব’ গ্রন্থটি কয়েক শতাব্দী ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য ছিল।
আবুল কাসেম আজ-জাহরাবি: তিনি সার্জারি বা অস্ত্রোপচারের জনক। তিনি প্রথম সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করেন।
ইবনে নাফিস: তিনিই প্রথম রক্ত সঞ্চালনের ধারণা দেন, যা আধুনিক শারীরবিদ্যার এক মৌলিক আবিষ্কার।
৪. গণিত ও বীজগণিত (Mathematics and Algebra): অ্যালগরিদমের জন্ম
সংখ্যা ও পরিমাপ ছাড়া বিজ্ঞান কল্পনাই করা যায় না। আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল-খারেজমি-এর নাম থেকেই অ্যালগরিদম শব্দের উৎপত্তি। তার ‘আল-জাবর ওয়াল মুকাবিলা’ গ্রন্থ থেকেই অ্যালজেবরা শব্দের জন্ম। তিনি প্রথম ‘শূন্য’ ধারণা প্রবর্তন করেন। ঐতিহাসিক পিকে হিট্টির মতে, “ত্রিকোণমিতি, বীজগণিত ও জ্যামিতি প্রধানত মুসলমানদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।”
৫. সমর বিজ্ঞান (Military Science) ও জ্যোতির্বিজ্ঞান (Astronomy)
সামরিক: ওমর (রা.) সৈন্যদের বেতন ও ব্যবস্থাপনার জন্য ‘দিওয়ান’ পদ্ধতি চালু করেন। উমাইয়া যুগে মুসলমানরা প্রথম ‘মিনজানিক’ নামক কামান বা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। মুআবিয়া (রা.)-এর সময় গঠিত হয় মুসলমানদের প্রথম নৌবাহিনী।
জ্যোতির্বিজ্ঞান: কোরআনের অনুপ্রেরণায় আল-ফারাবি প্রথম অ্যাস্ট্রোল্যাব যন্ত্র আবিষ্কার করেন। মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল-খারেজমি জ্যোতির্বিজ্ঞানে ব্যবহারিক পরিমাপ প্রবর্তন করেন।
ইসলামী বিজ্ঞানের প্রভাব
মুসলিম বিজ্ঞানীরা ইউরোপে জ্ঞানের আলো পৌঁছে দেন। বাগদাদের ‘বাইতুল হিকমা’ বা হাউস অফ উইজডমে অনুবাদ আন্দোলনের মাধ্যমে গ্রীক, পারস্য ও ভারতীয় জ্ঞানভাণ্ডারকে ইসলামী চিন্তার সঙ্গে একীভূত করা হয়, যা পরবর্তীতে ইউরোপীয় রেনেসাঁঁর জন্ম দেয়। ইসলামী সভ্যতার সেই অর্জন আজও মানবজাতির অগ্রযাত্রায় পথপ্রদর্শক।
লেখক: শিক্ষার্থী ও দপ্তর সম্পাদক, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি ফিচার কলাম এন্ড কনটেন্ট রাইটার্স

১৮ বছরের গণনা: যে আবিষ্কার বিশ্বকে বোঝালো আমরা মিল্কি ওয়েতে একা নই
এক শতাব্দী আগে, ১৯২৯ সালে, স্কটিশ উদ্ভাবক এডউইন হাবল দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার এক পর্যবেক্ষণাগার থেকে এক চমকপ্রদ সিদ্ধান্তে আসেন।
তিনি ঘোষণা করেন যে, কোনো ছায়াপথ (Galaxy) আমাদের থেকে যত দূরে, সেটি তত দ্রুত বেগে মহাকাশে সরে যাচ্ছে। হাবলের এই কাজ প্রমাণ করে যে, মহাবিশ্ব ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনে।
গ্রেট ডিবেট এবং মিল্কি ওয়ের বাইরে জগৎ
১৯১৯ সালে হাবল মাউন্ট উইলসন অবজারভেটরিতে তার কর্মজীবন শুরু করেন। সেই সময়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানে একটি বড় বিতর্ক চলছিল, যা 'দ্য গ্রেট ডিবেট অফ ১৯২০' নামে পরিচিত। জ্যোতির্বিজ্ঞানী হার্লো শেপলি জোর দিচ্ছিলেন যে আমাদের পরিচিত স্থানীয় ছায়াপথ (Milky Way) এতই বিশাল যে এর বাইরে আর কোনো মহাজাগতিক বস্তু নেই। অন্যদিকে, হেবার কার্টিস যুক্তি দেন যে আমাদের ছায়াপথের বাইরেও অন্য ছায়াপথ বিদ্যমান।
এই বিতর্কে প্রবেশ করে হাবল মাউন্ট উইলসনের ১০০ ইঞ্চি টেলিস্কোপ ব্যবহার করে অ্যান্ড্রোমিডা ‘নেবুলা’-র দিকে নজর দেন। নেবুলা ছিল সে সময় আকাশের অনির্দিষ্ট আলোর মেঘকে বোঝাতে ব্যবহৃত শব্দ।
হেনরিটার কাজ ও হাবলের গণনা
অন্যান্য ছায়াপথের দূরত্ব নির্ণয়ের ক্ষেত্রে হার্ভার্ড কলেজ অবজারভেটরির হেনরিয়েটা সোয়ান লেভিট-এর কাজ হাবলের জন্য ভিত্তি তৈরি করে দেয়। লেভিট সেফেইড ভ্যারিয়েবল নামের এক শ্রেণির তারার উজ্জ্বলতা এবং তাদের পালসেশন পিরিয়ডের (আলোর বাড়া-কমার সময়কাল) মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক আবিষ্কার করেন, যা এখন লেভিট’স ল (Leavitt's Law) নামে পরিচিত।
১৯২৩ সালের শরতে হাবল অ্যান্ড্রোমিডা নেবুলাতে প্রথম সেফেইড শনাক্ত করেন। এই স্ট্যান্ডার্ড ক্যান্ডেলগুলোর সাহায্যে তিনি হিসাব করে দেখেন, অ্যান্ড্রোমিডা প্রায় ১ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত—যা আমাদের ছায়াপথের সবচেয়ে উদার অনুমান থেকেও অনেক বেশি।
এই আবিষ্কারের খবর পেয়ে শেপলি তার এক সহকর্মীকে বলেছিলেন, "এই সেই চিঠি যা আমার মহাবিশ্বকে ধ্বংস করে দিল।" এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে অন্যান্য ছায়াপথের অস্তিত্বের বিতর্ক চিরতরে নিষ্পত্তি হয়ে যায়।
প্রসারিত মহাবিশ্ব ও রেডশিফ্টিং
কয়েক বছর পর হাবল আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ দেন। এর আগে ১৯১২ সালের দিকে আমেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী ভেস্টো স্লাইফার অ্যান্ড্রোমিডার মতো নেবুলাগুলোর ‘রেডশিফ্টিং’ আবিষ্কার করেন। সহজ কথায়, কোনো বস্তু যদি আমাদের থেকে দূরে সরে যায়, তাহলে তার আলো বর্ণালীর লাল প্রান্তের দিকে সরে যায়। স্লাইফার দেখলেন, অধিকাংশ নেবুলাই দ্রুত গতিতে সরে যাচ্ছে।
১৯২৮ সালে হাবল তার সহকারী মিলটন হিউম্যাসনকে নিয়ে এই রেডশিফ্টিংয়ের তথ্য এবং ছায়াপথগুলোর দূরত্ব গণনা করেন। পরের বছর ১৯২৯ সালে হাবল তার গবেষণাপত্র "A Relation Between Distance and Radial Velocity Among Extra-Galactic Nebulae" প্রকাশ করেন। এই গবেষণাপত্রটি ঘোষণা করে যে:
মহাকাশের কোনো বস্তুর বাইরের দিকে যাওয়ার গতি (velocity) তার পৃথিবী থেকে দূরত্বের সমানুপাতিক (Hubble constant)।
অর্থাৎ, একটি ছায়াপথ আমাদের থেকে যত দূরে, সেটি তত দ্রুত বেগে সরে যাচ্ছে। এই সিদ্ধান্তই মহাবিশ্বের প্রসারণের ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করে।
হাবলের উত্তরাধিকার
হাবল তার আবিষ্কারের চূড়ান্ত কারণ ব্যাখ্যা না করলেও, পরবর্তী বিজ্ঞানীরা তার পর্যবেক্ষণকেই মহাবিশ্বের প্রসারণের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করেন। তার গণনা করা কিছু সংখ্যায় সামান্য ত্রুটি ছিল (যেমন অ্যান্ড্রোমিডার দূরত্ব এখন ২.৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ এবং হাবল কনস্ট্যান্টের মান বর্তমানে ৭০ কিমি/সে/এমপিসি), তবুও জ্যোতির্বিজ্ঞানে তার প্রভাব ছিল বিশাল।
অধ্যাপক এড বুই বলেন, “তিনি প্রায় একটি নতুন শাখার জন্ম দিয়েছেন—এক্সট্রাগ্যালাকটিক অ্যাস্ট্রোনমি।” হাবলের এই উত্তরাধিকারই ১৯৯০ সালে উৎক্ষেপিত শক্তিশালী হাবল স্পেস টেলিস্কোপ-এর নামকরণের অনুপ্রেরণা।
আমাজনের গভীরে লুকানো রহস্যময় সোনালী শহর, যা খুঁজছে বিশ্ব
আমাজন রেইনফরেস্ট, পৃথিবীর বুকে দাঁড়িয়ে থাকা প্রকৃতির এক অপার বিস্ময়, আজও অনেক দুর্ভেদ্য রহস্যের কুল কিনারা হয়নি। এই সুবিস্তৃত ঘন অরণ্য প্রাচীন সভ্যতার গোপন কথা, লোককথা ও রোমাঞ্চকর উপাখ্যানে মোড়া। আমাজন বিশ্বের বৃহত্তম রেইনফরেস্ট, যা দক্ষিণ আমেরিকার আটটি দেশকে জড়িয়ে রেখেছে এবং এর বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের পাশাপাশি রয়েছে এক গভীর ও চিরায়ত রহস্যের হাতছানি।
এল ডোরাডো বা সোনালী শহরের কিংবদন্তি:
শত শত বছর ধরে এই বনের রহস্য নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। পর্তুগিজরা বিশ্বাস করত, এই ঘন অরণ্যের গভীরে লুকিয়ে আছে এক গুপ্ত শহর যা সম্পূর্ণ সোনার তৈরি। এই শহরটি 'এল ডোরাডো' (El Dorado) নামে পরিচিত ছিল। তাদের ধারণা ছিল, এখানে অমূল্য রত্নরাজি সঞ্চিত রয়েছে। প্রাচীন গ্রিক গল্প থেকে এই বিশ্বাসটি আসে, যেখানে বলা হয় লুকানো এই শহরটি পাহারা দেয় 'আমাজন' নামে অভিহিত বিশেষ একদল নারী যোদ্ধা। পর্তুগিজ, স্প্যানিশ, ফরাসি অভিযাত্রীরা একসময় এই লুকায়িত শহরের খোঁজ করতে প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। শত চেষ্টা সত্ত্বেও কেউই এর হদিস পায়নি। তবে এই নারী যোদ্ধাদের নাম অনুসারেই বনটির নাম হয় 'আমাজন'।
অজানা উপজাতি ও প্রাচীন নিদর্শন:
আমাজন বনভূমির প্রায় ৬০ শতাংশই ব্রাজিলে অবস্থিত। জানা যায়, এখানে এখনো বহু অজানা উপজাতির বসবাস, যারা আধুনিক জগত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। তাদের জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বাইরের বিশ্ব প্রায় কিছুই জানে না। আমাজনে বরফ যুগের বেশ কিছু চিত্রকর্ম আবিষ্কৃত হয়েছে, যা ইঙ্গিত করে যে একসময় এই অঞ্চল বরফে ঢাকা ছিল। ২০১৩ সালে আমাজনের গভীরে একটি অদ্ভুত কাঠামো পাওয়া যায়, যা মাকড়সার বাসা বা প্রাচীন সংস্কৃতির প্রতীক তা নিয়ে রয়েছে গভীর সংশয়।
আমাজনীয় অন্ধকার পৃথিবী (ADE):
আমাজনের গভীরতম গোপন রহস্য ভেদ করতে বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এক ভিন্ন ধরনের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারের অভিযানে নেমেছেন, যেখানে মিলেছে প্রাচীন মানুষের স্বাক্ষর। ধ্বংসাবশেষটি 'আমাজনীয় অন্ধকার পৃথিবী' (Amazonian Dark Earth বা ADE) নামে পরিচিত। ধ্বংসাবশেষের কাঠকয়লা কালো মাটির স্তরটিকে 'কালো সোনা' বা 'টেরাপেতা' (Terra Preta) নামে অভিহিত করা হয়। এ স্তরটি প্রায় ৩.৮ মিটার পর্যন্ত পুরু হতে পারে এবং এটি আমাজন অববাহিকা জুড়ে ভিন্ন স্থানে পাওয়া যায়। রেইনফরেস্টের সাধারণ বালুকাময় মাটির তুলনায় এটি অত্যন্ত উর্বর, যা ফসলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিতে ভরপুর। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই উর্বর স্তরটি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়নি; এটি প্রাচীন মানুষের কাজ। এ সমৃদ্ধ মাটি এক ভিন্ন সময়ের সাক্ষ্য বহন করে, যখন আদিবাসী গোষ্ঠীগুলো এই রেইনফরেস্ট জুড়ে বসতির এক সমৃদ্ধ জাল তৈরি করেছিল।
উপান উপত্যকার হারানো শহর:
ইকুয়েডরের উপান উপত্যকায় সম্প্রতি ২০০০ বছরের পুরনো একটি হারানো শহরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে, যেখানে মিলেছে লুকানো সভ্যতার চিহ্ন। এটি এই প্রশ্ন আরও জোরালো করেছে যে, আমাজনে এমন আরও অনেক প্রাচীন বসতি লুকিয়ে থাকতে পারে। আমাজনে যাত্রাপথ অত্যন্ত কঠিন হলেও গবেষকদের অনুসন্ধিৎসু মন তাদের থামাতে পারেনি। তবে হাজার হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা আমাজন রেইনফরেস্টের সমৃদ্ধ রহস্য, যার প্রতিটি স্তরে লুকিয়ে আছে হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার স্বাক্ষর এবং প্রকৃতির অমূল্য দান, আজও অধরা রয়ে গেছে।
হিটলার কেন ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিলেন? নেপথ্যের কারণ কী?
১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সাল, এই পাঁচ বছরের মধ্যে অ্যাডলফ হিটলার প্রায় ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিলেন। এই ভয়াবহ গণহত্যার পর তিনি বলেছিলেন যে, কিছু ইহুদিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন কারণ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন জানতে পারে কেন তিনি এই হত্যাযজ্ঞে মেতেছিলেন। গ্যাস চেম্বার, কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প বা গণগুলি বর্ষণের মতো ভয়ানক উপায়ে হিটলার ইহুদি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছিলেন। শুধু ইহুদি নয়, তিনি ১ লাখ সমকামী পুরুষকেও হত্যা করেছিলেন।
আত্মহত্যার আগে, ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল, হিটলার একটি নোটে লিখেছিলেন যে, কয়েক শতাব্দী পর ইহুদিরা পৃথিবীতে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড চালাবে এবং ইউরোপীয়রা এই রক্তপাতের জন্য দায়ী থাকবে।
ইহুদিদের প্রতি হিটলারের ঘৃণার কারণ:
নিকৃষ্ট জীব ও অশান্তির মূল: হিটলার ইহুদিদেরকে 'নিকৃষ্ট জীব' (আর্গানিমাস নিদ্রিম নিভেউ) বলে অভিহিত করতেন। ১৯২৫ সালে প্রকাশিত তার আত্মজীবনী 'মাইন ক্যাম্প' (Mein Kampf) বইয়ে তিনি লেখেন, "পৃথিবীর সকল অশান্তির মূল ইহুদিরাই। নর্দমার কিটের মতো তাদের আচরণ, এরা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার মতো ছড়িয়ে পড়ে মানব সমাজের ধ্বংস শুরু করে"।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা:
আর্ট স্কুলের প্রত্যাখ্যান: জন্মসূত্রে অস্ট্রিয়ান হিটলারের স্বপ্ন ছিল চিত্রশিল্পী হওয়ার। কিন্তু ভিয়েনার আর্ট স্কুল একাডেমি টানা দুই বছর তার ভর্তির আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। শোনা যায়, সেই আর্ট স্কুলের রেক্টর ছিলেন একজন ইহুদি, এবং ধারণা করা হয় এখান থেকেই তার ইহুদি বিদ্বেষের সূত্রপাত।
মায়ের চিকিৎসকের ধর্ম: হিটলারের মা ক্লারা হিটলার স্তন ক্যান্সারে মারা যান। তার চিকিৎসা করেছিলেন একজন ইহুদি চিকিৎসক ডক্টর এডোয়ার্ড ব্লক। কিছু মানুষ দাবি করে, মায়ের মৃত্যুর কারণে ইহুদিদের প্রতি হিটলারের ক্ষোভ বেড়েছিল, যদিও এই যুক্তি যথেষ্ট দুর্বল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়: ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির শোচনীয় পরাজয় হয়। হিটলার নিজে একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে জার্মান আর্মির সঙ্গে কাজ করেছিলেন। তিনি এবং অনেক জার্মান জাতীয়তাবাদী বিশ্বাস করতেন যে, জার্মানি যুদ্ধে পরাজিত হয়নি, বরং দেশের অভ্যন্তরে থাকা ইহুদি ও সমাজতান্ত্রিকরাই জার্মানির বুকে ছুরি মেরেছে। এই ধারণা থেকেই হিটলার ইহুদিদেরকে 'বেইমান জাতি' মনে করতে শুরু করেন এবং তাদের কারণেই জার্মানির পরাজয় হয়েছে বলে বিশ্বাস করতেন।
ক্ষমতায় আগমন ও জনসমর্থন: ১৯৩৩ সালে অ্যাডলফ হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর অর্থনৈতিক সংকট, বেকারত্ব এবং হতাশায় ভোগা জার্মান জনগণকে তিনি আশার আলো দেখিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বে দেশ উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে এবং দেশের বিরুদ্ধে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর হবে—এই বিশ্বাস তিনি জনগণের মধ্যে জাগিয়ে তুলেছিলেন। এই বিপুল জনসমর্থন ছাড়া হিটলারের পক্ষে ইহুদি নিধনযজ্ঞ চালানো সম্ভব হতো না।
হলোকাস্ট ও ফাইনাল সলিউশন:
১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে সংঘটিত ইহুদি নিধনের এই প্রয়াসকে 'হলোকাস্ট' (Holocaust) বলা হয়। হিটলারের 'ফাইনাল সলিউশন' (Final Solution) নীতির ওপর ভিত্তি করে হলোকাস্ট বাস্তবায়িত হয়েছিল। 'ফাইনাল সলিউশন' বলতে হিটলারের সেই চূড়ান্ত পরিকল্পনাকে বোঝায়, যার লক্ষ্য ছিল ইউরোপ থেকে ইহুদি জাতিকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। এই পরিকল্পনাটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৪২ সালে ওয়ানসি কনফারেন্সে গৃহীত হয়।
ইউরোপীয় গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
হিটলারের ইহুদি গণহত্যার খবর প্রচারের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় গণমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে একপেশে নীতি অনুসরণের অভিযোগ রয়েছে। বলা হয়, গণমাধ্যমগুলো হিটলারের নৃশংসতা এবং ৬০ লাখ ইহুদি হত্যার ঘটনাকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরলেও, কী কারণে তিনি এতটা ইহুদি-বিদ্বেষী হয়ে উঠেছিলেন, সেই প্রেক্ষাপটকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এড়িয়ে যায়।
অভিযোগ রয়েছে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পেছনে ইহুদিদের কথিত ষড়যন্ত্রের মতো বিষয়গুলো ইউরোপীয় গণমাধ্যম সচেতনভাবে চেপে রাখে। একইভাবে, হিটলারের কিছু ভিন্ন দিক, যেমন তাঁর ধূমপান-বিরোধী কঠোর প্রচারণা বা সমকামিতার বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান, এগুলো নিয়েও আলোচনা করা হয় না বলে মনে করা হয়।
ধারণা করা হয়, এই একপেশে প্রচারণার মূল কারণ হলো, গণহত্যার পেছনের কারণগুলো প্রকাশ পেলে ইহুদিদের কথিত ষড়যন্ত্র এবং তাতে ইউরোপীয়দের স্বার্থ জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতে পারে, যা গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়।
পূর্বের আটলান্টিস: চীনের সেই ডুবো শহর যেখানে সময় থেমে আছে!
চীনের ঝেঝিয়াং প্রদেশের কিয়ানদাও হ্রদের গভীর তলদেশে লুকিয়ে আছে এক প্রাচীন শহর— শি চেং, যার অর্থ 'সিংহ শহর'। ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে পূর্ব হান রাজবংশের আমলে গড়ে ওঠা এই শহরটি একসময় অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও স্থাপত্যের এক অসাধারণ নিদর্শন ছিল। রাজপ্রাসাদ, পাথরের খোদাই করা তোরন, রাজকীয় মন্দির, সুশৃঙ্খল বাজার এবং পাথরের খিলান ও সিংহ মূর্তিতে সাজানো রাস্তা নিয়ে এটি দক্ষিণ চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ও বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। এক লাখেরও বেশি মানুষের আবাসস্থল এই শহরটি তার চারপাশের পাহাড় ও নদীর সৌন্দর্যে ভরপুর ছিল।
ডুবে যাওয়ার পেছনের ইতিহাস:
১৯৫০-এর দশকে চীন যখন শিল্পায়নের পথে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছিল, তখন সরকারের একটি বড় পরিকল্পনা ছিল জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সিনান নদীর উপর বিশাল বাঁধ নির্মাণ করা। ১৯৫৯ সালে গড়ে ওঠে কিয়ানদাও হ্রদ প্রকল্প, যা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ হাইড্রোইলেকট্রিক ড্যাম তৈরি করবে। কিন্তু এই প্রকল্পের জন্য যে বিশাল জলাধার প্রয়োজন ছিল, তার গভীরে চলে যেত শি চেং সহ প্রায় ১৩৭৭টি গ্রাম এবং একাধিক শহর। সরকার মাত্র কয়েক মাসের নোটিশে এসব এলাকার মানুষদের উচ্ছেদ করে, এবং হাজার বছরের ইতিহাস ও স্মৃতির শহর শি চেং নিমেষেই পানির নিচের নগরীতে পরিণত হয়।
অক্ষত অবস্থায় টিকে থাকার রহস্য:
সাধারণত পানির নিচে দীর্ঘ সময় ধরে কোনো কাঠামো অক্ষত থাকে না, কিন্তু শি চেং যেন সময়ের নিয়ম মানতে অস্বীকার করেছে। ২০০১ সালে যখন ডুবুরিরা প্রথম এই শহরটি খুঁজে পান, তখন তারা বিস্মিত হয়ে দেখেন যে, পাঁচতলা ভবন, রাস্তার খিলান, মন্দিরের খোদাই করা সিংহ ও ড্রাগনের মূর্তি সবই প্রায় অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। এমনকি দরজার ফ্রেম ও কাঠের শিল্পকর্মও অনেক জায়গায় অক্ষত ছিল। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পানির নিচে স্থিরতা, অক্সিজেনের স্বল্পতা এবং সূর্যের আলো না পৌঁছানো— এই তিনটি কারণে শহরটি প্রাকৃতিকভাবে সংরক্ষিত হয়ে আছে। কিয়ানদাও হ্রদের পানির তাপমাত্রা সারা বছর প্রায় একই থাকে, যা শহরের কাঠামো রক্ষা করেছে।
অটলান্টিস অফ দ্য ইস্ট:
আজ শি চেং ডুবুরিদের জন্য এক স্বর্গ, যেখানে অভিজ্ঞ ডুবুরিরা পানির নিচের এক বিশাল রাজপ্রাসাদে ভাসার অনুভূতি পান। নীলচে সবুজ পানির গভীরে দাঁড়িয়ে থাকা পাথরের তোরন, খোদাই করা সিংহ মূর্তি এবং চীনা ড্রাগনের কারুকাজ এক মায়াবী অনুভূতি দেয়। বহু আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেল, ডকুমেন্টারি নির্মাতা এবং ইতিহাসবিদ এখানে গবেষণা করেছেন। চীনের সরকার এখন এই শহরকে "অটলান্টিস অফ দ্যা ইস্ট" বা "পূর্বের অটলান্টিস" বলছে এবং পর্যটকদের জন্য এখানে বিশেষ ডাইভিং ট্যুরের ব্যবস্থা রয়েছে। হাজার বছরের পুরনো এই শহরকে পানির নিচে সুরক্ষিত রাখতে নানা প্রকল্পও চলছে।
শি চেং শুধু একটি শহর নয়, এটি মানুষের অগ্রগতির নামে ইতিহাসের মর্মান্তিক সিদ্ধান্তের এক জীবন্ত সাক্ষ্য। শিল্পায়নের তাড়নায় আমরা কত সভ্যতাকে হারিয়ে ফেলেছি, তারই প্রতিচ্ছবি এই ডুবে যাওয়া নগরী।
কুরআন ও বিজ্ঞানের মহাবিস্ময়: যেভাবে মিলে যাচ্ছে ‘বিগ ক্রাঞ্চ’ তত্ত্ব ও কিয়ামতের ভবিষ্যদ্বাণী!
মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে যেমন 'বিগ ব্যাং' (Big Bang) তত্ত্ব বহুল পরিচিত, তেমনই এর সম্ভাব্য শেষ পরিণতি নিয়েও বিজ্ঞানীরা এক নতুন তত্ত্ব নিয়ে কাজ করছেন, যার নাম 'বিগ ক্রাঞ্চ' (Big Crunch)। আশ্চর্যজনকভাবে, এই তত্ত্বের সাথে ইসলামী আকিদায় বর্ণিত কিয়ামতের দিনের ধারণার এক গভীর মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি আধুনিক বিজ্ঞানও কিয়ামতকে 'স্বীকার' করতে শুরু করেছে? কোরআন ও বিজ্ঞান মহাবিশ্বের এই শেষ অধ্যায় সম্পর্কে কী বলে?
বিগ ক্রাঞ্চ কী?
প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে 'বিগ ব্যাং'-এর মাধ্যমে মহাবিশ্বের জন্ম হয়। এরপর থেকে মহাবিশ্ব প্রসারিত হতে থাকে, যেখানে তারকা, গ্যালাক্সি, গ্রহ, নক্ষত্র সবই একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা প্রথমে ভেবেছিলেন মহাকর্ষ এই সম্প্রসারণ থামিয়ে দেবে, কিন্তু ১৯৯৮ সালে তারা জানতে পারেন যে মহাবিশ্ব শুধু প্রসারিতই হচ্ছে না, বরং 'ডার্ক এনার্জি' (Dark Energy) নামক এক রহস্যময় শক্তির প্রভাবে এটি দ্রুত গতিতে প্রসারিত হচ্ছে।
তবে নতুন গবেষণা বলছে, এই ডার্ক এনার্জিও একসময় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। যদি মহাকর্ষ তখন শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তাহলে মহাবিশ্বের প্রসারণ থেমে গিয়ে সংকোচন শুরু হবে। এই সংকোচনকেই বিজ্ঞানীরা 'বিগ ক্রাঞ্চ' নাম দিয়েছেন।
বিগ ক্রাঞ্চের পরিণতি
'বিগ ক্রাঞ্চ' তত্ত্ব অনুযায়ী, মহাবিশ্ব সংকুচিত হতে শুরু করলে গ্যালাক্সিগুলো ধীরে ধীরে একে অপরের দিকে ধেয়ে আসবে, গ্রহ ও তারাগুলোর মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটবে। সময় ও স্থান 'রিভার্স মোডে' (reverse mode) চলে যাবে, এবং পুরো মহাবিশ্ব যেন এক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হবে। মহাবিশ্ব তার চিরচেনা রূপ হারাবে এবং আমরা যেভাবে মহাবিশ্বকে জানি, তার কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।
কোরআন ও বিগ ক্রাঞ্চের মিল
বিগ ক্রাঞ্চের এই ধারণা, যেখানে গ্যালাক্সি, গ্রহ, তারা এমনকি সময় সবকিছু একসাথে গুটিয়ে আসার কথা বলা হচ্ছে, তা ইসলামী আকিদায় বর্ণিত কিয়ামতের দিনের অবস্থার সাথে অনেক মিল রাখে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: "সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে নিব যেমন গুটানো হয় লিখিত কাগজপত্র। যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। ওয়াদা পালন করা আমার কর্তব্য, আমি তা পালন করবই"। এই আয়াত স্পষ্টভাবে মহাবিশ্বের সংকোচন বা গুটিয়ে নেওয়ার ধারণাকে সমর্থন করে।
কোরআনে আরও বলা হয়েছে যে, কিয়ামতের পর আল্লাহ সবকিছু নতুন করে সৃষ্টি করবেন। বিজ্ঞানও 'বিগ ক্রাঞ্চ'-এর পর আরেকটি নতুন মহাবিশ্বের জন্মের সম্ভাবনার কথা বলে, যাকে তারা 'বিগ বাউন্স' (Big Bounce) নাম দিয়েছে।
সময় ও স্থান রিভার্স মোডে চলে যাওয়ার বিষয়ে কোরআনের অন্য একটি আয়াতে বলা হয়েছে: "এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়কে দেখবে ভয়ে নত যেন হয়ে আছে। প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের আমলনামা দেখতে বলা হবে, তোমরা যা করতে অদ্য তোমাদেরকে তার প্রতিফল দেয়া হবে"। এই আয়াত ইঙ্গিত দেয় যে, কিয়ামতের দিনে সময়ের পুনরাবৃত্তি বা প্রতিফলন ঘটবে, যেখানে মানুষের সমস্ত কাজ তাদের সামনে প্রকাশিত হবে, যা বিগ ক্রাঞ্চে মহাবিশ্বের পূর্বাবস্থায় ফিরে আসার ধারণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
দেখা যাচ্ছে, কোরআন ও বিজ্ঞান উভয়ই মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি সম্পর্কে প্রায় একই রকম ধারণা দিচ্ছে। কোরআন এটিকে আধ্যাত্মিক এবং নৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যাখ্যা করে এর অবশ্যম্ভাবিতা নিশ্চিত করেছে, যেখানে আধুনিক বিজ্ঞান এখনও এটিকে হাইপোথেটিক্যাল বা কল্পবিজ্ঞানের পর্যায়ে রেখে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। 'বিগ ক্রাঞ্চ' বা কিয়ামত, উভয়ই আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে এই মহাবিশ্ব চিরকাল থাকবে না, এবং দুনিয়াতে আমাদের প্রতিটি কাজ ও পদক্ষেপের গুরুত্ব অপরিসীম।
চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াং-এর রহস্যময় সমাধি: মাটির সেনাবাহিনী, পারদের নদী আর অমরত্বের অভিশাপ
রহস্য—এই শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে কোনো অজানা, অলৌকিক বা অতি প্রাকৃত ঘটনার ছায়া। ইতিহাসেও এমন বহু রহস্য লুকিয়ে আছে, যা আজও বিজ্ঞান ও সভ্যতার অগ্রগতিকে চ্যালেঞ্জ জানায়। আজ আমরা জানব এমনই এক সত্যিকারের ঐতিহাসিক রহস্য—চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াং-এর সমাধি—যা আজও মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং অমীমাংশিত রহস্যগুলোর একটি।
খ্রিস্টপূর্ব ২২১ সালে চীনকে প্রথমবারের মতো একত্রিত করে এক সাম্রাজ্যে পরিণত করেছিলেন কিন শি হুয়াং। তাঁর নেতৃত্বেই চীনের প্রাচীর নির্মাণের সূচনা হয়। কিন্তু এই সম্রাটের উচ্চাকাঙ্ক্ষা কেবল শাসনক্ষমতায় সীমাবদ্ধ ছিল না—তিনি মৃত্যুর পরও “অমর” হয়ে থাকার স্বপ্ন দেখতেন। সেই অদ্ভুত স্বপ্ন থেকেই শুরু হয় তাঁর বিশাল সমাধি নির্মাণের কাজ। মাত্র ১৩ বছর বয়সে রাজা হওয়ার পর তিনি নিজের সমাধি নির্মাণের আদেশ দেন, যা চলেছিল ৩৮ বছর ধরে—তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।
এই সমাধি কোনো সাধারণ কবরস্থান নয়; এটি আসলে একটি ভূগর্ভস্থ রাজপ্রাসাদ—যেখানে লুকিয়ে আছে সেনাবাহিনী, ধনরত্ন, মারাত্মক ফাঁদ এবং রহস্যময় বিষাক্ত নদী। ইতিহাস বলে, সম্রাট তাঁর মৃত্যুর পরও যেন রাজা হিসেবেই রাজত্ব করেন, সেই উদ্দেশ্যেই তৈরি হয়েছিল এই “অমর প্রাসাদ”।
এই রহস্যের আবিষ্কার ঘটে ১৯৭৪ সালে, যখন কিছু চীনা কৃষক সেচের জন্য কূপ খনন করতে গিয়ে হঠাৎ মাটির নিচে সৈন্যদের আকৃতির বিশাল মূর্তি দেখতে পান। পরে প্রত্নতাত্ত্বিকরা যখন খনন শুরু করেন, দেখা যায় হাজার হাজার মাটির সৈন্য, যাদের মুখাবয়ব, পোশাক, এমনকি চুলের বিন্যাস পর্যন্ত একে অপরের থেকে ভিন্ন। যেন আসল কোনো সেনাবাহিনীকে মাটির ভাস্কর্যে রূপ দেওয়া হয়েছে। আজ এই অবিশ্বাস্য আবিষ্কারটি বিশ্বজুড়ে পরিচিত ‘টেরাকোটা আর্মি’ নামে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রতিটি মূর্তি বাস্তব আকারের এবং এমন নিখুঁতভাবে তৈরি যে মনে হয়, তারা মুহূর্তেই জীবন্ত হয়ে উঠবে। সৈন্যদের পাশাপাশি পাওয়া গেছে ঘোড়া, রথ, ধনুক-বাণ, অস্ত্র—সবই মাটির তৈরি। ইতিহাসবিদদের মতে, এই মাটির সৈন্যরা ছিল সম্রাটের পরকালীন প্রহরী, যারা মৃত্যুর পরও তাঁর রাজ্য রক্ষা করবে।
কিন্তু এখানেই শেষ নয় রহস্যের জাল। প্রত্নতাত্ত্বিকরা এখনো পর্যন্ত মূল সমাধি চেম্বারে প্রবেশ করেননি। কারণ, প্রাচীন নথিতে উল্লেখ আছে, সমাধির ভেতরে তৈরি করা হয়েছিল পারদের নদী—যেখানে পারদ বা মার্কারি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল কৃত্রিম জলপ্রবাহ। আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন অস্বাভাবিক মাত্রার পারদের উপস্থিতি, যা প্রমাণ করে যে সমাধির ভেতর সত্যিই কোনো মারাত্মক রাসায়নিক ফাঁদ বিদ্যমান। পারদের ঘনত্ব এত বেশি যে, সমাধিতে প্রবেশ করলে মানুষ মুহূর্তে মৃত্যুবরণ করতে পারে।
চীনা প্রাচীন দলিল “শিজি” তে বলা আছে, সম্রাটের কফিনের চারপাশে স্থাপন করা হয়েছিল যান্ত্রিক ফাঁদ—যা এখনো সক্রিয় থাকতে পারে। বলা হয়, কেউ যদি সমাধির ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে, এই ফাঁদগুলো সক্রিয় হয়ে প্রাণঘাতী তীর ছুড়ে মারবে অনধিকারপ্রবেশকারীকে। এ কারণেই আজ পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞানী বা প্রত্নতত্ত্ববিদ সমাধির কেন্দ্রে প্রবেশের সাহস করেননি।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই সমাধির ভেতরে বিলিয়ন ডলারের মূল্যবান রত্ন ও প্রাচীন নিদর্শন লুকিয়ে আছে। কারণ যিনি জীবিত অবস্থায় নিজেকে দেবতুল্য মনে করতেন, মৃত্যুর পরেও তাঁর জন্য নিশ্চিতভাবে তৈরি করা হয়েছিল “অমর রাজ্য”—যেখানে সব থাকবে যেমন ছিল জীবদ্দশায়।
আজ পর্যন্ত চীনা সরকারও এই সমাধি খোলার অনুমতি দেয়নি। তাদের বক্তব্য, বর্তমান প্রযুক্তি দিয়ে সমাধির ভেতরের শিল্পকর্ম ও জীবাশ্ম সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়; তাই অযথা ইতিহাসের এই মহামূল্যবান রহস্যকে নষ্ট করা ঠিক হবে না।
তবুও প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে হাজারো মানুষ চীনের শানশি প্রদেশের শি’আন শহরে আসে কেবল এক ঝলক দেখার জন্য—কিন শি হুয়াং-এর সেই রহস্যময় সেনাবাহিনীর। কেউ কেউ বলেন, এই সমাধি আসলে অমরত্বের প্রতীক, আবার কেউ মনে করেন, এটি এক অভিশপ্ত রাজ্যের দরজা—যেখানে সময় থেমে আছে ২,২০০ বছর ধরে।
একটি সমাধির ভেতরে রাজপ্রাসাদ, সেনাবাহিনী, বিষাক্ত নদী, অমরত্বের স্বপ্ন আর শতাব্দীর গোপন রহস্য—সব মিলিয়ে কিন শি হুয়াং-এর এই সমাধি শুধু ইতিহাস নয়, এক জীবন্ত ধাঁধা, যার উত্তর হয়তো মানবসভ্যতা কখনোই পুরোপুরি জানতে পারবে না।
বিপ্লব থেকে স্বৈরশাসন? ‘অ্যানিমেল ফার্ম’-এর রাজনৈতিক বার্তা
যেকোনো রাজনৈতিক বিপ্লব বা ক্ষমতার পালাবদলের পর জর্জ অরওয়েলের কালজয়ী রূপক উপন্যাস ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ কেন বারবার প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে? ১৯৪৫ সালে প্রকাশিত এই বইটি কেবল একটি রূপকথার গল্প নয়, বরং এটি ক্ষমতা, আদর্শচ্যুতি এবং দুর্নীতির এক নির্মম আয়না, যা যেকোনো দেশের যেকোনো সময়ের জন্যই এক শক্তিশালী সতর্কবার্তা।
এক নতুন দিনের স্বপ্ন
ইংল্যান্ডের এক খামারের মালিক ছিলেন মিস্টার জোনস।
তিনি পশুদের দিয়ে দিনরাত খাটাতেন, কিন্তু তাদের ঠিকমতো খাবার দিতেন না এবং তাদের ওপর অনেক অত্যাচার করতেন। একদিন, খামারের সবচেয়ে বয়স্ক এবং জ্ঞানী শুকর ‘ওল্ড মেজর’
সব পশুদের নিয়ে এক গোপন সভা ডাকে। সে তার দেখা এক স্বপ্নের কথা বলে—এমন এক স্বপ্নের কথা, যেখানে কোনো মানুষের শাসন নেই, পশুরা স্বাধীন এবং তাদের খাটুনির সব ফসল তারাই ভোগ করছে। তার ভাষণে পশুরা এতটাই উৎসাহিত হয় যে, তারা মানুষের শাসনের অবসানের জন্য মনে মনে প্রস্তুতি নিতে থাকে।
বিদ্রোহের সেই দিন
ওল্ড মেজর কিছুদিন পর মারা গেলেও, তার দেখানো স্বপ্ন পশুদের মনে গেঁথে ছিল। একদিন মিস্টার জোনস মদ খেয়ে এসে পশুদের খাবার দিতেই ভুলে যান। ক্ষুধার্ত পশুদের সহ্যের বাঁধ ভেঙে যায়। তারা সবাই মিলে একসঙ্গে জোনসের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তাকে খামার থেকে তাড়িয়ে দেয়। সেই রাত ছিল তাদের মুক্তির রাত। তারা মানুষের অত্যাচারের সমস্ত চিহ্ন, যেমন—চাবুক, লাগাম, ছুরি—সবকিছু আগুনে পুড়িয়ে দেয় এবং খামারের নতুন নাম দেয় ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ বা ‘পশু খামার’।
পশুরা মিলেমিশে থাকার জন্য সাতটি নিয়ম তৈরি করে, যা খামারের বড় দেয়ালে লিখে রাখা হয়। নিয়মগুলো ছিল খুব সহজ:
১. যারা দুই পায়ে হাঁটে, তারা শত্রু।২. যারা চার পায়ে হাঁটে বা যাদের ডানা আছে, তারা বন্ধু।৩. কোনো পশু মানুষের পোশাক পরবে না।৪. কোনো পশু মানুষের বিছানায় ঘুমাবে না।৫. কোনো পশু মদ পান করবে না।৬. কোনো পশু অন্য কোনো পশুকে হত্যা করবে না।৭. সব পশু সমান।
প্রথম মিথ্যা এবং বৈষম্যের শুরু
প্রথমদিকে সবকিছু খুব ভালোভাবেই চলছিল। পশুরা আগের চেয়েও বেশি পরিশ্রম করে অনেক ফসল ফলালো। কিন্তু সমস্যার শুরু হলো তখনই, যখন খামারের গরুর দুধ দোহানোর পর তা গায়েব হয়ে গেল। পরে জানা গেল, বুদ্ধিমান বলে পরিচিত শুকররা সেই দুধ নিজেদের জন্য রেখে দিয়েছে। তারা বাকি পশুদের বোঝালো, “আমরাই তো খামারের সব কাজ বুদ্ধি দিয়ে চালাই। আমাদের মাথা খাটানোর জন্য ভালো খাবার দরকার। আমরা যদি ঠিকমতো খেতে না পাই, তাহলে বুদ্ধি কাজ করবে না এবং মিস্টার জোনস আবার ফিরে আসবে। তোমরা কি চাও জোনস ফিরে আসুক?” ভয়ে সব পশু চুপ করে গেল। আর এভাবেই খামারে শুরু হলো প্রথম বৈষম্য।
দুই নেতার ঝগড়া এবং একনায়কের শাসন
খামারের পশুদের মধ্যে দুটি শুকর—স্নোবল ও নেপোলিয়ন—ছিল সবচেয়ে বুদ্ধিমান এবং তারাই খামারের নেতা হয়ে ওঠে। কিন্তু তাদের দুজনের মধ্যে সব সময় ঝগড়া লেগে থাকত। স্নোবল চাইত একটি বায়ুকল তৈরি করতে, যা থেকে বিদ্যুৎ তৈরি হবে এবং পশুদের কাজ অনেক কমে যাবে। কিন্তু নেপোলিয়ন এর বিরোধিতা করত।
তাদের দ্বন্দ্ব যখন চরমে, তখন নেপোলিয়ন এক ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা করে। সে তার গোপনে পালন করা কয়েকটি হিংস্র কুকুরকে লেলিয়ে দিয়ে স্নোবলকে খামার থেকে তাড়িয়ে দেয়।
এরপর সে নিজেকে খামারের একচ্ছত্র অধিপতি বা নতুন রাজা হিসেবে ঘোষণা করে।
নতুন রাজার অধীনে কঠিন জীবন
নেপোলিয়নের শাসনে পশুদের জীবন আরও কঠিন হয়ে ওঠে। সে স্নোবলের সেই বায়ুকল তৈরির পরিকল্পনা চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দেয় এবং পশুদের আগের চেয়েও দ্বিগুণ খাটাতে শুরু করে। যখন প্রবল ঝড়ে বায়ুকলটি ভেঙে যায়, তখন নেপোলিয়ন মিথ্যা প্রচার করে যে, পালিয়ে যাওয়া স্নোবল এসে এটি ভেঙে দিয়ে গেছে। স্নোবলকে ‘জনগণের শত্রু’ বলে ঘোষণা করা হয় এবং খামারের সমস্ত খারাপ ঘটনার জন্য তাকেই দায়ী করা হতে থাকে।
ধীরে ধীরে শুকররা খামারের সাতটি নিয়মই ভাঙতে শুরু করে। তারা মানুষের বাড়িতে থাকতে শুরু করে, তাদের বিছানায় ঘুমাতে শুরু করে। যখন অন্য পশুরা প্রশ্ন তুলত, তখন তাদের ভয় দেখানো হতো যে, বেশি কথা বললে মিস্টার জোনস ফিরে আসবে।
সবচেয়ে দুঃখের গল্প: এক বিশ্বাসী কর্মীর করুণ পরিণতি
খামারে বক্সার নামে একটি ঘোড়া ছিল, যে ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী এবং বিশ্বাসী কর্মী।তার জীবনের মূলমন্ত্র ছিল দুটি—"আমি আরও বেশি পরিশ্রম করব" এবং "নেপোলিয়ন সবসময় সঠিক"। সে নিজের শরীরের কথা না ভেবে দিনরাত খাটত।
একদিন অতিরিক্ত পরিশ্রমে বক্সার অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। নেপোলিয়ন বাকি পশুদের বলে যে, সে বক্সারকে চিকিৎসার জন্য শহরের সবচেয়ে ভালো পশু হাসপাতালে পাঠাচ্ছে। কিন্তু আসলে সে বক্সারকে টাকার বিনিময়ে এক কসাইয়ের কাছে বিক্রি করে দেয়, যে তাকে মেরে ঘোড়ার মাংস ও আঠা তৈরি করবে। সেই টাকা দিয়ে শুকররা মদ কিনে উৎসব করে। সবচেয়ে বিশ্বাসী কর্মীর সাথে এই চরম বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে নেপোলিয়নের নিষ্ঠুরতার আসল রূপ প্রকাশ পায়।
সবকিছু বদলে গেল: নতুন অত্যাচার
বছরের পর বছর কেটে যায়। খামারের নতুন প্রজন্মের পশুরা বিদ্রোহের কথা ভুলে যায়। তাদের ইতিহাস বইয়ে কেবল নেপোলিয়নের বীরত্বের কথাই লেখা থাকে। একদিন পশুরা এক অবাক করা দৃশ্য দেখে। তারা দেখে, তাদের নেতা নেপোলিয়ন এবং অন্যান্য শুকররা মানুষের মতো দুই পায়ে হাঁটছে!
খামারের দেয়ালে লেখা সাতটি নিয়ম মুছে দিয়ে সেখানে লেখা হয় মাত্র একটি নিয়ম:
“সব পশু সমান, কিন্তু কিছু পশু অন্যদের চেয়ে বেশি সমান।”
গল্পের শেষে দেখা যায়, শুকররা মানুষের পোশাক পরে মানুষের সাথেই তাস খেলছে আর মদ খাচ্ছে। বাইরে থেকে তাকিয়ে থাকা বাকি পশুদের কাছে তখন শুকর এবং মানুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য বোঝা যাচ্ছিল না। যে অত্যাচারী মানুষের বিরুদ্ধে তারা একদিন বিদ্রোহ করেছিল, তাদের নতুন নেতারা এখন সেই মানুষের মতোই হয়ে গেছে।
কেন ‘অ্যানিমেল ফার্ম’ আজও প্রাসঙ্গিক?
‘অ্যানিমেল ফার্ম’ দেখায় যে, শুধু শাসক পরিবর্তনই মুক্তি নয়। বিপ্লবের পর যদি স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং আদর্শের চর্চা না থাকে, তবে সেই বিপ্লব নিজেই এক নতুন স্বৈরশাসনের জন্ম দিতে পারে। এটি যেকোনো সমাজের জন্য একটি শক্তিশালী সতর্কবার্তা, যা ক্ষমতা ও দুর্নীতির চিরন্তন চক্রকে উন্মোচিত করে।
পৃথিবীর ধ্বংসের সময় ২০৬০ সাল? নিউটনের রহস্যময় ভবিষ্যদ্বাণীতে বিশ্বজুড়ে তোলপাড়!
মহাবিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন, যিনি গতি ও মহাকর্ষ সূত্রের জন্য বিখ্যাত, তিনি নাকি পৃথিবীর ধ্বংসের সুনির্দিষ্ট একটি সাল ঘোষণা করে গেছেন। প্রায় ৩০০ বছরেরও বেশি আগে করা তার এই ভবিষ্যদ্বাণী বর্তমান সময়ে এসে আবারও বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। নিউটনের মতে, ২০৬০ সালেই পৃথিবীর সমস্ত কিছুর অবসান ঘটবে। কিন্তু কোন সূত্রের ভিত্তিতে তিনি এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছিলেন?
বাইবেলের গণিত ও নিউটনের ভবিষ্যদ্বাণী
১৭১৪ সালে লেখা একটি চিঠিতে স্যার আইজ্যাক নিউটন পৃথিবীর শেষ সময় সম্পর্কে তার এই ভবিষ্যদ্বাণী উল্লেখ করেন। তিনি গতি ও মধ্যাকর্ষণ সূত্রের জন্য বিখ্যাত হলেও, এই ভবিষ্যদ্বাণীটি কোনো জটিল বৈজ্ঞানিক গণনা বা ক্যালকুলাসের ওপর ভিত্তি করে করেননি। বরং, বাইবেলের বিভিন্ন ঘটনার প্রতি বিশ্বাসী হয়ে তিনি বাইবেল শাস্ত্রের বিভিন্ন দিন ও বছরকে গণনার জন্য ব্যবহার করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ সাল থেকে হিসাব করে নিউটন ২০৬০ সালকে পৃথিবীর শেষ সময় হিসেবে নির্ধারণ করেন।
কানাডার হেলিফ্যাক্সের কিংস কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ইতিহাসের অধ্যাপক স্টিফেন ডি স্নোবেলেন এই প্রসঙ্গে বলেন যে, নিউটন তার ভবিষ্যদ্বাণীতে শিশুদের পাটিগণিতের মতো সহজ পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন। তিনি বাইবেলের পবিত্র বুক অফ ডেল ও রেভলেশনসে উল্লিখিত ১২৬০, ১২৯০, ১৩৩৫ এবং ২৩০০ দিনগুলোকে গণনার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেন।
ভবিষ্যদ্বাণীর পেছনের উদ্দেশ্য
তবে, নিউটন শুধু পৃথিবীর ধ্বংসের সময় জানানোর উদ্দেশ্যেই এই ভবিষ্যদ্বাণী করেননি। তার চিঠিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, "পৃথিবীর শেষ সময় সম্পর্কে ঘন ঘন ভবিষ্যদ্বাণী করা সমস্ত কল্পনাকে বন্ধ করার জন্য আমি এটা করেছি। পবিত্র গ্রন্থনির্ভর ভবিষ্যদ্বাণীগুলো ব্যর্থ হলে গ্রন্থ অসম্মানিত হয়"। অর্থাৎ, তিনি চেয়েছিলেন যেন মানুষ বারবার ভিত্তিহীন ভবিষ্যদ্বাণী করে পবিত্র ধর্মগ্রন্থের অসম্মান না করে।
বিজ্ঞানী নিউটন কি শুধুই বিজ্ঞানী ছিলেন?
অধ্যাপক স্নোবেলেনের মতে, আধুনিক অর্থে নিউটন কেবল একজন বিজ্ঞানী ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন একজন প্রাকৃতিক দার্শনিক। মধ্যযুগ থেকে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত প্রচলিত প্রাকৃতিক দর্শনে কেবল প্রকৃতির অধ্যয়নই অন্তর্ভুক্ত ছিল না, বরং প্রকৃতিতে ঈশ্বরের উপস্থিতি নিয়েও অধ্যয়ন করা হতো। নিউটনের জন্য ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যে কোনো অভেদ্য পার্থক্য ছিল না। তিনি তার দীর্ঘজীবন জুড়ে প্রকৃতি ও ধর্মগ্রন্থের মধ্যে নিহিত সত্যগুলো আবিষ্কার করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন।
সুতরাং, আইজ্যাক নিউটনের এই ভবিষ্যদ্বাণী কেবল একটি গাণিতিক হিসাব নয়, বরং এটি বিজ্ঞান, ধর্ম এবং দর্শনের এক দুর্লভ মিশ্রণ, যা আজও মানুষকে বিস্ময় ও আলোচনার খোরাক জোগাচ্ছে।
বাবিলের অভিশাপ থেকে মায়ং-এর তন্ত্র: কালো জাদুর আদি ইতিহাস
সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘শয়তান’ সিনেমার ট্রেইলারকে কেন্দ্র করে আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে কালো জাদুর (Black Magic) অন্ধকার ও রহস্যময় জগৎ। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে থাকা এই গুপ্তবিদ্যার চর্চা আধুনিক যুগেও থেমে নেই। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের কুড়িগ্রামের একটি গ্রামে পেরেকের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত একটি রহস্যময় পুতুল পাওয়া যায়, যা বশীকরণ জাদুবিদ্যার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। কিন্তু কী এই কালো জাদু? এর উৎপত্তি কোথায় এবং এর ক্ষমতা কতটুকু?
মেক্সিকোর ডাইনি বাজার থেকে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা
কালো জাদুর চর্চা শুধু লোককথায় সীমাবদ্ধ নয়। মেক্সিকোতে অবস্থিত ‘সোনোরা উইচেস মার্কেট’ নামে একটি বাজার রয়েছে, যেখানে মাথার খুলি, পুতুল, জীবজন্তুর চামড়া থেকে শুরু করে কালো জাদুর বিভিন্ন সরঞ্জাম খোলাখুলিভাবে বিক্রি হয়। নৃতত্ত্ববিদ (Anthropologist) অ্যান্থনি জাভালেটা এই বাজারের ওপর ২৫ বছর ধরে গবেষণা চালান। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের তথ্য অনুসারে, এক পর্যায়ে তিনি মেক্সিকোর উপত্যকায় ‘কালো জাদুর আঁতুড়ঘর’ হিসেবে পরিচিত একটি স্থানে পৌঁছান। সেখানে তিনি একটি বড় পাথরের নিচে কাচের বোতলে ভরা মানুষের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, জীবজন্তুর রক্ত, বাদুড়ের চামড়া এবং মানুষের চুল খুঁজে পান। জাভালেটার মতে, সেই বোতলগুলো ধ্বংস করার পর তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন, যা ছিল তার জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা।
প্রাচীন উৎস: বাবিল, মিশর এবং আসাম
ঐতিহাসিকভাবে কালো জাদুর চর্চা শুরু হয়েছিল প্রাচীন বাবিল শহরে। কুরআন ও বাইবেলের তথ্যমতে, এর সূচনা হয় হজরত ইদ্রিস (আ.) এর সময়ে হারুত ও মারুত নামক দুই ফেরেশতার মাধ্যমে। এছাড়া, প্রাচীন মিশরের পিরামিডের গায়ে হায়রোগ্লিফিক ভাষায় লেখা মন্ত্র এবং ‘বুক অফ দি ডেড’ নামক গ্রন্থেও এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তবে মিশরীয়দের মতে, জাদুর উদ্দেশ্য কেবল ক্ষতি করা ছিল না, বরং এর মূল লক্ষ্য ছিল মৃত্যুকে জয় করা, এমনকি মমিতে পুনরায় প্রাণ সঞ্চার করা।
ভারতীয় উপমহাদেশে কালো জাদুর কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত আসামের ‘মায়ং’ বা ‘ময়ং’ গুহা, যা ‘কালো জাদুর ভূমি’ নামে পরিচিত। মহাগ্রন্থে এই জায়গাকে ‘প্রাগজ্যোতিষপুর’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্বাস করা হয়, আসামের এই গুহা থেকেই প্রাচীন ভারতের তিনটি ভয়ঙ্কর কালো জাদুর সূত্রপাত হয়:
বশীকরণ (Vashikaran): কাউকে জাদুর মাধ্যমে নিজের আয়ত্তে আনা, যা ‘শয়তান’ সিনেমার মূল উপজীব্য।
মোহন ক্রিয়া (Mohon Kriya): এর মাধ্যমে যে কাউকে সম্মোহিত করা বা আকর্ষণ করা সম্ভব বলে মনে করা হয়।
মারণ ক্রিয়া (Maron Kriya): এটি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বলে পরিচিত। এর মাধ্যমে প্রেত বা পিশাচ ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যা করা সম্ভব বলে বিশ্বাস করা হয়। তবে মন্ত্র পাঠে সামান্য ভুল হলে, জাদু উল্টো প্রয়োগকারীরই প্রাণ কেড়ে নিতে পারে।
নেক্রোনমিকন এবং অমীমাংসিত রহস্য
কালো জাদু সম্পর্কিত যত বই পাওয়া গেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হিসেবে ‘নেক্রোনমিকন’ বইটির কথা উল্লেখ করা হয়। কথিত আছে, এই বইয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং হিটলারের উত্থান সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা ছিল।
বিজ্ঞান যেখানে শেষ, সেখান থেকেই যেন সেরকম রহস্যময়তার শুরু। যদিও আধুনিক বিশ্বে এগুলো নিছকই কুসংস্কার, তারপরেও এর অন্ধকার জগৎ নিয়ে মানুষের কৌতূহল আজও অমীমাংসিত।
পাঠকের মতামত:
- মানব সভ্যতায় মুসলিম বিজ্ঞানীদের ৫ যুগান্তকারী অবদান
- আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রতি শিক্ষা উপদেষ্টার বার্তা
- ১৮ বছরের গণনা: যে আবিষ্কার বিশ্বকে বোঝালো আমরা মিল্কি ওয়েতে একা নই
- জুলাই সনদের ৫ দফা দাবিতে জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
- সুখবর: ৯ মাস বন্ধ থাকার পর খুলছে সেন্ট মার্টিন
- পা ফাটা দূর করুন: ঘরোয়া উপায়ে মসৃণ গোড়ালি পাওয়ার সহজ কৌশল
- শোয়েব আখতারের রেকর্ড ভাঙা! স্টার্কের ১৭৬.৫ কিমি গতির বল নিয়ে তোলপাড়
- ১৯ অক্টোবর ডিএসই লেনদেনের সারসংক্ষেপ
- ১৯ অক্টোবরের ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ লুজার তালিকা প্রকাশ
- ১৯ অক্টোবরের ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- পরিকল্পিত আগুন: কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে বড় অভিযোগ
- ইসি জঙ্গলীয় কায়দায় চলছে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
- ‘বক্তব্য কাট করে বিকৃত করা হয়েছে’: জুলাই যোদ্ধা নিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদের ব্যাখ্যা
- এনসিপি’র হুঁশিয়ারি: নির্বাচন কমিশন ‘স্বৈরাচারী কায়দায়’ চলছে
- ফ্রান্স: সভ্যতা, প্রজাতন্ত্র ও মানবমুক্তির দীপ্ত ইতিহাস
- বাংলাদেশ জলসীমায় অনুপ্রবেশ: বঙ্গোপসাগর থেকে ভারতীয় ১৪ জেলে আটক
- মেথি পানির ম্যাজিক: নিয়মিত ১৫ দিন পান করলে শরীরে আসে যে ৬ পরিবর্তন
- সাবধান! কম ঘুম ছোট করে দিতে পারে মস্তিষ্ককে, নতুন গবেষণার ভয়াবহ তথ্য
- এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়াল সরকার
- ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা: বঙ্গোপসাগরে নতুন লঘুচাপ সৃষ্টির পূর্বাভাস দিল আবহাওয়া অধিদপ্তর
- ইয়েমেনে জাতিসংঘ ভবনে হুথি অভিযান: সব কর্মী নিরাপদে
- গণভোটের দিনক্ষণ: নির্বাচনের দিন হবে না আগে? সিদ্ধান্ত সরকারের ওপর
- রক্ষণ থেকে আক্রমণে জাদু: আরাউহোর গোলে লা লিগার শীর্ষে বার্সা
- মেসির জাদুতে ইন্টার মায়ামির দুর্দান্ত জয়: হ্যাটট্রিকে এমএলএস গোল্ডেন বুট প্রায় নিশ্চিত
- ‘আমরা রাজা নই, আমরা জনগণ’: যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল জনতা
- রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর যুদ্ধবিরতি: দোহায় পাকিস্তান-আফগান সমঝোতা
- শাহজালালে আগুনে ছাই ব্যবসায়িক আশা: বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির আশঙ্কা
- ১৯ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধান অঞ্চলের নামাজের সময়সূচি
- কার্গো ভিলেজে আগুন: ক্ষতির আশঙ্কা বিলিয়ন ডলার
- ভারতের বিরুদ্ধে নতুন সামরিক হুমকি দিলেন পাক সেনাপ্রধান
- সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডগুলো জননিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি: তারেক রহমান
- পায়ে সামান্য ব্যথা বা ঘা: নীরব ঘাতক ‘রক্তনালির ব্লকের’ সংকেত নয়তো?
- রাতে ফ্লাইট চালুর চেষ্টা চলছে: কার্গো ভিলেজের আগুন পরিদর্শনে উপদেষ্টা
- রিশাদ ম্যাজিক স্পিনে উড়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ
- ঢাকার বিমানবন্দর অচল: ভয়াবহ আগুনে পুড়ছে কার্গো ভিলেজ, ৫ ঘণ্টায়ও নেভেনি
- ৪০-৪৫ দিনের রেণুবিন্দু: বিজ্ঞান বনাম কোরআন, গর্ভের শিশুর নিয়তি কখন লেখা হয়?
- চিকিৎসা বিজ্ঞানে বড় সাফল্য,রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখবে কৃত্রিম কিডনি
- সিইসি: ‘বিগত দিনের মতো নির্বাচন হবে না, হবে সম্পূর্ণ আলাদা’
- বিলাসবহুল জীবন থেকে জনকল্যাণ: দুবাইয়ের রাজকন্যা শেখ মাহরার যত কীর্তি
- সিন্ধু সভ্যতা থেকে পরমাণু পাকিস্তান: প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ভূরাজনীতি, ধর্ম ও টিকে থাকার পূর্ণাঙ্গ আখ্যান
- রক্ত দেওয়ার সময় আমরা, ক্ষমতার সময় অন্যেরা: হাসনাত আবদুল্লাহ
- শখের পোশাক বারবার ধোয়ার পরেও উজ্জ্বল থাকবে যে ৮ উপায়ে
- টেলিগ্রাম নিয়ে ভয়াবহ তথ্য! আপনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কি ঝুঁকিতে?
- জুলাই সনদ সইয়ের মতো অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে এগোই: মির্জা ফখরুল
- অভিভাবকতন্ত্রের প্রলোভন: জেনারেল ভূঁইয়ার বয়ান ও গণতন্ত্রের ঘড়ি থামানোর বিপদ
- আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা: বাড়ছে আগুনের তীব্রতা,সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বিমান
- যুদ্ধবিরতির ভয়াবহ লঙ্ঘন: গাজায় এক ফিলিস্তিনি পরিবারের ১১ সদস্য নিহত
- বদহজম ও গ্যাসের সমস্যা? মুক্তি দেবে এই ৮টি ঘরোয়া টোটকা
- মাইগ্রেনের সমস্যা: যে ৬টি অভ্যাস আজই আপনাকে পরিবর্তন করতে হবে
- বয়স বাড়ার ছাপ: ৫টি অভ্যাস যা আপনার ত্বক ও চুলকে রাখবে তরতাজা
- হিটলার কেন ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিলেন? নেপথ্যের কারণ কী?
- বিনিয়োগকারীদের আস্থায় ভর করে চাঙ্গা রাজধানীর শেয়ারবাজার
- পূর্বাচল প্লট অনিয়ম মামলা: শেখ হাসিনা ও পরিবারের বিরুদ্ধে পাঁচজনের সাক্ষ্য
- ফ্রান্স: সভ্যতা, প্রজাতন্ত্র ও মানবমুক্তির দীপ্ত ইতিহাস
- ১৩ অক্টোবরের ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- জায়ান-শমিতকে নিয়েই একাদশ, বেঞ্চে বসলেন দলের অন্যতম তারকা
- সাবধান! আপনার হোয়াটসঅ্যাপ কি অন্য কেউ ব্যবহার করছে? বুঝবেন যেভাবে
- শি জিনপিং: সমাজে প্রকৃত সমতা চাইলে নারীর নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে
- খাবার খেয়েই বসে আছেন? এটি হতে পারে ধূমপানের মতোই মারাত্মক অভ্যাস
- মাইগ্রেন কি শুধু মাথাব্যথা? জেনে নিন এর ৫টি ভিন্ন ধরন
- আজ বাংলাদেশের বাঁচা-মরার লড়াই, টিভিতে নয় ২৫ টাকায় দেখুন অনলাইনে
- ১৪ অক্টোবরের ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- পরমাণু ইস্যুতে কঠোর ইরান: আইএইএ-এর সঙ্গে চুক্তি স্থগিত, কারণ কী?
- শিক্ষক আন্দোলনের মোড়বদল: ‘লংমার্চ টু যমুনা’ স্থগিত, নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
- শীতকাল আসছে: সুস্থ থাকতে এখনই বর্জন করুন এই ৫টি অভ্যাস