ট্রাম্পের অভ্যর্থনায় আই-আইয়ালা: কতটুকু জানেন আপনি?

সত্য নিউজ: সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক ব্যতিক্রমধর্মী অভ্যর্থনা পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ঐতিহ্যবাহী আই-আইয়ালা নৃত্যের ছন্দে, রঙিন পোশাকে একদল নারী চুল ওড়ানো নৃত্য পরিবেশন করেন ট্রাম্পের সামনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ট্রাম্পের চারপাশে এই নাচ দেখতে পাওয়া যায়। দৃশ্যটি যেমন বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে, তেমনি বিতর্কও তৈরি করেছে।
ঐতিহ্যের শিকড়: আই-আইয়ালা নাচ কী?
ইউনেস্কো ২০১৪ সালে আই-আইয়ালা নাচকে মানবজাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেয়। মূলত পুরুষদের দ্বৈত সারিবদ্ধ অবস্থানে দাঁড়িয়ে বাঁশের লাঠি হাতে কাব্য ও সংগীতের তালে তাল মিলিয়ে করা এক যুদ্ধ-ঐতিহ্যভিত্তিক নৃত্য এটি। সামরিক শক্তি, সম্মান এবং ঐক্য প্রকাশের প্রতীক ছিল এই নৃত্য। মাঝখানে ঢোল ও তবলার তালে পুরো পরিবেশনা সম্পন্ন হয়।
সময়ের প্রবাহে এই ঐতিহ্য বিবর্তিত হয়েছে। নারীশিল্পীরা পরবর্তীকালে এই পরিবেশনায় যুক্ত হন, বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। নারীদের অংশগ্রহণে আই-আইয়ালা নাচে নতুন মাত্রা যুক্ত হয় দীর্ঘ চুল এক পাশ থেকে আরেক পাশে ছুড়ে দিয়ে ছন্দময় এক নৃত্যভঙ্গি। এটি শুধু শারীরিক সৌন্দর্য বা গ্ল্যামারের উপস্থাপন নয়, বরং ঐতিহ্য ও সম্মান প্রকাশের এক নান্দনিক উপায় হিসেবেই বিবেচিত হয় স্থানীয় সংস্কৃতিতে।
বেদুইন বিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি
বিবিসি ও গালফ নিউজ জানায়, আরব উপদ্বীপের বেদুইন সংস্কৃতিতে এই নাচ ছিল নারীদের পক্ষ থেকে পুরুষদের সাহসিকতা ও সুরক্ষার ওপর আস্থা প্রদর্শনের মাধ্যম। একে ‘কবিতার নৃত্য’ বলেও আখ্যায়িত করা হয়। আই-আইয়ালার প্রতিটি ধাপে গাঁথা থাকে সমাজের ভেতরের সম্পর্ক, মর্যাদা এবং সংস্কৃতির দীর্ঘ ইতিহাস।
ট্রাম্প ও সাংস্কৃতিক রাজনীতি
এই নৃত্য পরিবেশন সামনে রেখে ট্রাম্পের উপস্থিতি কিছু পর্যবেক্ষকের কাছে দ্ব্যর্থবোধক ঠেকেছে। কেউ বলছেন, এটি কেবল একটি সাংস্কৃতিক সৌজন্য, কেউ বলছেন রাজনৈতিক কৌশল। অনেকে আবার প্রশ্ন তুলেছেন, একজন পশ্চিমা রাজনৈতিক ব্যক্তিকে এইভাবে অভ্যর্থনা জানানো কি ঐতিহ্যের সীমা লঙ্ঘন নয়?
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বৈশ্বিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে কূটনৈতিক সৌজন্য এবং সাংস্কৃতিক অভ্যর্থনার এমন অভিন্ন চিত্র নতুন নয়। বরং এর মধ্য দিয়ে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো নিজেদের ঐতিহ্যকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে চায়।
আই-আইয়ালা নাচ শুধুই একটি পরিবেশনা নয়; এটি এক সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়ের বহিঃপ্রকাশ, যা যুগ যুগ ধরে আরব সমাজে স্থান করে নিয়েছে। ট্রাম্পকে দেওয়া এই অভ্যর্থনা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, এ ঘটনাটি বিশ্ববাসীর চোখ ফেরাতে বাধ্য করেছে আরব বিশ্বের নান্দনিক ও ঐতিহ্যবাহী শিল্পরূপের দিকে।
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ভবিষ্যতের গণতন্ত্র না পুরাতনের পুনরাবৃত্তি? ইউনুস-তারেক সাক্ষাৎ পর্যালোচনা
- জুলাই চার্টার ও জাতীয় ঐকমত্য: জামায়াতের অনুপস্থিতি কতটা যুক্তিসঙ্গত?
- রিজার্ভের দাপট: বিদ্যুৎ খাতের ১৪ কোম্পানি বিনিয়োগের নতুন ঠিকানা
- ইউনূস-তারেক ঐতিহাসিক ও সফল বৈঠক: সংস্কার, একতা ও ন্যায়বিচার— এই তিন স্তম্ভে গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
- উৎসব: ঈদের পর্দায় অনবদ্য এক উদযাপন
- Clash of Civilizations: মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের নতুন রূপরেখা
- মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যের নতুন কৌশল: চীন ও রাশিয়া কী করবে?
- লন্ডনে তারেক-ইউনূসের বৈঠকের পরে পর পর ২টি স্ট্যাটাসে কি বললেন পিনাকী?
- তুরস্ক, সৌদি, ইরান-পাকিস্তানের হাতে ‘ইসলামিক আর্মি’ গঠন! কি হতে যাচ্ছে?
- ইসরায়েলে ইরানি মিসাইল, নিহত অন্তত ৭
- ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার সতর্কবার্তা
- ভোক্তার কষ্ট বুঝছে সরকার:বাণিজ্য উপদেষ্টা
- ২৮ জুন ঢাকায় জনতার ঢল: সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হবে মহাসমুদ্র!
- নির্বাচিত নারী, অলঙ্কার নয়: গণতন্ত্রে নারীর শক্তির সন্ধান
- ইরানের কাছে বর্তমানে পরমাণু অস্ত্র নেই:নেতানিয়াহু