"ফেস দ্য পিপল" বিশ্লেষণ

উত্তপ্ত নগরী, অস্থির রাজনীতি: কোথায় যাচ্ছে বাংলাদেশ?

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৭ ১০:৫০:৫৭
উত্তপ্ত নগরী, অস্থির রাজনীতি: কোথায় যাচ্ছে বাংলাদেশ?

ঢাকা, এক অদৃশ্য উত্তেজনার মাঝখানে, যেন বিস্ফোরণের আগে নিস্তব্ধ অবস্থায় নিমগ্ন। যদিও সবার মুখে কিছু নেই, তবুও শহরজুড়ে অশুভ এক উত্তেজনা বিরাজমান। সবকিছুই স্থবির, এমনকি যারা কাজের জায়গায় উপস্থিত, তারা কার্যত কাজ করছে না। এর কারণ, কর্মীরা চাইছেন যে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইশরাক হোসেনই হোক দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরবর্তী মেয়র। এই অস্থির সময়ের মধ্যে এমন একটি সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হলো? একটি সময় যখন মেয়রের মেয়াদ প্রায় শেষ, তখন কেন হঠাৎ এক তরুণ নেতাকে মেয়র ঘোষণা করা হল? এই সিদ্ধান্ত কি একদমই হঠাৎ, নাকি এর পেছনে রয়েছে কোনো রাজনৈতিক কৌশল বা ফাঁদ? এটি একটি প্রশ্ন, যার উত্তর খুঁজতে দেশের রাজনীতি গভীরভাবে মনোযোগ দাবি করছে।

দ্বিতীয় প্রেক্ষাপট আসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। একদিন আগেই রমনার পাশে ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার সাম্য ছুরিকাঘাতে নিহত হন। সেদিনের শোকের মাঝেই ক্যাম্পাসে বহিরাগতরা পিকআপে করে প্রবেশ করে, উদ্দেশ্য—আন্দোলন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এই বহিরাগতরা কারা এবং কেন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেছে? ছাত্রদল কেন চায় ভিসির পদত্যাগ? বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক এলাকার বাইরে একটি ছাত্রের হত্যাকাণ্ড কেন কেবল শোকের উপলক্ষ হবে? নাকি এটি একটি রাজনৈতিক দাবির চরম মঞ্চে পরিণত হবে? এখানে স্পষ্টতই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে, যা দেশের রাজনীতির জন্য নতুন এক সংকেত।

তৃতীয় প্রেক্ষাপট আসে উপদেষ্টা মাহফুজের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে, যা একটি অশান্তি তৈরি করে। বোতল হামলার ঘটনার পর তিনি জামায়াত-শিবিরের দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন, কিন্তু পরে জানা যায় হামলাকারী ছাত্রলীগপন্থী। এই রকম অপ্রত্যাশিত এবং অযৌক্তিক মন্তব্য মাহফুজকে বারবার বিতর্কে ফেলছে। তার জামায়াত শিবিরের প্রতি অতীত সম্পর্কগুলো যেন এখন তাকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতবিরোধের জায়গায় ফেলে দিয়েছে। এই পরিস্থিতি রাজনীতি এবং প্রশাসনের মধ্যে গভীর বিভেদ তৈরি করেছে, যা দেশব্যাপী উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চতুর্থ প্রেক্ষাপটে, সরকারী উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্য আসে, যারা দাবী করছেন যে এই হামলা "৭১ সালের পরাজিত শক্তির কাজ"। কিন্তু এখানে প্রশ্ন থাকে—যদি একজন উপদেষ্টা শুধু ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন, তাহলে রাজনৈতিক সংস্কার কীভাবে আসবে? যদি তিনি জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে থাকেন, তাহলে কেন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না? কেন ফেসবুকের মাধ্যমে হুমকি দিয়ে কোনো কার্যকর পরিবর্তন সম্ভব হবে না? এই বিশ্লেষণ প্রয়োজনীয়তা বোঝায় যে রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য প্রক্রিয়া প্রয়োজন, শুধু বক্তৃতার মাধ্যমে নয়।

পঞ্চম প্রেক্ষাপট আসে সীমান্ত থেকে। ভারতের সীমান্তে এখন নতুন সঙ্কটের সূচনা হয়েছে—যেখানে রোহিঙ্গাদের পরিবর্তে অন্য জাতির লক্ষ্যবস্তু হতে যাচ্ছে। ভারত বুঝে গেছে যে বাংলাদেশের ভিতরে বড় ধরনের অস্থিরতা আসছে এবং তারা আগে থেকেই তার ভূমিকা প্রস্তুত করছে। এই অবস্থায়, সরকারী উপদেষ্টা এবং বিরোধী পক্ষের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক একটি মারাত্মক মোড় নিতে পারে। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ভারতের কৌশলিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

এই পাঁচটি প্রেক্ষাপট আলাদাভাবে বিরাজমান হলেও, পরস্পরকে ছুঁয়ে একটি বিশাল চিত্র তৈরি করছে—বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি, যেখানে রাজনীতির পুঁজি হয় লাশ, ফেসবুক স্ট্যাটাস, তলোয়ার এবং প্রতিবাদ। এর পেছনে অদৃশ্য কুশীলভ রয়েছে, যা প্রত্যেকের সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব ফেলছে। সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হলো, প্রতিটি পক্ষ এখন নিজেদের ইতিহাস তৈরি করতে চাইছে—যেখানে এক পক্ষের কাছে শহীদ সাম্য, অন্য পক্ষের কাছে সংগ্রামী উপদেষ্টা মাহফুজ। কিন্তু এই বৈপরীত্যের মধ্যেও আমাদের উচিত একটি সুষ্ঠু এবং সঠিক ইতিহাস তৈরি করা, যাতে ভবিষ্যতে এই অস্থিরতার গভীরে যেতে না হয়।

এই পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে, আমাদের সকলের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সত্য ও বাস্তবতার দিকে অগ্রসর হওয়া। বর্তমান রাজনীতির আকাশে আগুনের মতো উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং আমাদের ভবিষ্যৎ তা থেকে বাঁচার উপায় খুঁজতে হবে। যদি আমরা এখন প্রশ্ন না তুলি, তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে সব প্রশ্ন ইতিহাসের পাদটীকায় পরিণত হবে এবং আমরা হারিয়ে যাব এক অন্ধকারে, যেখানে কোন মানচিত্র থাকবে না।

সূত্রঃ ফেস দ্য পিপল বিশ্লেষণ

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ