পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়
ডিপ্লোমেটিক শেকআপ: জসীম উদ্দিন দূতাবাসে , সচিব হচ্ছেন নজরুল

বিশেষপ্রতিনিধি:সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন আজ নিজ থেকে পদত্যাগ করছেন। ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে বহুল আলোচিত এই সচিবের বিদায়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় তুলেছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিনির্ধারকরা নিশ্চিত করেছেন—তার এই বিদায় ‘অস্বাভাবিক’ হলেও তা যেন ‘অসম্মানজনক’ না হয়, সে দিকেও ছিল সতর্ক নজর।
দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, তাকে উত্তর আমেরিকায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। মঙ্গলবার এই সংক্রান্ত ফাইল অনুমোদন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ের সংকটময় পরিস্থিতি সামাল দিতে পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ খ্যাত ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা ড. নজরুল ইসলামকে। নতুন সচিব নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত তিনি রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন।
'দুই ফাইলে' বড় সিদ্ধান্ত
সূত্র জানায়, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল—একটি জসীম উদ্দিনকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে পদায়ন এবং অন্যটি নতুন সচিব নিয়োগ সংক্রান্ত—সরকার প্রধানের সিলমোহরের জন্য উপস্থাপন করেন। অনুমোদনের পর ফাইল দুটি সযত্নে নিজের দপ্তরে সুরক্ষিত রাখা হয়েছে। আজ এ সংক্রান্ত ওয়ার্ক অর্ডার জারি করা হতে পারে এবং উপদেষ্টা হোসেন গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতে পারেন বলেও জানা গেছে।
নেপথ্যের গল্প: মনমরা সচিব, স্থগিত এফওসি
১৪ মে মানবজমিনে প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অচলাবস্থার ইঙ্গিত দিয়ে বলা হয়েছিল, সচিব পদে শিগগিরই বড় পরিবর্তন আসছে। গত আট মাসে সচিব জসীম উদ্দিনের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে ‘তালগোল’ লেগেছে বলে অভিযোগ ছিল নানাদিক থেকে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মৌখিক নির্দেশ আসার পর থেকে জসীম উদ্দিন ছিলেন ‘মনমরা’ অবস্থায়। মন্ত্রণালয়ে তার উপস্থিতি ছিল ‘অনুপস্থিতির মতো’। তিনি বৈঠকে অংশ নেননি, গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ও কূটনৈতিক কার্যক্রমেও তার ভূমিকা ছিল নিষ্ক্রিয়। এর প্রভাব পড়ে টোকিওতে নির্ধারিত এফওসি (Foreign Office Consultation) বৈঠকে—যা জসীম উদ্দিনের অনিশ্চয়তার কারণে স্থগিত হয়। পরে জরুরি ভিত্তিতে সেই বৈঠকে পাঠানো হয় ড. নজরুল ইসলামকে।
সম্মানজনক প্রস্থান ও নতুন সমীকরণ
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হোসেন চেষ্টা করেছেন যাতে সরকার ও জসীম উদ্দিন—উভয়ের সম্মান রক্ষা করে একটি ‘সমঝোতামূলক’ সমাধান হয়। আলোচনায় তিনটি বিকল্প ছিল: (১) নিজে থেকে পদত্যাগ, (২) রাষ্ট্রদূত পদে পদায়ন, (৩) ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টর হিসেবে বদলি।
অবশেষে জসীম উদ্দিন সম্মত হন স্বেচ্ছায় বিদায় নিতে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তিনি পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দ্রুততম সময়ে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। তবে সরকারি ওয়েবসাইটে তার নাম যুক্ত হলেও নিয়োগ আদেশ তখন প্রকাশিত হয়নি। আগামী ১২ ডিসেম্বর তার অবসরোত্তর ছুটি (PRL) শুরু হওয়ার কথা।
জসীম উদ্দিনের বিদায় ও নজরুল ইসলামের আগমন কেবল প্রশাসনিক রদবদল নয়, বরং এক সংকটময় সময়ে কূটনীতিকে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ পররাষ্ট্রনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছে—যেখানে দক্ষতা ও নেতৃত্বের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে সবাইকে।
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শেয়ারবাজারে গেম্বলারদের দৌরাত্ম্য: আস্থা ফেরাতে চাই কঠোর শাস্তি ও কাঠামোগত সংস্কার
- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের দীর্ঘ ছুটি, চালু থাকবে জরুরি সেবা
- বাংলাদেশে সেনা-সরকার উত্তেজনা ও ‘কু’ এর গুঞ্জন: নেপথ্যে কি?
- নতুন রাজনৈতিক সমীকরণে কারা টিকে থাকবে, কারা হারিয়ে যাবে?
- সেনাপ্রধানের বক্তব্য, জুলকারনাইন তাতে যা বললেন!
- তারকা পরিচিতি: রক্ষাকবচ না কি সমাজবিমুখ অব্যাহতি?
- নাহিদের স্পষ্ট বার্তা: এনসিপিতে নেই দুই উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজ
- বিএনপির সালাউদ্দিনকে নিয়ে কি লিখলেন প্রেস সচিব শফিকুল?
- বাংলাদেশে আন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপে মৌলিক অধিকার হুমকিতে
- দারুননাজাত: নৈতিকতার আলোকবর্তিকা
- মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসনের ভবিষ্যৎ কেন অনিশ্চিত
- ইউজিসি-ম্যাকগিল পিএইচডি স্কলারশিপ: শুধুমাত্রবাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য
- ডিপ্লোমেটিক শেকআপ: জসীম উদ্দিন দূতাবাসে , সচিব হচ্ছেন নজরুল
- ডিসেম্বরে নির্বাচন চান সেনাপ্রধান
- "ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সব রাজনৈতিক দল অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে"