সীমান্তে পাচার:মাদক-গরু আসছে, জ্বালানি-খাদ্য যাচ্ছে

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১১ ০৯:২৬:৪৭
সীমান্তে পাচার:মাদক-গরু আসছে, জ্বালানি-খাদ্য যাচ্ছে

সত্য নিউজ:মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা এখন সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (AA) নিয়ন্ত্রণে। সেখানে চলছে সংঘাত, রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়িয়েছে AA। তবে এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতেও থেমে নেই মাদক ও পশু চোরাচালান। বরং তা আরও বেড়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, আরাকান আর্মি ও অন্যান্য গোষ্ঠী অর্থসংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশে ইয়াবা ও গরু পাচার করছে। বিনিময়ে রাখাইনে যাচ্ছে চাল, ডাল, তেল, জ্বালানি, ইউরিয়া সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। গত বছরের ডিসেম্বরের পর থেকে চোরাচালান প্রায় দশগুণ বেড়েছে।

ইয়াবার চালান থামছে না

গত ২ মে টেকনাফের হাবিরছড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে কোস্টগার্ড উদ্ধার করে ৩ লাখ ২০ হাজার পিস ইয়াবা, যার মূল্য প্রায় ১৬ কোটি টাকা। পাচারকারীরা বস্তা ফেলে পালিয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, মিয়ানমারে ইয়াবা কারখানাগুলো এখন আরও বেশি উৎপাদন করছে, এবং সব মাদকই বাংলাদেশে ঢুকছে।

চোরাই গরুর স্রোত অব্যাহত

শুধু মাদক নয়, সীমান্ত দিয়ে নিয়মিত ঢুকছে চোরাই গরু ও মহিষ। ৬ মে কক্সবাজারের ঈদগাঁও বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে আটক হয় ১৫৫টি গরু ও মহিষ। পশুগুলোর কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না। নাইক্ষ্যংছড়ি ও টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে এসব পাচার হচ্ছে।

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও চোরাচালানে স্থানীয়দের উদ্বেগ

জেলা বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা জানান, সীমান্তবর্তী এলাকায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, মাদক ও পশু চোরাচালান পরিস্থিতি আরও খারাপ করছে। মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। বিজিবি বলছে, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় কিছু এলাকায় অনুপ্রবেশ ও পাচার ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

কূটনৈতিক উদ্যোগে দীর্ঘ বিরতি

সর্বশেষ ২০১৪ সালে বিজিবি ও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল। ওই সময় মিয়ানমারে থাকা ইয়াবা কারখানাগুলো বন্ধের দাবি জানানো হলেও তারা তেমন উদ্যোগ নেয়নি। এরপর থেকে আর কোনো বড় আলোচনাও হয়নি।

চোরাচালান রোধে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, “আরাকান আর্মি মাদক ও পশু পাচার বন্ধ করছে না কারণ এটা তাদের টিকে থাকার মাধ্যম হয়ে উঠেছে।” সীমান্তে ২০টিরও বেশি পয়েন্ট দিয়ে রাতে এসব পণ্য প্রবেশ করছে।

বিজিবি’র কক্সবাজার রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম এম ইমরুল হাসান বলেন, “সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।”

মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর দখলে থাকা রাখাইন এখন শুধু তাদের নিজস্ব সংকট নয়, তা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। এখন সময়, কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা স্তরে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

আমেরযত কাহিনি

আমেরযত কাহিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ ‘আম’ শুধু একটি ফল নয়, বরং এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে গভীরভাবে প্রোথিত এক... বিস্তারিত