ইসরাইলের পরাজয় ঠেকাতে পারছে না ট্রাম্পও

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৯ ০৮:১৩:৩৬
ইসরাইলের পরাজয় ঠেকাতে পারছে না ট্রাম্পও

সত্য নিউজ:

সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর যেন এক টেলিভিশন গেম শো। এই সফরের নামে কেউ চাইলে বলতে পারেন, 'দ্য হোয়াইট হাউস অন উবার: হাউ টু প্রিপারচেজ আ ইউএস প্রেসিডেন্ট'। এমন এক শো, যেখানে ট্রাম্প স্ক্রিপ্টে ফিরে গেছেন এবং ঘোষণা দিয়েছেন—উদার হস্তক্ষেপ ছিল ‘এক বিপর্যয়’। আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেন বা রাশিয়া—সব উদাহরণ দিয়েই তিনি বোঝাতে চাইলেন, জোর করে কোনো দেশকে ভেঙে নতুনভাবে তৈরি করা যায় না।

ট্রাম্প একদিকে ইয়েমেনে মার্কিন বোমাবর্ষণ বন্ধ করেছেন, অন্যদিকে সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এমনকি ইরানের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনার ইঙ্গিতও দিয়েছেন। এসব পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের আধিপত্য বিস্তারের দুটি রাস্তাই সংকুচিত হয়েছে—সিরিয়াকে বিভক্ত করা এবং ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধানো।

তবে ইরান এখনো ট্রাম্পকে বিশ্বাস করে না। অতীতের প্রতিশ্রুতি ও পরবর্তী প্রতারণা তাদের শিক্ষা দিয়েছে, হোয়াইট হাউসের কথা সব সময় বাস্তবায়িত হয় না।ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা তোলার ঘোষণায় মার্কিন ট্রেজারি কর্মকর্তারাও স্তম্ভিত, কারণ এসব বহুস্তরবিশিষ্ট আইনি কাঠামো কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া সরানো সম্ভব নয়।

এদিকে ট্রাম্পের সফরের সময় মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় দেশগুলো বিশাল অঙ্কের অর্থ ঢেলেছে। সৌদি আরব দিয়েছে ৬০০ বিলিয়ন ডলার, কাতার করেছে ১.২ ট্রিলিয়ন ডলারের চুক্তি। তাঁকে উপহার দেওয়া হয়েছে বোয়িং ৭৪৭ বিমান, এরিক ট্রাম্পের জন্য দুবাইয়ে টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনা হয়েছে—এ যেন একধরনের ‘ট্রাম্প সন্তুষ্টি প্রতিযোগিতা’।

এই চমকপ্রদ কূটনৈতিক খেলায় যখন মরুদেশের ধনীরা বিলাসে মত্ত, ঠিক তখনই গাজায় রক্ত ঝরছে।১৮ মার্চের আশপাশে ১০০ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল খান ইউনুসে ইউরোপিয়ান হাসপাতালে হামলা চালিয়ে হামাস নেতা মুহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যা করতে চেয়েছে। যদিও তিনি নিহত হয়েছেন কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

চমকপ্রদ তথ্য হলো—হামাসের বিদেশি রাজনৈতিক শাখা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু মুহাম্মদ সিনওয়ার তা প্রত্যাখ্যান করেন, কারণ এতে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা ছিল না।

বিশ্লেষকদের মতে, যদি সিনওয়ার নিহত হন, তবে হামাসের নেতৃত্বে শূন্যতা সৃষ্টি হবে। এটি ইসরায়েলের কৌশলেরই অংশ, কারণ সংগঠনের গঠন ভেঙে দিতে পারলে প্রতিরোধ দুর্বল হবে।

তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়—ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যুদ্ধ থামাতে চান না। তাঁর লক্ষ্য গাজা পুরোপুরি ধ্বংস করা। ২১ লাখ মানুষের মধ্যে যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁদের অনাহার ও বোমায় মৃত্যু বাধ্যতামূলক করে তুলছেন।জাতিসংঘের মানবিক প্রধান টম ফ্লেচার বলেও ফেলেছেন, “আর কত প্রমাণ দরকার? এবার কি আপনি সত্যিই কিছু করবেন গণহত্যা ঠেকাতে?”

মধ্যপ্রাচ্যের আরব নেতাদের এই পরিস্থিতিতে নীরবতা এক ভয়াবহ বিশ্বাসঘাতকতা। সৌদি যুবরাজ সালমান, আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বিন জায়েদ বা কাতারের আমির তামিম—কারও মুখে ইসরায়েলের সমালোচনা নেই।

গাজায় আজ ভিয়েতনাম যুদ্ধের ছায়া। আমেরিকা যেমন ভিয়েতনামে প্রতিটি যুদ্ধে জয় পেয়েও পুরো যুদ্ধে হেরে গিয়েছিল, তেমনি ইসরায়েল মাঠে হয়তো এগোচ্ছে, কিন্তু নৈতিকতা, কৌশল ও ইতিহাসের আদালতে হেরে যাচ্ছে।

পরিসংখ্যান ভয়াবহ: ভিয়েতনামে ৮ বছরে ৫০ লাখ টন বোমা পড়েছে; গাজায় মাত্র এক বছরে ১ লাখ টন। গড়ে প্রতি বর্গকিলোমিটারে গাজায় ২৭৫ টন, যা ভিয়েতনামের তুলনায় ১৮ গুণ বেশি। তবুও গাজার মানুষ আত্মসমর্পণ করেনি।

ইসরায়েলের ‘অপারেশন গিডিওনের রথ’-এর লক্ষ্য হলো গাজাকে শূন্য করে ফেলা। তবে পরিস্থিতি বলছে, গাজাবাসীরা সহজে হাল ছাড়বে না।আজ ইতিহাসের সামনে প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে—কে জিতছে আর কে হেরে যাচ্ছে?

উত্তর হয়তো পাওয়া যাবে, কিন্তু রক্ত দিয়ে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ: বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা

বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, এবং এই পরিবর্তনটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ।... বিস্তারিত