বিমানের শেষ ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ড

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ মে ১৭ ০৯:১৩:৩০
বিমানের শেষ ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ড

সত্য নিউজ: কক্সবাজার থেকে উড্ডয়ন করার কিছুক্ষণ পরই একটি চাকা খুলে পড়ে যায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি ৪৩৬ ফ্লাইটটির। আর সেই মুহূর্ত থেকে শুরু হয় এক নিঃশ্বাসে বলা যায় এমন এক উত্তেজনাকর ও প্রশংসাযোগ্য নিয়ন্ত্রণযজ্ঞ। ঢাকার আকাশে এসে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে ককপিট ও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) রুমের মধ্যে গড়ে ওঠে সমন্বয়ের এক সুদৃঢ় সেতু। শেষ পর্যন্ত দক্ষতা, আত্মবিশ্বাস ও পেশাগত সংবেদনশীলতার এক দুর্লভ উদাহরণ হয়ে উঠে এই ফ্লাইটের জরুরি অবতরণ।

রেকর্ডে ধরা পড়ে উত্তেজনার শেষ ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ড

শুক্রবার (১৬ মে) দুপুর ২টা ১৯ মিনিটে ঢাকার আকাশে প্রবেশ করে ফ্লাইটটি। এটিসি তখন পাইলটকে জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি কী এই অবস্থায় রানওয়ে ১৪ দিয়ে অবতরণের বিষয়টি কনফার্ম করছেন?’ ককপিট থেকে ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ নিশ্চয়তা দিয়ে জানান, “অ্যাফার্ম।” এরপর এটিসি জানায়, রানওয়ে প্রস্তুত তিনি অবতরণ করতে পারেন।

ঠিক ৯০ সেকেন্ড পর, দুপুর ২টা ২২ মিনিটে বিমানটি রানওয়েতে নিরাপদে অবতরণ করে। এক নিঃশ্বাসে এটিসির বার্তা শোনার পর ককপিট থেকে ভেসে আসে প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতার বার্তা: “আলহামদুলিল্লাহ, আমরা নিরাপদে অবতরণ করেছি। কন্ট্রোল টাওয়ারকে অনেক ধন্যবাদ, আপনাদের সহযোগিতা ছিল প্রশংসনীয়।”

এটিসি নিশ্চিত হতে চায়, সবকিছু স্বাভাবিক কিনা। ক্যাপ্টেন জামিল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানান, “এভরিথিং ইজ অ্যাবসালুটলি ফাইন।” এর উত্তরে এটিসি জানায়, “আলহামদুলিল্লাহ, ধন্যবাদ আপনাকে।” পাইলট তখন কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের এটিসিকেও ধন্যবাদ জানান।

উড্ডয়নের সময়েই সংকেত

বিমানবন্দরের সূত্র অনুযায়ী, শুক্রবার বেলা ১টা ৩০ মিনিটে ফ্লাইটটি ৭১ যাত্রী নিয়ে কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে উড্ডয়ন করে। রানওয়ে থেকে টেক অফের সময় বাম পাশের একটি ল্যান্ডিং গিয়ার চাকা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে খুলে পড়ে যায়। তবুও পাইলট পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে রেখে ফ্লাইটটিকে নিরাপদে ঢাকায় নিয়ে আসেন।

দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের জয়

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য পাইলটকে শুধু প্রশিক্ষণ নয়, মানসিক স্থিরতা ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা থাকতে হয়। ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ তা যথার্থভাবে দেখিয়েছেন।

সাধারণত জরুরি অবতরণের আগে ফ্লাইটকে আকাশে চক্কর দিয়ে অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ করে নিতে হয়, যাতে অবতরণের সময় আগুন লাগার ঝুঁকি না থাকে। তবে ক্যাপ্টেন জামিল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সরাসরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন এবং সফলভাবে সেটি সম্পন্ন করেন।

বিমানবন্দরে প্রস্তুতি ছিল সর্বোচ্চ মানের

জরুরি পরিস্থিতির কারণে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিসসহ সব রকম প্রস্তুতি রাখা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তার কিছুই ব্যবহার করতে হয়নি—কারণ পাইলট ও এটিসির চমৎকার সমন্বয়েই ফ্লাইটটি মাটিতে ফিরে আসে নিরাপদে।

বিজি ৪৩৬ ফ্লাইটের এই সফল জরুরি অবতরণ কেবল প্রযুক্তিগত নয়, বরং মানবিক দৃঢ়তা, প্রশিক্ষণের গভীরতা এবং পেশাগত উৎকর্ষের এক অনন্য উদাহরণ হয়ে রইল বাংলাদেশের এভিয়েশন ইতিহাসে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

স্টারমারের নীরবতা: কূটনৈতিক শিষ্টাচার বনাম রাজনৈতিক সংকোচ

একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, সামাজিক ব্যবসার পথপ্রদর্শক এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্রনায়ক—এই তিনটি পরিচয়ই এখন সমভাবে প্রযোজ্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের... বিস্তারিত