বাগেরহাটের চরজীবনে ‘বিদ্যুৎ’ এলো, আলো নয়—এলো অন্ধকার

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২৫ ১১:৫৯:৩৩
বাগেরহাটের চরজীবনে ‘বিদ্যুৎ’ এলো, আলো নয়—এলো অন্ধকার

পূর্বে যেখানে ছিল সবুজ ধানক্ষেত, জেলেদের সরগরম ঘাট আর ফসলের মৌসুমি উৎসব—সেখানে এখন ধুলোবালির মরুঘূর্ণি। বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার পশুর নদ-সংলগ্ন কৈগরদাসকাঠি চরের চিত্রটাই যেন এক জীবন্ত নিঃশব্দ বেদনার গল্প। একসময় এই চরের নদী-জমিই ছিল শতাধিক পরিবারের আয়ের উৎস। কিন্তু রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পর বদলে গেছে জীবন ও জীবিকার গতিপথ।

৫০ বছর বয়সী সিদ্দিক শেখ জানান, তাঁর জীবনের ৪০ বছর কেটেছে এই চরেই। “আগে নিজেদের ধানেই বছর চলে যেত, নদীতে মাছ ধরেও বাড়তি আয় হতো,”—বলতে গিয়ে তাঁর গলা ভারী হয়ে আসে। এখন নদীতে জাল টানলেও কদাচিৎ উঠে কিছু রূপালি মাছ—সারারাত পরিশ্রমের ফল মাত্র ১২০ টাকার মাছ।

কাছে দাঁড়িয়ে থাকা স্ত্রী শাফিয়া বেগমও একই দুঃখের ভাগিদার। অসুস্থ শরীরে সংসারের খুঁটিনাটি সামলাতে গিয়ে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট তাঁর মুখে। “আগে নিজের ধান ছিল, নিজের মাছ ছিল, এখন কিছুই নাই,”—বললেন তিনি।

চরের আরও এক বাসিন্দা, রেজাউল শেখ জানান, “এখন চরে দাঁড়িয়ে মনে হয় মরুভূমিতে আছি। একসময় বাইরের এলাকা থেকে শ্রমিক আনতে হতো ধান লাগানো আর মাছের ঘেরের জন্য। এখন কাজও নেই, ঘেরও নেই।”

২০১০ সালে সরকার রামপাল, সাপমারি ও কৈগরদাসকাঠি মৌজার ১,৮৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ করে রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশই ছিল উর্বর কৃষিজমি। আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করে বাস্তুহারাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই দেওয়া হলেও জীবিকার সংকট কাটেনি।

একই গল্প শোনা গেল হেনা বেগমের কণ্ঠেও। “ঘর তো দিছে, কিন্তু সংসার তো শুধু ছাউনি দিয়ে চলে না। স্বামী খুলনায় রিকশা চালায়, আমি মাছ ধরি, তাও চলে না,”—বলেন তিনি।

ধারাবাহিক ক্ষতির কথা জানালেন রহমান ফকির, যিনি এখন ভ্যান চালিয়ে জীবিকা চালান। "বাপ-দাদার সময়েও ধান ছিল, মাছ ছিল, আর এখন কিছুই নাই।"

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরীর ভাষ্য অনুযায়ী, “বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য নদীর পানিতে মিশে গিয়ে জীববৈচিত্র্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। প্রতি লিটার পানিতে মাছের রেণু ও ডিমের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে।”

স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু আশ্বাস মিলেছে বটে। রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তামান্না ফেরদৌসি বলেন, “জীবনমান উন্নয়নে কাজ চলছে, তবে চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। চর এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে বরাদ্দের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কিন্তু ততদিনে যদি কৈগরদাসকাঠি চর হয়ে ওঠে এক নিঃস্রোত নীরব জনপদ?

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

আমেরযত কাহিনি

আমেরযত কাহিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ ‘আম’ শুধু একটি ফল নয়, বরং এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে গভীরভাবে প্রোথিত এক... বিস্তারিত