রিজিকে বরকত লাভের সহজ ও কার্যকর উপায়

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১৫ ০৯:১২:১৬
রিজিকে বরকত লাভের সহজ ও কার্যকর উপায়

ইসলামী জীবনচিন্তার মূল স্তম্ভগুলোর একটি হলো ‘রিজিক’ বা জীবনের সমস্ত প্রয়োজনীয় নিয়ামত। ইসলামে রিজিকের ধারণা অত্যন্ত বিস্তৃত; এটি শুধুমাত্র খাদ্য ও পানীয় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়, বরং অন্তর্ভুক্ত থাকে বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক সুরক্ষা এবং অন্যান্য জীবনের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা। এ সব উপকরণই মানুষের দৈনন্দিন জীবনের টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য এবং এগুলো আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একটি মহান দান।

কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন যে, পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী, তাদের সকল জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় রিজিকের দায়িত্ব তিনিই বহন করেন। সূরা হুদের ৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে:“জমিনে বিচরণকারী যত প্রাণী আছে, সবার রিজিক আল্লাহর ওপর।”এতে পরিষ্কার হয় যে, রিজিকের উৎস একমাত্র আল্লাহ, যিনি তাঁর বান্দাদের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রদান করেন। অন্য কোথাও থেকে রিজিকের আসল উৎস খোঁজা উচিত নয়।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াতে (সূরা শুরা: ১৯) আল্লাহ তায়ালা নিজেকে বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু ও মহাশক্তিমান হিসেবে বর্ণনা করেছেন:“আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি দয়ালু; তিনি যাকে ইচ্ছা রিজিক দান করেন। তিনি প্রবল পরাক্রমশালী।”এখানে বোঝা যায়, রিজিক প্রদানে আল্লাহর ইচ্ছা ও পরিকল্পনা মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তিনি সৃষ্ট জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখেন, কেউ অধিক রিজিক পায়, কেউ কম। এভাবেই মানবজীবনে সমতা ও বিভিন্নতা বজায় থাকে।

ইসলামে রিজিকের বণ্টনকে এক ধরনের পরীক্ষার মাধ্যম হিসেবে দেখা হয়। যাদের বেশি রিজিক দেয়া হয়, তাদেরকেও আল্লাহ নানা দিক দিয়ে পরীক্ষা করেন সম্পদ ও স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে মনের পরীক্ষা নেয়া হয়। অপরদিকে, যাদের রিজিক কম, তারা দারিদ্র্য ও কষ্টের মাধ্যমে পরীক্ষিত হন। এর ফলে জীবনের ভারসাম্য রক্ষা পায় এবং মানুষ নিজের দায়িত্ব ও আস্থা আল্লাহর উপর রাখতে শেখে।

রিজিকে সংকীর্ণ মনে হলে মুসলিমদের করণীয় হলো ধারাবাহিকভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা। নবী মুহাম্মদ (সা.) নিজে সর্বদা হালাল ও উত্তম রিজিকের জন্য প্রার্থনা করতেন এবং দারিদ্র্য থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইতেন। তাঁর সুন্নাহ অনুসরণ করে আমরা ও হালাল ও পবিত্র রিজিকের জন্য বেশি বেশি দোয়া করতে পারি। বিশেষত নিম্নোক্ত কোরআনীয় আয়াতটি উচ্চারিত ও স্মরণীয়:

اللَّهُ لَطِيفٌ بِعِبَادِهِ يَرْزُقُ مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيزُ(অর্থ: আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি দয়ালু; তিনি যাকে ইচ্ছা রিজিক দান করেন। তিনি প্রবল পরাক্রমশালী। — সূরা আশ-শুরা: ১৯)

এছাড়া নবীজির (সা.) থেকে বর্ণিত হালাল রিজিকের দোয়া, যা মুসলিমদের মধ্যে খুবই প্রসিদ্ধ:

اَللّهُمَّ اكْفِنِى بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَاغْنِنِى بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ(অর্থ: হে আল্লাহ! আপনার হালাল রিজিক আমার জন্য যথেষ্ট করুন, হারাম থেকে আমাকে রক্ষা করুন এবং আপনি ছাড়া অন্য কারও উপর আমার নির্ভরতা দূর করুন।)

এ দোয়া নবীজির (সা.) জীবনের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা থেকে উদ্ভূত, যা তার সঙ্গীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছিল। এক প্রবাদবাক্যে বর্ণিত, যখন একজন মুকাতিব অর্থ পরিশোধ করতে অক্ষম হয়েছিল, আলী (রা.) তাকে এই দোয়া শেখিয়েছিলেন। আলী (রা.) নিশ্চিত করেছিলেন, এই দোয়ার বরকতে আল্লাহর পক্ষ থেকে ঋণ মুক্তি ঘটবে, এমনকি যদি ঋণের পরিমাণ পর্বতের সমপরিমাণ হয়। (সুনানে তিরমিজি: ৩৫৬৩)

এই সব শিক্ষা থেকে স্পষ্ট হয় যে, রিজিক শুধু শারীরিক প্রয়োজন মেটানোর বিষয় নয়; এটি ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে আল্লাহর ওপর সম্পূর্ণ ভরসা ও নির্ভরতা অপরিহার্য। মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর নেয়ামতকে সঠিক ও হালাল পথে গ্রহণ করা, তার জন্য দোয়া ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং প্রাপ্ত রিজিকের মাধ্যমে সমাজে ভালো কাজ করা।

পরিশেষে, রিজিকের সঠিক ধারণা মানবজীবনের গভীরতা ও অর্থ উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। এটি জীবনের সব দিক থেকে আল্লাহর কৃপার স্বীকৃতি এবং মানব জীবনে দুঃখ-সুখ, পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে আল্লাহর দয়ার বহিঃপ্রকাশ। তাই, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে রিজিকের জন্য কৃতজ্ঞ থাকা, দোয়া করা এবং সতর্ক থাকা প্রয়োজন যেন আমরা হারাম থেকে দূরে থেকে হালাল পথে নিয়ামত লাভ করতে পারি।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত