হোয়াইট হাউস না ‘র্যাগিং হাউস’?

সত্য নিউজ: হোয়াইট হাউস, যা এক সময় ছিল বৈশ্বিক রাজনীতির মর্যাদাপূর্ণ সৌজন্যবোধ ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের প্রতীক, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে তা যেন এক ব্যতিক্রমী নাট্যমঞ্চে পরিণত হয়েছিল। বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানিয়ে হোয়াইট হাউসের ভিতরে যেভাবে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, তা অনেকটাই বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিয়র শিক্ষার্থীদের ওপর র্যাগিং দেওয়ার ঘটনার মতোই মনে হয়েছে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের কাছে।
সাম্প্রতিক একটি আলোচিত ঘটনার কেন্দ্রে ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে শুল্ক ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য ওভাল অফিসে উপস্থিত হন তিনি। আলোচনার শুরুতে পরিবেশ ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ট্রাম্প আলোচনা ঘুরিয়ে দেন দক্ষিণ আফ্রিকায় তথাকথিত 'শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা' প্রসঙ্গে। তিনি সেই বিতর্কিত বিষয়টি নিয়ে একটি ভিডিও চালান, যেটি পরবর্তীতে ভুয়া প্রমাণিত হয়। এমনকি তিনি সংবাদপত্রের কাটিং দেখিয়ে তাঁর বক্তব্য সমর্থন করার চেষ্টা করেন। রামাফোসা শান্তভাবে পরিস্থিতি সামাল দিলেও, কাতার থেকে ট্রাম্পের প্রাপ্ত বিলাসবহুল বিমানের উপহারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি কৌশলে কটাক্ষ করেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টকে।
এই তালিকায় শুধু রামাফোসাই নন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও একবার হোয়াইট হাউসের ‘অভ্যর্থনা’ ভুলতে পারেননি। ২০২০ সালের একটি বৈঠকে ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের রূঢ় আচরণে তিনি এতটাই অপমানিত হন যে, খাবার না খেয়ে ওভাল অফিস ত্যাগ করেন।
একই ধরনের ঘটনা ঘটে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সঙ্গে। হোয়াইট হাউসে প্রথম সফরে গিয়ে তিনি বিস্মিত হন যখন ট্রাম্প প্রকাশ্যে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের “৫১তম রাজ্য” বানানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ মন্তব্য কূটনৈতিক শিষ্টাচারকে একপ্রকার বিদ্রূপে পরিণত করে। এমনকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও রেহাই পাননি। হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত ও ব্যক্তিগত আক্রমণাত্মক মন্তব্য পুরো আলোচনার পরিবেশকে জটিল করে তোলে।
ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে হোয়াইট হাউসের অতিথি হতে গিয়ে অনেক রাষ্ট্রপ্রধানকেই অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। কূটনীতির মঞ্চ যেখানে সৌজন্য, সংযম ও রাষ্ট্রীয় ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি- সেখানে ট্রাম্পের ‘র্যাগিংসুলভ’ আচরণ যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী কূটনৈতিক মানদণ্ডের জন্য এক বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এখন অনেক রাষ্ট্রপ্রধানের কাছেই হোয়াইট হাউসের নিমন্ত্রণ মানেই এক অজানা অনিশ্চয়তা ও সম্ভাব্য অপমানের প্রস্তুতি।
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- জুলাই চার্টার ও জাতীয় ঐকমত্য: জামায়াতের অনুপস্থিতি কতটা যুক্তিসঙ্গত?
- বিশ্ববিদ্যালয় সংকট, বাজেট বৈষম্য ও শিক্ষায় ন্যায্যতার দাবি
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- Clash of Civilizations: মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের নতুন রূপরেখা
- চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের ১০টি বড় ক্ষতি
- মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের নতুন কৌশল: চীন ও রাশিয়া কী করবে?
- জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মুখোমুখি বিশ্ব শক্তিগুলো
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- ভোক্তার কষ্ট বুঝছে সরকার:বাণিজ্য উপদেষ্টা
- ২৮ জুন ঢাকায় জনতার ঢল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মহাসমুদ্র!
- এবার পাকিস্তানকে হামলার হুমকি দিল ইসরায়েল
- ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার সতর্কবার্তা