প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৫–২৬: কোন কোন পণ্যের দাম বাড়ছে?

অর্থনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুন ০২ ২১:২৫:৪৫
প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৫–২৬: কোন কোন পণ্যের দাম বাড়ছে?

২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক ও ভ্যাট বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সোমবার (২ জুন) বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বাজেট পেশ করেন। বাজেট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই প্রস্তাবিত শুল্ক-কর কার্যকর হওয়ায় এর প্রভাব বাজারে দ্রুত পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, শুল্ক ও কর বৃদ্ধি সাধারণত বাজারে মূল্যস্ফীতির একটি তাৎক্ষণিক তরঙ্গ তৈরি করে। এমনিতেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ক্রয়ক্ষমতা সংকুচিত হয়ে পড়েছে দেশের বেশিরভাগ মানুষ। তার ওপর বাজেট প্রস্তাবে যেভাবে ভ্যাট ও শুল্ক অব্যাহতির পরিধি সংকুচিত করা হয়েছে, তাতে গৃহস্থালি জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাজেট বক্তৃতা, অর্থ বিল ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নির্দেশিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়—মুঠোফোন, গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি, প্লাস্টিকের সামগ্রী, এলপিজি সিলিন্ডার, বিলাসবহুল খাদ্য ও প্রসাধনসামগ্রীসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভোগ্যপণ্যের ওপর শুল্ক-কর বৃদ্ধি করা হয়েছে।

মুঠোফোন উৎপাদন ও সংযোজন খাতে এতদিন যে ভ্যাট অব্যাহতি ছিল, এবার তা আংশিকভাবে কমানো হয়েছে। যদিও এই সুবিধার মেয়াদ কিছুটা বাড়ানো হয়েছে, তবে অব্যাহতি কমার কারণে বাজারে মোবাইল ফোনের দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।

গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত ওয়াশিং মেশিন, ব্লেন্ডার, জুসার, রাইস কুকার, প্রেসার কুকার, আয়রন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন প্রভৃতির স্থানীয় উৎপাদনেও ভ্যাট ছাড় কমানো হয়েছে। এতে করে এসব পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, যা ভোক্তার কাঁধে গড়াবে।

অতি ব্যবহৃত গৃহস্থালি উপকরণ—প্লাস্টিকের থালাবাসন ও অন্যান্য তৈজসপত্রের ওপর ভ্যাট হার দ্বিগুণ করে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। যদিও পরিবেশবান্ধব বিকল্প তৈজসপত্রে ভ্যাট ছাড় রাখা হয়েছে, তবু স্বল্প ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এটি হবে বাড়তি ব্যয়ের এক নতুন বোঝা।

এছাড়া রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় এলপিজি সিলিন্ডারেও স্থানীয় উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতির সুযোগ আংশিকভাবে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ গ্যাসের দামও বাড়তে পারে, যা প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব ফেলবে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের ওপর।

বিলাসবহুল খাদ্যপণ্য হিসেবে বিদেশি চকলেট আমদানিতে শুল্কায়ন মূল্য ৪ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে, যার ফলে এই ধরনের পণ্যের বাজারমূল্য বৃদ্ধি নিশ্চিত। একইভাবে ঠোঁট ও মুখের প্রসাধনসামগ্রীর আমদানিতে শুল্কায়ন মূল্য বাড়ানো হয়েছে, ফলে লিপস্টিক, আইলাইনার প্রভৃতি পণ্যের দামও চড়বে।

এমনকি দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য ব্লেডের ক্ষেত্রেও ভ্যাট বাড়িয়ে আড়াই থেকে সাড়ে সাত শতাংশ করা হয়েছে, যা সাধারণ গ্রাহকের জন্য একেবারে তীব্রভাবে টের পাওয়া যাবে।

এই প্রস্তাবিত শুল্ক-কর বৃদ্ধির ফলে বাজারে মূল্যস্ফীতির নতুন চাপ তৈরি হবে বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি হতে পারে—দেশীয় শিল্প সুরক্ষা ও রাজস্ব আহরণ, কিন্তু ভোক্তার দৃষ্টিকোণ থেকে এটি ব্যয়বহুল জীবনের আরেক ধাপ।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত