ক্রিকেটের কোটি কোটি টাকা কোথায় যাচ্ছিল জানালেন ফারুক আহমেদ

খেলা ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ০৫ ০৮:৫০:০৭
ক্রিকেটের কোটি কোটি টাকা কোথায় যাচ্ছিল জানালেন ফারুক আহমেদ

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সদ্য সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ একটি বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে বিসিবির অভ্যন্তরের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, দুর্নীতি, এবং গোপন অভিপ্রায়গুলো তুলে ধরেছেন। কালের কণ্ঠ ডিজিটালে প্রচারিত দেড় ঘণ্টার দীর্ঘ এই সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে বিসিবির ভেতরের টানাপোড়েন, অনাস্থা, কোচ হাতুরাসিংহের কেলেঙ্কারি, বিপিএলের অনিয়ম ও অর্থ লোপাটের অভিযোগসহ একাধিক অজানা তথ্য।

ফারুক আহমেদ বলেন, “ক্রিকেটের কোটি কোটি টাকা চলে যাচ্ছিল অন্য দিকে।” তিনি বিসিবির আর্থিক অনিয়মের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর) করা বিপুল অর্থ কোন ব্যাংকে স্থানান্তরিত হচ্ছে, সে বিষয়ে অনেক পরিচালকই জানতেন না বলে দাবি করলেও আসলে তারা নিজেরাই এতে জড়িত ছিলেন।

তিনি জানান, ক্রিকেট বোর্ডের টাকা ভালো ব্যাংকে স্থানান্তরিত করা হলেও এ সংক্রান্ত সইদাতারা পরবর্তীতে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এতে বোঝা যায়, বিসিবির আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। ফারুক আহমেদ বলেন, তিনি একটি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট গঠনের পরিকল্পনা করেছিলেন যেখানে ২০ কোটি টাকা জমা রেখে মাসে ২০ লাখ টাকা দিয়ে কোচ, ক্রিকেটার, আম্পায়ারদের সহায়তা দেওয়া হতো। কিন্তু ভেতরের প্রতিরোধে তা সম্ভব হয়নি।

নিজেকে অন্যায়ভাবে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলে ফারুক বলেন, “আমি যখন দায়িত্ব নিই, তখন বোর্ডে একরকম ৯ বনাম ১ অবস্থা ছিল। আমার পাশের পরিচালকরা আমাকে সবসময় বিপদে ফেলতে চেয়েছে।”

তিনি বলেন, ক্রীড়া উপদেষ্টা সরাসরি তাঁকে বলেননি পদত্যাগ করতে, বরং বলেছেন, “তোমাকে আর কন্টিনিউ করতে চাই না।” কিন্তু সিদ্ধান্তটি ছিল ওপরে মহলের চাপে এবং দলীয় ব্যর্থতাকে সামনে এনে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া।

ফারুকের মতে, বিপিএল সফল হওয়া অনেকেই চায়নি। “এমনও পরিচালক ছিলেন যারা চেয়েছেন বিপিএল বন্ধ হয়ে যাক।” তিনি অভিযোগ করেন, বিপিএলের সাফল্য এবং আয়ও অনেক সময় প্রচার পায়নি। “থিম সং মাত্র ৩০ লাখ টাকায় তৈরি হলেও বলা হলো কোটি টাকা খরচ হয়েছে।”

তাঁর দাবি, বিপিএলের সময় থেকেই বোর্ডে থাকা অনেকে একযোগে তাঁর বিরুদ্ধে কাজ শুরু করেন। এই সময়ে কিছু পরিচালক প্লেয়ার্স পেমেন্ট ও ব্যাংক গ্যারান্টি জমা নেওয়ার মতো বিষয়েও অস্বচ্ছতা দেখিয়েছেন।

সাবেক কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহের বিরুদ্ধে জাতীয় দলের স্পিনার নাসুম আহমেদের গায়ে হাত তোলার অভিযোগে তদন্ত শুরু করেন ফারুক। তদন্তে উঠে আসে, ফিটনেস ট্রেনার নিক লিও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন এবং লিখিতভাবে সাক্ষ্য দেন।

ফারুক বলেন, “হাতুরা একজন খেলোয়াড়ের কলার ধরে টেনে থাপ্পড় মেরেছে — এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ছুটি না নিয়ে ১১৫ দিন দেশের বাইরে থেকেছে। এরপরও কেউ এই সিদ্ধান্তে ‘না’ বলেনি। বরং সবাই সম্মত হয় তাঁকে ছাঁটাই করতে।”

তিনি যোগ করেন, “যদি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা হতো, তাহলে এতদিনে মামলা করতো। আট মাসেও সে মামলা করেনি।”

বোর্ডে তামিম ইকবালকে আনা নিয়েও পরিকল্পনা ছিল বলে জানান ফারুক। কিন্তু তামিম নিজেই পরে জানিয়ে দেন যে তিনি এখনই যুক্ত হতে পারছেন না। সেই জায়গায় নাজমুল আবেদীন ফাহিম ‘ক্রিকেট অপারেশনস’-এর নেতৃত্ব চান, যা ফারুক মেনে নেননি।

ফারুক বলেন, “আমি মনে করেছি তামিম আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড হিসেবে বেশি কাজে লাগবে। আর ফাহিম ভাইকে কোচিং ও গেম ডেভেলপমেন্টে বেশি উপযোগী মনে করেছি।”

ফারুক সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, “ফাহিম ভাই প্রথম থেকেই আমাকে ফাঁসাতে চেয়েছেন। কমিটি পাওয়ার পর তাঁদের রূপ বদলে গেছে।” এমনকি তাঁর দাবি, অনাস্থা চিঠিতে সবার আগে সই ছিল ফাহিমের। অথচ ফাহিম নিজেই জাতীয় দলের বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন এবং ব্যর্থতায় দায় এড়াতে পারেন না।

ফারুক আহমেদ মনে করেন, তাঁর বিরুদ্ধে পরিচালিত কর্মকাণ্ড একটি সাজানো পরিকল্পনার অংশ। তিনি বলেন, “আমি শুধু বোর্ডে স্বচ্ছতা, সুযোগ-সুবিধা ও ক্রিকেট উন্নয়নের কথা বলেছিলাম। হয়তো এ কারণেই আমি আর সুবিধাজনক ছিলাম না।”

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত