বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ তলানিতে

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ১২ ১৭:০৩:০৩
বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ তলানিতে

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতা এখন গুরুতর এক সংকটকাল অতিক্রম করছে। ডলার ও জ্বালানি সংকট, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উৎকণ্ঠা, সর্বোপরি ঋণের উচ্চ সুদহার দেশের বেসরকারি খাতে এক প্রকার স্থবিরতা তৈরি করেছে। এই নীতিগত ও আর্থিক অচলাবস্থার প্রভাবে ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা-বিনিয়োগ, শিল্প উৎপাদন, কর্মসংস্থান এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭.৫০ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় ২.৪০ শতাংশ কম। আগের মাসগুলোতেও প্রবৃদ্ধির হার ছিল নিম্নমুখী। এমন প্রবণতা ২০২১ সালের মে মাসের পর আবার দেখা যাচ্ছে, যা বিনিয়োগ স্থবিরতার এক সুস্পষ্ট প্রমাণ।

ব্যবসা সম্প্রসারণ ও নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। বেসরকারি খাতে ঋণ সংকোচনের কারণে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কমছে রপ্তানিযোগ্য পণ্য উৎপাদন, কমছে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি (২৭.৪৬% হ্রাস)। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে, চাকরি হারাচ্ছেন অসংখ্য শ্রমিক।

বর্তমানে ব্যাংক ঋণের সুদহার ১৪–১৬ শতাংশের মধ্যে। বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কড়াকড়ি মুদ্রানীতির অংশ হিসেবে নীতিসুদহার ১০ শতাংশে রেখেছে। এতে বিনিয়োগকারীরা উৎসাহ হারাচ্ছেন এবং ব্যবসা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে উঠছে।

বেসরকারি খাতে স্থবিরতার আরেকটি বড় কারণ হলো রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে বিনিয়োগকারীরা ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ অবস্থানে রয়েছেন। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু মনে করেন, স্থায়ী ও গ্রহণযোগ্য সরকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া অর্থনৈতিক আস্থা পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৫% বেশি। এতে বেসরকারি খাতে অর্থপ্রবাহ সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা বেড়েছে। ব্যাংকিং খাতে অর্থের ঘাটতি তৈরি হলে শিল্প-বিনিয়োগে বড় বাধা দেখা দেবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), বিসিআই ও অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, অর্থনীতিকে সচল রাখতে প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, নীতির ধারাবাহিকতা, স্বচ্ছ আর্থিক খাত এবং যৌক্তিক সুদহার। একই সঙ্গে অবকাঠামোগত সহায়তা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে। ব্যবসা-বিনিয়োগ বন্ধ থাকলে কর্মসংস্থান সঙ্কুচিত হবে, দারিদ্র্য বাড়বে এবং সামাজিক স্থিতিশীলতাও বিঘ্নিত হতে পারে। সময়মতো কার্যকর নীতিগত সিদ্ধান্ত না নিলে অর্থনীতির গতি আরও ধীর হয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত