সারা দেশে ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তার ২,২৭১ জন

সত্য নিউজ:দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পুলিশের বিশেষ অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টায় ২,২৭১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ১,১১৮ জন বিভিন্ন মামলার এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি, অন্যদিকে ১,১৫৩ জন অন্যান্য অপরাধে জড়িত ব্যক্তি হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মাদক সেবন, চুরি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, সহিংসতা এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ১,১৫৩ জন রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপের প্রমাণ পাওয়া গেছে। পুলিশের মতে, এই অভিযানগুলি অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলিতে বিশেষভাবে কার্যকরী হয়েছে এবং এটি অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
পুলিশ বাহিনী জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা বিভিন্ন সময়ের মধ্যে আদালতে পেশ করা হবে, এবং তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে, পুলিশ জনগণের নিরাপত্তা সুরক্ষায় তাদের কার্যক্রম আরও তীব্র করার অঙ্গীকার করেছে।
খুনের পরিসংখ্যানে বৃদ্ধি: দেরিতে দায়ের হওয়া মামলার প্রতিফলন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১৩ মাসের অপরাধের চিত্র আজ প্রকাশ করেছে সরকার। এতে দেখা গেছে, এ সময়ে খুনের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি মনে হলেও এর বড় অংশ আসলে পূর্ববর্তী ১৬ বছরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, যেগুলোর মামলা ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের’ পর দায়ের করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, অন্তত ১,১৩০টি খুনের মামলা, যা শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত হয়েছিল, সেগুলো দীর্ঘদিন গোপন রাখা হয় এবং পুলিশের নিরুৎসাহের কারণে মামলা করা যায়নি। কিন্তু শাসন পরিবর্তনের পর এসব মামলা আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে নথিভুক্ত হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২০২৫ সালের অপরাধের বিভিন্ন সূচক কিছুটা উঁচু মনে হলেও এটি নতুন কোনো সহিংসতার ঢেউ নয়; বরং দেরিতে বিচারপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া। এখন সাধারণ নাগরিকরা রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ভয়ে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন না, ফলে তারা অপরাধের মামলা করতে পারছেন নির্ভয়ে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ডাকাতির ঘটনা ২০২৪ সালের ১,৪০৫ থেকে ২০২৫ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১,৩১৪-তে। তবে ২০২৩ সালের আগের সময়ের তুলনায় এটি এখনো বেশি। এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক হলো—পুলিশি হস্তক্ষেপমুক্ত পরিবেশে এখন সব ডাকাতির মামলা নিবন্ধিত হচ্ছে এবং নাগরিকরা আরও বেশি সচেতন হয়ে অভিযোগ জানাচ্ছেন।
এছাড়া, দ্রুত বিচার আইনে অপরাধের মামলা ২০২৪ সালের ১,২২৬ থেকে ২০২৫ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৬৫১-এ। একই সময়ে দাঙ্গা মামলার সংখ্যা ১২৫ থেকে কমে ৫৯-এ এবং চুরির মামলা ৮,৬৫২ থেকে নেমে এসেছে ৬,৩৫৪-এ।
প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে বিবৃতিতে বলা হয়, “যদিও খুনের সংখ্যা বেশি মনে হচ্ছে, বাস্তবে এটি নতুন সহিংসতা নয়, বরং পূর্বের দমন করা মামলার প্রকাশ।” অনেক হত্যাকাণ্ডের মামলা এমনকি ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পুরোনো সময়ের।
সরকারের দাবি, এখন ভুক্তভোগীরা রাজনৈতিক সন্ত্রাসীদের ভয়ে ভয় পাচ্ছেন না। পুলিশও আর মামলা নিতে বাধা দিচ্ছে না। ফলে খুনের মতো গুরুতর অপরাধের তথ্য সামনে আসছে, আবার সাধারণ অপরাধ যেমন চুরি, ডাকাতি ও দাঙ্গার ঘটনা কমছে।
এভাবে অপরাধের চিত্র নতুন বাস্তবতাকে তুলে ধরছে—একদিকে দেরিতে হলেও ন্যায়বিচারের পথ উন্মুক্ত হচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
-সুত্রঃবি এস এস
চাকরির প্রলোভনে কোটি টাকা হাতিয়ে ৩ প্রতারক গ্রেপ্তার
অনলাইনে ভুয়া চাকরির প্রলোভন এবং টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকার ধানমন্ডি, ঠাকুরগাঁও সীমান্তঘেঁষা একটি গ্রাম এবং দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে সমন্বিত অভিযানে তাদের আটক করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো চক্রের মূলহোতা আকাশ (২২), রাশাদ (২৮) এবং তাদের সহযোগী আসাদ (৩০)। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এই প্রতারক চক্র সাধারণ মানুষকে ভুয়া খণ্ডকালীন চাকরির প্রলোভন দিতো। পাশাপাশি টেলিগ্রাম অ্যাপে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়ে অল্প সময়ে কয়েকগুণ মুনাফা দেওয়ার আশ্বাস দেখাতো। তাদের টোপে পড়ে অনেকেই লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে, আর এর মাধ্যমেই চক্রটি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। সিআইডির ধারণা, এই চক্রের সঙ্গে দেশি-বিদেশি আরও অনেক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে। গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত অ্যান্ড্রয়েড ফোন ও ছদ্মনামে নিবন্ধিত একাধিক সিমকার্ড জব্দ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় জানা গেছে, গত ২৬ মার্চ ঢাকার ডিএমপির ক্যান্টনমেন্ট থানায় প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সেই মামলার সূত্র ধরেই এই অভিযানে চক্রের মূল সদস্যদের আটক করা সম্ভব হয়েছে।
-রফিক
স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বিল্লাল বহিষ্কার, মালিবাগ হামলায় মামলা
রাজধানীর মালিবাগে বুধবার দিবাগত রাতে সোহাগ পরিবহনের মালিকের ভাইসহ অন্তত সাতজনকে কুপিয়ে গুরুতরভাবে আহত করেছে একদল দুর্বৃত্ত। হামলাকারীরা এ সময় সোহাগ পরিবহনের কার্যালয় ও মালিকের বাসায় ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বিল্লাল হোসেনকে অভিযুক্ত করে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ঘটনার পর ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রাত ১১টা ৭ মিনিটে কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দুই ব্যক্তির দিকে কয়েকজন চাপাতি, ছুরি ও রড নিয়ে হামলা চালায়। হামলাকারীদের মধ্যে কেউ কেউ হাততালি দিয়ে উল্লাস করছিলেন এবং পরে তারা কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে কর্মচারীদের মারধর ও টিকিট বিক্রির অর্থ লুট করেন।
সোহাগ পরিবহনের মালিক মো. ফারুক তালুকদার বলেন, সেদিন রাতে একটি বাস কার্যালয়ের সামনে পৌঁছালে যাত্রীরা নামছিলেন। এ সময় দুই ব্যক্তি যাত্রী নামার পথেই ধূমপান করছিলেন। কর্মীরা তাঁদের সরে যেতে বললে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রায় ৫০ জন অস্ত্রধারী এসে হামলা চালায়। এতে তাঁর ভাই আলী হাসান তালুকদারসহ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। তিনি অভিযোগ করেন, হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন রমনা থানার ১৯ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক বিল্লাল হোসেন।
ঘটনার পর স্বেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি জহির উদ্দিন জানান, বিল্লালকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ঘটনায় সোহাগ গ্রুপের নিরাপত্তা কর্মকর্তা দেওয়ান মো. আল আমিন বাদী হয়ে রমনা থানায় মামলা করেন। মামলায় বিল্লালসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং আরও ১৮-২০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি রাখা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়, হামলাকারীরা গ্যারেজ ও নিরাপত্তা কক্ষ ভাঙচুর করে এবং আলী হাসান তালুকদার, তাঁর চালক মাসুদ, কর্মী হাসান তপন, ফরহাদ হোসেন, নাইমুর রহমান আদিব ও মাসুদকে কুপিয়ে আহত করে। এছাড়া প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি করে এবং ১৭ হাজার ৫৭০ টাকা লুট করে নেয়।
রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম ফারুক জানান, এজাহারভুক্ত আসামি পারভেজ এবং ভিডিও দেখে শনাক্তকৃত জয়নালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, হামলা ও ভাঙচুরে জড়িতদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন বিবৃতি দিয়ে এই হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
-রফিক
মেঘনায় রুদ্ধশ্বাস বন্দুকযুদ্ধ: অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে হামলা
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলে সদ্য চালু হওয়া জামালপুর অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যদের ওপর নৌ ডাকাত দলের ভয়াবহ হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার বিকেল সোয়া পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা পর্যন্ত মেঘনা নদীতে প্রায় আধঘণ্টা ধরে চলে পুলিশের সঙ্গে নৌ ডাকাতদের বন্দুকযুদ্ধ। এ সময় ডাকাতরা পুলিশ ক্যাম্পে একের পর এক গুলি ও ককটেল ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, তবে পাল্টা প্রতিরোধে পুলিশও গুলি চালায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উভয় পক্ষ মিলিয়ে শতাধিক গুলি বিনিময় হয়েছে।
আতঙ্কে নদীবেষ্টিত গ্রামাঞ্চল
স্থানীয় বাসিন্দা উজ্জ্বল দেওয়ান বলেন, বিকেলের দিকেই প্রচণ্ড গুলির শব্দে তার ঘুম ভেঙে যায়। ঘর থেকে বের হয়ে তিনি দেখেন, পুলিশ ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় ট্রলারযোগে আসা ডাকাতরা পুলিশের দিকে গুলি চালাচ্ছে। এতে পুরো গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, সাধারণ মানুষ ভয়ে ঘরে অবস্থান করতে শুরু করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ডাকাত নয়ন, পিয়াস ও রিপনের নেতৃত্বে ৩০–৪০ জন সদস্য ট্রলার নিয়ে নদীতে মহড়া দিচ্ছিল। পুলিশ প্রস্তুতি নেওয়ার খবর পেয়ে তারা প্রথমে আড়াল নেয়, পরে অস্ত্র, ককটেল ও হেলমেট পরে ক্যাম্পের ওপর সরাসরি হামলা চালায়।
পুলিশের প্রতিরোধ ও পাল্টা গুলি
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ডাকাতরা থানা থেকে লুট করা দেশি-বিদেশি অস্ত্র ব্যবহার করেছে। ডাকাত দলের দিক থেকে প্রায় ১০০ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়, পুলিশও অন্তত ২০ রাউন্ড পাল্টা গুলি চালায়। আধাঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা সংঘর্ষে শেষ পর্যন্ত টিকতে না পেরে ডাকাতরা মতলবের দিকে পালিয়ে যায়। সৌভাগ্যবশত কোনো পুলিশ সদস্য আহত হননি। তবে ডাকাতদের কেউ আহত হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।
দীর্ঘদিনের সন্ত্রাসের ইতিহাস
স্থানীয়রা জানান, গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের মেঘনা নদী ও আশপাশের শাখা নদীতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ বালুমহাল দখল, নৌযানে চাঁদাবাজি ও প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের ওপর হামলা চালিয়ে আসছে নয়ন, পিয়াস, রিপন ও লালু বাহিনী। তাদের তাণ্ডবে গত এক বছরে বাবলা নামের এক প্রতিদ্বন্দ্বী ডাকাত নিহত হন, আর বালু উত্তোলনে বাধা দেওয়ায় আবদুল মান্নান ও হৃদয় আহমেদ নামে দুজন গ্রামবাসী গুলিতে প্রাণ হারান। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই গত শুক্রবার জামালপুর গ্রামে নতুন পুলিশ ক্যাম্প চালু করা হয়।
পুলিশের বার্তা: ভয় নেই, সন্ত্রাসীরা দমন হবে
ঘটনার সময় ক্যাম্পে থাকা গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার আলম আজাদ জানান, ডাকাতরা সুসংগঠিতভাবে হামলা চালিয়েছে। তবে পুলিশ পিছু হটেনি এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহম্মদ শামসুল আলম সরকার বলেন, ক্যাম্প চালুর পর নৌ ডাকাতরা আর স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারছে না। এ কারণেই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। তার ভাষায়, “পুলিশ জনগণের পাশে রয়েছে। ডাকাত–সন্ত্রাসীরা যতই শক্তিশালী হোক, তাদের নির্মূল করে গুয়াগাছিয়াকে অপরাধমুক্ত করা হবে।”
মানুষের আতঙ্ক ও ভবিষ্যৎ শঙ্কা
স্থানীয় অনেক বাসিন্দা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে ডাকাত বাহিনীর ভয়ে শতাধিক পরিবার গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে ছিল। পুলিশ ক্যাম্প চালুর পর ধীরে ধীরে মানুষ গ্রামে ফিরতে শুরু করে। কিন্তু হামলার ঘটনায় নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দাবি, পুলিশকে আরও শক্তিশালী ও স্থায়ী ক্যাম্প গড়ে তুলতে হবে, নাহলে যে কোনো সময় ডাকাতরা আবারও ভয়াবহ হামলা চালাতে পারে।
থানায় ঢুকে এএসআইকে ছুরিকাঘাত, পরদিন মিলল যুবকের লাশ
গাইবান্ধার সাঘাটা থানায় এক অজ্ঞাত যুবকের আচরণ ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাতে থানার ভেতরে ঢুকে পুলিশের এক সহকারী উপপরিদর্শককে (এএসআই) ছুরিকাঘাত করার পর পালিয়ে যাওয়া ওই যুবকের মরদেহ পরদিন সকালে কাছাকাছি বিদ্যালয়ের পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে এক যুবক আচমকাই সাঘাটা থানার মূল ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। তখন ডিউটিতে থাকা কনস্টেবল সেরাজুল ইসলামের কাছ থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। বাধা দিতে গেলে এএসআই মহসিন আলীর ওপর ছুরি দিয়ে আক্রমণ চালান তিনি। এতে গুরুতর আহত হন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। ঘটনার পর হামলাকারী দৌঁড়ে থানার পাশের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুরে ঝাঁপ দেন এবং সেখানেই নিখোঁজ হয়ে যান।
রাতভর অভিযান চালানোর পর শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল কচুরিপানায় ঢাকা পুকুরের নিচ থেকে যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে। এ বিষয়ে গাইবান্ধা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, “ঘটনার পর থেকেই উদ্ধার কাজ শুরু করা হয়। ধারণা করছি, মরদেহ কচুরিপানার নিচে আটকে ছিল।”
পরে মরদেহটি সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাদশা আলম জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, যুবকটি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। মরদেহের পকেট থেকে গাইবান্ধা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের একটি প্রবেশপত্র পাওয়া গেছে। সেখানকার তথ্য অনুযায়ী, তার নাম সাজু মিয়া, পিতা দুলাল মিয়া ও মাতা রিক্তা বেগম। প্রবেশপত্রে থাকা ছবি ও তথ্য যাচাই করে পরিচয় নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে।
এএসআই মহসিন আলীর আঘাত গুরুতর না হলেও তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ ঘটনাটিকে বিচ্ছিন্ন নাকি পূর্বপরিকল্পিত তা খতিয়ে দেখছে। পুরো ঘটনার পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য বা উসকানি আছে কি না, সেটিও তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে।
-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক
গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের হত্যার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা, লাইভে এসে নির্দেশনা দেন সাদ্দাম!
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘১৬ জুলাই: মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি পণ্ড করতে পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত হয় সন্ত্রাসী হামলা। এনসিপির অভিযোগ, ওই হামলার পেছনে ছিল ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশনা। জানা গেছে, ভারত থেকে মোবাইল ফোনে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেন শেখ হাসিনা এবং এনসিপির শীর্ষ নেতাদের হত্যা করে দলটির গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ধ্বংস করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তার পাঠানো একাধিক অডিও বার্তাও এই ঘটনার প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।
ভয়াবহ অডিও বার্তায় শেখ হাসিনার কণ্ঠ
যুগান্তরের হাতে থাকা একটি অডিও বার্তায় শোনা যায়, শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালকে বলেন, “ওরা নাকি গোপালগঞ্জে যাচ্ছে। টুঙ্গিপাড়ায় আমার বাবার কবর ভেঙে ফেলার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে ৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এবার টুঙ্গিপাড়ায় হামলা চালাবে। তোমরা বসে আছ কেন? প্রতিহত করো। ওদের কাউকে যেন গোপালগঞ্জের মাটি থেকে জীবিত ফিরে যেতে না দেওয়া হয়।”
আরেকটি অডিও বার্তায় শেখ হাসিনাকে গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লাকে বলতে শোনা যায়, “ওরা আশপাশের জেলা থেকে লোক জড়ো করছে। পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনা, ফরিদপুর—সব দিক থেকে ঢুকবে গোপালগঞ্জে। একটাই নির্দেশ—প্রতিহত করো। যদি টুঙ্গিপাড়ায় ঢুকেই পড়ে, একজনও যেন জীবিত না ফিরে যায়।”
হামলার বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে সহিংসতা
এই অডিও বার্তাগুলোর পরদিনই, ১৭ জুলাই সকালে গোপালগঞ্জ পৌর পার্কে এনসিপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশের দিন আতাউর রহমান পিয়ালের নেতৃত্বে পুলিশের গাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন লাগানো হয়। একইদিন শহরের মোহাম্মদপাড়ায় এনসিপি নেতাদের গাড়িবহরে গুলি ও বোমা হামলাও চালানো হয়।
ভারতে ও লন্ডনে থাকা নেতাদের সমন্বয় ও উসকানি
এই হামলার পেছনে শুধু ছাত্রলীগ নয়, জড়িত ছিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। অভিযোগ রয়েছে, কলকাতা থেকে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ফুপাত ভাই ও গোপালগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম হামলাকারীদের সমন্বয় করেন। লন্ডন থেকে তদারকি করেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান এবং শরীয়তপুর-১ এর সাবেক সাংসদ ইকবাল হোসেন অপু। গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল আলম কাজল মাঠপর্যায়ের তৎপরতা পরিচালনা করেন।
লাইভে এসে নির্দেশনা দেন সাদ্দাম
কলকাতায় আত্মগোপনে থাকানিষিদ্ধঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ফেসবুক লাইভে এসে সরাসরি বলেন, “ওদের প্রতিহত করতে হবে, কাউকে ছেড়ে দিও না।” ওই লাইভ থেকেই এনসিপির কর্মসূচিতে হামলার নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
নারীদের সংগঠনে জড়িত মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী
এনসিপির অভিযোগ অনুযায়ী, কলকাতায় আত্মগোপনে থাকা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী ও শফিকুল আলম কাজলের স্ত্রী ইয়াসমিন আলম স্থানীয় নারী নেত্রীদের সংঘবদ্ধ করে এনসিপি কর্মীদের ওপর হামলায় অংশগ্রহণ করান। পরে পুলিশ তাকে আটক করে।
গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি ইতোমধ্যেই দেশজুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৭ জুলাই গোপালগঞ্জে সমাবেশ ও রোডমার্চের আয়োজন করে এনসিপি। গোপালগঞ্জে কর্মসূচি শেষে দলটির শরীয়তপুরের জাজিরায় যাওয়ার কথা ছিল।
শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো এই পদযাত্রাকে ঠেকাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এনসিপির ভাষ্য অনুযায়ী, ‘গোপালগঞ্জে ঢুকতে দেওয়া হলেও, বের হতে দেওয়া হবে না’—এই ছিল শেখ হাসিনা ও তার ঘনিষ্ঠ মহলের নির্দেশনা। এবং সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা, উসকানি ও হামলা—সবই সমন্বিতভাবে চালানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় নারীর দুর্ধর্ষ চুরি, মার্কিন ভিসা বাতিলের হুঁশিয়ারি
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় রাজ্যের একটি ডেইলি শপিং স্টোর থেকে এক ভারতীয় নারী প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার টাকার (১৩০০ মার্কিন ডলার) পণ্য চুরি করে পালানোর সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছেন। এ ঘটনার পর মার্কিন দূতাবাস ভারতসহ বিদেশি ভ্রমণকারীদের জন্য একটি ভিসা সংক্রান্ত সতর্কতা জারি করেছে, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—চুরি, ডাকাতি কিংবা সহিংসতায় জড়ালে ভিসা বাতিল বা ভবিষ্যতে ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা হারানোর ঝুঁকি রয়েছে।
ঘটনার বিবরণ
এনডিটিভি-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে গত ১ মে, ইলিনয়ের একটি সুপারশপে। অভিযুক্ত ভারতীয় নারী দোকানে প্রবেশ করে সাত ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিভিন্ন পণ্য বাছাই করছিলেন। একপর্যায়ে তিনি দোকানের পশ্চিম গেট দিয়ে কোনো মূল্য পরিশোধ না করেই বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
দোকানের এক কর্মচারী বিষয়টি লক্ষ্য করে তাকে থামান এবং চ্যালেঞ্জ করেন। ঘটনাটি ভাইরাল হয়ে পড়ে এবং পরে স্থানীয় পুলিশের বডিক্যাম ফুটেজও প্রকাশ্যে আসে। ফুটেজে দেখা যায়, কর্মচারী বলছেন, “এই মহিলা সাত ঘণ্টা ধরে দোকানে ঘুরছিলেন, জিনিস তুলছিলেন, ফোনে ব্যস্ত ছিলেন, কিন্তু কিছু না দিয়েই বেরিয়ে যাচ্ছিলেন।”
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারী দাবি করেন, তিনি পণ্যের দাম পরিশোধ করতে চেয়েছিলেন। তবে তখনই পুলিশ তাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে থানায় নিয়ে যায়। এক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে প্রশ্ন করেন, “আপনার দেশে কি চুরি বৈধ? আমার তো মনে হয় না।”
যদিও তাকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করা হয়নি, তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ গঠন করা হয়েছে এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মার্কিন দূতাবাসের হুঁশিয়ারি
এই ঘটনার পর ভারতের মার্কিন দূতাবাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)–এ একটি সতর্কবার্তা প্রকাশ করে। বার্তায় বলা হয়, “যুক্তরাষ্ট্রে হামলা, চুরি বা ডাকাতির মতো অপরাধ শুধু আইনি ঝামেলায় ফেলবে না, বরং এতে আপনার ভিসা বাতিল হতে পারে এবং ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের যোগ্যতা হারাতে পারেন।”
দূতাবাস আরও বলেছে, “মার্কিন নাগরিকেরা আইন মেনে চলে এবং আশা করা হয়, বিদেশি দর্শনার্থীরাও একইভাবে আইনশৃঙ্খলা মেনে চলবেন।”
ভিসা ও অভিবাসন ঝুঁকি
যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, চুরি, জালিয়াতি, ডাকাতি বা বেআইনি প্রবেশের মতো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে তা শুধু কারাদণ্ডেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং বিদেশি নাগরিকের অভিবাসন বা পর্যটন ভিসা বাতিল হতে পারে এবং ভবিষ্যতে পুনঃভিসা প্রাপ্তিও অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে।
এই ঘটনায় মার্কিন দূতাবাসের সতর্কতা মূলত একটি কড়া বার্তা—যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বা সেখানে যেতে ইচ্ছুক বিদেশি নাগরিকদের জন্য। বিশেষ করে ভারতীয় শিক্ষার্থী, পর্যটক ও অভিবাসন প্রত্যাশীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত সতর্কসংকেত।
বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক ভ্রমণে আইন লঙ্ঘনের ঘটনা শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নাগরিকদের ওপর আস্থার প্রশ্নও তৈরি করে। তাই ভিসা পাওয়া বা বিদেশে সম্মানের সঙ্গে অবস্থানের জন্য সুনাগরিকসুলভ আচরণ অপরিহার্য।
মিটফোর্ডে ভাঙারি ব্যবসায়ীর হত্যাকাণ্ডে নতুন মোড়
পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) কে পিটিয়ে, ইট-পাথর ছুঁড়ে এবং নির্মম ভাবে হত্যার ঘটনাটি শুধু একটি নৃশংস হত্যা না, বরং এলাকার ব্যবসায়িক স্বার্থ ও চাঁদাবাজির এক ভয়াবহ সংকটের প্রতিফলন। হত্যাকাণ্ডের সূত্র ধরে জানা যায়, সোহাগ দীর্ঘদিন ধরে মহিন নামের এক চাঁদাবাজ গ্রুপের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। মহিন গ্রুপ মাসিক ফিক্সড চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে মিটফোর্ড এলাকা ও আশপাশের ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। সোহাগের দোকান ‘সোহানা মেটাল’ ছিল ভাঙারি ব্যবসার জন্য সুপরিচিত।
তবে সোহাগ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং মহিন গ্রুপের নির্দিষ্ট চাঁদার হার মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ কারণে দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব সাময়িক মিটমাট হয়, কিন্তু মহিন গ্রুপ সোহাগকে বাজার থেকে সরিয়ে দিতে পরিকল্পনা শুরু করে।
৭ জুলাই সন্ধ্যায়, সোহাগ দোকানে আসার মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে সাতটি মোটরসাইকেলে প্রায় ১৯ জন হামলাকারী রজনী বোস লেনে প্রবেশ করে এবং সোহাগকে ধরে নিয়ে যেয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের গেটের সামনে নির্মমভাবে ইট-পাথর ও অন্যান্য কঠিন বস্তু দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের পর মৃতদেহ টেনে এনে গেটের বাইরে উল্লাস করা হয়, যা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
তদন্তে জানা গেছে, মহিন ও টিটন নামে দুই খুনির মধ্যে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বও ছিল সোহাগের সঙ্গে। সোহাগ পুরোনো সময়ে তাদের মারধর করায় তাদের মধ্যে শত্রুতার সূত্রপাত হয়। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে রাজনীতির প্রভাবও রয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করছে। হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের যুবদল ও অন্য গোষ্ঠীর লোকজন রয়েছে।
এ ঘটনার পর থেকে মিটফোর্ড এলাকার ভাঙারি ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ভয়ে ভুগছেন। মহিন গ্রুপের মতো আরও কয়েকটি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছে। গ্রেফতার হওয়া মহিন গ্রুপের অনুসারীরা এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্কের কারণ। অনেক ব্যবসায়ী আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, মহিন গ্রুপের কেউ গ্রেফতার হলেও, অন্য গোষ্ঠীগুলো প্রতিশোধ নিতে পারে।
পুলিশ এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেফতার করেছে, যাদের মধ্যে একজন স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তদন্ত চলছে বাকি আসামিদের ধরতে। ডিবির যুগ্ম কমিশনার জানিয়েছেন, ডিবি মামলাটি ছায়া তদন্ত করছে এবং দ্রুত আসামিদের আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ করছে।
এদিকে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছিলেন, হত্যাকাণ্ড দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। একই সাথে সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়েছে, যাতে এই হত্যা মামলার তদন্তের জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিচারিক কমিশন গঠন করার দাবি করা হয়েছে, যাতে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ তদন্ত নিশ্চিত করা যায়।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ বলেছেন, হাসপাতালের সামনে এই ঘটনার সময় আনসার সদস্যরা দায়িত্বে ছিলেন না এবং তাদের পক্ষ থেকে কোনো অবহেলা ঘটেনি।
স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স চালক ও ব্যবসায়ীরা জানান, মহিন গ্রুপ মিটফোর্ডে অ্যাম্বুলেন্স চালকদের কাছ থেকে মাসে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চাঁদা নিত এবং যারা তাদের কথা না শুনত তাদের ওপর হামলা চালানো হত। অনেকেই চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের ভয়ে ব্যবসায় নাম রাখা থেকে বিরত থাকছেন।
মোটের উপর, এই ঘটনা মিটফোর্ড এলাকা এবং পুরান ঢাকার অপরাধ, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির সমস্যা কতটা গভীর এবং জটিল তা প্রমাণ করে। সুষ্ঠু বিচার ও কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া এ ধরনের নৃশংসতা বন্ধ হওয়া কঠিন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ী সমাজ দ্রুত কার্যকর ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন, যাতে পুনরায় এমন অবস্থা সৃষ্টি না হয় এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
অনলাইন ক্লাসে ‘অশ্লীলতা’র অভিযোগে থানায় অভিভাবকের অভিযোগ
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অনলাইন প্রস্তুতির এক কোচিং প্ল্যাটফর্মে লাইভ ক্লাসে শিক্ষক ও শিক্ষিকার ‘অশালীন আচরণের’ অভিযোগে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক অভিভাবক।
বুধবার (৯ জুলাই) রাজধানীর ভাটারা থানায় অভিযোগটি করেন আশরাফ বিজয় নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, “আমি একজন অভিভাবক হিসেবে শিক্ষার পরিবেশে এমন অশ্লীলতা মেনে নিতে পারছি না।”
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ৮ জুলাই রাত ১২টার দিকে অনলাইন লাইভ ক্লাস চলাকালে এক নারী ও এক পুরুষ শিক্ষক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে “অসামাজিক কার্যকলাপ” করেন। এই আচরণ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে আঘাত করেছে এবং শিক্ষকতার পেশাগত মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে বলেও অভিযোগে বলা হয়।
ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যায়, কোচিং সেন্টারের একজন শিক্ষিকা ও শিক্ষক লাইভ ক্লাস চলাকালে ঘনিষ্ঠ আচরণ করছেন এবং পরস্পরকে চুম্বন করছেন। ভিডিওটি অন্বেষণ কোচিং সেন্টারের ইউটিউব চ্যানেল থেকে নেওয়া বলে অভিযোগকারী দাবি করেছেন।
এই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও সচেতন মহলের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিযোগকারী আশরাফ বিজয় বলেন, “এই ধরনের কনটেন্ট শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর। আমি ওই দুই শিক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা চাই।”
সামাজিক মাধ্যমে অনেক অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীও শিক্ষার পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
সত্য প্রতিবেদন/আশিক
পাঠকের মতামত:
- ইইউ সংলাপ: ঢাকার অগ্রাধিকার বাণিজ্য, ইউরোপের নজর অনিয়মিত অভিবাসনে
- খুনের পরিসংখ্যানে বৃদ্ধি: দেরিতে দায়ের হওয়া মামলার প্রতিফলন
- নেপালে অস্থিরতা: বাংলাদেশি নাগরিকদের ঘরে থাকার নির্দেশ দূতাবাসের
- বিক্ষোভে রক্তক্ষয়, নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ
- ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে, নির্বাচন স্বচ্ছ দাবি ঢাবি ভিসির
- টিএসসি কেন্দ্রে তিন ঘণ্টায় ৩৫% ভোট
- অল্প সময়েই ছয় দফা বৃদ্ধি: স্বর্ণের বাজারে আগুন
- আবারও যুদ্ধের প্রস্তুতিতে ইরান: সেনাপ্রধান হাতামির হুঁশিয়ারি
- থাকসিন শিনাওত্রার কারাদণ্ড: রাজনৈতিক বংশপরিচয়ের পতনের আভাস
- বার্মিংহামে বলিউডের ‘ওজিজি’ রানী: কারিনা কাপুর খানের সিলভার শাড়ি
- ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস: পোশাক নয়, স্টাইলের প্রদর্শনী
- বলিউডে বহিরাগতদের প্রতি ক্ষোভ, ‘নেপো বেবি’দের পক্ষ নিলেন তনিশা মুখার্জি
- মেক্সিকোতে ভয়াবহ ট্রেন-বাস সংঘর্ষে ১০ নিহত, আহত ৪১
- ডাকসু নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য
- বিদায় নিশ্চিত, সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে সম্মান রক্ষার লড়াইয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩
- উয়েফার নিয়ম মানতে প্রস্তুত হ্যারি কেইন ও দল
- পরিচালকের শেয়ার কেনা সম্পন্ন
- যে ভোট রাতেই করা যায়, সেটা দিনে টেনে রাখা কেন?- ফারুকী
- মহাবিশ্বে নতুন দৈত্য কৃষ্ণগহ্বরের সন্ধান
- বার্নি স্যান্ডার্সের সঙ্গে জোহরান মামদানি, নিউইয়র্ক মেয়র নির্বাচনে প্রগতিশীল ঢেউ
- গাজা অভিমুখী শান্তিপূর্ণ মিশনে হামলা
- প্রথমবার আস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রী বিদায়, ইতিহাস গড়ল ফ্রান্স
- জাতিসংঘ ক্ষুব্ধ, স্পেন অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি—গাজায় ইসরাইলের ধ্বংসযজ্ঞ তীব্রতর
- পাকিস্তান–চীন যৌথ অনুসন্ধানে নতুন দিগন্ত
- রজনীকান্ত–কমল হাসান আবারও একসঙ্গে বড় পর্দায়
- জাকসু নির্বাচন: প্রার্থীদের জন্য আজ বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্ট
- ভারত-নেপাল সীমান্তে সতর্কতা জারি
- ডাকসু নির্বাচন: ৪৭১ প্রার্থী, ৩৯ হাজার ভোটার, টানটান নিরাপত্তায় উৎসবমুখর ভোটযুদ্ধ
- ভারতে ১২০০ টন ইলিশ পাঠাচ্ছে সরকার
- স্ত্রীর কাছে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি চাইলেন শরিফ ওসমান বিন হাদী, পেলেন শর্ত
- অনুমোদনের অপেক্ষায় রাশিয়ার ক্যান্সার ভ্যাকসিন
- নেপালে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল রাজপথ
- খালেদা জিয়ার অসুস্থতার নাম ভাঙিয়ে ১৫ কোটি টাকা চাঁদাবাজি
- আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ‘রাহুল-প্রিয়াঙ্কা’ মডেল? পুত্র জয় ও কন্যা পুতুলের দিকেই ইঙ্গিত
- নুরের শর্ট টাইম মেমোরি লস: ঢামেক পরিচালকের মন্তব্যে কাটল ধোঁয়াশা
- ডিএসই’র বাজার প্রতিবেদন: এক নজরে আজকের লেনদেন
- ডিএসইতে আজকের লেনদেন শেষে টপ লুজার তালিকা প্রকাশ
- ডিএসইতে আজকের লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- ইসরায়েলে বাসে হামলা: হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে, চলছে ব্যাপক অভিযান
- সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপির বিজয় ঠেকানো যাবে না: রুমিন ফারহানা
- সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম শহীদ খান গ্রেপ্তার
- বাণিজ্যযুদ্ধ বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ’, তবে চ্যালেঞ্জ আছে ৫টি
- দুর্গাপূজা নিরাপত্তা নিয়ে কড়া বার্তা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
- “একদিনও মাথা নত করেননি”-খালেদা জিয়াকে নিয়ে ফখরুল
- তারেক রহমানের নেতৃত্বে টেকসই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব: মির্জা ফখরুল
- যুক্তরাজ্যের প্রথম মুসলিম নারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে এই শাবানা মাহমুদ
- ‘প্রতিযোগিতা বাড়িয়েই উন্নত হবে সেবা’—উপদেষ্টা এস কে বশির
- ইউএস ওপেনে নতুন সম্রাটের দাপট: আলকারাজের দ্বিতীয় শিরোপা
- বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের রঙিন রাত: স্পেনের দাপট, জার্মানির জয়, ডিপাইয়ের ইতিহাস
- গুপ্ত রাজনীতি আর সন্ত্রাস নয়: উমামা ফাতেমা
- যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আস্থার শীর্ষে এএইচজেড
- ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ভ্যালু, ভলিউম ও ট্রেডে শীর্ষ ২০ কোম্পানি
- ডিএসই–৩০ সূচকের শীর্ষ কোম্পানিগুলোর লেনদেনের চিত্র
- ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২০২৪ সালের নগদ লভ্যাংশ বিতরণ সম্পন্ন
- শেয়ারবাজারে ফিরল স্বস্তি, শীর্ষে থাকা কোম্পানির তালিকা প্রকাশ
- ডিএসইতে আজকের লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- গোয়ালন্দে কবর অবমাননার ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের তীব্র নিন্দা
- নোয়াখালীর সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুরের অবৈধ সম্পদের পাহাড়
- “তারেক রহমানের নেতৃত্বেই ঐক্য সম্ভব”
- দেড় বছর পর ঢাকায় স্থায়ী রাষ্ট্রদূত পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
- ডিএসইতে বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- ০২ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০ শেয়ার
- ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আজকের লেনদেন: বাজারের সামগ্রিক বিশ্লেষণ
- বাংলাদেশি ওষুধের সাফল্য: যুক্তরাজ্যে রেনেটার নতুন পদচারণা
- ধর্ষণের হুমকি: ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন উমামা ফাতেমা