ইসরায়েলের বাণিজ্য-চিত্র: কারা মূল খেলোয়াড়?

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ২৩ ১২:৩৪:১৫
ইসরায়েলের বাণিজ্য-চিত্র: কারা মূল খেলোয়াড়?

সত্য নিউজ: ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি সামরিক হামলা ও পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের জেরে যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান মুক্তবাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেছে। একইসঙ্গে অধিকৃত পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে দেশটি। এই পদক্ষেপের একদিন আগেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যৌথভাবে কড়া বার্তা দিয়েছিল যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং ফ্রান্স।

এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মহলে ইসরায়েলের বাণিজ্যিক সম্পর্কের ওপর একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা কালাস ঘোষণা করেছেন যে, ইসরায়েল ও ইইউর মধ্যে থাকা বিদ্যমান বাণিজ্য সহযোগিতা চুক্তি পর্যালোচনা করা হবে। ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাশ হয়েছে।

ইসরায়েল-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য সম্পর্কের চিত্র

২০২২ সালের জুলাই থেকে ইসরায়েল ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (FTA) নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল বিদ্যমান বাণিজ্য কাঠামোর বাইরের খাতে অংশীদারত্ব বাড়ানো।

জাতিসংঘের বাণিজ্য পরিসংখ্যানভিত্তিক সংস্থা ‘কমট্রেড’-এর তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে যুক্তরাজ্য থেকে ইসরায়েল প্রায় ১৯৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পণ্য ছিল জেট ইঞ্জিন, বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ, ওষুধ এবং গাড়ি। একই বছর যুক্তরাজ্যে ইসরায়েল রপ্তানি করে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য, যার মধ্যে হীরা, রাসায়নিক দ্রব্য, যন্ত্রপাতি এবং ইলেকট্রনিকস ছিল প্রধান।

বৈশ্বিক পরিসরে ইসরায়েলের বাণিজ্য চিত্র

২০২৪ সালে ইসরায়েল মোট ৯,১৫০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি এবং ৬,১৭০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। ইলেকট্রনিকস খাত, বিশেষ করে ইনটেলের মতো কোম্পানির নেতৃত্বে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানিতে বিশাল ভূমিকা রাখে।

রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে:

  • ইলেকট্রনিকস ও যন্ত্রাংশ: ১,৮০০ কোটি ডলার
  • রাসায়নিক ও ওষুধ: ১,০০০ কোটি ডলার
  • হীরা ও রত্নপাথর: ৯০০ কোটি ডলার
  • চিকিৎসা ও প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম: ৭০০ কোটি ডলার
  • খনিজ সম্পদ: ৫০০ কোটি ডলার
  • আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে:
  • ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ: ১,৯০০ কোটি ডলার
  • যানবাহন ও উড়োজাহাজ: ১,০০০ কোটি ডলার
  • রাসায়নিক ও ওষুধ: ৮০০ কোটি ডলার
  • খনিজ সম্পদ: ৭০০ কোটি ডলার
  • রত্নপাথর ও গহনা: ৪০০ কোটি ডলার

শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার দেশসমূহ

ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র, যার পরিমাণ ২০২৪ সালে ছিল ১,৭৩০ কোটি ডলার। এরপর রয়েছে আয়ারল্যান্ড (৩২০ কোটি), চীন (২৮০ কোটি) ও নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ভারত, ফ্রান্স, ইতালি, জাপানসহ আরও একাধিক দেশ।

আমদানির ক্ষেত্রে চীন ২০২৪ সালে ছিল শীর্ষে, যার রপ্তানি পরিমাণ ছিল ১,৯০০ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্র (৯৪০ কোটি) এবং জার্মানি (৫৬০ কোটি) যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

নিষেধাজ্ঞার পরিণতি ও রাজনৈতিক বার্তা

যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপ ইসরায়েলের জন্য কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, একদিকে এটি তাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক পর্যালোচনার ইঙ্গিত দিচ্ছে, অন্যদিকে পশ্চিমা শক্তিগুলোর রাজনৈতিক অবস্থানেরও প্রতিফলন ঘটাচ্ছে।

ইউরোপ ও আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলো যখন বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা ও চুক্তি পর্যালোচনার দিকে অগ্রসর হচ্ছে, তখন ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নীতিনির্ধারণেও এর প্রভাব পড়তে পারে। ফলে একদিকে যুদ্ধাপরাধের দায় এবং অন্যদিকে অর্থনৈতিক চাপ এই দুইয়ের সম্মিলিত চাপে ইসরায়েলের নীতি পরিবর্তনের সম্ভাবনা জোরালো হয়ে উঠছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত