মতামত
কবে থামবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভেদের রাজনীতি?

আসিফ বিন আলী
শিক্ষক ও স্বাধীন সাংবাদিক

ফারুক ওয়াসিফ ভাই একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ ও নির্বাচন নিয়ে। আমি উনার স্ট্যাটাসের মুক্তিযুদ্ধ অংশ নিয়ে খানিক আলাপ করতে চাই। ফারুক ভাই চিন্তাশীল মানুষ ও ছাত্রজীবনে তাঁর লেখা পড়ে চিন্তা করতে উৎসাহিত হয়েছি। সেই অর্থে একজন চিন্তকের লেখার ক্রিটিকাল অ্যানালাইসিস হওয়া উচিত। এখানে সেই চেষ্টাই করবো।
ফারুক ওয়াসিফ লিখেছেন “একাত্তরের মূল নেতৃত্ব পালিয়ে গিয়েছিল, তারপর জাতির সম্মিলিত জোট প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল ভেতর থেকেই।” এখানে কয়েকটি শব্দ গুরুত্বপূর্ণ—“মূল নেতৃত্ব”, “পালিয়ে”, “জাতির সম্মিলিত জোট”। তিনি এর কোনটির সংজ্ঞা দেননি। তাই এখানে খানিকটা ধরে নিচ্ছি তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন। “মূল নেতৃত্ব” বলতে তিনি বুঝিয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, যারা ৭০ এর নির্বাচনে জয়লাভ করে জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার ম্যান্ডেট পেয়েছিলেন। “জাতির সম্মিলিত জোট”-এর সংজ্ঞা নিয়ে আমি নিশ্চিত নই, হয়তো তিনি বোঝাতে চেয়েছেন এই মূল নেতৃত্বের বাইরের একটা বর্গকে। আমি এই ক্ষেত্রে ভুল হতে পারি, তবে আলোচনার খাতিরে ও তাঁর লেখার ধরন দেখে তাই মনে হয়। প্রশ্ন আছে তাঁর “পালিয়ে” যাওয়া শব্দের ব্যবহার নিয়ে। আমি ধরে নিচ্ছি তিনি সচেতনভাবেই “পালিয়ে যাওয়া” শব্দ ব্যবহার করেছেন। বাংলায় "পালিয়ে যাওয়া" শব্দগুচ্ছ সাধারণত ভয়, বিপদ, পরাজয় বা অপরাধবোধ থেকে লুকিয়ে বা গোপনে কোন স্থান ত্যাগ করা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে একধরনের নেতিবাচক ও কাপুরুষোচিত সুর থাকে। লেখাটি পড়ে আমার মনে হয়েছে, ফারুক ওয়াসিফ “একাত্তরের মূল নেতৃত্ব”-এর কাপুরুষ ফ্রেমিং বোঝাতেই এই শব্দ ব্যবহার করেছেন। এবার আসুন দেখি ইতিহাস কী বলে, ও ইতিহাসের প্রেক্ষিতে ফারুক ওয়াসিফের এই শব্দচয়ন কতটা বস্তুনিষ্ঠ।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অভিযানে প্রায় অর্ধ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল (আনুমানিক সংখ্যা, বিবিসি রিপোর্ট থেকে নেয়া)। ওই সেনা অভিযানের সাংকেতিক নাম ছিল 'অপারেশন সার্চলাইট'। এই অভিযানটির পরিকল্পনা করা হয়েছিল তারও এক সপ্তাহ আগে, ১৮ই মার্চ। ২৫ মার্চ রাতের হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহতার প্রমাণ যেমন পাওয়া যায় সেসময় ঢাকায় দায়িত্বরত পাকিস্তানের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের স্মৃতিকথা থেকেও, তেমনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার দলিলপত্রেও।
অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনা সম্পর্কে খাদিম হুসেইন রাজার 'আ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি: ইস্ট পাকিস্তান ১৯৬৯-১৯৭১' বইয়ে বিস্তারিত লেখা আছে। খানিক সারাংশ তুলে দিচ্ছি। খাদিম লেখেন, পরিকল্পনার মূল দিকগুলো ছিল এরকম—যে কোনো ধরণের বিদ্রোহ বা বিরোধিতাকে কঠোরভাবে দমন করা হবে। সফল হওয়ার জন্য আকস্মিক চমক এবং চাতুর্যের গুরুত্ব আছে। সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকেও চাতুর্যের আশ্রয় নিয়ে তাদের সাহায্য করার পরামর্শ দিয়েছিল। বাঙালি সেনা সদস্য ও পুলিশকে নিরস্ত্র করা হবে। বিশেষ করে পিলখানায় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের অস্ত্রাগার, রাজারবাগের রিজার্ভ পুলিশ এবং চট্টগ্রামে কুড়ি হাজার রাইফেলের অস্ত্রভাণ্ডারের নিয়ন্ত্রণ আগেভাগে নিয়ে নিতে হবে। অপারেশন শুরুর সাথে সাথে সব রকমের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে নতুন করে যাচাই-বাছাই করে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা হবে। অস্ত্রশস্ত্র এবং অপরাধীদের খোঁজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো ঘিরে ফেলতে হবে, এবং তল্লাশি চালাতে হবে। শেখ মুজিবকে জীবিত অবস্থায় ধরতে হবে। এর বাইরে ১৫ জন আওয়ামী লীগ এবং কমিউনিস্ট পার্টির নেতার বাড়িতে তল্লাশি চালাতে হবে, তাদের কাউকে পাওয়া গেলে গ্রেপ্তার করতে হবে।
এই কনটেক্সট দেওয়ার কারণ হলো ফারুক ওয়াসিফের “পালিয়ে যাওয়া” শব্দচয়নের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করা। প্রশ্ন থেকেই যায়, যেখানে সামরিক অভিযান এমন পরিকল্পনা করে করা হয়েছে, যেখানে এক রাতে অর্ধ লক্ষ মানুষ গুলি করে ও আগুন দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেখানে ফারুক ওয়াসিফ “মূল নেতৃত্ব”-এর কাছে কী আশা করেন? ২০২৫ সালে সরকারি পদে থেকে এমন বয়ান দেওয়া খুব সহজ, কিন্তু ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে, যখন কেউ জানে না জাতির ভাগ্যে কী হবে, বাংলাদেশ আদৌ স্বাধীন হবে কি না তা নিশ্চিত নয়, তখন “মূল নেতৃত্ব” কী করতে পারতো বলে মনে হয়? সেই সময় তারা সেটাই করেছেন যা মানুষ হিসেবে করা সম্ভব। এক প্রচণ্ড, পরিকল্পনামাফিক আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক জবাব দেওয়ার জন্য একটা রাজনৈতিক সরকার তৈরি করেছেন ও যুদ্ধ করেছেন। তারা পালিয়ে গিয়ে আরাম-আয়েশে বসে থাকেননি, বরং ১৭ই এপ্রিল প্রবাসী সরকার গঠন করে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছেন।
ফারুক ওয়াসিফের কাছে প্রশ্ন—২৫শে মার্চ থেকে ১৭ই এপ্রিল কত যুগ? আপনি মূল নেতৃত্বকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য দোষ দিচ্ছেন ও কাপুরুষ হিসেবে দেখাচ্ছেন, তা কতটা যৌক্তিক?এবার দেখি ফারুক ওয়াসিফ আরও কী লিখেছেন। তিনি লেখেন, “ভেতরের এই প্রতিরোধ, যার ডাক দিয়েছিলেন মেজর জিয়া, তা না দাঁড়ালে এটাকে আন্তর্জাতিকভাবে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বলে দাগানোর সুযোগ ছিল। মুজিবনগর সরকারকেও আওয়ামী সরকার বলা যায় না, বলা গেলে তারা প্রবাসী আওয়ামী সরকার বলতো। সেই অর্থে জিয়াই মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন। তাঁকে প্রাথমিক সহযোগিতা করে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের একটি অংশ।”
ফারুক ওয়াসিফ আসলে এখানে কে ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত উত্তরসূরি’? সেই বিতর্কের প্রেক্ষিতে আলাপ তুলেছেন। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি Divide and Co-opt Strategy ব্যবহার করেছেন। প্রথমে তিনি ভাগ করেছেন মূল নেতৃত্ব ও “জাতির সম্মিলিত জোট” এই ফ্রেমে। পরে তিনি জিয়াউর রহমানকে “জাতির সম্মিলিত জোট”-এর কেন্দ্রীয় চরিত্র বানিয়ে বলছেন “তাঁকে প্রাথমিক সহযোগিতা করে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের একটি অংশ”। এইটাই হলো Divide and Co-opt Strategy।বাস্তবতা হলো ১৯৭১ সালে অনেকগুলো ঘটনা একসাথে ঘটেছে, এবং এগুলো অনেক ক্ষেত্রেই সমসাময়িকভাবে ঘটেছে। যেমন, জিয়াউর রহমান যখন কালুরঘাট থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, তখন তাঁকে নিঃসন্দেহে শেখ মুজিব বলে দেননি যে ঘোষণা দিতে হবে। তিনি নিজ দায়িত্বেই এই ঘোষণা দিয়েছেন ও শেখ মুজিবের নাম উল্লেখ করেছেন ‘গ্রেট লিডার’ হিসেবে। আবার, শেখ মুজিব যে মৃত না জীবিত, তা জিয়াউর রহমানের জানার কথা নয় সেই সময়। অন্যদিকে তাজউদ্দীনসহ অন্যরা যখন ভারতের দিকে যাত্রা করেছেন, তাঁদের জানার কথা নয় জিয়া কী ঘোষণা দিয়েছেন। আবার জিয়ারও জানার কথা নয় তাজউদ্দীন বা অন্যান্য জাতীয় নেতৃবৃন্দ তখন বেঁচে আছেন না মারা গেছেন। এই যে একজনের আরেকজনের না জানা, সমন্বয় না থাকা—এইটা কোনো পরিকল্পনার অংশ নয়, বরং ঐ সময়ের বাস্তবতা। এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই ২৬শে মার্চ থেকে ১৭ই এপ্রিল পর্যন্ত ছোট ছোট পাজলগুলো মিলেই বাঙালির জাতীয়তাবাদী আন্দোলন একটি রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে ও আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করে।এর বিকল্প কী হতে পারতো, ফারুক ওয়াসিফ তা বলেননি।
আরেকটা ব্যাপার, যদি বিএনপি না থাকতো, তবে কি ফারুক ওয়াসিফ ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত উত্তরসূরি’ হিসেবে জিয়াকে নির্বাচিত করতেন? নাকি এখানে বর্তমান রাজনীতি বেশি গুরুত্ব পেয়েছে? আমরা একই ধরনের কাজ আওয়ামী লীগকে করতেও দেখেছি। তারা ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত উত্তরসূরি’ বিতর্ক করেছে এবং সেখানে শুধু শেখ মুজিবকে প্রতিষ্ঠা করেছে, বাকিদের অস্বীকার করেছে কিংবা অপ্রাসঙ্গিক করেছে। এটি একটি রাজনৈতিক প্রকল্প। অনেক বামপন্থী বুদ্ধিজীবী আওয়ামী লীগের এই ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত উত্তরসূরি’ দাবির প্রজেক্টকে বুদ্ধিবৃত্তিক সমর্থন দিয়েছেন। এখন হয়তো ফারুক ওয়াসিফরা বিএনপিকে দেবেন। মাঝখান থেকে আমরা ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত উত্তরসূরি’—অর্থাৎ এই বাংলার কৃষক, ছাত্র, শ্রমিক, নাম না জানা হিন্দু-মুসলমান সবাইকে বঞ্চিত করে মুজিব ও জিয়া বাইনারিতে চলে যাচ্ছি। তারা উভয়ই আমাদের জাতীয় নেতা। কিন্তু কোনো বন্দনাই আর গ্রহণযোগ্য নয়, তা সে যে পন্থী বুদ্ধিজীবী করুন না কেন।
ফারুক ওয়াসিফ আরও লিখেছেন, “২৪-এও প্রতিষ্ঠিত জাতীয় নেতারা শুরুতে দ্বিধান্বিত ছিলেন। এমনকি ৫ আগস্টের আগে তাঁরা কেউই নেতৃত্বের দায়ভার নেননি। প্রতিরোধ চালিয়ে গিয়েছিল সম্মিলিত ছাত্র-জনতা। ক্র্যাকডাউন বাড়লে অতীতের মতো তাঁরাও স্বেচ্ছায় পালাতেন বা শেখ মুজিবের মতো স্যুটকেস গুছিয়ে আত্মসমর্পণের জন্য বসে থাকতেন।”
বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই (সবাই নয়) বিরাজনীতিকরণের বৃহত্তর প্রোজেক্টকে এজেন্ডায় রেখে কথায় কথায় রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অস্বীকার করেন, আন্দোলনে তাদের ভূমিকাকে খাটো করে দেখান। ২৪-এর আন্দোলন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফারুক ওয়াসিফ তাই করেছেন। তিনি বলছেন, “২৪-এও প্রতিষ্ঠিত জাতীয় নেতারা শুরুতে দ্বিধান্বিত ছিলেন।” আসলেই কি তাই? আমরা দেখেছি হাসিনা কেমন করে যেকোনো রাজনৈতিক আন্দোলনকে দমন করেছে। হাসিনা যাতে এই সুযোগ না পান, সেই কারণেই ২৪-এর আন্দোলনকে অরাজনৈতিক রাখা জরুরি ছিল, আর সেই কৌশলে একমত ছিলেন জাতীয় নেতৃবৃন্দ, তেমনটাই মনে হয়। তাই বিএনপি কিংবা জামায়াত কেউই এই আন্দোলনের সম্মুখ নেতৃত্ব নিতে আসেনি। তবে এই আন্দোলনের সাফল্যের অন্যতম কারণও ছিল জাতীয় নেতৃবৃন্দের এই কৌশল। কোন একদিন ২৪ আন্দোলন নিয়ে আরও নির্মোহ গবেষণা হবে, তখন হয়তো আমরা দেখতে পাব—এখানে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ভূমিকা কেমন ছিল।
ফারুক ওয়াসিফ লিখেছেন, “শেখ মুজিবের মতো স্যুটকেস গুছিয়ে আত্মসমর্পণের জন্য বসে থাকতেন।” এই যে ঐতিহাসিক ঘটনার একপাক্ষিক ব্যাখ্যা তিনি দিলেন, তা বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অন্যায়। আবার ফিরে যাচ্ছি খাদিম হুসেইনের লেখায়। তিনি তাঁর ‘আ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি: ইস্ট পাকিস্তান’ বইতে স্পষ্টভাবেই লিখেছেন মুজিবকে গ্রেফতার করা নিয়ে তাদের কী পরিকল্পনা ছিল। আরেকটা বিষয়, যেখানে ফারুক ওয়াসিফ বলছেন, “একাত্তরের মূল নেতৃত্ব পালিয়ে গিয়েছিল,” তাই তাদের কাপুরুষ বললেন; আবার মুজিব ধরা দিলেন, তাই তাকেও কাপুরুষ হিসেবে ফ্রেম করলেন—তাহলে আসলে আপনি কী চান? আপনার কি মনে হয়, সেই সময় তারা ট্যাঙ্কের তলায় পড়ে মরে গেলে সবচেয়ে ভালো কাজ হতো?
আমি ধরে নিলাম, আপনি বলছেন জিয়াই একমাত্র ঠিক কাজ করেছেন—যুদ্ধ করেছেন। আমি যদি আপনার কথা মেনেও নিই, তাহলেও কি মনে হয় না এখানে অন্যায্য তুলনা হচ্ছে? অর্থাৎ, জিয়া আর্মি পারসন ছিলেন, তিনি কমান্ড করতে পারতেন, তাঁর হাতে অস্ত্রও ছিল। তিনি সেটাই করেছেন, যেটাতে তিনি দক্ষ ছিলেন—অর্থাৎ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে। অন্যদিকে “একাত্তরের মূল নেতৃত্ব”—আপনি যাদের বলছেন, তাঁরা রাজনীতিবিদ ছিলেন, তাঁরা বন্দুক চালাতে জানতেন না। তাই রাজনীতিবিদ হিসেবে তারা সেটাই করেছেন—অর্থাৎ জীবন বাঁচিয়ে পালিয়ে গিয়ে ২১ দিনের মাথায় একটা সরকার গঠন করেছেন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
ফারুক ওয়াসিফের লেখার প্রতি আমার আপত্তি হলো তাঁর বাইনারি ফ্রেমিং। তিনি “একাত্তরের মূল নেতৃত্ব” ও জিয়াকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন, ঠিক যেমনটা ইতঃপূর্বে আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীরা করেছিলেন। পার্থক্য হলো, আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবীরা জিয়াকে বিশ্বাসঘাতক ও শেখ মুজিবকে একমাত্র নেতা হিসেবে দেখিয়েছেন। অন্যদিকে ফারুক ওয়াসিফ তাঁর লেখায় “একাত্তরের মূল নেতৃত্ব” ও মুজিবকে পালিয়ে যাওয়ার দায়ে বা আত্মসমর্পণের অভিযোগে অভিযুক্ত করে জিয়াকে মহান দেখানোর চেষ্টা করছেন।
এই আলাপে রাজনৈতিক ফায়দা রয়েছে সন্দেহ নেই, কিন্তু এই আলাপ আমাদের জাতীয় ইতিহাস নিয়ে বিভক্তির ধারা অব্যাহত রাখে। ইতিহাসে যার যতটুকু ভূমিকা, তাকে সেই সম্মান দিতে হবে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের মত ঘটনার সময় সবকিছু বামপন্থীদের থিওরি মতো ঘটে না। ঠিক যেমন ২৪-এর আন্দোলন পুরনো থিওরিতে হয়নি, নতুন থিওরির জন্ম দিয়েছে।
এখন যদি আমরা নাহিদ, মাহফুয, ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরকে ২৪-এর প্রধান উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার আলাপ শুরু করি, তবে ২৪-এর ঘটনাপ্রবাহ নির্মোহভাবে বুঝতে পারব না। তেমনি ৭১-কে একই ফ্রেমে দেখতে গেলেও একই ঘটনা ঘটবে।
আমি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ক্রিটিকাল আলাপের পক্ষে, গ্লোরিফিকেশনের বিপক্ষে। ফ্যাক্ট নিয়ে আলোচনা করার সমর্থক, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভেদের রাজনীতির বিপক্ষে। গত ৫৪ বছর আমরা এই বিভেদ থেকে কিছুই পাইনি। ভবিষ্যতেও পাব না। আমাদের দয়া করে এই কুতর্কের মধ্যে আর ফেরত নেবেন না। পলিসি-কেন্দ্রিক গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকারের আলাপ কোনো সুফল বয়ে আনে না। মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার এই দেশের জনগণ। আমাদের এইবার গণতন্ত্রে ফিরতে দিন, চেতনার আফিম আর খাওয়াবেন না।
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে চার্জ দাখিল, বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার
- বাহরাইনেরমানামায় বিএনপির সাংগঠনিক পুনর্গঠন, নেতৃত্বে আক্তার হোসেন
- বাহরাইনে জাতীয়তাবাদী শক্তির পুনর্জাগরণ: গ্যালালী শাখায় নতুন নেতৃত্ব
- চীন না ভারত? উন্নয়ন না আনুগত্য? বুলেট ট্রেন বলছে স্পষ্ট জবাব
- অবশেষে বিসিবি সভাপতি ফারুককে নিয়ে মুখ খুললেন আসিফ
- বিশ্বশক্তির নজর এখন বাংলাদেশে: খনিজ ভাণ্ডারের নতুন মানচিত্র
- তারেক-ইউনুস উত্তপ্ত ফোনালাপ: যা জানা গেল
- নতুন বিসিবি সভাপতিবুলবুলের কাছে আশরাফুলের চাওয়া
- ঈদের দিন বৃষ্টি হবে কি?
- ভারতের গর্ব এস-৪০০ ধ্বংস: বাস্তবতা নাকি প্রচারযুদ্ধ?
- ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায় হঠাৎ বিরতি: যুক্তরাষ্ট্র কি নতুন কৌশল নিচ্ছে?
- ২০২৬ সালের এপ্রিলেই জাতীয় নির্বাচন: জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা
- নির্বাচনের ঘোষণায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া: বিএনপি অসন্তুষ্ট, জামায়াত সন্তুষ্ট, এনসিপি শর্তসাপেক্ষে সমর্থন
- স্বাস্থ্য কূটনীতিতে নীরব বিপ্লব:ভারতীয় ভিসা বন্ধ ও চীনের উষ্ণ অভ্যার্থনা
- কোন কারনে চুল ঝরে জানেন কি?