বিএনপির বিরুদ্ধে 'সংস্কারবিরোধী' অপপ্রচার চলছে: মির্জা ফখরুল

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৬ ১৩:০৩:২৪
বিএনপির বিরুদ্ধে 'সংস্কারবিরোধী' অপপ্রচার চলছে: মির্জা ফখরুল

বিএনপিকে ‘সংস্কারবিরোধী’ বলে প্রচার চালানো হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এটি একটি কুচক্রী মহলের অপপ্রচার। রবিবার সকালে গুলশানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্রকে যেভাবে হরণ করা হয়েছে, বিএনপির লক্ষ্য সেটিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। এই লক্ষ্যে বিএনপি গঠনমূলক সংস্কারের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে এবং প্রতিটি কমিশনের কার্যক্রমে যুক্তি ও অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণ করছে।

ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে যেমন জনগণের মধ্যে আগ্রহ ও আশাবাদ আছে, তেমনি রয়েছে সংশয় ও উদ্বেগ এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি বরাবরই এই প্রক্রিয়ায় গঠনমূলক ভূমিকা রেখে এসেছে। তিনি জানান, অনেক বাস্তবায়ন-জটিল সুপারিশেও কেবলমাত্র সংস্কার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে বিএনপি সম্মতি দিয়েছে। তবে সাম্প্রতিক কিছু প্রস্তাব যেভাবে রাষ্ট্র কাঠামো, রাজনীতি ও সংসদকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে, তাতে জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো পরিবর্তন আনাকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

জুলাই ঘোষণাপত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি আগেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। এরপর আর আলোচনা এগোয়নি। তবে দলটি এখনো আলোচনায় আগ্রহী ও প্রস্তুত। এই প্রেক্ষাপটে তিনি অভিযোগ করেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা বাড়ানোর নামে নির্বাচিত সংসদ ও সরকারের কর্তৃত্ব খর্ব করার যেসব প্রস্তাব এসেছে, তা প্রকৃত সংস্কারের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা গেলে যেমন ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়, তেমনি সংসদ ও সরকারকে ক্ষমতাহীন করলেও রাষ্ট্র দুর্বল হয়ে পড়ে এই সতর্কবার্তাও দেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিএনপি একটি শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে দলটি বৈষম্যহীন, মানবিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। তাঁর মতে, এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে দলীয় হিসাবের বাইরে গিয়ে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে কাজ করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দায়িত্ব।

সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন কমিশনে বিএনপির অবস্থান পর্যালোচনা করে তিনি জানান, পুলিশ সংস্কার কমিশনে র‍্যাব বিলুপ্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবসহ অধিকাংশ বিষয়ে বিএনপি একমত, যদিও বিষয়টি আনুষ্ঠানিক আলোচনায় এখনো ওঠেনি। দুদক সংস্কার কমিশনে ৪৭টি সুপারিশের মধ্যে ৪৬টিতে বিএনপি সম্মত হলেও কেবল আদালতের অনুমতি ছাড়া তদন্তের প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনে ২০৮টি সুপারিশের মধ্যে বিএনপি ১৮৭টিতে একমত, ৫টিতে আংশিক এবং ১১টিতে ভিন্নমত দিয়েছে। বিচার বিভাগীয় কমিশনে ৮৯টি সুপারিশের মধ্যে ৬২টিতে সরাসরি, ৯টিতে আংশিক এবং ১৮টিতে যুক্তিসহ বিরোধিতা করেছে, তবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা-সংক্রান্ত সব প্রস্তাবে বিএনপি সম্মত।

নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার কমিশনে ২৪৩টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৪১টিতে একমত, ১৪টিতে আংশিক এবং ৬৪টিতে সংশোধনীসহ একমত হয়েছে। মাত্র ২৪টি সুপারিশে বিএনপি অসম্মতি জানিয়েছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনে ১৩১টি সুপারিশের ওপর দফাওয়ারি মত দিয়েছে বিএনপি। তারা ৭০ অনুচ্ছেদ ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণে নমনীয়তা দেখিয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা (আর্টিকেল ৪৯), সংসদীয় আসনের সীমানা, ন্যায়পাল আইন ও হাইকোর্ট বেঞ্চ সংক্রান্ত প্রস্তাবেও একমত হয়েছে।

সার্বিকভাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিএনপি তাদের অবস্থান তুলে ধরে স্পষ্ট করেছে যে, দলটি রাজনৈতিকভাবে সংস্কারের বিপক্ষে নয় বরং গঠনমূলক সংস্কার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারা নিজেদের গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতা পালন করে যাচ্ছে। দলটি চায়, সব ধরনের প্রস্তাব জনগণের আলোচনার আওতায় এনে প্রণয়ন হোক, যেন তা প্রকৃত অর্থেই জনগণের রাষ্ট্র গঠনের পথ প্রশস্ত করে।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ