রবার্ট প্রেভোস্ট: প্রথম আমেরিকান পোপ নির্বাচিত!

সত্য নিউজ: পোপ ফ্রান্সিসের পরবর্তী পোপ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন রবার্ট প্রেভোস্ট, যিনি পোপ লিও চতুর্দশ নামে পরিচিত হবেন। তিনি ইতিহাসে প্রথম আমেরিকান পোপ হিসেবে অভিষিক্ত হলেন, যা ক্যাথলিক গির্জার জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। নির্বাচনের পর, সিস্টিন চ্যাপেলের চিমনি থেকে সাদা ধোঁয়া বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন পোপের নাম ঘোষণা করা হয়, যা ভ্যাটিকান সিটিতে ব্যাপক উল্লাস সৃষ্টি করে।

নতুন পোপের নাম ঘোষণা হওয়ার আগে, সিস্টিন চ্যাপেলের বালকনি থেকে একটি ট্যাপেস্ট্রি ঝুলানো হয়, যা কার্ডিনালদের মাধ্যমে নতুন পোপের উপস্থিতির সংকেত দেয়। এরপর, সিস্টিন চ্যাপেলের সামনে উপস্থিত হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ উদ্দীপ্ত হয়ে 'ভিভা পাপা' (পোপ দীর্ঘজীবী হোন) স্লোগান দেয়। এই ঐতিহ্যবাহী উল্লাসের মাধ্যমে তারা নবনির্বাচিত পোপকে স্বাগত জানায়।

‘সাদা ধোঁয়া’—নতুন পোপ নির্বাচনের ঐতিহ্য
ভ্যাটিকান সিটির সিস্টিন চ্যাপেল একটি বিশেষ স্থান, যেখানে পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়া অত্যন্ত গোপনীয়তা ও গুরুত্বের সঙ্গে সম্পন্ন হয়। নির্বাচনের প্রক্রিয়া শেষে, সাদা ধোঁয়া বের হলে তা নিশ্চিত করে যে নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন। এটি একজন গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়ার এক ঐতিহ্য। আগে, ভোটের পর যখন কালো ধোঁয়া বের হয়, তখন তা নির্দেশ করে যে পোপ নির্বাচিত হয়নি, আর সাদা ধোঁয়া দেখালে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে নির্বাচিত পোপ উপস্থিত হচ্ছেন।

রবার্ট প্রেভোস্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে উপস্থিত হয়ে জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। তার ভাষণে তিনি বলেন, “তোদের সকলের উপর শান্তি বর্ষিত হোক,” যা ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের জন্য এক শক্তিশালী বার্তা।

পোপ লিও চতুর্দশের প্রথম ভাষণ
শিকাগোতে জন্মগ্রহণকারী পোপ লিও চতুর্দশ তার প্রথম ভাষণে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন এবং শান্তির বার্তা প্রদান করেন। তার কথায় একটি অন্তর্নিহিত সংকেত ছিল, যে সকল বিশ্বাসীকে শান্তি, ঐক্য এবং সহমর্মিতার মধ্যে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে উপস্থিত জনতা তাকে উল্লাসের সঙ্গে স্বাগত জানায় এবং পোপের দীর্ঘজীবনের প্রার্থনা করেন।

পোপ ফ্রান্সিসের প্রয়াণ ও নতুন পোপ নির্বাচন প্রক্রিয়া
পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর, যা ২১শে এপ্রিল ২০২৫ সালে ঘটে, পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ৮৮ বছর বয়সী পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে ক্যাথলিক গির্জা একটি নতুন নেতার সন্ধান শুরু করে। গির্জার পরবর্তী নেতাকে নির্বাচিত করার জন্য এক ঐতিহ্যবাহী প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে "কনক্লেভ"—কার্ডিনালদের একটি সম্মেলন, যা গোপনীয়তার সঙ্গে নতুন পোপ বাছাই করে।

এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া হতে পারে, যেমনটি অতীতে হয়েছে—যেখানে কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে গিয়েছিল। তবে, এবারের কনক্লেভ দ্রুত গতিতে পোপ নির্বাচন সম্পন্ন করেছে।

নির্বাচন প্রক্রিয়ার শুরু ও সিস্টিন চ্যাপেলের ভূমিকা
ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় প্রার্থনা অনুষ্ঠান এবং কনক্লেভের মাধ্যমে পোপ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ৯১ বছর বয়সী কার্ডিনাল ডিন, জিওভান্নি বাতিস্তা রে-এর সভাপতিত্বে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশাল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ জনগণ, যারা সাদা ধোঁয়া বের হওয়ার পর উল্লাস প্রকাশ করেন।

সিস্টিন চ্যাপেল, যেখানে মাইকেলেঞ্জেলোর চিত্রকর্ম রয়েছে, সেখানে কার্ডিনালরা একান্তভাবে তাদের পছন্দের পোপ প্রার্থীদের নির্বাচন করেন। ভোট চলাকালে, প্রতি ভোট শেষে ব্যালট পেপার পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং চুল্লি থেকে ধোঁয়া বের হয়—কালো ধোঁয়া মানে নির্বাচন হয়নি, আর সাদা ধোঁয়া মানে পোপ নির্বাচিত হয়েছেন।

পোপ নির্বাচনের গোপনীয়তা ও প্রক্রিয়ার গুরুত্ব
ভ্যাটিকান সিটির কনক্লেভ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন সম্পন্ন করার সময় গোপনীয়তা বজায় রাখা হয় এবং কার্ডিনালরা একান্তে ভোট দেন। নতুন পোপ নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত, ‘কলেজ অব কার্ডিনালস’ গির্জার কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকে। পোপ নির্বাচনের জন্য চলমান প্রক্রিয়া কখনো কখনো বেশ কয়েক সপ্তাহও সময় নিতে পারে, যার মধ্যে কার্ডিনালদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেও যেতে পারেন।

নতুন পোপের নির্বাচিত হওয়া শুধুমাত্র ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য এক শক্তিশালী ধর্মীয় বার্তা প্রদান করে। পোপ লিও চতুর্দশের অভিষেক নতুন যুগের সূচনা করতে যাচ্ছে, যেখানে তার নেতৃত্বে শান্তি, ঐক্য এবং মানবতার কল্যাণে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে।