সৌদি রাজতন্ত্রের অজানা অধ্যায়: ক্ষমতার জন্য বাবা ও ভাইদের ছাড় দিলেন না মোহাম্মদ বিন সালমান

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৩ ১৭:২৬:০৪
সৌদি রাজতন্ত্রের অজানা অধ্যায়: ক্ষমতার জন্য বাবা ও ভাইদের ছাড় দিলেন না মোহাম্মদ বিন সালমান
ছবি: সংগৃহীত

প্রয়াত বাদশাহ আবদুল্লাহর মৃত্যুর পর সৌদি আরবের সিংহাসনে বসেন সালমান বিন আবদুল আজিজ। কিন্তু উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতার এই পালাবদল মোটেই সহজ ছিল না। এটি ছিল নাটকীয় সিদ্ধান্ত আর অপ্রত্যাশিত উত্থানের এক নতুন অধ্যায়।

শুরুতে বাদশাহ সালমান ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে তার ৬৯ বছর বয়সী সৎভাই মুকরিন বিন আবদুল আজিজের নাম ঘোষণা করেন। কিন্তু মাত্র তিন মাস পরেই তিনি হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত বদল করেন। মুকরিনকে সরিয়ে তার স্থানে নিয়ে আসেন নিজের ভাইপো ৫৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ বিন নায়েফকে। পাশাপাশি ২৯ বছরের ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি।

প্রায় ৯ বছর আগে যখন একের পর এক এসব ঘটনা ঘটছিল, সে সময় মোহাম্মদ বিন সালমানের নাম সৌদি আরবের রাজনীতিতে কেউ শোনেননি। তাঁর সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানতেনও না কেউ।

অন্যদিকে মোহাম্মদ বিন নায়েফের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল মার্কিন প্রশাসন। তিনি প্রতিরক্ষা বিষয়ে এফবিআইয়ের (যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো) কোর্স করেছিলেন। নিয়েছিলেন স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে সন্ত্রাস দমন কৌশলের প্রশিক্ষণও; কিন্তু ২০০৯ সালের আগস্টে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে তাঁকে হত্যার ব্যর্থ চেষ্টা চালানো হয়। ওই হামলার জন্য সে সময় দায়ী করা হয়েছিল আল-কায়েদাকে।

সৌদি বাদশাহর ‘দ্বাররক্ষক’

মোহাম্মদ বিন সালমান এমবিএস নামে বহুল পরিচিত। লেখক ডেভিড বি ওটাওয়ে তাঁর বইয়ে মোহাম্মদ বিন সালমান সম্পর্কে লিখেছেন, ‘প্রতিরক্ষামন্ত্রী হওয়ার পরপরই তিনি (মোহাম্মদ বিন সালমান) বাদশাহর গেট কিপার (দ্বাররক্ষক) হওয়ার জন্য নিজের পদকে ব্যবহার করতে শুরু করেন।’ উদ্দেশ্য ছিল, বাবাকে নজরে রাখা।

বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দ্রুতই মোহাম্মদ বিন সালমান তাঁর বাবাকে পরিবার ও বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের থেকে আলাদা করে ফেলেন। এমনকি এ-ও বলা হয় যে বাদশাহকে তাঁর স্ত্রী, মানে এমবিএসের মায়ের সঙ্গেও দেখা করতে বাধা দেওয়া হয়।

লেখক বেন হাবার্ড তাঁর বই ‘দ্য রাইজ টু পাওয়ার, মোহাম্মদ বিন সালমান’-এ উল্লেখ করেছেন, ‘মোহাম্মদ বিন নায়েফ ও তাঁর দুই রক্ষী বাদশাহর সঙ্গে দেখা করার জন্য লিফটে উঠেছিলেন। দোতলায় লিফটের দরজা খুলতেই বাদশাহর সৈন্যরা এগিয়ে গিয়ে নায়েফের রক্ষীদের অস্ত্র ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন।’

ডেভিড বি ওটাওয়ের বইয়ে দাবি করা হয়েছে, মোহাম্মদ বিন সালমান কার্যত তাঁর মা এবং দুই বোনকে গৃহবন্দী করেন এবং বাবাকে এ সম্পর্কে ঘুণাক্ষরেও কিছু টের পেতে দেননি। বাদশাহ নিজের স্ত্রীর কথা জিজ্ঞাসা করলেই বলা হতো চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে তাঁকে।

ইয়েমেন আক্রমণ

প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দ্রুতই নিজের প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন মোহাম্মদ বিন সালমান। তাঁর তত্ত্বাবধানে সে বছরের ২৬ মার্চ (২০১৫ সাল) হুতি বিদ্রোহীদের কাছ থেকে ইয়েমেনের রাজধানী সানাকে মুক্ত করতে হামলা চালায় সৌদি বিমানবাহিনী।

মোহাম্মদ বিন সালমান ছোটবেলায় খুব দুষ্টু ছিলেন। ইংরেজি পড়ার চেয়ে ওয়াকিটকিতে প্রাসাদের নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে কথা বলতেই বেশি আগ্রহ ছিল তাঁর।—রশিদ সেকাই, সৌদি যুবরাজের ইংরেজি শিক্ষক

ওটাওয়ে তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ‘প্রাথমিকভাবে সৌদি জনগণ ওই হামলার প্রশংসা করেছিলেন। ভেবেছিলেন, শেষ পর্যন্ত ইরানের সম্প্রসারণবাদী প্রবণতার বিরোধিতা করার সাহস দেখিয়েছে তাঁদের দেশ।’

‘কিন্তু কিছুদিন পর এ হামলা বাদশাহ, মোহাম্মদ বিন সালমান ও সৌদি আরবের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এটিকে মোহাম্মদ বিন সালমানের পররাষ্ট্রনীতির গাফিলতি হিসেবে বিবেচনা করা হতে থাকে।’

মোহাম্মদ বিন নায়েফকে আটক

কাছাকাছি সময়েই তৎকালীন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফকে অপসারণ করে ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে ক্রাউন প্রিন্স করার সিদ্ধান্ত নেন বাদশাহ সালমান।

পবিত্র রমজান মাসের শেষ দিকে ২০১৫ সালের ২০ জুন রাতে রাজপরিবারের একাধিক সদস্য পবিত্র মক্কায় জড়ো হন। সেই রাতে, রাজনৈতিক ও সুরক্ষাবিষয়ক কাউন্সিলের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, যার সভাপতিত্ব করার কথা ছিল মোহাম্মদ বিন নায়েফের; কিন্তু বৈঠক শুরুর কিছুক্ষণ আগেই তিনি একটি বার্তা পান। সেখানে বলা হয়েছিল, বাদশাহ সালমান তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চান।

বলা হয়, সৌদি আরবে অন্তত ১০ হাজার প্রিন্স রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়। তাঁদের সবাইকে সরকারের পক্ষ থেকে মাসিক ভাতা দেওয়া হয়। সর্বনিম্ন ভাতা ৮০০ ডলার এবং সর্বোচ্চ পৌনে ৩ লাখ ডলার। ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করার পরই এ ভাতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেন মোহাম্মদ বিন সালমান।

তড়িঘড়ি হেলিকপ্টারে সওয়ার হয়ে বাদশাহর সঙ্গে দেখা করার জন্য সাফা মহলে পৌঁছান বিন নায়েফ। সঙ্গে ছিলেন তাঁর দুই দেহরক্ষী।

লেখক বেন হাবার্ড তাঁর বই ‘দ্য রাইজ টু পাওয়ার, মোহাম্মদ বিন সালমান’-এ উল্লেখ করেছেন, ‘মোহাম্মদ বিন নায়েফ ও তাঁর দুই রক্ষী বাদশাহর সঙ্গে দেখা করার জন্য লিফটে উঠেছিলেন। দোতলায় লিফটের দরজা খুলতেই বাদশাহর সৈন্যরা এগিয়ে গিয়ে নায়েফের রক্ষীদের অস্ত্র ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন।’

‘পাশের একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয় নায়েফকে। তিনি চলে যেতে উদ্যত হলে, বাধা দেওয়া হয় এবং ক্রাউন প্রিন্স পদ থেকে পদত্যাগ করার জন্য চাপ দেওয়া হতে থাকে। কিন্তু তাঁদের কথা শুনতে নারাজ ছিলেন বিন নায়েফ।’

নায়েফের পদত্যাগ

ওই রাতেই বিন নায়েফকে গৃহবন্দী করা হয় এবং রয়্যাল কোর্টের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রয়্যাল কাউন্সিলের সদস্যদের ডেকে জানতে চান, তাঁরা মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ বানানোর সিদ্ধান্তের বিষয়ে একমত কি না।

কাউন্সিলের ৩৪ সদস্যের মধ্যে ৩১ জন সমর্থন জানান। তাঁদের ফোনকল রেকর্ড করা হয় এবং মোহাম্মদ বিন নায়েফকে জানানো হয়, তাঁর কতজন আত্মীয় বাদশাহর এ সিদ্ধান্তে সমর্থন করেছেন।

মোহাম্মদ বিন সালমান তখনো ক্রাউন প্রিন্স হননি। রিয়াদে একটি মূল্যবান জমির ওপর নজর পড়ে তাঁর বাবার; কিন্তু জমির মালিক সেটি বিক্রি করতে চাইছিলেন না। এ নিয়ে চাপ দিতে একজন বিচারকের কাছে যান মোহাম্মদ বিন সালমান। বিচারকও এ নিয়ে কথা বলতে তেমন আগ্রহী ছিলেন না। তখন মোহাম্মদ বিন সালমান বিচারকের টেবিলে রিভলবারের একটি বুলেট রাখেন। ইঙ্গিত ছিল, বিচারক তাঁর কথা না মানলে হয়তো তাঁকে গুলি করা হবে।—রিচার্ড লেসি, সৌদি রাজপরিবারের ইতিহাস পর্যবেক্ষক

বেন হাবার্ড তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ‘বিন নায়েফ ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। কিন্তু সে রাতে তাঁকে ওষুধ দেওয়া হয়নি। ফলে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত পরদিন সকালে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করার জন্য তৈরি হয়ে যান।’ তাঁকে পাশের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে বাদশাহ সালমান ও তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা ক্যামেরাসহ হাজির ছিলেন।

বিন নায়েফকে অভ্যর্থনা জানান বাদশাহ এবং তাঁর হাতে চুম্বন করেন। নায়েফ খুব নিচু স্বরে সালমানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। তাঁদের এই সাক্ষাতের ভিডিও সৌদি টিভি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সে সময় বারবার সম্প্রচার করা হয়।

‘এরপর মোহাম্মদ বিন নায়েফ কক্ষ থেকে বেরোনোর পর অবাক হয়ে দেখেন যে তাঁর রক্ষীরা সেখানে নেই। জেদ্দায় নিজের প্রাসাদে পৌঁছানোর পর তাঁকে সেখানে গৃহবন্দী করে রাখা হয়।’

বিন নায়েফের নীরবতা

নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রশ্নের জবাবে রয়্যাল কোর্টের একজন মুখপাত্র অবশ্য ওই রাত সম্পর্কে ভিন্ন কথা বলেছেন। তিনি বলেন, জাতীয় স্বার্থে ক্রাউন প্রিন্সের পদ থেকে মোহাম্মদ বিন নায়েফকে সরিয়েছিল রয়্যাল কাউন্সিল। রয়্যাল কোর্ট আরও জানায়, তাঁকে বরখাস্ত করার কারণগুলো গোপন রাখা হয়েছে এবং সেগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।

ঘটনার প্রায় এক মাস পর নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সৌদি কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, মরফিন ও কোকেনে আসক্ত থাকার কারণে বিন নায়েফকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাদশাহ।

ওই বছরের শেষের দিকে বিন নায়েফের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়। তাঁর প্রতি এমন আচরণ নিয়ে মোহাম্মদ বিন নায়েফ অবশ্য প্রকাশ্যে কোনো কথা বলেননি।

বর্তমানে পরিস্থিতি এমন যে ১৯৮৫ সালের ৩১ আগস্ট জন্ম নেওয়া মোহাম্মদ বিন সালমানের পোস্টার সৌদি আরবের সর্বত্র দেখা যায়। তিনি সৌদি রাজপরিবারের অন্যতম যুবরাজ, যিনি বিদেশে পড়াশোনা করেননি। তিনি কখনোই সৌদি সেনাবাহিনী বা বিমান বাহিনীর সদস্য ছিলেন না। রিয়াদের রয়্যাল অ্যান্ড সেকেন্ডারি স্কুলে পড়াশোনা করেন তিনি।

মোহাম্মদ বিন সালমানের ইংরেজি শিক্ষক রশিদ সেকাই বিবিসিকে বলেছিলেন, ‘মোহাম্মদ বিন সালমান ছোটবেলায় খুব দুষ্টু ছিলেন। ইংরেজি পড়ার চেয়ে ওয়াকিটকিতে প্রাসাদের নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে কথা বলতেই বেশি আগ্রহ ছিল তাঁর।’

স্নাতক হওয়ার পর ২০০৭ সালে সারা বিনতে মাশুরকে বিয়ে করেন মোহাম্মদ বিন সালমান। এই যুগলের চারটি সন্তান রয়েছে।

পিয়ানোতে ধ্রুপদি সুর

মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় তাঁকে নিজের বাড়িতে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি।

বইয়ে সে প্রসঙ্গে বেন হাবার্ড লিখেছেন, পুরো সন্ধ্যাটাই কেরির সঙ্গে কথা বলে কাটান মোহাম্মদ বিন সালমান। সে সময় বিন সালমানের চোখ পড়ে সেখানে রাখা পিয়ানোর ওপর।

জন কেরি বিন সালমানের কাছ থেকে জানতে চান, ‘আপনি পিয়ানো বাজাতে জানেন? পিয়ানোতে ধ্রুপদি সুর বাজিয়ে তাক লাগিয়ে দেন মোহাম্মদ বিন সালমান।’

‘ঘরে উপস্থিত সবাই অবাক হয়েছিলেন। যেহেতু ‘‘ওয়াহাবি ঘরানার’’ মানুষেরা সংগীত অপছন্দ করে, ফলে জন কেরি আশা করেননি যে মোহাম্মদ বিন সালমান পিয়ানো বাজাবেন।’

বিচারকের টেবিলে বুলেট

শুরু থেকেই যুবরাজ বিন সালমানের ঝোঁক ছিল বিনিয়োগের মাধ্যমে নিজস্ব অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য গড়ে তোলার দিকে।

সৌদি রাজপরিবারের ইতিহাস পর্যবেক্ষক রিচার্ড লেসি লিখেছেন, ‘মোহাম্মদ বিন সালমান তখনো ক্রাউন প্রিন্স হননি। রিয়াদে একটি মূল্যবান জমির ওপর নজর পড়ে তাঁর বাবার। কিন্তু জমির মালিক সেটি বিক্রি করতে চাইছিলেন না।’

‘এ নিয়ে চাপ দিতে একজন বিচারকের কাছে যান মোহাম্মদ বিন সালমান। বিচারকও এ নিয়ে কথা বলতে তেমন আগ্রহী ছিলেন না। তখন মোহাম্মদ বিন সালমান বিচারকের টেবিলে রিভলবারের একটি বুলেট রাখেন। ইঙ্গিত ছিল, বিচারক তাঁর কথা না মানলে হয়তো তাঁকে গুলি করা হবে।’

যুবরাজের এহেন আচরণ সম্পর্কে বাদশাহ আবদুল্লাহর কাছে অভিযোগ করেন বিচারক। এ খবর কখনো অস্বীকার করেননি সালমান। এরপর ২০১১ সালে বাদশাহ আবদুল্লাহ যখন মোহাম্মদ বিন সালমানের বাবাকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন, তখন শর্ত দিয়েছিলেন যে এমবিএস যেন কখনোই মন্ত্রণালয়ের ভবনে প্রবেশ না করে।

নারীদের গাড়ি চালানোর স্বাধীনতা

মোহাম্মদ বিন সালমানের বাবা যখন সৌদি আরবের বাদশাহ হিসেবে দায়িত্ব নেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ৭৯ বছর। শোনা যায়, বেশ কয়েক বছর ধরেই আলঝেইমারে ভুগছিলেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ক্ষমতার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেন মোহাম্মদ বিন সালমান।

সৌদি আরবের যুবক ও নারীদের মন জয় করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন বিন সালমান। তিনি ২০১৮ সালে নারীদের জন্য প্রচলিত ড্রেস কোড (পোশাকবিধি) শিথিল করে বলেছিলেন, প্রকাশ্যে নারীদের ‘আবায়া’ পরার দরকার নেই।

সেই বছরই নারীদের ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়, যাতে তাঁরা নিজেরাই কাজে বা কেনাকাটার জন্য গাড়ি চালিয়ে যেতে পারেন। এ জন্য সঙ্গে পুরুষ অভিভাবক রাখার প্রয়োজন নেই।

লেখক মার্ক থম্পসন তাঁর ‘বিয়িং ইয়ং, মেল অ্যান্ড সৌদি’ শীর্ষক বইয়ে লিখেছেন, ‘অর্থনৈতিক কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, নারীদের স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য নয়।’ তাঁর মতে, ‘নারীরা পুরুষের অনুমতি ছাড়াই যাতে কাজ করতে ও উপার্জন করা অর্থ ব্যয় করতে পারেন, সে কথা মাথায় রেখেই নেওয়া হয় এ পদক্ষেপ।’

‘শুরা’র সমাপ্তি

সৌদি আরববিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মতে ‘শুরা’ ও জ্যেষ্ঠ প্রিন্সদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঐতিহ্যে বিরাম টেনেছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। ‘শুরা’ বলতে পরামর্শমূলক পরিষদকে বোঝায়। এর বদলে নিজেকে এক ও একমাত্র শাসক হিসেবে তুলে ধরেছেন তিনি।

নিজের সিদ্ধান্ত ও রাজনীতির বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রতিবাদ বা সমালোচনা যে বিন সালমান বরদাস্ত করবেন না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।

চেজ ফ্রিম্যান ১৯৯০-এর দশকের উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় সৌদি আরবে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর মতে, ‘সৌদি রাজপরিবারের ঐক্যের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হলো শুরার ধারণার প্রতি সম্পূর্ণ অবজ্ঞা।’

বিলাসবহুল সামগ্রীর প্রতি আকর্ষণ

ক্রাউন প্রিন্স হওয়ার আগেও দামি সামগ্রীর প্রতি আকর্ষণের জন্য পরিচিত ছিলেন মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি ৪৪০ ফুট লম্বা বিলাসবহুল ইয়ট কিনতে ৫০ কোটি ডলার খরচ করেছিলেন। এর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে লেওনার্দো দা ভিঞ্চির বিখ্যাত চিত্রকর্ম কেনার জন্য ৪৫ কোটি ডলার খরচ করেন।

সমালোচনা এড়াতে বিন সালমান প্রথমে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ওই বিখ্যাত চিত্রকর্ম আবুধাবির জাদুঘরে দিয়ে দেবেন; কিন্তু তেমনটা হয়নি। এর কিছুদিন পরই তাঁর বিলাসবহুল নৌযান ‘সেরিন’-এ দেখা যায় ওই চিত্রকর্ম।

একের পর এক গ্রেপ্তার, হারিরির পদত্যাগ

বলা হয়, সৌদি আরবে অন্তত ১০ হাজার প্রিন্স রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়। তাঁদের সবাইকে সরকারের পক্ষ থেকে মাসিক ভাতা দেওয়া হয়। সর্বনিম্ন ভাতা ৮০০ ডলার এবং সর্বোচ্চ পৌনে ৩ লাখ ডলার।

ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করার পরই এ ভাতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেন মোহাম্মদ বিন সালমান।

২০১৭ সালের ৪ নভেম্বর মোহাম্মদ বিন সালমান সরকারি তহবিল তছরুপের অভিযোগে প্রিন্স, ব্যবসায়ী ও জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা মিলিয়ে ৩৮০ জনকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেন।

বেন হাবার্ড লিখেছেন, ‘তাঁদের মধ্যে কমপক্ষে ১১ জন প্রিন্স ছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী আদিল ফিকিয়া এবং অর্থমন্ত্রী ইব্রাহিম আবদুল আজিজও ছিলেন।’

‘তাঁদের সবার মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয় এবং পাঁচ তারকা রিটজ-কার্লটন হোটেলে নিয়ে গিয়ে গৃহবন্দী করা হয়। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করা অর্থ সরকারকে ফেরত দেওয়ার পর তাঁদের সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাঁরা মোট ১০০ কোটি ডলার জরিমানাও দেন।’

একই ভাবে সৌদি আরব সফরে যাওয়া লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাদ আল-হারিরিকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে বিন সালমানের বিরুদ্ধে। সে সময় ওই অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়।

বেন হাবার্ড লিখেছেন, ‘আল-হারিরি মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে দেখা করতে এলে তাঁকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর গাড়িবহরে থাকা ব্যক্তিদের বাইরে থাকতে বলা হয়। ওই কক্ষেই হারিরিকে পদত্যাগ করতে বলা হয়।’

‘আল-হারিরি লেবাননের পতাকার পাশে দাঁড়িয়ে পদত্যাগের ঘোষণা করেন এবং একটা বিবৃতি পাঠ করেন। সে বিবৃতি বিশ্বজুড়ে টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়েছিল।’

আল-হারিরিকে বলতে শোনা যায়, তাঁর পদত্যাগ লেবাননকে আরও শক্তিশালী ও স্বাধীন করে তুলবে। এই বিবৃতি পাঠের সময় তিনি বেশ কয়েকবার থামেন এবং এমন একটা ইঙ্গিত দেন যে ওই বিবৃতি তিনি নিজে লেখেননি।

অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, ‘হারিরি যদি পদত্যাগই করতে চাইতেন, তবে বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে কেন পদত্যাগ করলেন?’

এর কয়েকদিন পর আল-হারিরি দেশে ফেরেন এবং তাঁর সেই পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেন। এই অদ্ভুত ঘটনার নেপথ্যের কাহিনি অবশ্য কখনোই জানা যায়নি।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ২০১৮ সালের মে মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সৌদি সরকার ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ২ হাজার ৩০৫ জনকে আটক করেছে, যাঁদের মধ্যে ২৫১ জন তিন বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন এবং তাঁদের কখনো বিচারকের সামনে হাজির করা হয়নি।

শুধু তা-ই নয়, নিউইয়র্কভিত্তিক ‘কমিটি ফর দ্য প্রটেকশন অব জার্নালিস্ট’ও তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, সৌদি আরবে ২৬ জন সাংবাদিক বন্দী রয়েছেন। এ সংখ্যা চীন ও তুরস্কের পর বিশ্বে সর্বোচ্চ। আবার ২০১৯ সালে এক হাজার সৌদি নাগরিকের ওপর ভ্রমণ-নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।

জামাল খাসোগি হত্যা মামলা

মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্য সবচেয়ে বিব্রতকর ব্যাপার ছিল, যখন তুরস্কের সৌদি দূতাবাসে গিয়ে এমবিএসের অন্যতম সমালোচক সাংবাদিক জামাল খাসোগি খুন হন।

খাসোগি আরব নিউজ ও আল-ওয়াতানের মতো সংবাদপত্রের সম্পাদক ছিলেন। সব প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মোহাম্মদ বিন সালমান এক বছর ধরে ওই হত্যার দায় অস্বীকার করেন।

ডেভিড বি ওটাওয়ে লিখেছেন, ‘মোহাম্মদ বিন সালমানের দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগীর তত্ত্বাবধানে এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তদন্ত শেষে সিআইএ এ সিদ্ধান্তে আসে যে এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ স্বয়ং যুবরাজই দিয়েছিলেন।’

‘যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসএ) মোহাম্মদ বিন সালমানের একটা পুরোনো রেকর্ডিং খুঁজে পায়, যেখানে সৌদি আরবে না ফিরলে খাসোগিকে গুলি করার কথা বলেছিলেন তিনি।’

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উপস্থাপক নোরা ডোনেল যুবরাজকে সরাসরি প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কি খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন?’

জবাবে মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছিলেন, ‘একেবারেই না। এটি একটি জঘন্য অপরাধ। কিন্তু সৌদি আরবের নেতা হিসেবে আমি এর সম্পূর্ণ দায় নিচ্ছি। বিশেষত, যখন অপরাধীরা সৌদি সরকারের হয়ে কাজ করছিল।’

এরপর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সৌদি আরবের এক আদালত সাংবাদিক খাসোগিকে হত্যার দায়ে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড ও তিনজনকে ২৪ বছরের কারাদণ্ড দেন। তবে ২০২০ সালের ২০ মে প্রয়াত সাংবাদিকের পুত্র সালেহ খাসোগি তাঁর বাবার হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দেন।


ভারতে নাইটক্লাবে ভয়াবহ আগুন

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ০৭ ০৯:০৩:৩৮
ভারতে নাইটক্লাবে ভয়াবহ আগুন
ছবি : সংগৃহীত

ভারতের উত্তর গোয়ায় একটি জনপ্রিয় নাইটক্লাবে আগুন লেগে অন্তত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৫০ জন যাদের উদ্ধার করে গোয়া মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় কর্মকর্তা ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত রবিবার ৭ ডিসেম্বর ভোরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে নিহতদের মধ্যে ৩ থেকে ৪ জন পর্যটক ছিলেন এবং বাকি ১৯ জনই ওই নাইটক্লাবটির কর্মী।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে রাত আনুমানিক ১টার দিকে এই আগুনের ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা ছিল রান্নাঘরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তবে গোয়ার পুলিশ মহাপরিচালক বা ডিজিপি জানিয়েছেন পরিদর্শনের সময় সিলিন্ডারগুলো অক্ষত পাওয়া গেছে যা ঘটনার কারণ নিয়ে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন বিস্ফোরণ এতটাই তীব্র ছিল যে মুহূর্তের মধ্যে পুরো ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে ভেতরে থাকা ব্যক্তিরা বের হওয়ার কোনো সুযোগই পাননি।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লিখেন আজ গোয়ার সবার জন্য খুব বেদনাদায়ক একটি দিন কারণ আরপোরায় একটি বড় অগ্নিকাণ্ডে ২৩ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। যারা দায়ী সাব্যস্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের প্রমোদ সাওয়ান্ত জানান তিনজন দগ্ধ হয়ে এবং বাকিরা ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।

রাতভর উদ্ধার অভিযান অব্যাহত ছিল এবং আগুনে নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে হতাহতদের শনাক্ত করতে এবং তাদের পরিবারকে খুঁজে বের করতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ।


ভারতে শেখ হাসিনা কতদিন থাকবেন তা তাঁকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে: জয়শঙ্কর

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ০৬ ১৮:২৭:১২
ভারতে শেখ হাসিনা কতদিন থাকবেন তা তাঁকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে: জয়শঙ্কর
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত

ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটিতে যতদিন ইচ্ছা থাকতে পারবেন কি না তা নিয়ে মুখ খুলেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। একটি লিডারশিপ সামিটে এনডিটিভির সিইও এবং এডিটর ইন চিফ রাহুল কানওয়ালের সঙ্গে আলাপকালে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কথা বলেন।

যতদিন চান হাসিনা ভারতে থাকতে পারবেন কি না জানতে চাইলে জয়শঙ্কর বলেন এটি ভিন্ন বিষয় এবং তিনি এখানে একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে এসেছিলেন। তিনি মনে করেন সেই পরিস্থিতি স্পষ্টতই তাঁর সাথে যা ঘটে তার একটি কারণ। তবে তিনি পুনরায় উল্লেখ করেন যে এটি এমন একটি বিষয় যেখানে তাঁকেই নিজের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে জয়শঙ্কর জোর দিয়ে বলেন ভারত তার প্রতিবেশী দেশে একটি বিশ্বাসযোগ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দেখতে চায়। তিনি বলেন বাংলাদেশে যারা এখন ক্ষমতায় আছেন তারা অতীতের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। তাই যদি সমস্যা নির্বাচন হয় তবে প্রথম কাজ হবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা।

জয়শঙ্কর আরও বলেন ভারত বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী এবং দুই দেশের সম্পর্ক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতেই সবচেয়ে ভালো অবস্থায় পৌঁছাতে পারে। তিনি মন্তব্য করেন যে তাঁরা বাংলাদেশের মঙ্গল কামনা করেন। একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত চায় জনগণের ইচ্ছা একটি স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিফলিত হোক।


শান্তি আলোচনা বিফলের পরই পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তে তুমুল গোলাগুলির খবর

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ০৬ ০৯:১৯:৪৬
শান্তি আলোচনা বিফলের পরই পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তে তুমুল গোলাগুলির খবর
ছবি: আল জাজিরা

সপ্তাহের শুরুতে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর দুই দেশের সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে দুপক্ষের মধ্যে ভারী গোলাগুলি হয় বলে উভয় দেশের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন। এই সংঘর্ষ এমন এক সময়ে ঘটল যখন মাত্র দুই দিন আগেই সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত নতুন একটি শান্তি আলোচনা কোনো অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছে।

আফগানিস্তানের তালেবানের মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ অভিযোগ করেছেন যে পাক সেনারা কান্দাহারের স্পিন বোলদাক জেলায় হামলা চালিয়েছে। তবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দফতরের একজন মুখপাত্র মোশাররফ জাইদি এক বিবৃতিতে পাল্টা অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন আফগান বাহিনী চামান সীমান্তে বিনা উসকানিতে হামলা চালিয়েছে। মোশাররফ জাইদি আরও বলেন আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাকিস্তান সম্পূর্ণ সতর্ক অবস্থায় আছে।

সীমান্তে এই সংঘর্ষের প্রেক্ষাপট বেশ জটিল। সৌদি আরবের আলোচনায় কোনো ফল না এলেও দুপক্ষই ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি কার্যকর রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিন্তু শুক্রবারের ঘটনায় তা কার্যত ভেঙে পড়ল। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তান বারবার তালেবান কর্তৃপক্ষকে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ করেছে। অন্যদিকে কাবুল ইসলামাবাদকে তার আকাশসীমা লঙ্ঘন এবং অযথা চাপ প্রয়োগের অভিযোগ করেছে।

দুই দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনা ভেঙে পড়ায় একে অপরকে দোষারোপ করার ঘটনাও ঘটেছে। অক্টোবরের গোড়ার দিকে সীমান্ত সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন সৈন্য ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পর সংলাপ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল এবং ওই সংঘর্ষের পর তুরস্ক এবং কাতার মধ্যস্থতা করার জন্য এগিয়ে এসেছিল। তবে শুক্রবারের এই নতুন সংঘাত দুই দেশের সম্পর্ককে আরও তলানিতে নিয়ে গেল।

সূত্র: রয়টার্স


গাজার মানবিক সংকট লাঘবে চীনের বিশাল অনুদান

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ০৫ ১৪:৩৮:১৩
গাজার মানবিক সংকট লাঘবে চীনের বিশাল অনুদান
ছবি : সংগৃহীত

গাজা পুনর্গঠন ও চলমান মানবিক সংকট লাঘবের জন্য ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে ১০ কোটি ডলার সহায়তা দেবে চীন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে ফিলিস্তিন অথরিটি বা পিএ বৃহস্পতিবার ৪ ডিসেম্বর গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এই বিশাল মানবিক সহায়তার জন্য চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে চিঠি পাঠিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।

ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে চিঠিতে ফিলিস্তিনের ন্যায্য অধিকার সমর্থন এবং পশ্চিম তীর ও গাজায় ইসরায়েলি দখলদারিত্ব কমাতে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে ধরেছেন মাহমুদ আব্বাস। বেইজিংয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই অনুদানের ঘোষণা দেন শি জিনপিং।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানায় ফিলিস্তিনি ইস্যুর একটি সর্বসম্মত ন্যায়সংগত ও টেকসই সমাধান নিশ্চিত করতে ফ্রান্সের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট। বৈশ্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের মধ্যেও দুই দেশের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি পারস্পরিক সহায়তা ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের রাজনৈতিক ভিত্তি অটুট রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে খবরে বলা হয় গত সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহানের সঙ্গে একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে সহ সভাপতিত্ব করেছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। দ্বিরাষ্ট্র সমাধান এবং একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোরদার করার লক্ষ্যেই সেই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। চীনের এই আর্থিক সহায়তা এবং ফ্রান্সের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে নতুন গতির সঞ্চার করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

সূত্র: রয়টার্স


মার্কিন চাপের মধ্যেই দিল্লিতে রুশ প্রেসিডেন্ট

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ০৪ ২১:৩৯:৩৮
মার্কিন চাপের মধ্যেই দিল্লিতে রুশ প্রেসিডেন্ট
ছবি : সংগৃহীত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দিনের সরকারি সফরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে পৌঁছেছেন। পালাম বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ রাতেই দুই নেতা নৈশভোজে মিলিত হবেন আর শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে তাঁদের দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠক। শীর্ষ বৈঠকের আগে রাষ্ট্রপতি ভবনে পুতিনকে দেওয়া হবে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা। পরে তিনি দিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউসে মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন এবং সেখানেই অবস্থান করবেন।

২০২১ সালের পর প্রথমবারের মতো ভারতে সফরে এলেন পুতিন। গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মস্কোয় গিয়ে বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। বর্তমান সময়টি দুই দেশের জন্যই বেশ চ্যালেঞ্জের। পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন চাপের মুখে আছেন অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ও রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে নানা নিষেধাজ্ঞা সব মিলিয়ে ভারতের জন্যও বছরটি কঠিন যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করতে পুতিন দিল্লি সফরে এসেছেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

এনডিটিভি ও দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয় শুক্রবার সকালে পুতিন মহাত্মা গান্ধীর সমাধি ও স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে রাজঘাটে যাবেন। দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে আরও রয়েছে নয়াদিল্লিতে রাশিয়ার গণমাধ্যম আরটি ইন্ডিয়ার উদ্বোধন এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর আয়োজিত রাষ্ট্রীয় ভোজে অংশগ্রহণ। শুক্রবার প্রায় রাত ৯টার দিকে পুতিনের ভারত ত্যাগ করার কথা রয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এটাই পুতিনের প্রথম ভারত সফর। স্বাস্থ্য ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একাধিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে দুই দেশের মধ্যে। বিশ্লেষকরা বলছেন দুই দেশই বিকল্প পেমেন্ট সিস্টেম তৈরি ও বাণিজ্য বাড়ানোর উপায় খুঁজছে। ক্ষুদ্র মডুলার নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরও সম্ভাব্য ক্ষেত্র হিসেবে আলোচনায় রয়েছে। পুতিনের সফর দুই দেশের সম্পর্ককে আবারও নতুন গতি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিক্রিয়া সামলেই ভারতকে এই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হবে।


যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে: ফরাসি প্রেসিডেন্ট

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ০৪ ২০:২৬:৩৫
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে: ফরাসি প্রেসিডেন্ট
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (বামে) ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে বলে ইউরোপীয় নেতাদের সতর্ক করে দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন নিরাপত্তার গ্যারান্টি সম্পর্কে অবস্থান স্পষ্ট না করেই আমেরিকা ইউক্রেনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে। জার্মান ম্যাগাজিন ডের স্পিগেল ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে সাম্প্রতিক একটি ফাঁস হওয়া গ্রুপ ফোনালাপের বরাত দিয়ে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি জানায় তারা কলটির সারসংক্ষেপসহ একটি ইংরেজি নোট পেয়েছে যা ইউরোপীয় রাজনীতির অন্দরমহলের উদ্বেগ সামনে এনেছে।

স্পিগেল জানিয়েছে ফোনালাপে ম্যাক্রোঁ আলোচনার উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্তটিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির জন্য একটি বড় বিপদ বলে উল্লেখ করেছেন। ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস প্রতিউত্তরে বলেছেন ইউক্রেনীয় নেতাকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার সমালোচনা করে মের্ৎস মন্তব্য করেন তারা আপনার এবং আমাদের সবার সাথেই খেলা খেলছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে অন্যান্য ইউরোপীয় নেতারাও এই আলাপে তাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ফিনল্যান্ডের আলেকজান্ডার স্টাব বলেন আমাদের ইউক্রেন এবং ভলোদিমিরকে এই লোকদের সাথে একা ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। এমনকি ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট যিনি জনসমক্ষে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশংসা করেন তিনিও বলেছেন আলেকজান্ডারের সাথে তিনি একমত যে আমাদের ভলোদিমিরকে রক্ষা করতে হবে।

এই ফাঁস হওয়া তথ্যের বিষয়ে জেলেনস্কির একজন মুখপাত্র মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এছাড়া জার্মান চ্যান্সেলর মের্ৎসের অফিস এবং ফ্রান্সের এলিসি প্যালেস ম্যাক্রোঁর উদ্ধৃতিগুলোর বিরোধিতা করেছে। কিন্তু ডের স্পিগেল তাদের প্রতিবেদনে অনড় থেকে জানিয়েছে তারা ফোনকলের বেশ কয়েকজন অংশগ্রহণকারীর সাথে কথা বলেছে এবং তারা ফোনকলের ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, পলিটিকো, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউকে


ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক উদারভাবে দেখতে হবে: রিয়াজ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ০৪ ১৫:২১:৫০
ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক উদারভাবে দেখতে হবে: রিয়াজ
ছবি: সংগৃহীত

ভারত–বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও উদার ও বাস্তবমুখী দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ। তাঁর মতে, দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তিতে রয়েছে আত্মিক বন্ধন, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং পরস্পরের ওপর নির্ভরশীলতা। ভবিষ্যতে ভারত ও বাংলাদেশ একটি যৌথ সমৃদ্ধির পথনকশায় অগ্রসর হতে পারে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বুধবার কলকাতার অন্যতম প্রাচীন ব্যবসায়ী সংগঠন মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (MCCI) আয়োজিত এক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব মন্তব্য করেন হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ। সভায় উপস্থিত ছিলেন কলকাতার বিভিন্ন শীর্ষ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। বক্তব্যে তিনি বলেন, ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরও উদার দৃষ্টিভঙ্গিতে মূল্যায়ন করতে হবে এবং স্পর্শকাতর কিছু ইস্যু থাকলেও সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খোঁজা সম্ভব। দুই দেশের মধ্যে যে বাস্তবিক সহযোগিতা চলছে, তা আগামী দিনের যৌথ ভবিষ্যৎ নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

হাইকমিশনার জানান, চিকিৎসা, শিক্ষা, ব্যবসাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত–বাংলাদেশের আর্থিক লেনদেন বর্তমানে ২৫ থেকে ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এটি দুই দেশের অর্থনৈতিক ঘনিষ্ঠতা ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতার প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণে দুই দেশের সরকারি সহযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রিয়াজ হামিদুল্লাহ জানান, আগামী বছর দিল্লিতে বাংলা চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। তাঁর মতে, সরকারি পর্যায়ে সহযোগিতা বাড়লে শিল্পীরা আরও সহজে ও স্বাচ্ছন্দ্যে যৌথভাবে কাজ করতে পারবেন, যা দুই বাংলার সাংস্কৃতিক বিনিময়কে আরও জোরদার করবে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে উত্তরীয় পরিয়ে হাইকমিশনারকে স্বাগত জানানো হয়। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র সহসভাপতি মনীষ ঝানজরিয়া। পুরো অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা, যারা ভারত–বাংলাদেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে মতবিনিময় করেন।

-রফিক


পুতিনের হঠাৎ ভারত সফরের কারণ বেরিয়ে এল

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ০৪ ১৪:৫৫:০১
পুতিনের হঠাৎ ভারত সফরের কারণ বেরিয়ে এল
ছবি: সংগৃহীত

ইউরোপের সঙ্গে রাশিয়ার টানাপোড়েন যখন আরও বাড়ছে, ঠিক সেই সময়ই দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে পৌঁছেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, মূলত ভারতের বিশাল জ্বালানি বাজার, সামরিক সহযোগিতা এবং নতুন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রি পুতিনের এই সফরের কেন্দ্রবিন্দু।

পুতিন দিল্লিতে পা রাখার আগেই মস্কোর পার্লামেন্ট ভারত–রাশিয়া প্রতিরক্ষা সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে অনুমোদন দিয়েছে। এই চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনী একে অপরের ভূখণ্ডে সামরিক লজিস্টিক সুবিধা, ঘাঁটি ও পরিকাঠামো ব্যবহার করতে পারবে। এটি দুই শক্তির প্রতিরক্ষা সম্পর্ককে আরও গভীর করার ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ভূরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, পুতিনের এই সফর শুধুই কূটনৈতিক সৌজন্য নয়। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র ভারতের ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি মানুষের বাজার, আঞ্চলিক অবস্থান এবং সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক অস্থিরতা রাশিয়ার জন্য নতুন কৌশলগত সম্ভাবনা তৈরি করেছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার চাপের মাঝে মস্কোর জন্য ভারত এখন জ্বালানি ও অস্ত্র বাণিজ্যের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বাজার।

দুই দেশের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে পুতিন ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একাধিক বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নিয়ে নতুন চুক্তি সই করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক মাস ধরেই মস্কো থেকে ভারতের তেল আমদানি কমানোর দাবি জানিয়ে আসছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে ভারতের মাত্র ২.৫ শতাংশ তেল আসত রাশিয়া থেকে। নিষেধাজ্ঞার সুযোগে ছাড়মূল্যে তেল পেয়ে ভারতের আমদানি বেড়ে গিয়ে ৩৫ শতাংশে পৌঁছায়। এতে ভারত অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হলেও ওয়াশিংটন প্রকাশ্যেই অসন্তোষ দেখায়।

অক্টোবর মাসে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করলে দুই দেশের বাণিজ্যিক উত্তেজনা প্রকট হয়। ফলে ভারতের রুশ তেল ক্রয় কমে আসে। বিশ্লেষকদের মতে, পুতিন সফরে তেল রপ্তানি বাড়ানোই মস্কোর অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার।

শীতল যুদ্ধ–পরবর্তী যুগ থেকেই ভারত রাশিয়ার বড় অস্ত্র ক্রেতা। এবারও পুতিনের সফর ঘিরে ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর এসেছে যে দিল্লি নতুন প্রজন্মের যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংগ্রহে আগ্রহী।

এ ছাড়া, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধজনিত শ্রম সংকটে ভুগছে। মস্কোর দৃষ্টি এখন ভারতীয় দক্ষ শ্রমিক ও প্রযুক্তিগত কর্মীদের দিকে। দুই দেশের মধ্যে শ্রম সহযোগিতার আলোচনা এই সফরে আরও জোরদার হতে পারে।

ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক প্রায় ছিন্নপ্রায় অবস্থায়। পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করতে চাইছে; আর রাশিয়া চাইছে এশিয়ার মাধ্যমে তার কৌশলগত ও অর্থনৈতিক অবস্থান পুনর্গঠন করতে। পুতিনের দিল্লি সফর সেই কৌশলগত পুনর্গঠনেরই ইঙ্গিত বলে বিবিসির বিশ্লেষণ।

কয়েক মাস আগে পুতিন চীনে গিয়ে শি জিনপিং ও নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যৌথ ছবি তুলেছিলেন। বিশেষজ্ঞ আন্দ্রি কোলেসনিকভ মনে করেন, ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক হারানো রাশিয়ার বড় ক্ষতি হলেও এশিয়ার দুই শক্তি চীন ও ভারত রাশিয়ার নতুন কূটনৈতিক ভরসা হয়ে উঠছে।

এই সফরে দুই দেশের নেতারা তেল, প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি, বাণিজ্য ও মানবসম্পদ খাতে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার চেষ্টা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

-রফিক


গাজায় যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও চলছে ইসরায়েলি হামলা, ঝরছে রক্ত

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ০৪ ০৯:২১:১১
গাজায় যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও চলছে ইসরায়েলি হামলা, ঝরছে রক্ত
ছবি : সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মার্কিন মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি বজায় থাকার কথা থাকলেও তা লঙ্ঘন করে আবারও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। বুধবার ৩ ডিসেম্বর চালানো এসব হামলায় দুই শিশুসহ অন্তত সাত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার আল মাওয়াসি ক্যাম্পে বোমা হামলায় আগুন লেগে বেশ কয়েকটি তাঁবু পুড়ে যায় এবং সেখানেই পাঁচজন নিহত হন। চিকিৎসকরা জানান নিহত শিশুদের বয়স আট ও দশ বছর। এছাড়া উত্তর গাজার জেইতুন এলাকায় ইসরায়েলি বন্দুকধারীদের গুলিতে আরও দুই ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি দক্ষিণ রাফায় হামাস তাদের যোদ্ধাদের ওপর হামলা চালিয়ে চার সেনাকে আহত করার পরই এই পাল্টা হামলা চালানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আগেই কড়া জবাবের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। হামাস আল মাওয়াসিতে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়ে একে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং মধ্যস্থতাকারী মিশর কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর লাগাম টানার দাবি জানিয়েছে।

এদিকে রাফাহ সীমান্ত খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল তবে সেখানে জুড়ে দেওয়া হয়েছে কঠিন শর্ত। তেল আবিব জানিয়েছে এই ক্রসিং দিয়ে কেবল গাজার বাসিন্দারা উপত্যকা ত্যাগ করতে পারবেন কিন্তু কোনো ত্রাণ বা সহায়তা প্রবেশ করতে পারবে না। তবে মিশর এই সিদ্ধান্তকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের শান্তি পরিকল্পনার পরিপন্থী ও একতরফা আখ্যা দিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছে। মার্কিন পরিকল্পনায় ছিল রাফাহ সীমান্ত উভয় দিকের চলাচলের জন্যই উন্মুক্ত থাকবে।

এর মধ্যেই যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী আরও এক ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করেছে হামাস। স্থানীয় সময় বুধবার বেইত লাহিয়ায় সংগঠনটির সদস্যরা রেডক্রসের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে যা পরে ইসরায়েলে পৌঁছে দেওয়া হয়। গাজার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে গত ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী কমপক্ষে ৫৯১ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে যার ফলে কমপক্ষে ৩৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৯২২ জন আহত হয়েছেন।

পাঠকের মতামত:

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার সামাজিক ও নৈতিক দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করতে হবে

রাষ্ট্রের ধারণাটি একসময় কেবল প্রশাসনিক ক্ষমতা, আইনের শাসন এবং নিরাপত্তা প্রদানের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে রাষ্ট্রের ভূমিকা এখন... বিস্তারিত