প্রচণ্ড গরমে দাহ করছে দাম! ডাব এখন ২০০ টাকা

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১১ ১৪:১৫:১৮
প্রচণ্ড গরমে দাহ করছে দাম! ডাব এখন ২০০ টাকা

সত্য নিউজ:রাজধানীসহ সারাদেশে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের প্রেক্ষাপটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পানীয় ফল ডাবের চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে দামও। গরমে সাময়িক স্বস্তির আশায় ডাবের দিকে ঝুঁকছেন সাধারণ মানুষ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ডাবের বাজারে যে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে, তা নিয়ে ভোক্তাদের মধ্যে অসন্তোষও স্পষ্ট।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর, কারওয়ান বাজার, শেখেরটেক, বিমানবন্দর এলাকার হাজি ক্যাম্পসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ছোট আকারের ডাব বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়, মাঝারি আকারের ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় এবং বড় আকারের ডাবের দাম হাঁকানো হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। অথচ এক মাস আগেও এই ডাবগুলো মিলতো গড়ে ৭০–১২০ টাকার মধ্যে।

পাইকারি পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি, দায় চাপাচ্ছেন বিক্রেতারা

ডাব বিক্রেতারা বলছেন, এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে পাইকারি পর্যায়ে সরবরাহব্যবস্থার ব্যয় বৃদ্ধি ও সরবরাহ সংকট। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের বিক্রেতা জুলহাস আলম জানান, মাসখানেক আগেও প্রতি ১০০টি ডাব কিনতে লেগেছে ৮–১০ হাজার টাকা; এখন তা দাঁড়িয়েছে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পরিবহন খরচ, ফলের আকারভেদে ক্ষয়ক্ষতি ও মৌসুমি চাহিদার চাপ।

ডাব ব্যবসায়ী মিনু মণ্ডল, যিনি কারওয়ান বাজারে সাত বছর ধরে ব্যবসা করছেন, বলেন, “এখন দিনে ২০০ থেকে ২৫০টি ডাব বিক্রি করছি। কিন্তু চালানের টাকা তোলার জন্যই দাম বাড়াতে হচ্ছে। আমরা মুনাফা বাড়াইনি, শুধু ক্ষতি এড়াতে দাম একটু বাড়াতে হয়েছে।”

‘স্বস্তি’ চাই, ‘শাস্তি’ নয়: ভোক্তার অভিযোগ

ক্রেতারা অবশ্য বিক্রেতাদের এই যুক্তিকে পুরোপুরি মানতে রাজি নন। তাঁদের মতে, অতিরিক্ত গরমের সুযোগ নিয়ে খুচরা বাজারে ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। শেখেরটেক বাজারে কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী ইমতিয়াজ ফাহিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আগে সপ্তাহে তিন-চারটা ডাব খেতাম, এখন বাজেট ভেবে ভাবতে হচ্ছে। ১২০ টাকার নিচে কোনো ডাব নেই—এটা অনেকের নাগালের বাইরে।”

বাজার বিশ্লেষণ: সরবরাহ ও মৌসুম নির্ধারণ করছে দর

বর্তমানে রাজধানীর বাজারে ডাবের প্রধান উৎস হিসেবে বরিশাল, পিরোজপুর, খুলনা, নোয়াখালী ও ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে আসা সরবরাহ নির্ভর করছে স্থানীয় উৎপাদন ও সরবরাহ চেইনের ওপর। এপ্রিলের শেষ দিক থেকে শুরু হওয়া তাপপ্রবাহে চাহিদা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহব্যবস্থা চাপে পড়েছে। এতে পাইকারি পর্যায়ে ১০০টি ডাবে ২,০০০ থেকে ৩,০০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি খরচ যুক্ত হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে খুচরা দামে।

বিকল্প ফল ও বাজারচিত্র

ডাবের পাশাপাশি গরমে অন্য মৌসুমি ফল যেমন তালশাঁস, লিচু, জাম, কাঁঠাল ও আনারসের চাহিদাও বেড়েছে। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের তাল বিক্রেতা এনামুল জানান, “বড় আকারের কচি তাল বিক্রি করছি ৪০ টাকায়, ছোটগুলো ৩০ টাকায়। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০টি তাল বিক্রি হচ্ছে।” তবে এখনও রাজধানীর বেশির ভাগ বাজারে এসব গ্রীষ্মকালীন ফল পুরোপুরি উঠেনি। মৌসুমের শুরুতে থাকা ফলগুলোও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।

মৌসুমী নজরদারির ঘাটতি?

বিশ্লেষকদের মতে, বারবার মৌসুমী চাহিদার সময় এই মূল্যবৃদ্ধি হওয়া, বিশেষ করে ডাব ও তালের মতো মৌলিক তৃষ্ণা নিবারক পণ্যে, বাজার তদারকির ঘাটতিরই পরিচয় দেয়। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার পর্যবেক্ষণ বাড়ানো এবং ভোক্তাদের জন্য কিছু নির্ধারিত মূল্যসীমা নির্ধারণ করা যেতে পারে, এমনটি মত অর্থনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকদের।

বর্তমান পরিস্থিতিতে তীব্র গরমে ডাবের মতো স্বল্পমূল্যের স্বাস্থ্যকর পানীয় অনেকের জন্য আর 'সহজ প্রাপ্তি' নয়। বরং এটি এখন হয়ে উঠছে 'বিলাসিতা'। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গরমের সময়কাল বাড়ার আশঙ্কা থাকায় এ ধরনের মৌসুমি বাজার ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

প্রেস সচিবের বক্তব্যে বাকস্বাধীনতা, মব কালচার ও সাংবাদিকতার দ্বন্দ্ব: পাঠবিশ্লেষণ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সম্প্রতি এক দীর্ঘ বক্তব্যে দেশের সাংবাদিকতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সরকারের অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত... বিস্তারিত