মতামত

সমঝোতা না সঙ্কট? জিল্লুর রহমানের দুই বিকল্প পথনির্দেশ

২০২৫ জুন ১২ ১৪:০৩:৩৪
সমঝোতা না সঙ্কট? জিল্লুর রহমানের দুই বিকল্প পথনির্দেশ

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার-এজেন্ডা কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও টেলিভিশন উপস্থাপক জিল্লুর রহমান। সম্প্রতি এক ইউটিউব আলোচনায় তিনি বলেন, রাষ্ট্রব্যবস্থার অভ্যন্তরে এক ধরনের অনিশ্চয়তা, অকার্যকারিতা এবং অনাস্থার আবহ তৈরি হয়েছে, যা শাসন কাঠামোর ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে।

তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা ও বিলম্ব ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি করা হচ্ছে। গেজেট প্রকাশের পর ৩০ দিনের মধ্যে শপথ গ্রহণের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও সরকার উচ্চ আদালতের বিচারাধীনতার অজুহাতে এই প্রক্রিয়া বিলম্বিত করছে। এর ফলে একটি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে কার্যকরভাবে পদচ্যুত করে নগর প্রশাসনকে অস্থায়ী ও অনির্বাচিত ব্যবস্থাপনার আওতায় ফেলে রাখা হয়েছে। এতে সাধারণ নাগরিকরাও নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

একই সঙ্গে সচিবালয়ে সরকারি কর্মচারীদের চলমান আন্দোলন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, চট্টগ্রাম বন্দর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) এবং বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একযোগে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘটনা প্রশাসনিক কাঠামোর গভীর সংকটের দিক নির্দেশ করে। সরকারি চাকরি সংশোধন অধ্যাদেশ–২০২৫ এর প্রতিবাদে ২৫টি ক্যাডারভুক্ত সংগঠন ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ গঠন করে কলম বিরতির মতো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এই প্রেক্ষাপটে জিল্লুর রহমান বলেন, “এ ধরনের সংঘবদ্ধ আমলাতান্ত্রিক প্রতিরোধ অতীতে কোনো সামরিক কিংবা গণতান্ত্রিক সরকারের সময়ও দেখা যায়নি। এটি একটি গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক সংকেত।”

রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপি বর্তমানে একটি কৌশলগত দ্বিমুখী অবস্থান নিয়েছে। ভার্চুয়াল সমাবেশ ও তরুণ নেতৃত্বের মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা তৈরি করার পাশাপাশি তারা অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চাপ অব্যাহত রেখেছে। যদিও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা করেছেন, নির্বাচন ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে, বিএনপি ও তাদের মিত্রদের বক্তব্যে সরকারের প্রতি এক ধরনের অনাস্থা ও সন্দেহ স্পষ্ট।

এদিকে, দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে। রাজধানীর ব্যস্ত এলাকাগুলোতে খুন, ছিনতাই এবং সশস্ত্র হামলার মতো ঘটনা ঘটলেও, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিক্রিয়া কার্যত অনুপস্থিত। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুলিশের ভেতরে নতুন দায়িত্ব বণ্টনের যে পরিকল্পনা ছিল, তাও বাস্তবায়িত হয়নি।

এই প্রেক্ষাপটে জিল্লুর রহমান সরকারকে দুটি সম্ভাব্য পথের দিক নির্দেশ করেন:

১. স্বচ্ছ রোডম্যাপ ঘোষণা – নির্বাচনের সময়সীমা, সংস্কার কার্যক্রম ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে স্পষ্ট পরিকল্পনা উপস্থাপন।২. রাজনৈতিক সংলাপ ও সমঝোতা – রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কার্যকর আলোচনার মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আস্থা পুনঃস্থাপন।

তবে বাস্তবতা হচ্ছে, সরকারের রাজনৈতিক মূলধন ক্রমেই ক্ষয়ে যাচ্ছে। জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থতা, আমলাতান্ত্রিক প্রতিরোধ এবং দুর্বল নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ একটি গভীর শাসন সংকটে প্রবেশ করছে। এই পরিস্থিতিতে একটি ব্যাপক, স্বচ্ছ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক উদ্যোগ ছাড়া ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত