ইরান ইসরাইলের যুদ্ধ

যুক্তরাষ্ট্র কি এবার সরাসরি যুদ্ধে নামছে? ট্রাম্পের মন্তব্যে নতুন ইঙ্গিত

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২১ ১৪:৫৮:৫০
যুক্তরাষ্ট্র কি এবার সরাসরি যুদ্ধে নামছে? ট্রাম্পের মন্তব্যে নতুন ইঙ্গিত

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার পটভূমিতে বিশ্ববাসী যখন অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে, ঠিক তখনই মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসেন। গত বৃহস্পতিবার এক ঘোষণায় তিনি জানান, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন—যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই সংঘাতে জড়াবে কি না।

এই ঘোষণাটি এমন সময়ে এসেছে, যখন মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা ঘাঁটিগুলোতে ব্যাপক সামরিক সরঞ্জাম ও আধুনিক যুদ্ধবিমান মোতায়েন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কাতারে অবস্থিত সবচেয়ে বড় মার্কিন ঘাঁটি আল-উদেইদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে দূতাবাস কর্মীদের জন্য। রয়টার্স জানিয়েছে, ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঝুঁকিতে থাকা ঘাঁটিগুলো থেকে কিছু যুদ্ধবিমান ও জাহাজ সরিয়েও নেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তুতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য রয়েছে এফ-১৬, এফ-২২, ও এফ-৩৫ সিরিজের যুদ্ধবিমান মোতায়েন এবং ইউএসএস নিমিৎজ ও ইউএসএস কার্ল ভিনসনের মতো বিমানবাহী রণতরীর আগমন। এমনকি ইউরোপ থেকেও বহু ট্যাংকার বিমান ও স্যাটেলাইটচিত্রে দেখা গেছে—যুক্তরাজ্য-মার্কিন যৌথ ঘাঁটি দিয়েগো গার্সিয়ায় বি-৫২ বোমারু বিমানের উপস্থিতি।

এই বিশাল প্রস্তুতির পেছনে অন্যতম কারণ—ইসরায়েলের পক্ষে এককভাবে ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ফোরদো ও নাতাঞ্জের মতো গভীরভাবে নির্মিত স্থাপনাগুলোতে কার্যকর হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমার প্রয়োজন।

ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনাটি মাটির প্রায় ৮০ থেকে ১০০ মিটার নিচে অবস্থিত। এখানেই ইরান তার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন করে থাকে। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা আইএইএ’র তথ্যানুযায়ী, ইসরায়েলের একাধিক বিমান হামলার পরও এ স্থাপনাটির মৌলিক কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়নি।

এই প্রেক্ষাপটে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, মার্কিন বি-২ স্পিরিট স্টেলথ বোমারু বিমান দিয়ে চালানো একাধিক ‘জিবিইউ-৫৭এ/বি এমওপি’ বোমার আঘাতেই কেবল এই বাঙ্কার ধ্বংস করা সম্ভব হতে পারে। এ বোমা ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের, ২০ ফুটের বেশি লম্বা এবং শক্ত কংক্রিট ভেদ করে ২০০ ফুট গভীরে আঘাত হানতে সক্ষম।

তবে শুধু আকাশপথের আঘাতেই কি মাটির নিচের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস হবে? লন্ডনের কিংস কলেজের সিকিউরিটি স্টাডিজের অধ্যাপক আন্দ্রেয়াস ক্রিগ বলেন, এমন গভীর বাঙ্কারে হামলা সফল করতে হলে ভূগর্ভে অভিযান চালাতে হবে বিশেষ বাহিনীকে। শুধু বোমা নয়, প্রয়োজন হতে পারে কমান্ডো ধাঁচের ‘গ্রাউন্ড অ্যাসল্ট’–এর।

২০১২ সালের কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিসের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, স্থাপনাগুলোর ওপর সরাসরি আঘাত হানা না গেলেও সেখানে ব্যবহৃত সেন্ট্রিফিউজগুলো অকার্যকর করে দিলে তাতেও পারমাণবিক কার্যক্রম থেমে যেতে পারে। কিন্তু এই যন্ত্রপাতিগুলো কতটা শক্তিশালী কাঠামোতে স্থাপন করা হয়েছে এবং সেগুলো বিস্ফোরণের চাপ সামলাতে কতটা প্রস্তুত—সেই প্রশ্নের উত্তর এখনও অস্পষ্ট।

সার্বিকভাবে বলা যায়, ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত যদি যুক্তরাষ্ট্রকে এই সংঘাতে সরাসরি নিয়ে আসে, তবে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক দৃশ্যপটে এক ভয়াবহ মোড় আসবে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলো যেমন ইরানের পাল্টা আঘাতের মুখে পড়বে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের মাত্রাও হতে পারে অনেক বিস্ফোরক।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত