পিআইবি সেমিনারে চাঞ্চল্যকর তথ্য উন্মোচন

ভুয়া সংবাদে শীর্ষে প্রথম আলো, কালবেলা ও ইত্তেফাক

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৮ ২১:১১:৩১
ভুয়া সংবাদে শীর্ষে প্রথম আলো, কালবেলা ও ইত্তেফাক

বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে ভুয়া সংবাদ প্রকাশের পর তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার হারে প্রথম স্থানে রয়েছে দৈনিক প্রথম আলো। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে দৈনিক কালবেলা ও দৈনিক ইত্তেফাক। প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) আয়োজিত এক সেমিনারে উপস্থাপিত একটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পের পরামর্শক মামুন অর রশীদ। তার গবেষণার শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক অপতথ্যের গতি-প্রকৃতি’। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণাটি সম্পন্ন করা হয়।

গবেষণার প্রধান তথ্য ও বিশ্লেষণ

গবেষণায় উঠে আসে, ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশে মূলধারার গণমাধ্যমে ভুয়া সংবাদ প্রকাশের প্রবণতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাইরাল হবার লোভে তথ্য যাচাই না করে সংবাদ প্রকাশের সংস্কৃতি বেড়ে গেছে, যা সাংবাদিকতার মৌলিক নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

গবেষণায় আরও বলা হয়, সাংবাদিকতার চেয়ে অনেক সংবাদমাধ্যম এখন ভাইরাল কনটেন্ট ও ক্লিকভিত্তিক ব্যবসায় মনোযোগী। মূলধারার সংবাদমাধ্যমে যেসব সংবাদ পরবর্তীতে প্রত্যাহার করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে যুগান্তর, ডেইলি স্টার, বাংলা ট্রিবিউন, ঢাকা পোস্ট, বিডিনিউজ২৪, কালের কণ্ঠ, যমুনা টিভি, বিবিসি বাংলা, সময় নিউজ, বাংলানিউজ২৪, চ্যানেল২৪বিডি, জাগো নিউজ২৪, জনকণ্ঠ, ঢাকা ট্রিবিউন, দেশ রূপান্তর, ইনকিলাব, আইটিভি, একাত্তর টিভি, যায়যায়দিন, আমাদের সময়, সময়ের আলো ও বাংলাদেশ প্রতিদিন।

ডিজিটাল যুদ্ধ, ভাইরাল সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক ব্যবহারের শঙ্কা

সেমিনারে প্রধান অতিথি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহম্মদ তৈয়্যব বলেন, আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে দেশে সর্বোচ্চ পরিমাণে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের মধ্যে এই অপপ্রচার ছড়ানোর প্রবণতা বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি জানান, বানোয়াট সংবাদ এখন মানুষের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। অনেক সংবাদমাধ্যম আর্থিক মুনাফার আশায় ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বা চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রচার করছে। তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপস্থিতি অনেক বেড়েছে, আর বিরোধী পক্ষের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কমে গেছে।

সংবাদমাধ্যমের ভবিষ্যৎ ও সংকট

পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, বিগত সরকারের সময় সাংবাদিকতা রাষ্ট্রীয় মিথ্যার প্রচারযন্ত্রে পরিণত হয়েছিল। সংবাদমাধ্যম ছিল ফেরিওয়ালার ভূমিকায়। তিনি জানান, গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতা সংকুচিত হয়ে গেছে এবং ফ্যাক্টচেক একাই এই সংকট মোকাবিলা করতে পারবে না। সামাজিক আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এর প্রতিকার সম্ভব।

তিনি বলেন, বিশ্বাসযোগ্যতা হারালে মূলধারার গণমাধ্যমের জায়গা দখল করে নেবে ব্লগার ও কনটেন্ট নির্মাতারা। সংবাদমাধ্যমে সত্যতা ও তথ্যের শুদ্ধতা নিশ্চিত করতে হলে মালিকপক্ষকে ডিজিটাল ভেরিফিকেশন ও সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে নজর দিতে হবে।

এই গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলো বর্তমানে ভাইরাল হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় সত্যের চেয়ে চমকপ্রদতাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে সাংবাদিকতা তার নৈতিক অবস্থান হারাবে এবং দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়বে।

গণমাধ্যমের উচিত হবে তথ্য যাচাই ও সংবাদ পরিবেশনের মৌলিক নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং ট্রাফিকের চেয়ে সত্যকেই বড় করে দেখা।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ