মুস্তাফা জামান আব্বাসী: জানেন কি এই ৭ তথ্য?

বিনোদন ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১০ ১৭:১৬:৫১
মুস্তাফা জামান আব্বাসী: জানেন কি এই ৭ তথ্য?

আজ শনিবার (১০ মে ২০২৫) শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন দেশের কিংবদন্তি সংগীতজ্ঞ, লেখক ও গবেষক ড. মুস্তাফা জামান আব্বাসী। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন সক্রিয়, একাধারে সংগীত সংগ্রাহক, গবেষক, লেখক, গায়ক ও প্রজ্ঞাবান বুদ্ধিজীবী। দীর্ঘ কর্মজীবনে যেভাবে বাংলাদেশি সংগীত, বিশেষ করে লোকসংগীতকে তুলে ধরেছেন, সংরক্ষণ করেছেন—তা বাঙালির সাংস্কৃতিক ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

মুস্তাফা জামান আব্বাসীর কর্ম ও ব্যক্তিজীবনের অনেক দিকই আমাদের জানা। তবে তাঁর জীবনঘনিষ্ঠ কিছু অনুল্লিখিত বা কম পরিচিত তথ্য রয়েছে, যেগুলো থেকে বোঝা যায়—সংগীত ছিল তাঁর কাছে শুধু পেশা নয়, ছিল গভীর আত্মিক অভিপ্রায়।


১. দুই হাজার লোকসংগীতের সংগ্রাহক

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে তিনি সংগ্রহ করেছেন প্রায় দুই হাজার লোকসংগীত। যেগুলোর অনেকটাই মুখে মুখে প্রচলিত, অজ্ঞাত গীতিকার ও সুরকারের রচনাগুলি। তিনি নিজ বাসায় বাউল শাহ, খোদা বক্স বিশ্বাস, জোনাব আলী মল্লিকসহ অন্তত ১০ বাউল শিল্পীকে এনে তাঁদের গানের সুর ও কথা লিপিবদ্ধ করেন। লালনের মূল সুর সংরক্ষণ ও টেলিভিশনে সম্প্রচারের ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান অগ্রগণ্য।


২. চিঠির সযত্ন সঞ্চয়

প্রতিদিন দেশ–বিদেশের অগণিত মানুষের কাছ থেকে চিঠি পেতেন তিনি। আশ্চর্যজনকভাবে, প্রতিটি চিঠি তিনি সযত্নে জমিয়ে রাখতেন। সেগুলো ছিল নানা বয়সের মানুষের হৃদয়ের কথা, ভাবনার চিঠি, যা তিনি মূল্যবান সম্পদ হিসেবেই দেখতেন।


৩. প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবেও পরিচিতি

১৯৬০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে এক ডজন চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন তিনি। শুধু বাংলা নয়, হিন্দি ও উর্দু গান এবং গজলেও ছিল তাঁর পারদর্শিতা।


৪. সংগীত নয়, ছিল বহুমুখী পেশাজীবন

গানকে পেশা না করে সফল ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তিনি। পাকিস্তানে উচ্চপদস্থ কর্পোরেট চাকরির প্রস্তাব পেয়েছিলেন, পেয়েছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের দায়িত্ব। তবে তাঁর সত্যিকারের প্রেম ছিল সৃজনশীলতায়।


৫. একটি বিশুদ্ধ সংগীত পরিবার

তাঁর পরিবারটিও ছিল সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠা। বড় ভাই ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামাল, আর ছোট বোন ফেরদৌসী রহমান দেশবরেণ্য সংগীতশিল্পী। স্ত্রী আসমা আব্বাসী ছিলেন সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাগ্নি। দুই কন্যা সামীরা ও শারমিন আব্বাসীও সাংস্কৃতিক জগতের ঘনিষ্ঠ।


৬. বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের সংগীত

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের গানকে তুলে ধরতে মুস্তাফা জামান আব্বাসী ঘুরেছেন ৪০টির বেশি দেশ। দেশের মাটির গান গেয়ে মুগ্ধ করেছেন শ্রোতাদের। লোকসংগীতের ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য তাঁর কণ্ঠে হয়ে উঠেছিল আন্তর্জাতিক ভাষা।


৭. নায়ক হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া

বিশিষ্ট পরিচালক এহতেশাম তাঁকে সিনেমার নায়ক হিসেবে নেওয়ার প্রস্তাব দেন, কিন্তু মুস্তাফা জামান তা বিনয়ের সঙ্গে ফিরিয়ে দেন। বাবার স্বপ্ন ছিল, একজন ছেলে হবেন ব্যারিস্টার, আরেকজন অভিনেতা। মুস্তাফা জামান হয়েছিলেন neither—তাঁর নিজের মতো একজন সংবেদনশীল শিল্পী ও চিন্তাবিদ।


এক জীবন, বহুমাত্রিক প্রজ্ঞা

মুস্তাফা জামান আব্বাসীর মৃত্যুতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। তিনি ছিলেন একাধারে ইতিহাস, শিল্প ও সমাজচেতনার ধারক। তাঁর লেখা, গান, গবেষণা—সবকিছুতেই ছড়িয়ে আছে বাঙালিয়ানার আত্মা।

বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গন আজ হারাল এক তীর্থপুরুষকে। তাঁর স্মৃতি, অবদান ও সৃষ্টির মধ্য দিয়ে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন এ জাতির হৃদয়ে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ