পরিবারের দাবি নির্যাতন, পুলিশের ভাষ্য হৃদরোগ—কে বলছে সত্য?

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ২০ ২১:৫৭:০০
পরিবারের দাবি নির্যাতন, পুলিশের ভাষ্য হৃদরোগ—কে বলছে সত্য?

কুমিল্লার মুরাদনগরে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তারের পর পুলিশি হেফাজতে শেখ জুয়েল (৪৫) নামের এক বিএনপি কর্মীর মৃত্যু নিয়ে তৈরি হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও রহস্য। একদিকে পরিবারের অভিযোগ, ‘নির্যাতনেই মৃত্যু’; অন্যদিকে পুলিশের দাবি, ‘হৃদরোগেই প্রাণ হারান জুয়েল’।

পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে মাদক সেবনের সময় পাঁচজনকে আটক করে বাঙ্গরা বাজার থানা-পুলিশ। তাদের মধ্যে শেখ জুয়েল ছিলেন অন্যতম। রাত ৮টা ৫০ মিনিটে বুকে ব্যথা অনুভব করলে তাকে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তবে জুয়েলের স্বজনদের দাবি, গ্রেপ্তারের পর নির্যাতনের ফলে তার মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা এ ঘটনাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত হত্যা’ বলে দাবি করে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন। ছোট ভাই শেখ শাহ পরান বলেন, “আমার ভাই মাদকসেবী ছিলেন না। বরং পুলিশের নির্যাতনেই তার মৃত্যু হয়েছে। আমরা দ্রুত বিচার দাবি করছি।”

এ বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য একেবারেই ভিন্ন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল) এ কে এম কামরুজ্জামান বলেন, “তাকে মাদকের মামলায় আটক করা হয়। থানার সিসিটিভি ফুটেজে নির্যাতনের কোনো প্রমাণ নেই। বরং তার পরিবার থেকেই জানানো হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন তিনি।”

ঘটনার পর জুয়েলের মরদেহের সুরতহাল রিপোর্টে চোয়াল, বুক, পিঠ, কবজি ও পায়ের বিভিন্ন অংশে হালকা আঘাত ও আঁচড়ের চিহ্নের কথা উল্লেখ থাকলেও গুরুতর কোনো জখমের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে এই বিষয়টিই সন্দেহ ঘনীভূত করেছে।

ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন অপেক্ষা শুধুই চূড়ান্ত রিপোর্টের, যা এই মৃত্যু রহস্যের সত্যতা সামনে আনবে।

এই ঘটনায় ইতোমধ্যেই স্থানীয় বিএনপি কর্মীরা বিক্ষোভ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে নানা ‘টানাহেঁচড়া’। বিএনপি বলছে, জুয়েল তাদের কর্মী। অপরদিকে কিছু আওয়ামী লীগপন্থি দাবি করছেন, তিনি যুবলীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তবে পরিবারের বক্তব্য, “জুয়েল ছিলেন বিএনপির কর্মী, অন্য দলের সাথে তার সম্পর্ক নেই।”

এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাকিব হাছান খান বলেন, “সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে নিরপেক্ষভাবে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ধারণ করবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট।”

জেলা পুলিশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়ে দাবি করেছে, “মৃত্যু হয়েছে স্বাভাবিকভাবেই; পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

তবে পরিবারের ক্ষোভ, সাধারণ জনগণের প্রশ্ন ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব—সব মিলিয়ে এই মৃত্যু ঘটনার তদন্ত এখন কেবল একটি ময়নাতদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষায় নয়, বরং জনআস্থার পরীক্ষায়ও রয়েছে।

আশিক/নিউজ ডেস্ক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত