যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ কোটি ডলারের থাড ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করল ইরান

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিনের সংঘাত শেষে অবশেষে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এই সংঘাতে উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে এটিকে শুধু ইসরায়েলের পরাজয় হিসেবে নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পরাজয় হিসেবেও দেখা হচ্ছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র তাদের মিত্র ইসরায়েলকে সহায়তা দিতে গিয়ে উন্নত মানের প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র (থাড) হারিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ক্ষয়ক্ষতি
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) মেহের নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের প্রকাশিত নথি থেকে জানা যায়, ইসরায়েলকে সহায়তা দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৫০ কোটি ডলারের উন্নত মানের থাড ক্ষেপণাস্ত্র হারিয়েছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ও দ্য ওয়ার জোন, বিজনেস ইনসাইডারের মতো মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনেও এই তথ্য উঠে এসেছে।
পেন্টাগনের নথি ও ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা
পেন্টাগনের সদ্য প্রকাশিত বাজেট নথিতে দেখা গেছে, গত জুনে ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষে প্রায় ৫০ কোটি ডলার মূল্যের ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রতিস্থাপনের জন্য পেন্টাগন ৪৯৮ দশমিক ২৬৫ মিলিয়ন ডলারের জরুরি তহবিল চেয়েছে।
নথিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েলকে সমর্থন দিতে যুক্তরাষ্ট্র ‘১০০ থেকে ১৫০টি থাড ক্ষেপণাস্ত্র’ নিক্ষেপ করেছিল। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রতিস্থাপনের জন্য মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
সূত্র : মেহের নিউজ এজেন্সি
ইসরায়েলের নেতাদের জন্মনাম ও পরিচয় পরিবর্তনের যত কারণ
ইসরাইলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রকৃত জন্মনাম ছিল বেনিয়ামিন মিলেকোভস্কি। তবে তার বাবা ফিলিস্তিনে পুনর্বাসিত হওয়ার পরই তারা নতুন উপাধি গ্রহণ করেন, এবং তখন থেকে পরিবারের সকল সদস্যের সঙ্গে ‘নেতানিয়াহু’ যুক্ত হয়, যার অর্থ ‘সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত’। এ ঘটনা কোনো একক উদাহরণ নয়; ইসরাইলের অন্যান্য শীর্ষ রাজনীতিকদের নামেও একই ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ফিলিস্তিনে আসার পর তারা জায়নবাদী আদর্শ অনুসারে হিব্রু ভাষায় নতুন নাম গ্রহণ করেন।
নেতানিয়াহুর দাদার নাম নাথান মিলেকোভস্কি, যিনি পোল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং রুশ-ইহুদি রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পরিবারে ছিলেন। তার ছেলে, জন্মসূত্রে বেনজিয়ন মিলেকোভস্কি, ফিলিস্তিনে আসার পর নিজের নাম পরিবর্তন করে বেনজিয়ন নেতানিয়াহু গ্রহণ করেন। একইভাবে ইসরাইলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বেন গুরিয়নও জন্মনাম ডেবিড গুরিয়ন থেকে হিব্রু নাম গ্রহণ করেন, যার অর্থ ‘সিংহশাবক’। দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী মোশে শারেতের জন্মনাম ছিল মোশে শেরতক, যাকে ১৯৪৯ সালে হিব্রু নাম দেওয়া হয়।
ইসরাইলের একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী গোলদা মাইর ইউক্রেনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তার নাম ছিল গোল্ডি মাবোভিচ। বিয়ের পর তিনি গোল্ডি মায়ারসন নাম গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে ১৯৫৬ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সময় নাম পরিবর্তন করে গোলদা মাইর হিসেবে পরিচিত হন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইজহাক শামির জন্মনাম ছিল ইৎজহাক ইয়াজিরনেস্কি, এবং এহুদ বারাক, অ্যারিয়েল শ্যারন, শিমন পেরেস, লেভি এশকলসহ অন্যান্য শীর্ষ রাজনীতিকও হিব্রু নাম গ্রহণ করেন।
নাম পরিবর্তনের এই প্রক্রিয়া কেবল উচ্চপদস্থ রাজনীতিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; এটি অন্যান্য স্তরের ইহুদি জনগোষ্ঠীর মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। এই পরিবর্তন সরকারি ও সামরিক নীতির অংশ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ১৯৪৮-৪৯ সালে প্রায় ১৭ হাজার বসতি স্থাপনকারী নিজেদের জন্মনাম পরিবর্তন করে হিব্রু নাম গ্রহণ করেন। ইসরাইলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বেন-গুরিয়ন সরকারি কর্মকর্তা ও কূটনীতিকদের হিব্রু নাম গ্রহণের নির্দেশ দেন এবং ‘কমিটি ফর হিব্রু নেমস’ গঠন করা হয়, যা নাম পরিবর্তনের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে।
হিব্রু ভাষার পুনর্জীবন আধুনিক ইহুদি জাতীয় পরিচয় ও জায়নবাদী আদর্শের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। কথ্য হিব্রু ভাষা প্রায় ১৭০০ বছর আগে ধর্মীয় আচার ও তোরাহ চর্চার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। ইলিয়েজার বেন ইয়েহুদা ১৮৮১ সালে ফিলিস্তিনে এসে হিব্রু ভাষাকে পুনর্জীবিত করেন। তিনি বাইবেল, তালমুদিক সাহিত্য, জার্মান ও ফরাসি ভাষা থেকে শব্দ সংগ্রহের মাধ্যমে আধুনিক হিব্রু ভাষার মৌলিক কাঠামো গড়ে তোলেন। আরবি থেকে শব্দ গ্রহণও তার কৌশলের অংশ ছিল, কারণ আরবি ও হিব্রু একই সেমিটিক পরিবারের অন্তর্গত। আধুনিক হিব্রু ভাষার পুনর্জীবন শুধুমাত্র ভাষাগত উদ্যোগ নয়; এটি জায়নবাদী জাতীয়তাবাদের মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত।
পরম লক্ষ্য ছিল ধর্মীয় পরিচয় থেকে সেক্যুলার জাতীয়তাবাদের দিকে ইহুদি পরিচয় রূপান্তর করা। প্রথাগত ইহুদি পরিচয় ধর্মীয় আচরণ ও তোরাহ চর্চার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু জায়নবাদীরা এই পরিচয়কে জাতীয়তাবাদে রূপান্তর করতে হিব্রু ভাষাকে ব্যবহার করেন। এ কারণে আধুনিক ইসরাইলের ৬০ শতাংশ নাগরিক নিজেদের ধর্মহীন হিসেবে পরিচয় দেন। একই সঙ্গে এটি বৈচিত্র্যময় ইহুদি জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করতে সহায়তা করে।
১৯৪০-৫০-এর দশকে ইহুদিরা বিভিন্ন ভাষা ইদিস, লাদিনো, আরবি, জার্মান, রুশ, ফরাসি বলত। তাই জাতীয় পরিচয় স্থাপনের জন্য হিব্রু ভাষার প্রয়োজন ছিল। ইদিস ভাষার সমৃদ্ধ সাহিত্যিক ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও জায়নবাদীরা হিব্রুকে বেছে নেন। কারণ ইদিস তাদের মুক্তির লক্ষ্য এবং জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করেছিল।
নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে শুধু ব্যক্তি নয়, ভৌগোলিক স্থানের নামও হিব্রু ভাষায় রূপান্তর করা হয়। ফিলিস্তিনে ২,৭৮০টি ঐতিহাসিক স্থানের নাম হিব্রুতে বদলে ফেলা হয়; এর মধ্যে রয়েছে গ্রাম, শহর, প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, নদী, উপত্যকা, ঝরনা এবং পাহাড়। অনেক ক্ষেত্রে ধ্বনিগত পরিবর্তন, যেমন সোরা থেকে জোরা, বা বাইবেলিক শব্দ ব্যবহার করে নামকরণ করা হয়। নতুন হিব্রু নামের উদাহরণ উম আল-রাশরাশ থেকে ইলাত, ম্লাবিস থেকে পেতাহ তিকভা।
এই নাম পরিবর্তন প্রক্রিয়া শুধু সাংস্কৃতিক নয়, বরং স্মৃতিহত্যার কৌশলও। ১৯৪৭-৪৯ সালের মধ্যে প্রায় ৪০০টি ফিলিস্তিনি গ্রাম ধ্বংস করা হয়, এবং সেখানে হিব্রু নামকরণ ও বনভূমি নির্মাণের মাধ্যমে ইতিহাস ও স্মৃতিকে মুছে ফেলা হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বসতি, ভূমি ও ভাষা নতুন জাতীয়তাবাদী ন্যারেটিভের সঙ্গে পুনর্গঠিত হয়, যা জায়নবাদী রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রজেক্টের অংশ হিসেবে কার্যকর।
‘খাবারোভস্ক’ উন্মোচন: রাশিয়ার পানির নিচে নতুন প্রলয়াস্ত্রের যুগ শুরু
রাশিয়া তাদের নতুন জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক অস্ত্র সিস্টেমের একটি বড় উপাদান হিসেবে নতুন ক্লাসের একটি ভারী পারমাণবিক সাবমেরিন, নামেছি ‘খাবারোভস্ক’, আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছে।
রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসোভ সেভমাশ জাহাজঘাটিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই সাবমেরিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করেন, যেখানে রাশিয়ান নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল আলেকজান্ডার মোইসেয়েভ এবং জাহাজ নির্মাণ শিল্পের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বেলোসোভ তার উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, আজকার এই দিনে সেভমাশ থেকে আমাদের নতুন উচ্চক্ষমতার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ক্রুজার ‘খাবারোভস্ক’ জাহাজে নামার মাধ্যমে রাশিয়ার সামুদ্রিক সক্ষমতা একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক পাড়ি দিয়েছে।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবরণ অনুযায়ী, এই সাবমেরিনটি বিশেষভাবে আধুনিক পানিতলের যুদ্ধোপকরণ এবং রোবোটিকিক সিস্টেম বহন করার ক্ষমতা বিবেচনায় রেখে নির্মিত হয়েছে, যাতে সম্মিলিতভাবে গভীর সমুদ্র অভিযান ও স্বয়ংক্রিয় তৎপরতা চালানো সম্ভব হয়।
জাহাজ নির্মাণ কাজটি করেছে রুশ জাহাজনির্মাণ প্রতিষ্ঠান সেভমাশ এবং সাবমেরিনটির প্রযুক্তিগত নকশা করেছে রুবিন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন ব্যুরো, যা জানায় যে এটি জটিল মেকানিকাল ও ইলেকট্রনিক লোড আউট সামলাতে সক্ষম।
রুশ সংবাদমাধ্যম টাস উল্লেখ করেছে, খাবারোভস্ক ক্লাসের এই প্ল্যাটফর্মসমূহ দেশের সামুদ্রিক সীমা রক্ষায় ও আন্তর্জাতিক মহলে রুশ স্বার্থ সুরক্ষায় কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
রুশ দৈনিক কমারসান্ট আরও জানায় যে, ভবিষ্যতে খাবারোভস্ক-শ্রেণির সাবমেরিনগুলোকে মূল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে পানির নিচে চলাচলকারী উচ্চক্ষমতার ড্রোন ‘পোসাইডন’ পরিচালিত হবে।
পোসাইডন নামক এই ড্রোন সংক্রান্ত পরীক্ষার বিষয়ের দিকে ফিরে গত সপ্তাহে রাশিয়া জানিয়েছে তারা সফলভাবে একটির পরীক্ষা সমাপ্ত করেছে, যার শক্তি সরবরাহে একটি ক্ষুদ্র পারমাণবিক চালক ব্যবহৃত হয়েছে।
রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এক বিবৃতিতে বলেছেন যে, ওই পোসাইডন ড্রোনকে একটি ‘মাদার সাবমেরিন’ থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে এবং এতে ব্যবহৃত পারমাণবিক রিঅ্যাক্টরের আকার ও কনফিগারেশন কৌশলগত সাবমেরিনে ব্যবহৃত রিঅ্যাক্টরের তুলনায় অনেকটা ছোট।
রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ এই সিস্টেমকে ‘ডুমসডে মিসাইল’ হিসেবে অভিহিত করেছেন, যা এর সম্ভাব্য ধ্বংসাত্মক ক্ষমতার প্রতি ইঙ্গিত করে।
রুশ পার্লামেন্টের প্রতিরক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান আন্দ্রেই কার্তাপোলভ অভিযোগ করেছেন যে এই ড্রোনটির ক্ষমতা একবার প্রয়োগ হলে পুরো উপকূলীয় কোনো একটি দেশের অবকাঠামো ধ্বংসের জন্য সক্ষম হতে পারে।
অন্যদিকে, রাশিয়ার বাইরে অনেক সামরিক ও বৈজ্ঞানিক বিশেষজ্ঞ পোসাইডনের কার্যকারিতা, পরিসীমা এবং কৌশলগত বাস্তবায়ন নিয়ে শংকিত এবং প্রশ্ন তুলেছেন; তাদের বিশ্লেষণে রাশিয়ার দাবি কোনো কোনো দিক থেকে অতিরঞ্জিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এতসব বিতর্ক ও সমালোচনার মাঝেও ক্রেমলিন এবং রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম স্পষ্টভাবে এই ধাঁচের সামুদ্রিক ম্যানুভারকে রাশিয়ার নৌকৌশলগত ক্ষমতা বাড়ানোর একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে উপস্থাপন করছে।
অবসরে থাকলেও, খাবারোভস্ক এবং পোসাইডন চক্রবৃদ্ধি রুশ সামুদ্রিক নীতি ও কৌশলে দীর্ঘ সময়ের জন্য প্রভাব ফেলতে পারে; এ কারণে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক এবং সমুদ্র নিরাপত্তা বিশ্লেষকগণের মনোযোগ এই প্রকল্পের উন্নয়ন, পরীক্ষার ফলাফল ও বাস্তব আইনি ও কৌশলগত প্রভাবের দিকে নিবদ্ধ থাকবে।
-রফিক
বিদেশি ‘সরকার পরিবর্তন বা জাতি গঠনের’ মার্কিন নীতির দিন শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড
অন্য দেশের সরকার পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্র যে নীতি মেনে আসছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে এসে তা শেষ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড। তিনি দাবি করেন, অন্য দেশে অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রব্যবস্থা চাপানোর নীতির কারণে মিত্রের চেয়ে শত্রুই বেশি তৈরি হয়েছে।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বার্তা সংস্থা এপি এই তথ্য জানিয়েছে। বাহরাইনে অনুষ্ঠিত ‘মানামা ডায়ালগ’ নিরাপত্তা সামিটের আগে তুলসী গ্যাবার্ড এই মন্তব্য করেন।
পুরোনো বৈদেশিক নীতির ব্যর্থতা
মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি—যা রিজিম চেইঞ্জ বা রাষ্ট্র গঠনের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়েছে—তা এক ধরনের ব্যর্থ চক্রে আটকে ছিল। তিনি এই নীতিকে ‘একমাত্রিক ও একরূপ’ বলেও অভিহিত করেন।
তিনি মনে করেন, শাসক পরিবর্তনের মাধ্যমে অন্য দেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা চাপানো এবং নানা সংঘাতে অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে মিত্রের চেয়ে অধিক শত্রু তৈরি হয়েছে। তুলসী গ্যাবার্ডের মতে, এমন নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয়, অগণিত প্রাণহানি এবং অনেক ক্ষেত্রে বৃহত্তর নিরাপত্তা হুমকি তৈরি হয়েছে।
ট্রাম্পের অবস্থান ও মধ্যপ্রাচ্যের চ্যালেঞ্জ
তুলসী গ্যাবার্ডের এই মূল্যায়ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিজস্ব ভাবনার সঙ্গে মিলে যায়, যা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে প্রতিফলিত হয়েছিল।
আফগানিস্তান: ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের চুক্তি করেছিলেন, যা বাইডেন প্রশাসনের সময়ে ২০২১ সালে বিশৃঙ্খলভাবে শেষ হয়।
সিরিয়া: এছাড়া তিনি সিরিয়ার সাময়িক প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল-শারাকে গ্রহণ করেছেন।
তবে তুলসী গ্যাবার্ড মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের নীতি এখনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তিনি বলেন, সামনের পথ সহজ বা সরল হবে না, তবে ট্রাম্প এই পথে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তুলসী গ্যাবার্ডের এই বক্তব্য ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য সফরকালের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি। যদিও তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের দক্ষিণ আমেরিকায় যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন, মাদকবহনের অভিযোগ তুলে জাহাজে হামলা এবং ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
ইসরায়েলের হামলা ও সীমিত হিউম্যানিটেরিয়ান সাহায্য: গাজা-লেবাননে নতুন উত্তেজনা
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গাজা-রক্ষাকারী আংশিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, ইসরায়েল এখনও প্রতিশ্রুত সহায়তার মাত্র অংশই পৌঁছে দিয়েছে। গাজা উপত্যকায় পৌঁছানোর কথা ছিল দৈনিক ৬০০ ট্রাকের ত্রাণ সামগ্রী, কিন্তু বাস্তবে ইসরায়েল অনুমোদন দিয়েছে মাত্র ১৪৫টি ট্রাকের। এই পরিস্থিতি ত্রাণ কার্যক্রমকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে এবং সাধারণ মানুষ এখনও খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সেবায় প্রবল সংকটে রয়েছে।
উত্তেজনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে লেবাননের দক্ষিণে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ হামলা পূর্বে দীর্ঘকাল ধরে স্থায়ী শান্তি বজায় রাখা গাজা-লেবাননের সীমান্তের পরিস্থিতিতে নতুন ধাক্কা দিয়েছে। বিশেষত, গত বছর হিজবুল্লাহর সঙ্গে প্রায় এক বছরের যুদ্ধবিরতির চুক্তি ছিল, যা এই হামলার পর অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
আরব ও মুসলিম দেশের মন্ত্রীরা আগামী সোমবার ইস্তানবুলে বৈঠক করবেন। বৈঠকে গাজা যুদ্ধবিরতি কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ, আন্তর্জাতিক শান্তি-স্থাপনা বাহিনী মোতায়েনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এর মধ্যে ত্রাণ পরিবেশন, নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ব্যবস্থাপনা অন্যতম আলোচ্যসূচি।
ইসরায়েলের গাজা অভিযান অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়ার পর কমপক্ষে ৬৮,৮৫৮ জন নিহত এবং ১,৭০,৬৬৪ জন আহত হয়েছে। একই সময়ে, ৭ অক্টোবর ২০২৩-এ হামাসের হামলার কারণে ইসরায়েলে ১,১৩৯ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জনকে বন্দি করা হয়েছে।
-আল জাজিরা
গিজার পিরামিডের পাশেই নতুন স্থাপনা বিশ্বের বৃহত্তম জাদুঘরে কী আছে
দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় পর অবশেষে মিসরে বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর চালু হয়েছে। গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম নামের এই বিশাল জাদুঘরটি মিসরের গিজার বিখ্যাত পিরামিডের পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল ১৯৯২ সালে হোসনি মোবারকের আমলে; তবে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০০৫ সালে। নানা প্রতিবন্ধকতা, আর্থিক সংকট, আরব বসন্ত এবং করোনা মহামারির মতো দীর্ঘ সময় অতিক্রম করে অবশেষে মিসরীয়দের স্বপ্নের এই জাদুঘরটি বাস্তব রূপ পেল। এতে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার।
গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামকে প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতার স্থায়িত্ব ও মহিমার প্রতীক বলা হচ্ছে। জাদুঘরটি ২.৫৮ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে তৈরি; যা প্রায় ৭০টি ফুটবল খেলার মাঠের সমান।
এই জাদুঘরে মিসরের প্রাক-রাজবংশীয় যুগ থেকে কপটিক যুগ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ প্রত্নবস্তু সংরক্ষিত আছে। যার মধ্যে ৩ হাজার দুশ বছরের পুরোনো রামেসিস দ্বিতীয়ের ৮৩ টন ওজনের বিশাল মূর্তি এবং গিজার বিখ্যাত পিরামিড নির্মাণের জন্য পরিচিত খুফু ফেরাউনের ৪ হাজার পাঁচশ বছরের পুরোনো রাজকীয় নৌকাও রয়েছে।
জাদুঘরের প্রধান নির্বাহী আহমেদ ঘোনেইম জানান, নতুন প্রজন্মের কাছে প্রাচীন ঐতিহ্যকে আকর্ষণীয় করে তুলতে এখানে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে; যার মধ্যে রয়েছে মিক্সড রিয়েলিটি ও মাল্টিমিডিয়া প্রদর্শনীর ব্যবস্থা।
চীন সরকারের নজিরবিহীন সফলতা ৩০০ মিলিয়ন ভিজিটরের চোখে অন্য শিনচিয়াং
উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনের কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগের মধ্যেও শিনচিয়াং (Xinjiang) এখন দেশটির ভেতরে এবং বাইরে একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সহিংসতা ও বিতর্কের কারণে অঞ্চলটি পর্যটকদের কাছে অপ্রিয় ছিল; কিন্তু এখন বেইজিং সরকার অবকাঠামো উন্নয়নে শত শত কোটি ডলার বিনিয়োগ করে এই বিতর্কিত অঞ্চলের ভাবমূর্তি নতুন করে সাজাচ্ছে।
চীন সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে শিনচিয়াং প্রায় ৩০ কোটি পর্যটককে স্বাগত জানিয়েছে; যা ২০১৮ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। এই সময়ে পর্যটন থেকে রাজস্ব আয়ও প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে ৩৬০ বিলিয়ন ইউয়ান-এ পৌঁছেছে। চীন ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে ৪১ কোটির বেশি পর্যটক আকর্ষণ করার লক্ষ্য নিয়েছে।

পর্যটকদের মতে, শিনচিয়াং-এর দৃশ্যপট 'অপ্রত্যাশিতভাবে সুন্দর'—কেউ কেউ একে 'নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড এবং মঙ্গোলিয়ার মিশ্রণ' বলে বর্ণনা করছেন। সরকার এই অঞ্চলটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং স্থানীয় 'জাতিগত' অভিজ্ঞতা দেখিয়ে প্রচার করছে। বর্তমানে হিলটন ও ম্যারিয়টের মতো প্রায় ২০০টি আন্তর্জাতিক হোটেল এখানে চালু হয়েছে বা চালু হওয়ার পরিকল্পনা করছে।
তবে বিদেশি পর্যবেক্ষক ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রবেশাধিকার এই অঞ্চলে অত্যন্ত সীমিত; উইঘুর প্রবাসীরা এখনো নিখোঁজ স্বজনদের গল্প শোনাচ্ছেন। অনেক পর্যটকই এই এলাকায় পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি ও নিরাপত্তা ক্যামেরা লক্ষ্য করেছেন; বিদেশিদের নির্দিষ্ট হোটেলে থাকার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে।
সিংগাপুরের এক পর্যটক জানিয়েছেন, স্থানীয় উইঘুর খাদ্য বিক্রেতারা তাদের হিজাব পরা দেখে বলেছিলেন যে, তারা প্রকাশ্যে হিজাব পরতে পারায় 'ঈর্ষান্বিত'; কারণ স্থানীয় মসজিদগুলোতেও তাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে, সরকারের সমালোচকরা বলছেন, চীন সরকার উইঘুর সংস্কৃতিকে কেবল নৃত্য ও রঙিন লোকজ উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে 'পর্যটন আকর্ষণ' হিসেবে ব্যবহার করছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, উইঘুরদের ধর্ম, ইতিহাস বা সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত শত শত গ্রামের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে; মসজিদ ধ্বংস বা অন্য কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বেইজিং সকল অভিযোগই অস্বীকার করে।
সূত্র: বিবিসি
ইউএই ভ্রমণ সহজ হবে, যদি জানেন এই ৭টি ভিসা চেকলিস্ট
সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন? ভ্রমণ বা ট্যুরিস্ট ভিসার আবেদন করার আগে নিশ্চিত হতে হবে যে আপনার আবেদন সম্পূর্ণ, সঠিক ও প্রয়োজনীয় সকল তথ্যসহ প্রস্তুত। সামান্য ত্রুটিও ভিসা বিলম্ব বা প্রত্যাখ্যানের কারণ হতে পারে। দেশটিতে অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা কিছু সাধারণ ভিসা প্রত্যাখ্যানের কারণ ও নতুন শর্তাবলীর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে সতর্ক করেছেন।
ভিসা প্রত্যাখ্যানের সাধারণ কারণসমূহের মধ্যে প্রথম হলো শিশুর পিতামাতার তথ্য অনুপস্থিতি। ১৮ বছরের নিচের কোনো শিশু ভিসার জন্য আবেদন করলে পিতামাতার পূর্ণ তথ্য, লিখিত অনুমতি ও স্বাক্ষর থাকা আবশ্যক। এই তথ্য না থাকলে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ ভিসা অনুমোদন করতে দ্বিধা করে।
দ্বিতীয় কারণ হলো একাধিক আবেদন জমা দেওয়া বা ডুপ্লিকেট আবেদন। একই ব্যক্তির নামে একাধিক আবেদন প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই আবেদন করার আগে নিশ্চিত করতে হবে যে আগের কোনো চলমান বা অপেক্ষমাণ আবেদন নেই।
তৃতীয় কারণ হলো দ্রুত পুনরায় আবেদন করা। অভিবাসন বিশেষজ্ঞ হুশাম কাটিঙ্গেরি বলেছেন, ইউএই ত্যাগের পর অন্তত এক মাস বিরতি নেওয়ার পর পুনরায় ভিজিট ভিসার আবেদন করা উত্তম। এক্সিটের সঙ্গে সঙ্গে আবেদন করলে প্রায়ই জটিলতা দেখা দেয়।
ভিসা পাওয়ার জন্য কিছু শর্ত মেনে চলাও জরুরি। প্রথমে, রিটার্ন টিকিট নিশ্চিত করতে হবে। এটি দেখায় যে আবেদনকারী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশে ফিরে যাবেন।
দ্বিতীয়ত, থাকার প্রমাণ দেখাতে হবে। হোটেল বুকিং বা ইউএই-ভিত্তিক আতিথেয়তার ঠিকানা দিতে হবে। যদি পরিবার বা বন্ধুদের বাসায় থাকেন, তবে তাদের এমিরেটস আইডি ও ভাড়ার চুক্তিপত্র সংযুক্ত করতে হবে।
তৃতীয়ত, পর্যাপ্ত আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ থাকা আবশ্যক। ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা ২৫০০ থেকে ৩০০০ দিরহামের নগদ অর্থ প্রদর্শন প্রয়োজন হতে পারে।
চতুর্থত, আবেদনকারীকে সমস্ত কাগজপত্রের প্রিন্ট কপি সঙ্গে রাখতে হবে, যাতে বোঝানো যায় যে ভ্রমণকারী প্রকৃত উদ্দেশ্যে দেশে যাচ্ছেন।
ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় নথি সম্পর্কেও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। মুসাফির.কমের সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট রিকিন শেঠের মতে, অসম্পূর্ণ বা অস্পষ্ট কাগজপত্রই ভিসা প্রত্যাখ্যানের প্রধান কারণ। সাধারণত প্রয়োজন হয় কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদযুক্ত বৈধ পাসপোর্ট, সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি, নিশ্চিত ফ্লাইট এবং থাকার বুকিং, ইউএই-ভিত্তিক গ্যারান্টরের এমিরেটস আইডি ও ভাড়ার চুক্তিপত্র এবং প্রয়োজনে আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ।
তাছাড়া, যারা ইউএই-তে ৩০ দিনের ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়েছেন, তারা পুনরায় প্রবেশ করতে পারবেন শুধুমাত্র ৩০ দিনের বিরতি নেওয়ার পর। অভিবাসন কর্তৃপক্ষ এখন স্বল্পমেয়াদি ভ্রমণকারীদের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক অবস্থান নিয়েছে, তাই আবেদনকারীদের নিয়ম ও শর্তাবলী কঠোরভাবে মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডলারের যুগের অবসান? পাঁচ শতাব্দীর আর্থিক ইতিহাসে পুনরাবৃত্ত পতনের ছন্দ
কল্পনা করুন, সময়টা ১৯৪৪ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখনও শেষ হয়নি। ৪৪টি মিত্র দেশের প্রতিনিধিরা সমবেত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের পাহাড়ি শহর ব্রেটন উডসের মনোরম মাউন্ট ওয়াশিংটন হোটেলে। সেই বৈঠকে তাঁরা এমন এক সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন, যা পরবর্তী আশি বছরের জন্য পৃথিবীর অর্থনীতির ভাগ্য নির্ধারণ করবে। সভাকক্ষের ভেতরে ইতিহাস যেন থমকে আছে। ব্রিটেন, যে দেশ একসময় পৃথিবীর আর্থিক হৃদস্পন্দন ছিল, এখন প্রায় নিঃস্ব। তার জাতীয় ঋণ জিডিপির ২৪৯ শতাংশে পৌঁছেছে। পরপর দুটি বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কায় সাম্রাজ্যটির অর্থনীতি প্রায় মুমূর্ষু অবস্থায়। যে দেশ শতাব্দীর পর শতাব্দী সমুদ্রপথ শাসন করেছিল, তার রিজার্ভ শেষ, ব্যাংক শূন্য এবং জনগণ ক্লান্ত। সেই মুহূর্তে উপস্থিত সবাই বুঝেছিল, এক যুগের অবসান ঘনিয়ে এসেছে।
তখন ঘটে ইতিহাসে বিরল এক ঘটনা। বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রার মুকুট এক সাম্রাজ্য থেকে অন্য সাম্রাজ্যের হাতে হস্তান্তরিত হয়। ব্রিটিশ পাউন্ড, যা দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বিশ্ব বাণিজ্যের মেরুদণ্ড ছিল, হারায় তার মর্যাদা। সেই শূন্যস্থান পূরণ করে মার্কিন ডলার। তবে এটি কেবল আর্থিক হস্তান্তর নয়। এটি ছিল মানবসভ্যতার আর্থিক ইতিহাসে বারবার পুনরাবৃত্ত এক চক্রের ধারাবাহিকতা। এই চক্রের চারটি ধাপ উত্থান, শিখর, অতিবিস্তার এবং পতন যুগে যুগে সাম্রাজ্য থেকে সাম্রাজ্যে পুনরাবৃত্ত হয়েছে। ইতিহাসে পর্তুগাল, স্পেন, নেদারল্যান্ডস এবং ব্রিটেন সবাই এই একই ধাপের মধ্য দিয়ে গেছে। আজ মার্কিন ডলার সেইসব পূর্বসূরির মতোই একই সতর্ক সংকেত দেখাতে শুরু করেছে।
এই চক্রটি বুঝতে হলে ফিরে যেতে হবে অতীতে, প্রায় ছয় শতাব্দী পেছনে, ইউরোপের পশ্চিম উপকূলে, পর্তুগালের উত্থানের কাহিনিতে।
পর্তুগালের রিয়াল ও আবিষ্কারের যুগ
১৪৫০ সালের দিকে পর্তুগিজ রিয়াল হয়ে ওঠে বিশ্বের প্রথম প্রকৃত রিজার্ভ মুদ্রা। পরবর্তী আশি বছর পর্তুগাল ছিল বৈশ্বিক বাণিজ্যের অবিসংবাদিত নেতা। তাদের সাফল্যের রহস্য ছিল নৌচালনা ও বৈদেশিক বাণিজ্যে উদ্ভাবন। ১৪৫৩ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের হাতে কনস্টান্টিনোপলের পতনের পর প্রাচীন মশলার বাণিজ্যপথ বন্ধ হয়ে যায়। ইউরোপীয় বণিকদের জন্য এটি ছিল এক বিশাল ধাক্কা, কিন্তু পর্তুগাল খুঁজে পেল নতুন পথ। তারা আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্ত ঘুরে সমুদ্রপথে এশিয়ায় পৌঁছে দেয় বাণিজ্যের নতুন দ্বার, শুরু হয় আবিষ্কারের যুগ।
লিসবন তখন হয়ে ওঠে বিশ্বের বাণিজ্যকেন্দ্র। পর্তুগিজ রিয়াল ইউরোপ থেকে এশিয়া পর্যন্ত গৃহীত হতে শুরু করে। সাম্রাজ্য ছড়িয়ে পড়ে আফ্রিকা, ভারত, মালয়েশিয়া, জাপান এবং চীনের ম্যাকাও পর্যন্ত। কিন্তু ইতিহাসের চিরন্তন নিয়ম অনুযায়ী সাফল্যই হয়ে ওঠে পতনের সূচনা। চারটি মহাদেশে সামরিক ঘাঁটি রক্ষা করতে করতে তাদের ভাণ্ডার ফুরিয়ে যায়। প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি ডাচ, ফরাসি ও ব্রিটিশরা ক্রমে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ১৫৩০-এর দশকে রাজপরিবারে উত্তরাধিকার সংকট সৃষ্টি হলে দেশটি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত ১৫৮০ সালে স্পেনের হাতে পর্তুগাল আত্মসমর্পণ করে, গঠিত হয় আইবেরিয়ান ইউনিয়ন। প্রায় আশি বছরের আধিপত্যের পর ইতিহাসের মঞ্চ থেকে হারিয়ে যায় পর্তুগালের রিয়াল। তার জায়গা নেয় স্প্যানিশ রূপা।
স্প্যানিশ রূপার সাম্রাজ্য
স্পেনের উত্থান শুরু হয় আন্দিজ পর্বতমালার কোলে বলিভিয়ার পোটোসি নামের এক পাহাড়ে বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ রূপার খনি আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। ১৫৪৫ সালে আবিষ্কৃত এই খনি ১৫৭৫ থেকে ১৬৩৫ সালের মধ্যে উৎপাদন করেছিল বিশ্বের প্রায় অর্ধেক রূপা। এই রূপা দিয়ে তৈরি হয় বিখ্যাত “পিস অফ এইট”, যা বিশ্বের প্রথম বৈশ্বিক মুদ্রা হিসেবে পরিচিত হয়। এই স্প্যানিশ ডলার এতটাই নির্ভরযোগ্য ছিল যে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ মুদ্রা হিসেবে প্রচলিত ছিল।
স্পেনের আধিপত্য স্থায়ী হয় প্রায় ১১০ বছর। কিন্তু অতিবিস্তার ও ঋণের বোঝা তাদের পতন ডেকে আনে। রাজা চার্লস প্রথম রেখে যান ৩৬ মিলিয়ন ডুকাট ঋণ এবং প্রতি বছর এক মিলিয়ন ডুকাটের ঘাটতি। তাঁর পুত্র ফিলিপ দ্বিতীয় এই বোঝা সামলাতে গিয়ে চারবার দেউলিয়া ঘোষণা করেন ১৫৫৭, ১৫৬০, ১৫৭৫ এবং ১৫৯৬ সালে। রূপার অবিরাম প্রবাহ দেশে সৃষ্টি করে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি। ফিলিপ দ্বিতীয়ের রাজত্বকালে পণ্যের দাম চারগুণ বেড়ে যায়। ফিলিপ তৃতীয়ের আমলে রূপার সরবরাহ অর্ধেকে নেমে আসতেই অর্থনীতি ধসে পড়ে এবং ১৬০৭ সালে আবার দেউলিয়াত্ব ঘোষণা করতে হয়। ১৬৪১ সালে আইবেরিয়ান ইউনিয়ন ভেঙে যায়। স্পেনের রূপার রাজত্বের অবসান ঘটে এবং আর্থিক শক্তির মঞ্চে উঠে আসে ডাচ প্রজাতন্ত্র।
নেদারল্যান্ডসের সোনালি যুগ
১৭ শতকে নেদারল্যান্ডস হয়ে ওঠে বিশ্বের আর্থিক রাজধানী। আমস্টারডাম তখন বাণিজ্যের নতুন কেন্দ্র এবং ডাচ গিল্ডার ইউরোপের কার্যত রিজার্ভ মুদ্রা। আমস্টারডাম ব্যাংক প্রবর্তন করে আন্তর্জাতিক অর্থপ্রদানের আধুনিক ও নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা। ডাচ বণিকেরা প্রথম গঠন করে শেয়ারবাজার, সামুদ্রিক বীমা এবং শেয়ার কোম্পানির ধারণা।
১৬৪২ থেকে ১৭২০ পর্যন্ত, প্রায় আট দশক ধরে, বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ বাণিজ্য সম্পন্ন হতো ডাচ মুদ্রায়। কিন্তু একই চক্র পুনরায় দেখা দেয়। চতুর্থ ইংরেজ-ডাচ যুদ্ধের (১৭৮০ থেকে ১৭৮৪) ফলে দেশটি দেউলিয়া হয়ে পড়ে। বিশাল ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভেঙে যায়। এই শূন্যস্থান পূরণ করে ব্রিটেন, যে তখন শিল্পবিপ্লবের মাধ্যমে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিল।
ব্রিটিশ পাউন্ড ও শিল্পবিপ্লবের শতাব্দী
দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ব্রিটিশ পাউন্ড ছিল বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রধান মুদ্রা। শিল্পবিপ্লব, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও উপনিবেশ সাম্রাজ্যের শক্তিতে ব্রিটেন গড়ে তোলে পৃথিবীর বৃহত্তম অর্থনীতি। ১৮১৬ সালের গ্রেট রিকয়েনেজের পর স্বর্ণমান প্রতিষ্ঠিত হয়, যা পাউন্ডকে বিশ্বের সবচেয়ে স্থিতিশীল মুদ্রায় পরিণত করে। ১৯২২ সালের মধ্যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য শাসন করত বিশ্বের এক চতুর্থাংশ ভূমি ও এক পঞ্চমাংশ জনসংখ্যা, প্রায় ৪৫৮ মিলিয়ন মানুষ।
তবে দীর্ঘস্থায়ী এই আধিপত্যের অবসান ঘটাতে শুরু করে দুটি বিশ্বযুদ্ধ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ঋণ বেড়ে যায় ৬৫০ মিলিয়ন পাউন্ড থেকে ৭ বিলিয়নে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে সরকারি ঋণ দাঁড়ায় জিডিপির ২৭০ শতাংশে। ব্রিটেন যুদ্ধ জিতলেও হারায় তার আর্থিক নেতৃত্ব।
ব্রেটন উডস ও ডলারের যুগ
১৯৪৪ সালের জুলাই মাসে ৭০০ প্রতিনিধি জড়ো হন ব্রেটন উডসে। লক্ষ্য ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত বিশ্ব অর্থনীতির পুনর্গঠন। সেই সম্মেলন থেকেই জন্ম নেয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) এবং বিশ্বব্যাংক (World Bank)। চুক্তি অনুযায়ী সব বড় মুদ্রা বাঁধা হয় মার্কিন ডলারের সঙ্গে, আর ডলার বাঁধা হয় স্বর্ণে প্রতি আউন্স ৩৫ ডলার দরে। এই মুহূর্তেই ব্রিটিশ পাউন্ডের যুগের সমাপ্তি ঘটে এবং সূচনা হয় আমেরিকান যুগের।
এরপরের পঁচিশ বছর ডলার রাজত্ব করে নিরঙ্কুশভাবে। ১৯৭১ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ডলারের স্বর্ণ-রূপান্তরযোগ্যতা স্থগিত করেন এবং স্বর্ণমান বিলুপ্ত হয়। তবু ডলার ধসে পড়েনি। বরং খুঁজে নেয় নতুন ভিত্তি, তেল।
১৯৭৩ সালের ওপেক তেল সংকটের পর যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের সঙ্গে এক কৌশলগত চুক্তি করে। মার্কিন সামরিক সুরক্ষার বিনিময়ে সৌদি তেল বিক্রি হবে কেবল ডলারে। ১৯৭৫ সালের মধ্যে সব ওপেক সদস্য এই চুক্তি মেনে নেয়। জন্ম নেয় পেট্রো-ডলার ব্যবস্থা। তেল ছিল সবার প্রয়োজন, তাই ডলারও হয়ে ওঠে সবার প্রয়োজন। এই কৃত্রিম চাহিদা যুক্তরাষ্ট্রকে এমন বিশাল ঘাটতি বহনের সুযোগ দেয় যা অন্য কোনো দেশের পক্ষে অসম্ভব ছিল।
২০০০ সালের দিকে বিশ্বের বৈদেশিক রিজার্ভের ৭০ শতাংশ ছিল ডলারে। কিন্তু ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৫৭ দশমিক ৮ শতাংশে। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের সময় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মার্কিন ট্রেজারির অর্ধেকেরও বেশি ধারণ করত, অথচ ২০২৫ সালে তা নেমে আসে মাত্র ৩০ শতাংশে।
ডি-ডলারাইজেশনের দ্রুত অগ্রযাত্রা
একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী জোট ব্রিকস, যার সদস্য ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা, সম্প্রতি যুক্ত করেছে মিশর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে। তারা গড়ে তুলছে ব্রিকস ব্রিজ, একটি পেমেন্ট নেটওয়ার্ক যা সেন্ট্রাল ব্যাংকের ডিজিটাল মুদ্রার মাধ্যমে লেনদেন করবে, ডলার ছাড়াই। ২০২৫ সাল নাগাদ এই জোট ও তাদের ১৩টি অংশীদার দেশ এই উদ্যোগে যুক্ত হচ্ছে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নিজেই ঋণে ডুবে আছে। ২০২৫ সালের মার্চে মার্কিন সরকারের মোট ঋণ দাঁড়ায় ৩৬ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারে, যা জিডিপির ১২৪ শতাংশ। এটি সেই একই সূচক যা ইতিহাসে প্রতিটি সাম্রাজ্যের পতনের আগে দেখা গেছে, অতিরিক্ত ঋণ, সামরিক অতিবিস্তার এবং উৎপাদনশীলতার পতন।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি
পর্তুগাল, স্পেন, নেদারল্যান্ডস এবং ব্রিটেন সবাই একই পথে হেঁটেছে। তাদের রিজার্ভ মুদ্রার আয়ু ছিল ৭৮ থেকে ২২০ বছর পর্যন্ত, গড়ে প্রায় ৯৫। মার্কিন ডলার এখন ৮১ বছরে পা দিয়েছে। ইতিহাসের চক্র আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
প্রত্যেক রিজার্ভ মুদ্রার চারটি ধাপ থাকে। প্রথম ধাপ উত্থান, যখন একটি দেশ বাণিজ্য, অর্থনীতি বা সামরিক শক্তিতে উদ্ভাবনের মাধ্যমে নেতৃত্ব গড়ে তোলে। পর্তুগাল নৌচালনায় বিপ্লব ঘটায়, স্পেন রূপার জোগান নিয়ন্ত্রণ করে, ডাচরা আধুনিক অর্থব্যবস্থা তৈরি করে, ব্রিটেন শিল্পবিপ্লব ঘটায় এবং যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ-পরবর্তী শিল্পশক্তিতে উত্থান ঘটায়। দ্বিতীয় ধাপ শিখর, যখন সেই মুদ্রা হয়ে ওঠে বৈশ্বিক মানদণ্ড এবং বিশ্বের ৬০ শতাংশ বাণিজ্য এতে পরিচালিত হয়। তৃতীয় ধাপ অতিবিস্তার, যেখানে সামরিক ব্যয়, ঋণ এবং উৎপাদনশীলতার পতন দেখা দেয়। পর্তুগাল চার মহাদেশে সামরিক বোঝা বইতে পারেনি, স্পেন বারবার দেউলিয়া হয়েছে, ডাচরা ব্রিটেনের সঙ্গে যুদ্ধ করে নিঃশেষ হয়েছে, ব্রিটেনের ঋণ পৌঁছেছিল জিডিপির ২৭০ শতাংশে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ ১২৪ শতাংশ এবং মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ব্যয় আট ট্রিলিয়ন ডলার। শেষ ধাপ পতন, যখন আস্থা হারিয়ে যায় এবং বৈশ্বিক ক্ষমতার কেন্দ্র সরে যায় অন্যত্র।
পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা: একমেরু না বহুমেরু
স্পেনের হাতে পতনের পর পর্তুগাল আর কখনো মাথা তুলতে পারেনি। স্পেন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ধুঁকেছে, নেদারল্যান্ডস ধনী থেকেও আঞ্চলিক শক্তিতে সীমিত হয়েছে, আর ব্রিটেনের সাম্রাজ্য ১৯৪৫-এর পর গলে গেছে। ১৯৫০-এর দশকে এখনও বিশ্বের ৫৫ শতাংশ রিজার্ভ ছিল স্টার্লিংয়ে, কিন্তু দুই দশকের মধ্যেই তা অর্ধেকে নেমে আসে। ব্রিটিশ শতাব্দী শেষ, শুরু হয় আমেরিকান শতাব্দী।
তবে এমন পরিবর্তন একদিনে ঘটে না। ব্রিটেনের পতন ছিল ধীর, যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে তাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল বহু আগেই, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে ডলার পাউন্ডকে প্রতিস্থাপন করে পরে। আজ একই ধীর রূপান্তর সম্ভবত আবার ঘটছে, এইবার চীনের দিকে, কিংবা একাধিক শক্তির সম্মিলিত নেতৃত্বে নতুন এক বহুমেরু বিশ্বব্যবস্থার দিকে।
ইতিহাসে রিজার্ভ মুদ্রার গড় আয়ু প্রায় ৯৫ বছর। মার্কিন ডলার সেই সীমার কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে। বৈশ্বিক রিজার্ভে ডলারের অংশীদারিত্ব কমছে, বিদেশি ট্রেজারি বিনিয়োগ হ্রাস পাচ্ছে, ব্রিকস বিকল্প গড়ে তুলছে, পেট্রো-ডলার ব্যবস্থা দুর্বল হচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ১৩০ দেশে ৯০০ সামরিক ঘাঁটি ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। এই চিত্র যেন ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি, একই ছন্দে, নতুন মুখে।
তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে, এই পরিবর্তন কত দ্রুত ঘটবে এবং পরবর্তী আর্থিক যুগের নেতৃত্ব নেবে কে। এটি কি হবে ব্রিটেনের মতো ধীর অবসান, নাকি নেদারল্যান্ডসের মতো আকস্মিক পতন। একটি একক শক্তি কি আবার বিশ্ব অর্থনীতির শীর্ষে উঠবে, নাকি ভবিষ্যৎ হবে বহুমেরু, যেখানে কয়েকটি রিজার্ভ মুদ্রা ভাগাভাগি করবে বৈশ্বিক প্রভাব।
ইতিহাস কখনো ঠিক একরকম পুনরাবৃত্তি হয় না, কিন্তু তার ছন্দ ফিরে আসে। আর যদি সেই ছন্দ এবারও সত্য প্রমাণিত হয়, তবে পৃথিবী এখন দাঁড়িয়ে আছে এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে, ডলারের আধিপত্যের শেষ অধ্যায়ের দ্বারপ্রান্তে।
সুদানের গৃহযুদ্ধ: সেনা ও আরএসএফ সংঘাত ও তীব্র মানবিক সংকট
পাঠকের মতামত:
- ঢাকার আজকের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি এক নজরে
- আজ জরুরি বৈঠক, কি হবে জুলাই সনদ গণভোটের ফলাফল
- আজকের আবহাওয়ার খবর
- বিএনপি আজ ঘোষণা করতে পারে শতাধিক আসনের প্রার্থী তালিকা
- আজ ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ যেসব এলাকায়
- জানুন আজ কোথায় কোন মার্কেট বন্ধ
- ইসরায়েলের নেতাদের জন্মনাম ও পরিচয় পরিবর্তনের যত কারণ
- ‘নতুন কুঁড়ি’-তে ফিরলেন আসিফ আকবর
- আলুর দাম ২৬ টাকা থেকে নেমে ৮ টাকায়, দিশেহারা ৬০ হাজার চাষি
- “যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, সবাই মেনে নিন”— ঐক্যের বার্তা তারেক রহমানের
- ‘খাবারোভস্ক’ উন্মোচন: রাশিয়ার পানির নিচে নতুন প্রলয়াস্ত্রের যুগ শুরু
- ০৩ নভেম্বর: ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের নামাজের সময়সূচি
- বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার চলছে: তারেক রহমান
- ত্বকের যত্ন মানে দামি ক্রিম নয়,আপনার দৈনন্দিন যে ৬টি ভুল ত্বককে ক্ষতি করছে
- উচ্চকক্ষ আর নিম্ন কক্ষের ব্যবধান করলে গরুর মতোই এমপিদের দরকষাকষি শুরু হবে: ফুয়াদ
- বিদেশি ‘সরকার পরিবর্তন বা জাতি গঠনের’ মার্কিন নীতির দিন শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড
- আইন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিল এনসিপি
- আইন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিল এনসিপি
- ভোটার তালিকা হালনাগাদ শেষে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা জানালেন ইসি সচিব
- ড. ইউনুস বিশ্বের ৫০০ প্রভাবশালী মুসলিমের মধ্যে ৫০তম
- ১২১তম ১০০ টাকা প্রাইজবন্ড ড্র, প্রথম পুরস্কার ৬ লাখ টাকা
- জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ ধৈর্য নবীজি (সাঃ) এর হাদিস ও কোরআনের আলোকে গুরুত্ব
- উত্তর বাড্ডার এক বাসা থেকে নারী-পুরুষের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার
- সংস্কার ও বিচার বাদ দিয়ে নির্বাচন নয় জামায়াত নেতার কঠোর বার্তা
- পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার অর্থ পাচারের মামলা
- ধানের শীষ-শাপলা কলি: ত্রয়োদশ নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই
- এলপি গ্যাস ও অটোগ্যাসে দাম কমানো হলো যত টাকা
- বেসরকারি ব্যাংক ঘিরে প্রবাসী রেমিট্যান্সের মূল প্রবাহ
- শরীয়তপুরে আবারও দুই পক্ষের ভয়াবহ সংঘর্ষ
- ইসরায়েলের হামলা ও সীমিত হিউম্যানিটেরিয়ান সাহায্য: গাজা-লেবাননে নতুন উত্তেজনা
- ‘আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে রেখেছি’: আশারাতুল মুবাশশারার অন্তর্ভুক্ত প্রথম খলিফার গল্প
- মানসিক স্বাস্থ্য সেবার সমস্যাসমূহ: থেরাপি, ওষুধ ও মানসিক রোগ নির্ণয়ের “অযাচিত ক্ষতি”
- স্বল্প খরচে বিদেশ ভ্রমণ সাশ্রয়ী ভিসা ও কম খরচে ঘোরার সেরা ৫ দেশ
- পানিতে ডুবে মরা ভালো' চুপ্পুর হাতে জুলাই সনদ গ্রহণের চেয়ে: হাসনাত
- ‘গণভোট নিয়ে তর্ক বন্ধ করুন’- বিএনপি–জামায়াতকে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
- বাড্ডায় দারোয়ান ও তাঁর স্ত্রীর লাশ উদ্ধার, মৃত্যুর রহস্যে ধোঁয়াশা
- ৮ম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন কার্ড বিতরণে বোর্ডের সময়সূচি প্রকাশ
- প্রেসিডেন্টের আদেশ মানে জুলাই বিপ্লবের কফিনে শেষ পেরেক: নাহিদ
- ক্যান্সার কি আপনার শরীরে বাসা বাঁধছে প্রাথমিক অবস্থায় দেখা যাওয়া ৫টি লক্ষণ
- আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে শতাধিক নেতাকর্মীর যোগদান
- প্রতীকের বিতর্ক শেষ ইসির শাপলা কলি নিতে সম্মত হলো এনসিপি
- বার্সেলোনার তারকা ইয়ামালের প্রেম ভেঙেছে, বাবা দিলেন বিয়ের ঘোষণা
- ৩০০ আসনে প্রার্থিতার পরিকল্পনা করছে এনসিপি
- গিজার পিরামিডের পাশেই নতুন স্থাপনা বিশ্বের বৃহত্তম জাদুঘরে কী আছে
- শফিকুর রহমানের ওপর আস্থা রাখল জামায়াত টানা তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত
- ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক সংলাপ: জ্ঞানচর্চায় উপনিবেশের ছায়া কাটাতে আহ্বান বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানীর
- ০২ নভেম্বর ডিএসই লেনদেনের সারসংক্ষেপ
- ০২ নভেম্বর ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ লুজার তালিকা প্রকাশ
- ০২ নভেম্বর ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- জাকির নায়েকের বাংলাদেশ সফর নিয়ে যা জানালেন ধর্ম উপদেষ্টা
- ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক সংলাপ: জ্ঞানচর্চায় উপনিবেশের ছায়া কাটাতে আহ্বান বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানীর
- রাজনীতি, নির্বাসন ও নৈতিকতা: শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তবতাকে কোথায় নিচ্ছে
- ধ্বংসস্তূপ থেকে মহাশক্তি: চীনের পুনর্জন্মের বিস্ময়গাঁথা
- IFIC ব্যাংকের Q3 আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ
- পূবালী ব্যাংকের Q3 আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ
- ইতিহাসের পাতায় আজ: ৩০ অক্টোবর - বিজয়, বিপ্লব আর বেদনার দিন
- ২৮ অক্টোবরের ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- ২৯ অক্টোবর ডিএসই লেনদেনের সারসংক্ষেপ
- ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’ প্রভাবে ৫ দিন দেশজুড়ে বৃষ্টির পূর্বাভাস
- আজকের বাজারের সেরা এবং খারাপ পারফরমার: লাভের সম্ভাবনা কোথায়?
- চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে আবারও পর্দায় পূজা চেরি
- রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স এর Q3 আর্থিক ফলাফল প্রকাশ
- GSP ফাইন্যান্স এর Q3 আর্থিক ফলাফল প্রকাশ
- মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় বাবা হারানো: দুই শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে স্ত্রীর আকুল আবেদন
- ২৮ অক্টোবর ডিএসই লেনদেনের সারসংক্ষেপ








