বিএসএফের ব্যর্থ পুশইন চেষ্টা, উত্তেজনা সীমান্তে

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২৯ ১০:০১:১৪
বিএসএফের ব্যর্থ পুশইন চেষ্টা, উত্তেজনা সীমান্তে

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার চান্দারচর সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশে নাগরিক পুশইনের অভিযোগ উঠেছে। বুধবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ১০৬৪ নম্বর মেইন পিলারের কাছে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলেও বিজিবির হস্তক্ষেপে তা বড় ধরনের সংঘাতে রূপ নেয়নি।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভারতের আসাম রাজ্যের শাহাপাড়া বিওপি থেকে বিএসএফ সদস্যরা কয়েকজন নাগরিককে নিয়ে কাঁটাতারের কাছে আসে এবং বাংলাদেশে পুশইনের চেষ্টা করে। এ সময় সীমান্তবর্তী এলাকার গ্রামবাসীরা চিৎকার ও হৈ-চৈ শুরু করলে, পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, "আমরা দেখেছি, বিএসএফ কিছু লোকজনকে সীমান্তে এনে রেখেছিল। জনগণের প্রতিক্রিয়ার মুখে তারা পিছু হটে এবং ফিরে যাওয়ার আগে ককটেল জাতীয় বিস্ফোরণ ঘটায়।"

চান্দারচর এলাকার বাসিন্দা মামুনও একই ধরনের বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, “হঠাৎ বিকট শব্দে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ধোঁয়ার কুন্ডলি দেখা যায় এবং অনেকেই সীমান্তে ছুটে আসে।”

তবে বিজিবির পক্ষ থেকে ভিন্ন বক্তব্য উঠে এসেছে। রৌমারী সদর কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার সোহেল রানা জানান, “বিএসএফের কয়েকটি গাড়ি সীমান্তে দেখা গেছে এবং গ্রামবাসীর মাঝে উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে পুশইনের কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং ককটেল বিস্ফোরণের প্রমাণও পাওয়া যায়নি।” তিনি আরও বলেন, “সীমান্ত এলাকায় আমাদের টহল দল সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছে, যাতে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না ঘটে।”

সীমান্ত অঞ্চলে ‘পুশইন’ শব্দটি সাধারণত ব্যবহৃত হয় প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের জোরপূর্বক অন্য দেশের সীমানায় প্রবেশ করিয়ে দেওয়ার ঘটনা বোঝাতে। এই ধরনের কর্মকাণ্ড শুধু কূটনৈতিক টানাপড়েনের জন্মই দেয় না, বরং মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। যদিও বিজিবি তা নাকচ করেছে, তবে স্থানীয়দের বর্ণনা ও প্রতিক্রিয়া ঘটনাটিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার দাবি রাখে।

সীমান্ত এলাকায় এমন তীব্র প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে দীর্ঘদিনের অনিয়ন্ত্রিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনার বাস্তব চিত্র। যদিও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক দীর্ঘমেয়াদে সহযোগিতাপূর্ণ, কিন্তু এই ধরনের ঘটনাগুলো সময়ে সময়ে উত্তেজনার সৃষ্টি করে এবং দুদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনায় উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ ও যৌথ তদন্ত প্রয়োজন, যাতে সত্যতা যাচাই করা যায় এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়। একই সঙ্গে স্থানীয়দের নিরাপত্তা ও সচেতনতাও জরুরি, যাতে উত্তেজনা ছড়াতে না পারে।

বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, রৌমারী সীমান্তের এই ঘটনা সীমান্ত নিরাপত্তা, আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্ক ও মানবাধিকার প্রশ্নে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে প্রয়োজন একটি স্বচ্ছ, দ্বিপাক্ষিক ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিভিত্তিক সমাধান।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত