বিচার না পেলে রাজপথ ছাড়ব না: শাহবাগে সাবেক বাহিনীর হুঁশিয়ারি

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৭ ১৪:১০:৫৫
বিচার না পেলে রাজপথ ছাড়ব না: শাহবাগে সাবেক বাহিনীর হুঁশিয়ারি

রাজধানীর শাহবাগে আজ সোমবার সকাল থেকেই অবস্থান নেন পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর চাকরিচ্যুত বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) সদস্যরা। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় অবহেলা, বিচারহীনতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে তারা নিজেদের তিন দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবি গুলো হলো: চাকরিতে পুনর্বহাল, নিরপরাধ কারাবন্দিদের মুক্তি এবং ঐতিহাসিক ‘বাংলাদেশ রাইফেলস’ নাম পুনঃস্থাপন।

সকাল থেকে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে জমায়েত হতে থাকেন শতাধিক সাবেক বিডিআর সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। কারো হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, কারো চোখে দীর্ঘ ন্যায়বিচার না পাওয়ার ক্ষোভ। তারা বলেন, “২০০৯ সালের সেই বিভীষিকাময় ঘটনার পর কোনো তদন্ত ছাড়াই হাজার হাজার সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়, নিরপরাধ অনেককেই কারাবন্দি করে রাখা হয়। কারও বিচার হয়নি, কাগজপত্রও হাতে দেওয়া হয়নি। আমাদের সম্মান কেড়ে নেওয়া হয়েছে, অথচ আমরা সেই রাষ্ট্রের জন্য জীবন বাজি রেখেছিলাম।”

বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ থেকে যমুনা টেলিভিশন কার্যালয়ের দিকে রওনা দিলে কাকরাইল মোড়ে পুলিশ তাদের গতিরোধ করে। শুরু হয় উত্তেজনা। একপর্যায়ে পুলিশ জলকামান, টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। হঠাৎ তৈরি হওয়া পরিস্থিতিতে রাস্তায় চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে, আশপাশে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এ সময় আন্দোলনকারীরা স্লোগান দিতে দিতে বলেন, “আমরা কোনো অরাজকতা করতে আসিনি। আমরা এসেছি ন্যায়ের দাবি নিয়ে। আমাদের সহকর্মীরা বিনা দোষে বছরের পর বছর কারাগারে এটি কি ন্যায়ের নামে গড়ে ওঠা রাষ্ট্রের পরিচয়?”

এ আন্দোলনের পেছনে যে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত হয় দেশের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। বিদ্রোহের নামে সেনাবাহিনীর ৫৭ জন কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে সরকার বিডিআর ভেঙে দিয়ে নতুন নাম দেয়—‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ (বিজিবি)। সেই সময় থেকেই বহু বিডিআর সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়, অনেককে বিচারের আওতায় আনা হয়—তাদের মধ্যেই অনেকে আজ রাজপথে নেমেছেন।

আন্দোলনকারীরা বলেন, “আমাদের সঙ্গে রাষ্ট্র বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। প্রকৃত অপরাধীদের বিচার না করে সাধারণ সদস্যদের শাস্তি দিয়ে পুরো বাহিনীর ইতিহাসই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এখন আমরা চাই রাষ্ট্র আমাদের সম্মান ফিরিয়ে দিক।”

তারা দাবি করেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের প্রকৃত বিচার এখনো হয়নি। মামলায় অনেক নিরপরাধ সদস্যকে জড়ানো হয়েছে, যাদের কেউ ঘটনার সময় রান্নাঘরে ছিলেন, কেউবা পাহারার দায়িত্বে, কেউবা ছুটি কাটাচ্ছিলেন নিজ এলাকায়। অথচ তদন্ত ছাড়া তাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

আন্দোলনকারীরা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ রাইফেলস’ নামটি এই বাহিনীর গৌরবময় ইতিহাস ও আত্মত্যাগের পরিচায়ক। এ নাম বাতিল করে বিজিবি নামকরণ করা হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ হিসেবে। তারা বলেন, “এই নাম ফিরিয়ে না দিলে ইতিহাসের এক অধ্যায় মুছে যাবে।”

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত মোতায়েন ছিল এবং আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ অবস্থায় হলেও পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হলে তারা আরও বৃহত্তর কর্মসূচিতে যাবেন।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। মানবাধিকার সংগঠন ও বিশ্লেষকরা বলছেন, এত বছর পরও যদি এই অব্যবস্থাপনার বিচার না হয় এবং প্রকৃত নিরপরাধদের মুক্তি না দেওয়া হয়, তবে এটি হবে বিচারহীনতার এক গভীর দৃষ্টান্ত।

এই আন্দোলন কেবল চাকরিচ্যুত কয়েকজনের নয় এটি একটি পেশার সম্মান, রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলতা, ইতিহাস এবং ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। এখন দেখার বিষয়, সরকার এই আহ্বানে কীভাবে সাড়া দেয়।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ