টাঙ্গুয়ার হাওরে আর কতকাল চলবে পরিবেশ ধ্বংস?

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২১ ১৯:৩১:৪৯
টাঙ্গুয়ার হাওরে আর কতকাল চলবে পরিবেশ ধ্বংস?

সুনামগঞ্জের বিখ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওরে অপ্রতুল নীতিমালা ও লাগামহীন পর্যটনের কারণে প্রকৃতি আজ হুমকির মুখে। হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে শনিবার (২১ জুন) তাহিরপুর উপজেলার জয়পুর গ্রামে অনুষ্ঠিত হয় এক মতবিনিময় সভা। ‘টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে করণীয়’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা।

সভায় বক্তারা বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রকৃতি ধ্বংস করে আর কোনোভাবে পর্যটন চলতে দেওয়া যাবে না। হাওরের পরিবেশ যদি ভালো না থাকে, তাহলে পর্যটকেরাও মুখ ফিরিয়ে নেবেন। তাই পর্যটন কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণে এনে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে একটি টেকসই, পরিবেশবান্ধব এবং জনভিত্তিক পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তোলার তাগিদ দেন তাঁরা।

বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, মূল হাওরের অভ্যন্তরে ইঞ্জিনচালিত নৌকার প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। কারণ এসব নৌকার শব্দে সৃষ্টি হচ্ছে শব্দদূষণ, নির্গত হচ্ছে তেল ও ধোঁয়াজাতীয় বর্জ্য, যা পানি ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে। পাশাপাশি পর্যটকদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক, কাচ ও প্যাকেটজাত দ্রব্য অনিয়ন্ত্রিতভাবে ফেলার ফলে হাওরের স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী, যদি পর্যটকদের হাতে চালিত নৌকার মাধ্যমে হাওরে ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে একদিকে দূষণ কমবে, অন্যদিকে স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। এ ছাড়া নৌকাগুলোর চলাচলের জন্য একটি নির্দিষ্ট রুট নির্ধারণের প্রস্তাবও উত্থাপন করা হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক পীযূষ পুরকায়স্থ টিটু। সভায় উপস্থিত ছিলেন হাওরের ওয়াচ টাওয়ার সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, হাওরে পর্যটকদের ব্যবহৃত উচ্চ শব্দের বাদ্যযন্ত্র ও মাইকের আওয়াজে শিশু, শিক্ষার্থী ও অসুস্থদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। পর্যটকদের অসচেতন আচরণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে হাওরের পানি ও প্রকৃতি মারাত্মকভাবে দুষিত হচ্ছে। এমন অবস্থায় তাঁরা ইঞ্জিনচালিত নৌকার প্রবেশ বন্ধসহ পর্যটন ব্যবস্থাপনায় কঠোর নীতিমালার দাবি জানান।

সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, “টাঙ্গুয়ার হাওর একটি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (Ecologically Critical Area)। এখানে সবার আগে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। স্থানীয় মানুষেরা পর্যটনের কোনো সুফল পাচ্ছেন না, বরং বিপর্যস্ত হচ্ছেন বিভিন্নভাবে। তাই এখানকার পর্যটন কার্যক্রম পুনর্বিন্যাস করা জরুরি।”

তিনি আরও বলেন, “যদি এখনই উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে পরিবেশের চরম বিপর্যয়ের কারণে একসময় স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এই পর্যটন বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা চাই, সরকার এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করুক।”

সভায় স্থানীয়দের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন মো. নূরে আলম, খসরুল আলম, আহমদ কবির, আলী আহমদ, আব্দুল হালিম, আল আমিন, নূর মিয়া, মাহফুজ আহমেদ ও ইয়াসিন আলীসহ আরও অনেকে।

—আশিক নিউজ ডেস্ক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

আমেরযত কাহিনি

আমেরযত কাহিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ ‘আম’ শুধু একটি ফল নয়, বরং এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে গভীরভাবে প্রোথিত এক... বিস্তারিত