সাক্ষাৎ চাইলেন শেখ হাসিনার ভাগ্নি, মুখ ফিরিয়ে নিলেন ড. ইউনূস

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ০৯ ২২:৩২:০৭
সাক্ষাৎ চাইলেন শেখ হাসিনার ভাগ্নি, মুখ ফিরিয়ে নিলেন ড. ইউনূস

যুক্তরাজ্যের সাবেক মন্ত্রী ও শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ সিদ্দিক নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একটি বৈঠকের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিলেও তা উপেক্ষিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বাংলাদেশের কূটনৈতিক সূত্র এবং ঢাকার উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনিক একটি সূত্র আমার দেশকে নিশ্চিত করেছে, টিউলিপের চিঠিকে সরকার আমলে নিচ্ছে না। ফলে প্রধান উপদেষ্টার সময়সীমায় তার সাক্ষাৎ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।

সোমবার সন্ধ্যায় একটি সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন ড. ইউনূস। সফরের অংশ হিসেবে তিনি ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস এবং প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। এই প্রেক্ষাপটেই টিউলিপ সিদ্দিক একটি চিঠিতে ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ চেয়ে যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকাকে বলেন, তিনি চান দুজনের মধ্যে একটি আলোচনা হোক, যাতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে যে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ তৈরি হয়েছে, তা নিরসন করা যায়। চিঠিতে টিউলিপ স্পষ্ট করেন যে, বাংলাদেশে তার কোনো ব্যবসা বা সম্পত্তি নেই এবং তিনি সেখানে জন্মাননি, বসবাস করেননি বা পেশাগতভাবে যুক্ত ছিলেন না।

তবে একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ড. ইউনূস প্রশাসন শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ কাউকে এখনই গ্রহণ করতে আগ্রহী নয়। কারণ, শেখ হাসিনার শাসনামলে তার বিরুদ্ধে পরিচালিত দমন-পীড়ন এবং দুর্নীতির বিস্তার বর্তমান প্রশাসনের বিবেচনায় রয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় টিউলিপের সাক্ষাৎ চেষ্টাও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি হলেও, তার রাজনৈতিক অবস্থান সংকটে পড়েছে বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগে একাধিক মামলার কারণে। পূর্বাচলে ৬০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে ঢাকার একটি আদালত চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল টিউলিপসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। অভিযুক্তদের তালিকায় শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, রাদওয়ান মুজিব এবং আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর নামও রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগের একটি প্রভাবশালী অংশ এবং শেখ হাসিনার অনুগত প্রবাসী কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি এবং প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তারা ইউনূস প্রশাসনের ওপর চাপ তৈরি করতে চাইলেও, আপাতত কোনো সফলতা মিলছে না। উল্টো টিউলিপের এই সাক্ষাৎ চেষ্টাকে অনেকেই রাজনৈতিক নাটক বলে আখ্যায়িত করছেন।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এরপর থেকেই শেখ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অর্থপাচারের অভিযোগে একের পর এক মামলা ও তদন্ত চলছে। বিশেষভাবে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এই প্রেক্ষিতে লন্ডনে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক ডেভেলপারের কাছ থেকে টিউলিপ ও তার বোনের ফ্ল্যাট উপহার নেওয়ার খবর নতুন করে আলোচনায় আসে।

টিউলিপ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, তিনি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার এবং তার বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এখনো কেউ উপস্থাপন করতে পারেনি। কিন্তু দুদক বলছে, টিউলিপ নিজের রাজনৈতিক পরিচয় ও আত্মীয়তার সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে ঢাকার গুলশানে একটি ফ্ল্যাট ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেন, যা একটি অপরাধমূলক লেনদেনের অংশ ছিল।

ইতোমধ্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্টেও এ বিষয়ে আলোচনা উঠেছে। কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিকের এখনই এমপি পদ থেকে পদত্যাগ করা উচিত। সব মিলিয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করেও নিজের খালার রাজনৈতিক ছায়া থেকে বের হয়ে টিউলিপের পক্ষে বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।

এই প্রেক্ষাপটে ড. ইউনূসের কাছে চিঠি পাঠানো এবং সাক্ষাৎ প্রার্থনা অনেকের চোখে একধরনের মরিয়া প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা বাস্তবে রাজনৈতিক হাস্যরসের জন্ম দিয়েছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত