বিদায় কিংবদন্তি মুস্তাফা জামান আব্বাসী

বিনোদন ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১০ ১৩:৫৮:০১
বিদায় কিংবদন্তি মুস্তাফা জামান আব্বাসী

সত্য নিউজ: বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী, গবেষক ও লেখক ড. মুস্তাফা জামান আব্বাসী আর নেই। শনিবার (১০ মে) সকাল সাড়ে ৫টায় রাজধানীর বনানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তার মেয়ে শারমিনী আব্বাসী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বয়সজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন গুণী এই সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব। শেষদিকে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় শুক্রবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে তাঁর মৃত্যু ঘটে।

সংগীত ও সংস্কৃতির আলো হাতে পথচলা

ড. মুস্তাফা জামান আব্বাসী উপমহাদেশের সঙ্গীত ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল নাম। জন্ম ১৯৩৬ সালের ৮ ডিসেম্বর ভারতের কোচবিহার জেলার বলরামপুর গ্রামে। শৈশব-কৈশোর কেটেছে সাংস্কৃতিক চেতনায় সমৃদ্ধ কলকাতায়। তিনি বাংলাদেশের পল্লিগীতি ও লোকসংগীত আন্দোলনের অন্যতম বাহক, যার শেকড় জড়িয়ে আছে কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী ও তার পিতা আব্বাসউদ্দীন আহমদের উত্তরাধিকারে।

তাঁর পারিবারিক পরিমণ্ডল ছিল সাহিত্য ও সঙ্গীতপ্রিয়। মা জাহানারা খাতুন, চাচা আব্দুল করিম, বোন ফেরদৌসী রহমান এবং ভাতিজি নাশিদ কামালসহ পরিবারটির প্রত্যেকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রায় অনন্য অবদান রেখেছেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গেও ছিল তাদের গভীর পারিবারিক সম্পর্ক, যা তাঁর চিন্তা ও সৃষ্টিকে প্রভাবিত করে।

শিক্ষা ও সৃষ্টির যাত্রা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৯ সালে স্নাতক এবং ১৯৬০ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী। সংগীতে উচ্চতর শিক্ষা লাভ করেন ভারত ও পশ্চিমের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। তবে তাঁর সবথেকে বড় পরিচয়—একজন গবেষক এবং সাধক, যিনি লোকসংগীতকে কেবল চর্চাই করেননি, গভীর বিশ্লেষণ ও সংরক্ষণের কাজ করেছেন।

তিনি বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের জন্য অসংখ্য সঙ্গীতবিষয়ক অনুষ্ঠান নির্মাণ করেছেন এবং গানে গানে তুলে ধরেছেন বাঙালির আবেগ, ইতিহাস ও সংস্কৃতি। কলাম লেখক হিসেবেও তাঁর বিশেষ খ্যাতি ছিল। পত্রপত্রিকায় তার লেখা প্রবন্ধ ও স্মৃতিচারণা সাধারণ পাঠকের কাছেও ছিল প্রিয়।

বই ও গবেষণা

মুস্তাফা জামান আব্বাসী বহু সঙ্গীত বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর গবেষণা ও লেখনীতে উঠে এসেছে বাংলা লোকসঙ্গীত, পল্লিগীতি, নজরুলগীতি, লালন সংগীতসহ বিভিন্ন ধারার মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ। তাঁর কাজ একাধারে একাডেমিক ও সাধনানির্ভর, যা এই অঞ্চলের সঙ্গীত ইতিহাস সংরক্ষণে অতুলনীয় অবদান রেখেছে।

একটি যুগের অবসান

মুস্তাফা জামান আব্বাসীর মৃত্যুতে বাংলা সংস্কৃতি হারালো এক আলোকবর্তিকা। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তাঁর প্রকৃত মূল্যায়ন হয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মে আরও পরিষ্কারভাবে প্রতিভাত হবে। তিনি এমন এক সংগীতসাধক ছিলেন, যিনি নিজের পরিবার, প্রজন্ম ও জাতিকে শিল্প-সংস্কৃতির গভীর আত্মপরিচয় দিয়ে গেছেন।

বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনে এই শূন্যতা অপূরণীয়। দেশের সংস্কৃতি ও শিল্পপ্রেমী মানুষ তাঁর কর্ম ও আদর্শে আজীবন প্রেরণা খুঁজে পাবেন।

বিদায় গুণীজন, আপনার সুর বেঁচে থাকবে আমাদের প্রাণে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ