এক কেজি ইলিশের বাজারমূল্য যত এখন

রাজধানীসহ সারা দেশের বাজারে বর্তমানে ইলিশের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। এক কেজি ওজনের একটি নদীর ইলিশ কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে প্রায় আড়াই হাজার টাকা, যা পোশাক শিল্পে নিযুক্ত একজন শ্রমিকের প্রায় ছয় দিনের নিম্নতম মজুরির সমান। এই একটিমাত্র মাছের মূল্যে মধ্যম আয়ের একটি পরিবারের গ্রীষ্মকালীন এক মাসের বিদ্যুৎ বিল বা দুই মাসের গ্যাস বিল পরিশোধ করা সম্ভব।
ছোট আকারের ইলিশও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ৫০০ গ্রাম ওজনের চাঁদপুর বা বরিশালের নদীর ইলিশের দাম প্রতি কেজিতে দেড় হাজার টাকা এবং মাঝারি আকারের (৮০০ গ্রাম) প্রতি কেজিতে প্রায় দুই হাজার টাকা। সমুদ্র থেকে আহরিত ইলিশ তুলনামূলক সস্তা হলেও সেটিও সাধারণ ভোক্তার সাধ্যের মধ্যে নেই।
বিক্রেতারা দাবি করছেন, ইলিশের মৌসুম এখনও পুরোপুরি শুরু হয়নি। কিন্তু বাজারে থাকা অল্প ইলিশই ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১৯ জুন ঢাকার বাজারে এক কেজি ইলিশের দাম এক হাজার থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকার মধ্যে ছিল, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বেশি।
গবেষক ও মৎস্যজীবীরা বলছেন, এ বছর ইলিশের উৎপাদন কমেছে। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন ছিল ৫ লাখ ৭১ হাজার টন, যা ২০২৩-২৪ সালে কমে দাঁড়ায় ৫ লাখ ২৯ হাজার টনে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও এই হ্রাস অব্যাহত থাকবে।
জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির মহাসচিব ইকবাল হোসেনের মতে, জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষার জন্য নির্ধারিত সময়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বিগত দুই বছর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তা কার্যকরভাবে প্রয়োগ হয়নি। ফলে ইলিশের প্রজনন ব্যাহত হয়েছে এবং উৎপাদন কমেছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ শাখার সহকারী পরিচালক এম ফারুক ময়েদুজ্জামান জানান, পর্যাপ্ত জনবল ও লজিস্টিক সুবিধা না থাকায় ২৪ ঘণ্টা নজরদারি সম্ভব হয় না। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে মাছ ধরা বন্ধ রাখতে না পারাই ইলিশ সংকটের মূল কারণ। এছাড়া, ইলিশের মাইগ্রেশন রুট ও প্রজনন পরিবেশেও পরিবর্তন এসেছে।
বিশেষজ্ঞ আনিছুর রহমান জানান, মে-জুন থেকে ইলিশ ধরা শুরু হলেও প্রধান মৌসুম সেপ্টেম্বর-নভেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু জুনের দ্বিতীয় ভাগেই আড়াই হাজার টাকায় এক কেজি ইলিশ বিক্রি হওয়া অস্বাভাবিক। ইলিশের উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় মূল্যবৃদ্ধি অযৌক্তিক। একই সময় চাষের পাঙাশ বা তেলাপিয়া ২০০ টাকায় বিক্রি হলেও ইলিশের দাম ১০ গুণ বেশি।
কারওয়ান বাজারের এক বিক্রেতা বলেন, আড়ত থেকে বেশি দামে কিনতে বাধ্য হওয়ায় কম দামে বিক্রি সম্ভব হয় না।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসিন উদ্দিন বলেন, আড়তদারদের 'সিন্ডিকেটের' কারণে দাম বাড়ানো হচ্ছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, তদন্তে দেখা গেছে, নিজেদের মধ্যে নিলাম ডেকে মাছের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে।
তবে আড়তদারদের সংগঠন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, যেহেতু প্রতি ট্রিপে ৫-১০টি মাত্র ইলিশ ধরা পড়ে, তাই সেই পরিমাণ মাছ বিক্রয় করে খরচ উঠানোই কঠিন হয়ে পড়ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য শুধু মূল্য নির্ধারণ যথেষ্ট নয়। উৎপাদন বাড়ানো ও সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে ভোক্তাবান্ধব দাম নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে কার্যকর না হলে মা ইলিশ ও জাটকা ধ্বংস অব্যাহত থাকবে, যা দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদন হ্রাস ও মূল্যবৃদ্ধি ঘটাবে।
-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- দীর্ঘ পতনের পর শেয়ারবাজারে এল সুখবর!
- জুলাই চার্টার ও জাতীয় ঐকমত্য: জামায়াতের অনুপস্থিতি কতটা যুক্তিসঙ্গত?
- বিশ্ববিদ্যালয় সংকট, বাজেট বৈষম্য ও শিক্ষায় ন্যায্যতার দাবি
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কম এবং কম ঝুকিপূর্ণ
- জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় ভোট হবে কিনা জানালেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা
- আকাশে বিস্ফোরণ, মাটিতে মৃত্যু: ক্লাস্টার বোমায় জর্জরিত ইসরায়েল
- Clash of Civilizations: মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের নতুন রূপরেখা
- চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের ১০টি বড় ক্ষতি
- শেয়ারবাজারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমেছে যে ৯টি কোম্পানির
- তবে কি বন্ধ হতে যাচ্ছে ইরানের পরমাণু কার্যক্রম, যা জানা গেল
- জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মুখোমুখি বিশ্ব শক্তিগুলো
- শরীয়তপুরের ডিসির নারী কেলেঙ্কারি ও ভিডিও ফাঁস: সর্বশেষ আপডেট
- শেয়ারবাজারে মুনাফা কমেছে যেসব ব্যাংকের
- প্রতিদিন ভোরে যে দোয়া পড়তেন বিশ্বনবী (সা.)